somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জোছনা ঝরে আমার ঘরে

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাতের নীল আকাশ। আকাশে ধবধবে চাঁদ। চাঁদের শরীর থেকে মোমের মতো গলে পড়ছে জোছনার আলো। বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশিরবিন্দু। দিনে ভ্যাপসা গরম রাতে কুয়াশা। প্রকৃতির এমন বৈপরিত্য সত্যিই অবাক করার মতো। আমার ঘরের পাশে একটি নিম গাছ। সে গাছের ডালে পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে। প্রকৃতিতে বইছে মৃদুমন্দ কোমল বাতাস। ঘাসফড়িংয়ের মত লাফালাফি করছে জোছনা। খরখোশ যে রকম সবুজ ঘাসের উপর গড়াগড়ি করে জোছনাও এসে আমার বিছানার চাদরের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। এই যে রাতের শিশির, পাখির ডানা ঝাপটানো, ঘাসফড়িং, খরখোশ এবং জোছনার আলো এগুলোর মধ্যে কি এমন সাযুজ্য রয়েছে তা আমি জানিনা। তবে আমি একথা বলতে পারি, এই পূর্ণিমা রাতে আমার জানালাটি আমি খোলাই রেখেছি। আমি খুলে রেখেছি আমার প্রিয় জোছনার জন্য। জোছনার প্রবেশের পথ সুগম হওয়ার জন্য। জানালার গ্রিলের উপর এসে পড়ছে আমার প্রিয় সেই জোছনার আলো। আমার বিছানায় এসে পড়ছে সে জোছনার ছায়া। আমার ঘরে আষাঢ়ের বন্যার মতো ঢুকছে জোছনা। জোছনায় টলমল করছে আমর পুরো ঘর। জোছনার ঢেউ খেলছে আমার বিছানায়।
সেগুন গাছের নকশা করা খাটে কারুকার্যময় বিছানার চাদর। জীবনে এই প্রথম আমি বিছানার চাদর কিনলাম। সাদা কাপড়ের জমিনের উপর কালো আর গোলাপী নকশা আঁকা। এক অসাধারণ! সৌন্দর্য যেন লুকিয়ে রয়েছে আমার চাদরটির ভেতর। মার্কেটে গিয়ে যেদিন এই চাাদরটি প্রথম দেখলাম। দেখেই চাদরটিকে আমি পছন্দ করে ফেললাম। আর এখন আমার এই বিছানার চাদরের উপর এসে পড়ছে জোছনা। আমি আমার বিছানার চাদরের উপর তাকিয়ে আছি। আমার পলক যেন নড়ছেনা। যত দেখছি ততই আমি মুগ্ধ হচ্ছি। খুশিতে আমার মন নেচে উঠছে বারবার। আমি পুলকিত! শিহরিত! রোমান্সিত! জোছনায় মাখামাখি হচ্ছে আমার শরীর। চাঁদের আলোতে গোসল করছি আমি। এ আমার পরম সৌভাগ্য!
সারাদিন অনেক খাটুনি গেছে আমার শরীরের উপর। জীবনে এই প্রথম ছোরা হাতে নিয়েছি। গরুর চামড়া ছিড়েছি। গোস্ত কেটেছে। পরিবারের ছোট হওয়ার কারণে ফাঁকিবাজির একটা স্বভাব রয়েই গেছে আমার মধ্যে। বাবা থাকতে বাবা কাটতেন। বাবা বেহেস্তলোক হওয়ার পর বড় ভাইয়েরা কাটতেন। এবার বাড়িতে তেমন কেউ নেই। বড় দুই ভাই সৌদি আরব। বড় ভাইসহ আমি দেশে। ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গেছি। তাই কিছুটা বাধ্য হয়েই আমাকে কাজ করতে হয়েছে। চাচাতো ভাই শহীদসহ পারপরমেন্স ভালই করেছি। আমাদের সাথে আরো দুইটা গরু কোরবানি হয়েছে। আমারা যৌথভাবে সেকেন্ড হয়েছি বলা যায়। এও আবার কম কীসের!
গোস্ত কাটার মাঝে বড় ভাবির সৌজন্যে চা পান আমাদের কাজের গতি কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দিয়েছে। কাজ শেষ করতে করতে আসরের আযান দিয়ে দিয়েছে। গোসল করে নামাজ পড়ে এসেছি মসজিদ থেকে। নামাজ পড়ে এসেই বিছানার গা এলিয়ে দিয়েছি পরম ক্লান্তিতে। বিছানার গা এলিয়ে দেয়ার সাথে সাথে আমার গায়ে অসহ্য ব্যথা শুরু হল। মসজিদ থেকে মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে মা’কে বললাম, দুধ আছে? মা তাড়াতাড়ি দুধ গরম করে আমার হাতে দেয়। মা বলে কথা! একটা প্যারাসিটামল খেয়ে এককাপ দুধ খেয়েছি। এমন সময়ই জোছনার এমন খেলা শুরু করল আমার ঘরে। জোছনা ঝরে আমার ঘরে। আমি অনিমেষ চোখ মেলে কেবল তাকিছেই আছি। ঈদের সে সন্ধ্যা রাতের ঝিকিমিকি জোছনার আলো আমাকে পাগলপারা করেছে। এক সময় আমার চোখ বুজে ঘুম চলে এলো। আমি যা দেখলাম, তা আমি কখনো ভুলতে পারব না। সে স্মৃতি আজীবন খোদাই হয়ে থাকবে আমার ভেতর।
আমি সদ্য কেনা বিছানার চাদরের উপর শুয়ে আছি। জোছনার আলো এসে পড়ছে আমার ঘরের ভেতর। আমার শরীরের উপর। আমার হাতের উপর। গাছের ডালে নাম না জানা কোনো এক পাখি ডানা ঝাপটাচ্ছে। ব্যঙ ডাকছে। জোনাক জ্বলছে। বৃষ্টি পড়ছে। এমন সময় এক অপরূপা মানবী চুল এলিয়ে বসলো আমার খাটের উপর। সতেরো আঠারো হবে মেয়েটির বয়স। এর আগে কখনো দেখেছি বলে আমার মনে পড়ছে না। মেয়েটির মুখ অসম্ভব মায়াবী। দাঁতগুলো মুক্তোর মতো ঝকঝক করছে। তার চোখজোড়া দিয়ে যেন জ্যোতির আলো বের হচ্ছে। মেয়েটি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমিও কেবল তাকিয়েই আছি। মনে হয় মেয়েটি কি যেন বলতে চাইছে আমাকে। আমি মেয়েটিকে আমার দিকে টেনে আনতে চাইলাম। সে বলল, অপেক্ষায় থাকো। পরে আসবো। একথা বলে মেয়েটি বের হয়ে গেল। তখন নিঝুম রাত। আমি মেয়েটির পিছন পিছন একটা পাহাড়ী ঘর অরণ্যের ভেতর ঢুকে পড়লাম। এমন সময় আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমার কাছে সবকিছু কেমন ঝাপসা মনে হতে লাগল। কেবল মেয়েটির মায়াবী মুখটি আমি ভুলতে পারলাম না। আমার চোখের মণিতে খোদাই হয়ে আছে মেয়েটির মায়াবী চেহারা। মেয়েটির জন্য আমাকে কতদিন অপেক্ষায় থাকতে হবে কে জানে!
এই জোছনা রাতে আমি রাস্তায় একা একা হাঁটছি। রাস্তার ধারে পাটি পাতার বন। সে বনে ব্যঙ ডাকছে ঘ্যঙরঘ্যং। মিটিমিটি জ্বলছে জোনাকি। হেঁটে হেঁটে আমি আমাদের পুলের উপর এসে বসলাম। পুলের পাশের বটগাছের দিকে নির্নিমেষ কেবল তাকিয়েই থাকলাম। আর ভাবলাম, জোছনা কি করে একটা মানুষের ভেতর এমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তার রহস্যের কথা। মনে মনে অবার বললাম, ‘জোছনা ঝরে আমার ঘরে।’
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×