এদিকে দেশে নারী ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়ায় চিকিত্সা বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ধূমপানে পুরুষের তুলনায় নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি। ধূমপায়ী প্রসূতির ধূমপানের ঝুঁকি বহন করতে হয় সন্তানকে। আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সেহরীন এস সিদ্দিকা জানান, ধূমপায়ী নারীরা সাধারণত সন্তান প্রসবে অক্ষম হন। কিন্তু তারপরও সন্তান প্রসব করলে তা হতে পারে অকাল গর্ভপাত। এসব নারী বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দেন। পরে এসব শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয় ও পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়। এই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সক আরও জানান, ধূমপায়ী গর্ভবতীদের জরায়ুতে পানি ভেঙে যেতে পারে এবং অপরিণত ও কম ওজনের শিশুর জন্ম হতে পারে। এছাড়া সন্তান প্রসাবের সময় রক্তক্ষরণও হতে পারে। ধূমপানজনিত নানা জটিলতা থেকে প্রসূতির মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশি। বিশেষ করে একজন ধূমপায়ী মায়ের জন্য একজন সন্তানকে জীবনভর স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে থাকতে হয়।
উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আকতার বলেন, তামাক চাষ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নারীদের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকে। ফলে অনিচ্ছাকৃতভাবেই অনেকে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দেন। নিজেও আক্রান্ত হন জটিল ব্যাধিতে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর’বি) জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানী ডা. এমএ কাইয়ুম বলেন, ধূমপানে পুরুষের তুলনায় নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেক বেশি। ধূমপান আসক্ত নারীদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় বেশি থাকে। বিশেষ করে অন্ত্রে ও মলাশয়ে ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় ধূমপায়ী নারীদের বেশি। এমনকি ধূমপায়ী নারীদের হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও পুরুষদের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশসহ বিশ্বে ধূমপায়ী নারীদের মৃত্যুঝুঁকিও বেড়েছে অনেক বেশি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমা খাতুন বলেন, উচ্চবিত্ত ঘরের নারীরা ফ্যাশন বা চাকচিক্যের মোহে পড়ে ধূমপানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তারা ধূমপান ছাড়াও অন্যান্য মাদকও গ্রহণ করেন। মধ্যবিত্ত ঘরের নারীরা লোকলজ্জার ভয়ে ধূমপানে কম আসক্ত হন। দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী নারীরা অনিচ্ছাকৃতভাবেই ধূমপানের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। যেমন- তামাক চাষি নারী। অথচ বাংলাদেশে তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ কিংবা ধূমপান পরিহারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি বলে অভিমত দিয়েছেন বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোটের দাফতরিক সচিব সৈয়দ মাহবুুবুল আলম। তিনি বলেন, এখনও দেশের প্রায় ১ লাখ একর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে। আইনে নিষিদ্ধ হলেও পাবলিক প্লেসে ধূমপান করে ৯৫ শতাংশ ধূমপায়ীকে একবারও জরিমানা দিতে হয়নি। এখনও ধূমপান নিবারণ আইনের কোনো কার্যকারিতা নেই। তামাক চাষ ও তামাকজাত পণ্যের বিস্তার ঠেকাতে সরকারি পদক্ষেপেও কোনো গতি আসেনি। মিডিয়ায় সিগারেটের বিজ্ঞাপন বন্ধ থাকলেও ধূমপায়ীর হার বাড়াতে কম দামের সিগারেটের সঙ্গে তামাকজাত পণ্যের কোম্পানিগুলো কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সুত্র ছবি : অনলাইন
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৮