somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ এবং সে

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রুমা অনেক দিন বেড়াতে চায়। সে অনেক ছোটকালে সাগর দেখতে গিয়েছিল। তার বাবার সাথে সাগরে গোসল করার সময় বড় একটা ঢেউ এসে তাকে টেনে নেয়। ঢেউয়ের তোড়ে জলে ডুবে কয়েক ঢোক জল খেয়ে ফেলে। তার বাবার শক্ত হাতের টানে সেই দিন সমুদ্র মন্থন থেকে সে রেহাই পায়। এরপর থেকে সে সমুদ্রের কথা শুনলে ভয় পায়। এই জল ভীতি থেকেই সে সাঁতারটা শিখেনি। যার দরুন সমুদ্র কেন মজা পুকুরের নাম শুনলেও সে ভয় পায়। সে ঘুড়তে চায় পাহাড়ে, বনে জঙ্গলে। সুন্দরবনে একা ছেড়ে দিলেও সে অনেক আনন্দ নিয়ে ঘুরতে পারবে। বাঘমামা তাকে দেখে হয়ত কুর্নিশ করবে। কেননা সুন্দরী মেয়েদের দেখলে যমও ভয় করে, সমঝে চলে। বনের বাঘ হরিণকে বশ করে ঠিকই, কিন্তু রুমার ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটবে চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। কারণ এই রুমার প্রেমে পড়ে দেশের তাবৎ বাঘা বাঘা প্রেমিকরা উচ্ছন্নে গেছে। আমিও উচ্ছন্নে গেছি কিনা বলতে পারিনা। তবে একটা কিছু ঘটেছে যার দরুন সারাজীবন এর ঘানি টানতে হবে।

ইউনিভার্সিটিতে থাকতে একবার ফ্যান্টাসী কিন্ডমে বেরাতে গিয়েছিলাম। সাথে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল। আমরা বিভিন্ন ধরনের ফ্যান্টাসী আহরণ করছি। এরমধ্যে হুট করে রুমার সাথে সাক্ষাৎ। তার সাথেও বান্ধবীরা এসেছে। তার সব বান্ধবীর রুপ সৌন্দর্য ছাড়িয়ে সে অনেকটা জাকালো। আমাদের সবার মাথা ঘুরে গেল। ফ্যান্টাসীতে আসার আগে পূর্বতন অভ্যেস অনুযায়ী কয়েক পেগ মেরে এসেছিলাম। সাথে ছিল গাঁজা। বাস থেকে নেমে এখানে ঢুকার আগে পাঁচটা স্টিক পাঁচ জনে মেরে এসেছি। তার প্রভাবে ফ্যান্টাসী আরো চরমে। রুমাকে মনে হচ্ছে স্বর্গীয় কোন দেবী। তার বান্ধবীদের সবার চোখ গলে তার দিকেই নজর যাচ্ছিল। কি এক স্বর্গীয় টানে পিছু নিলাম তাদের। তারা বের হয়ে যে বাসে উঠলো আমরাও সেই বাসে উঠলাম। রুমা যেখানে নেমে গেল আমরাও সেখানে সদলবলে নেমে গেলাম। তার বাসা পর্যন্ত ফলো করলাম। কিছুদুর যাওয়ার পর একটা বিশালাকার গেট ওয়ালা দোতলা বাসায় ঢুকে গেল। "রহমান ভিলা" রুমাদের বাসার গেটে বড় করে লেখা। এরকম বড় বাড়ী এ তল্লাটে একটিও নেই। বুঝতে বাকী রইলো না এলাকার প্রভাবশালী লোক এরা। তাই এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সটকে পড়া যায় তত ভাল। তা নাহলে দেখা যাবে বাড়ীর কুকুর দিয়ে তাড়াবে। তড়িঘড়ি করে সেদিনের মত কেটে পড়লাম।

রাতে সবাই মিলে ফন্দি করলাম কিভাবে নাম্বার ম্যানেজ করা যায়। কোন উপায়ান্তর না দেখে আপাতত সভার সমাপ্তি ঘোষণা করলাম। বন্ধুদের চোখে ছাই দিয়ে পরের দিন সকালে রুমাদের এলাকায় গিয়ে এক ফ্লেক্সির দোকান থেকে নাম্বার সংগ্রহ করলাম। এরপর বাকীটা ইতিহাস। রুমা এখন আমার বউ। বিয়ের সময় বন্ধুরা কেউ কেউ ক্যু করতে চেয়েছিল। কারণ হরিণী দেখলে সব বাঘেরী পেট চো চো করে। দাঁত খিটমিট করে। যাই হোক, কোন এক অজানা কারণে তারা কাজী অফিসে সাক্ষী হিসেবে দস্তখত করেছিল।

বিয়ের সময় চালচুলো ছিলনা। এখন আমার হাই প্রোফাইলের কারণে সেই বিয়েটাকে বাস্তব রুপ দিতে চাই। এজন্য উঠে পড়ে লেগেছি। কিন্তু...তার প্রচন্ড ইগো সম্পন্ন বাপের কাছে প্রস্তাব উত্থাপন সে এক মহাপ্রলয়। সেই চিন্তা মাথায় ঢুকলেই খাবি খাচ্ছি।

কয়েক দিন হলো একটা অফিসিয়াল প্রয়োজনে সিলেটে এসেছি। রুমা যথারীতি এখনো বাপের বাড়িতে। ইতোমধ্যে আমার বন্ধুদের সাথে তারও খাতির জমেছে। ভয়ে আছি বাঘদের কবলে আবার আত্মাহুতি দেয় কিনা।
এজন্য অনেকবার ফোন দিয়ে তাদের সাথে মিশতে মানা করেছি। কিন্তু এই যুগে এসে কেইবা কার উপদেশ শোনে। এর মধ্যে একদিন ফোন দিয়ে জানতে পারি সে এখন বান্দরবানে। মনে একটা পাপবোধ কাজ করছে। গোপনে বিয়ে করেছি অথচ মেয়েটাকে এখনো ঘরে তুলে নেইনি। কোথাও ঘুরাতে পারিনি। এদিকে সময়ও বেশ গড়াচ্ছে। হয়ত আর কিছুদিন পর রুমার পড়ালেখা শেষ হলে তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য তার ফেমিলি তোড়জোড় শুরু করবে।

পরের দিন ফোন দিয়ে শুনলাম। সে একটা জরুরী প্রয়োজনে ঢাকায় ফিরেছে। যাক! হাফ ছেড়ে বাচলাম। শেষ পর্যন্ত বাঘের কবল থেকে সে মুক্ত হলো। চারিদিকে যে হারে ধর্ষণ বেড়ে গেছে। তাতে করে ভয় হয়। রুমার ক্ষেত্রে ভয়টা আরও প্রকট। একটা চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তাকে এখানে ডেকে আনলে কেমন হয়। আমার এখানে তো থাকার সমস্যা নেই তেমন। এক্ষেত্রে একটা সমস্যা হবে। তার ফেমিলির লোকজন জানতে চাইবে সিলেটে কেন আবার। গতকালকেই তো বান্দরবান থেকে ফিরলি। তাকে ছোট্ট একটা বুদ্ধি বাতলে দিলাম। বলো যে সিলেটে আমাদের ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা স্টাডি ট্যুরে দুদিনের জন্য যাচ্ছি। সেই মতই বাসায় বুঝালো। রাতের বেলা ফোন দিয়ে জানলাম পরদিন সকালে সে গাড়ীতে উঠবে।

পরের দিন বিকেলে বাসষ্ট্যান্ড থেকে তাকে রিসিভ করলাম। চার পাঁচ ঘন্টার জার্নিতে মনে হচ্ছিল সে সুদূর দোযখ থেকে এসেছে। আমার হোটেলে এসে ফ্রেস হলো। ফ্রেস হওয়ার পর তার জার্নির বিধ্বস্ত ভাবটা দূর হলো। এখন তাকে জাকালো একজন রমনী মনে হচ্ছে। একটা বিষয় মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। রুমাকে আগের তুলনায় কয়েকগুন সুন্দরী মনে হচ্ছে। একটু পরে বাইরে বের হলাম। একটা হোটেলে খেয়ে দেয়ে সিলেট শহরের আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে নিলাম। ঘুরতে ঘুরতে রাত দশটা বেজে গেছে প্রায়। রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।

রাতে আরামদায়ক একটা ঘুম হলো। এরকম ঘুম জীবনে খুব কম সময়ে হয়েছে। সাথে রুমা থাকায় একটা ভালবাসার আশ্রয় থাকায় ঘুমটা আরো বেশী গভীর হয়েছিল। কি সব সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখেছিলাম তার কিছুই মনে নেই। শুধু মনে আছে সব স্বপ্নের শেষে এক সুন্দর হরিণ কয়েকটা বাঘ দ্বারা আক্রান্ত হয়।

সকালের নাস্তা সেরে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম। আজকে কোন অফিসিয়াল কাজ কাম করার কথা না। আজ শুধু ঘুড়াঘুড়ি করার দিন। সেই মোতাবেক প্রথমে আমরা জাফলং যাচ্ছি। সাথে আছে অফিসের মাইক্রোটা আর একজন ইয়াং ড্রাইভার। ড্রাইভার বেশ চটপটে। মাঝেমাঝে একটা দুইটা হাসির কথা বলে। রুমা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খায়। বুঝিনা রুমা আমার কথায় যতটানা আনন্দ পাচ্ছে ড্রাইভারের কথায় কয়েকগুন বেশী পাচ্ছে। নিজেকে হিংসে করে ড্রাইভারের আসনে বসাতে ইচ্ছে করছে। ড্রাইভার হতে ইচ্ছে করছে। এই কথা ভাবতে ভাবতে মনে মনে নিজেকে ড্রাইভারের আসনে বসালাম। সেখানে আর এক ঝামেলা ড্রাইভার পিছনে আসলে রুমাকে আরও পর পর মনে হবে। গতকাল গাড়ীটা একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে সামনের গ্লাসের বামপাশটা কিছুটা ভেঙ্গে গেছে। যার দরুন ফুটা গলে কিছুটা বাতাস আসে গাড়ীতে। এই ঠান্ডায় সামনে বামপাশে কেউ বসার অপশন নেই। হুট করে গাড়ীর ব্রেক হলো। ভাবনায় ছেদ পড়লো। জানলা গলে দেখি মেইন রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে একটা কুকুর দম্পতি জৈবিক ক্রিয়ায় মত্ত। বুঝিনা এত ঝোপঝাড় আর আড়াল থাকতে কুকুর দম্পতি রাস্তার মাঝখানে এসে এই কাম করে কেন! এই এনিমেল প্রজ্ঞা আজকাল বোধয় কুকুর থেকেই মানুষের মাঝে সঞ্চার হয়েছে। তা নাহলে চারিদিকে যেখানে সেখানে এত সব ধর্ষণ ঘটে কেন! হয়ত প্রাকৃতিক নির্বাচন। একদিন মানুষ এনিমেল থেকে এসেছে। আবার উল্টো ঘটছে। হয়ত দেখা যাবে কিছুদিন পর এনিমেল হুটহাট মানুষ হবে। মানুষ হুটহাট এনিমেল। এই কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কেন জানি নিজেকে কুকুর শ্রেণীর প্রাণী মনে হচ্ছে। চারিদিকে যত্রতত্র সেক্স। ধূর। গাড়ী আবারো চলা শুরু করেছে। রুমার উচ্ছ্বল ভাবটা একদম নেই। তাকে যতটানা সুন্দরী মনে হচ্ছে তার চাইতে বেশী ঘুমন্ত বালিকা মনে হচ্ছে। তার চোখে মুখে কিসের একটা ছায়া ঘুরপাক খাচ্ছে।

আমরা জাফলঙে এসেছি। একটা নৌকা ভাড়া করে উঠে পড়লাম। সাথে ড্রাইভার আছে। তাকে ক্যামেরা দিয়ে ছবি উঠাতে বললাম। সে একটার পর একটা ছবি তুলে যাচ্ছে। আমরা কখনো পাথরের উপর দাঁড়িয়ে, কখনো বা বসে ছবি তুলছি। রুমাকে একটা পাথরের উপর বসিয়ে ডাউকি নদীর পানিতে পা ভেজাতে বললাম। সুন্দর একটা স্নাপ এসেছে। একটা প্রচন্ড বাতাস এসে তার চুল নাড়িয়ে দেয়ায় ছবিটা আরও দুর্দান্ত হয়েছে। জাফলঙে ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে গেল। আমরা তাড়াতাড়ি করে এসে গাড়ীতে উঠলাম। কলা, বিস্কুট, পেপে, কমলা, আপেল সহ বেশ কিছু শুকনো খাবার নিয়েছিলাম। আজকে কোন ভারী খাবার খাবো না তাই। তা না হলে অনেকটা সময় নষ্ট হবে খাওয়ার পিছনে। আজকে শুধু ঘুরাঘুড়ির দিন। কলা বিস্কুট খেয়ে নিয়ে একটা সিগারেট ধরালাম। একটু পরপর সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়ছি জানালা খুলে। সেই ধোঁয়ায় একটা অপরিচিত অবয়ব ভাসছে। সেই অবয়বটাকে কেন জানি রুমা মনে হচ্ছে।

গাড়ী চলছে এখন মাধবকুন্ডের পথে। মাধবকুন্ডের কাছাকাছি এসে গেছি। আবারও হুট করে গাড়ী থামলো। গাড়ীর সামনে দিয়ে একটা মেছো বাঘ দৌঁড়ে গেল। পিছনে জনা দশেক লোক মেছো বাঘটিকে তাড়া করতে ব্যস্ত। একটু পর গাড়ী চলা শুরু করলো। এই সব অতি আগ্রহী অসচেতন লোকদের কারণে আজ দেশের জীববৈচিত্র্য ধর্ষিত।
ধূর। বুঝতে পারছি না। বারবার এই ধর্ষণের চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে কেন! হোয়াট দ্যা ফাকিং জব উইথ মি নাও।

কিছুক্ষণ পর মাধবকুন্ড ঝরণার কাছে পৌঁছলাম। এখন শীত মৌসুম। ঝরণার পানিপ্রবাহ কমে গেছে। কিছুলোক ঝরণার উপরে উঠে কৃত্রিমভাবে পানিপ্রবাহ চালাচ্ছে। ব্যাপারটা চোখে পড়ে হাসির উদ্রেক হলো। পর্যটক ধরে রাখতে মানুষের কতই না কৌশল। অথচ যখন সময় থাকে তখন মানুষ দাঁতের মূল্য বুঝে না। এত বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার তাকে সংরক্ষণ করার কোন চেষ্ঠাই দেখি না। সুন্দরবনের অগাধ জীববৈচিত্র্য তাকে বরং আমার নষ্টই করছি। দেশ জুড়ে কতই প্রাকৃতিক বনায়ন ছিল। আমরা ধর্ষিত করে করছি রুগ্ন নারীর মত। রুমাকে ঝরণার ব্যাপারটা দেখাতে সেও হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিল। সে একটা পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ছিল। হাসতে গিয়ে নিচে পড়ে গেল। এটা বিপদজনক এলাকা। এই খাদে পড়ে সাঁতার না জানা অনেক লোক মারা গেছে। দৌঁড়ে গিয়ে ঝাপ দিলাম খাদে। কয়েক জনের প্রচেষ্ঠায় রুমাকে তুলে আনলাম। তার গায়ে আজ যেন অসুর ভর করেছিল। এই সামান্য পানি থেকে তুলতে কল্পনাতীত কসরত করতে হয়েছে। এখন তাকে বিধ্বস্ত মনে হচ্ছে। ধর্ষিত মনে হচ্ছে। ও সিট। আবারও সেই ধর্ষণ। আই এ্যাম ফিলিং ব্যাডলি সিক!

বিকেল হয়ে গেছে। আরও একটা স্পট বাকী। লাউয়াছড়া উদ্যান যাওয়ার কথা। ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ী চালাতে বললাম। সূর্য ডুবে গেছে প্রায়। হালকা আবছা অন্ধকার চারিদিকে। টিকেট কাউন্টার বন্ধ। টিকেট চেকারকে কিছু বখসিস দেয়াতে ঢুকতে দিলো। চেকার বেশী দূর যেতে মানা করেছে। ট্রেন লাইন পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসতে বলেছে। ট্রেন লাইন পর্যন্ত গেলাম। লাইনের উপর দাঁড়িয়ে কয়েকটা ছবি তুলে ফিরে আসলাম। এখন প্রায় ঘন অন্ধকার। এলাকাটাকে খুব সুবিধার মনে হচ্ছে না। সাথে একজন সুন্দরী নারী থাকায় আরও বেশী নিরাপত্তা সংকটে আছি। ঝরণার পানিতে ভিজে চুপসে রুমার শরীর সংকুচিত। কাপড় কিছুটা শুকালেও তাকে বিপর্যস্ত মনে হচ্ছে। আমিও কিছুটা ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত। সামনে শ্রীমঙ্গল বাজার। ওখানে ভাত খাওয়া যাবে। আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে গাড়ী চলছে। কিছুটা ভয়ও লাগছে। ছমছম করছে শরীর। শ্রীমঙ্গলে পৌঁছে ইষ্টিকুটুমে ঢুকলাম। এই এলাকায় এটাই ভাল রেস্টুরেন্ট। খেতে গিয়ে গপাগপ কয়েক প্লেট ভাত খেলাম। মনে হচ্ছিল কয়েকযুগ পর ভাত খেলাম। বাঙালী একদিন ভাত না খেলে মনে হয় কতদিন না উপবাস আছে। হাহাহা। রুমা কিছু খেল না। সে সারা দিনে তেমন কিছুই খাইনি।

গাড়ী চলছে সিলেটের পথে। নিজেকে কিছুটা বকতে ইচ্ছে করছে। সারাজীবন অন্বেষণ করে একটা ভাল বউ পেলাম। অথচ তাকে এখনো ঘরে তুলতে পারলাম না। রুমাকে বললাম কবে নাগাদ তোমাকে তুলে নিলে খুশী হবে। আনুমানিক সময় বলতে পারো। তোমার পড়ালেখা শেষ না হলে তোমার আব্বু এই ঝামেলায় যেতে চাইবে না। রুমা হ্যা না কোন জবাব দিচ্ছে না। আমি গো ধরলে সে বললো "তুমি বড্ড লেট করে ফেলেছো নিয়াজ। অনেক দেরী।" সময়ের ফসল অসময়ে তুলতে নেই। আজ তুমি ষ্ট্যাবিলিস হয়েছো ঠিকই। কিন্তু সেটা অনেক দেরীতে। রুমার কথায় অনেক শ্লেষ মেশানো। নিজেকে আরও অপরাধী মনে হচ্ছে। তোমার মনে আছে নিয়াজ তোমাকে কতবার বলেছি আমাকে বান্দরবান নিয়ে যাও। আমার পাহাড় ভাল লাগে। পাহাড়ের চূড়ায় বসে আকাশের সাথে কথা বলতে ভাল লাগবে। তা নাওনি। রুমার কথায় একটা রহস্য মাখা গন্ধ। তুমি সুন্দরী বউ পেয়েছো ঠিকই। কিন্তু সৌন্দর্যের মূল্যায়ন সঠিক সময়ে করোনি। তুমিও একজন ধর্ষক। সময়ের ধর্ষক। তার রহস্য মাখা কথা শুনে মেজাজ চরমে উঠলো। নিজেকে ধর্ষক ভাবতেই গা শিরশির করে উঠলো। রুমা বললো,''আমি এখন প্রচন্ড টায়ার্ড। তুমি সামনের সিটে গিয়ে বসো। আমি এখন অনেক ঘুমাবো। অনেক।" বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়লো সে। নিজের কষ্ট হবে। হোক সেটা। সামান্য বাতাসই তো। সেই ঠান্ডা বাতাস কতটুকুই বা ক্ষতি করবে। তার চাইতে রুমা প্রশান্তিতে ঘুমাবে এটাই বা কম কিসে। সামনের সিটে গিয়ে বসে পড়লাম। সিলেটের কাছাকাছি পৌঁছায় ড্রাইভারকে এফএম রেডিও চালাতে বললাম। সুন্দর একটা গান চলছে। "আবার এলো যে সন্ধ্যা। শুধু দুজনে। চলো না ঘুরে আসি অজানাতে.... গানটা শুনতে শুনতে কোন অজানায় হারালাম জানিনা। ফিরে এসে প্রচন্ড এক ঝাকুনি খেলাম। গাড়ী রাস্তার মধ্যে কয়েকপাক ডিগবাজি খেলে একটা গাছের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। সামনের অংশ দুমড়েমুচড়ে গেছে। ড্রাইভারের মাথা কেটে রক্ত বেরোচ্ছে। আমার চিপ গলে অঝর ধারায় রক্ত পড়ছে। ডান পা আটকে গেছে। রেডিওটা এখনো চালু আছে। রেডিওতে সংবাদ প্রচার হচ্ছে "বান্দরবানে বেড়াতে গিয়ে ২৪ বছরের রুমা নামের এক তরুণী সতীর্থ কর্তৃক উপর্যুপরি ধর্ষিত। তরুনী অনেক লজ্জা আর ক্ষোভে পাহাড়ের চূড়া থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে।" গাড়ীর পিছনে তাকিয়ে দেখি রুমা নেই।


ছবিঃ নিজস্ব এ্যালবাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৫
৪৬টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×