somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর সবচে সুন্দর দৃশ্য

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
তমাকে পাওয়া যাচ্ছে না আজ দুইদিন হল। তমার মা বারবার অজ্ঞান হচ্ছেন, বাবা হতবাক। ইতমধ্যে যত যায়গায় সম্ভব খবর নেওয়া হয়েছে। জানাজানির ভয়ে পুলিশকে জানানো হয়নি, তবে এখন আর না জানিয়ে থাকা যাবে না। তমার বাবাকে নড়ানো গেল না, শেষমেশ ওর মামা আতিক সাহেব গেলেন থানায়। থানায় জিডি করার পর ওসি সাহেব তমাকে জড়িয়ে অনেকগুলো আপত্তিকর প্রশ্ন করলেন, প্রতিটা প্রশ্নেই আতিক সাহেবের গায়ে আগুন ধরে যাচ্ছিল, কিন্তু কিছু করার নেই। ঠাণ্ডা ভাবেই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেন।
ওসি সাহেবও টের পাচ্ছিলেন আতিক সাহেবের ভিতরের অক্ষম আক্রোশ। সে কারণেই সাধারণ কিছু প্রশ্নকেই বাচনভঙ্গি আর শব্দচয়নের ভিত্তিতে অশ্লীল আর কটু করে তুলছিলেন।
কথা শেষে যত দ্রুত সম্ভব কিছু করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদায় দিলেন তিনি।
- ঠিক কতদিন লাগতে পারে?
না চাইতেও কথাটা মুখ ফসকে বের হয়ে গেল আতিক সাহেবের।
জবাবে যা শুনলেন, তাতে রাগে চোখে প্রায় পানি এসে গেল। দ্রুত থানা থেকে বেরিয়ে আসলেন। মনে মনে দোয়া করছেন, আল্লাহ আজকে এর কাছে ঠ্যাকা বলে অপদস্থ করল, এমন দিন যেন আসে যেদিন এই ব্যাটা আমার কাছে ঠ্যাকা থাকে আর আমি এর বদলা নিতে পারি। কিন্তু একজন মুদি দোকানদারের কাছে পুলিশ অফিসার কিভাবে ঠেকতে পারে তা আল্লাহই ভালো জানবে।
খোলা হাওয়ায় এসে তমার কথা মনে পড়তে চোখে এবার সত্যি পানি চলে এল।
তমা, মাত্র ইন্টারমিডিয়েটে পড়ে। খুবই ভাল মেয়ে। একমাত্র বোনের বড় মেয়ে, তাই ছোটবেলাতে তার কোলে পিঠেই বড় হয়েছে বলা চলে। কাউকে না জানিয়ে নিজে থেকে কোথাও চলে যাওয়ার মত মেয়ে ও কখনোই না। অবশ্যই ওর কোন বিপদ হয়েছে। এই বয়সের একটা মেয়ের কি কি বিপদ হতে পারে, সেসব ভেবে আতিক সাহেবের বুকটা আতঁকে উঠল।

সাভার থানার ওসি নেয়ামত সাহেব খুব বিরক্ত। আজকালকার গার্জিয়ানগুলো যে কি? একটা দুইটা বাচ্চা, তাও সামলাইতে পারে না। তারা নিজেরা ৮ ভাই বোন। কই তারা সবাই তো ঠিকমতোই বড় হইসেন। আর এখন সপ্তায় একটা দুইটা নিখোঁজ কেস আসবেই। তার মধ্যে বেশিরভাগই স্বেচ্ছায় পলায়ন। যাবি তো যা, যাওয়ার আগে একটা চিঠি রেখে যা। তা না, মাঝখান থেকে পুলিশের হয়রানি। ইদানীং দেশের সব মানুশেরই জ্যাক আছে কিনা কে জানে? কেস আসার আগে উপর থেকে চাপ চলে আসে।
এখন যেমন একটা আসছে। মেয়ে নিখোঁজ। মেয়ের কোন ধরণের দোষ নাই। দোষ নাই কে কইছে? বাড়ি থেকে না বলে চলে গেছে, এইটা দোষ মনে হয় না? এইটা দোষ না হইলে আবার পুলিশে খবর দেওয়ার দরকার কি?
আপাতত কিছু করার নাই। তমার শারীরিক বর্ণনা দিয়ে থানায় থানায় পাঠিয়ে দিলেন। যেন এ ধরণের কাউকে জীবিত বা মৃত যেভাবেই পাওয়া যাক তাকে যেন জানানো হয়। তিনি অবশ্য খবর পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী না। অভিজ্ঞতা বলে সপ্তাখানেক বাদে দেশের কোন এক প্রান্তের কোন জেলা থেকে এ মেয়ের খোঁজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। দেখা যাক, কি হয়।

২.
তমা এই মুহুর্তে মেঝেতে পাতা একটা তোশকের উপর শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে নেই, কিন্তু নড়াচড়া করছে না। কারণ নড়াচড়া করার মত শক্তি তার নেই। গত দুই দিন সে না খাওয়া। শুধু ১ লিটার পানি পেয়েছে খাওয়ার জন্য। শুরুতে যখন লোকটা তাকে পানিটুক দিয়ে বলেছিল, আগামী তিনদিন সে খাওয়ার জন্য কিছুই পাবে না, তখন বিশ্বাস হয়নি। ভেবেছিল মিথ্যে ভয় দেখাচ্ছে, তিনদিন নিশ্চয়ই না খাইয়ে রাখবে না। তাই পানিটুক সে প্রথম রাতেই শেষ করে ফেলেছিল। কিন্তু সত্যিই সে আর কিছু পায়নি। গত দুদিন চিৎকার চেচামেচি করেছে খুব। তাতে শুধু শরীরের শক্তিই ফুরিয়েছে, কোনো লাভ হয়নি। কারণ রুমটা সাউন্ডপ্রুফ। ডিহাইড্রেশনের কারণে সারা শরীর জ্বলছে, মাথা ঝিমঝিম করছে, চোখ ফেটে কান্না আসছে কিন্তু পানি বেরুচ্ছে না।
মা বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে, তাদেরচে আপন আর কেউ হয় না। কদিন আগেও অবশ্য ও ভাবত,ওর স্বপ্ন পূরণের পথে তারাই একমাত্র বাধা। কারণ তমার সাথে একটা ছেলের সম্পর্ক আছে জানতে পেরে, ছেলেটাকে ওর বাবা অপমান করেছিলেন এবং তমার ফোন সহ অন্য আরো অনেকগুলো সুবিধা কেড়ে নিয়েছিলেন। ঘর থেকে বেরুনো বন্ধ ছিল। বাইরে গেলেও সাথে অবশ্যই কোনো অভিভাবক থাকবেন। মাসখানেক এভাবে চলার পর, কিছু বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে তমা আবার কলেজে যাওয়া শুরু করে। প্রথম দিনেই ও ছেলেটাকে ফোন করে। ভেবেছিল ছেলেটাও ওর জন্য এতদিন বিরহে অস্থির হয়ে আছে। কিন্তু হল সম্পুর্ণ উল্টোটা। ছেলেটা ওকে আর যোগাযোগ করতে না করল। তমা অনেক অনুরোধ করল। এমনকি সব ছেড়ে ছেলেটার সাথে পালিয়ে যেতেও রাজি ছিল কিন্তু ছেলেটা বলল, জীবনটা সিনেমা না, সে পারবে না তমাকে তার বাবার কাছ থেকে ছিনিয়ে আনতে।
আরো কয়েকদিন চেষ্টা করল ও, কিন্তু ছেলেটার মন আর গললই না। তমার বাবা যেহেতু তাকে একদমই পছন্দ করেনি, সে আর তমার সাথে সম্পর্ক রাখবেই না। জীবনের প্রতি সব মায়া মহব্বত মূহুর্তেই চলে গেল তমার। ঘুমের ওষুধ কিনতে গেল সে। কিন্তু প্রেসক্রিপশন ছাড়া কম্পাউণ্ডার দিতে রাজি হল না। বলল, ভিতরে ডাক্তার আছে দেখিয়ে আসতে। কি মনে করে সে গেল ডাক্তারের কাছে। খুবই হাশিখুশি অমায়িক ভদ্রলোক। কিভাবে কিভাবে কথা বলতে বলতে সবই বলে ফেলল ডাক্তারকে। নিজের দুঃখগুলো শোনানোর জন্য এত মনযোগী শ্রোতা আগে কখনো পায়নি ও। ডাক্তার সাহেব তাকে অনেকগুলো উপদেশ দিলেন। লেখার প্যাড, কলম গিফট করলেন। আবার মন খারাপ হলে আবার তার কাছে যেতে বললেন।
এরপর কয়েকদিন ভালই গেল, তমা স্বাভাবিক হচ্ছিল ধীরে ধীরে। কিন্তু একদিন কলেজ থেকে বান্ধবীদের সাথে শপিঙে যাওয়ায় বাসায় ফিরতে দেরি হল। আর ওর বাবা কোনো কিছু না শুনেই, ছেলেটার প্রসংগ তুলে তাকে খুব বাজে ভাষায় বকাবকি করলেন। এমনকি মাও ওকে সাপোর্ট দিলেন না। ওর কাছে মনে হল শুধুমাত্র মরলেই ওর বাবা মা খুশি হবে। আবার ছুটল ও ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারের স্বান্তনা বাণীতেও এবার কাজ হল না। ও মরবেই। শেষমেশ ডাক্তার রাজি হলেন। তিনি কথা দিলেন সম্পূর্ণ ব্যাথামুক্ত ভাবে ওকে মারার ব্যবস্থ করে দেবেন। কিন্তু এখানে তো আর সেটা করা সম্ভব না। তার সাথে এক জায়গায় যেতে হবে। তমা রাজি হয়ে গেল। ডাক্তার তাকে বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বললেন। কিছুক্ষণ পর ডাক্তারের মোটর সাইকেলে করে ও এই বাড়িতে এল। তখনও তমার মনে শুধুই ছিল অন্ধ রাগ। ও কি করছে, কোথায় যাচ্ছে সেদিকে কোন খেয়ালই ছিল না। যখন হুশ হল, নিজেকে আবিষ্কার করল এই রুমে। সাথে শুধু ১ লিটার পানি। ডাক্তার ওকে রেস্ট নেওয়ার জন্য এই রুমে একটু বসতে বলেছিল। তারপর সেই যে দরজা বন্ধ হয়েছে, আর খোলেনি। তিনদিন খাবার দেওয়া হবে না, এই ঘোষণা দিয়ে সেই যে ডাক্তার গেছে, আর আসেনি।
সারা রুমে শুধু একটা তোষক ছাড়া আর কিছু নেই। তাতে চাদরও নেই। এক পাশের দেয়ালে লাল রঙের ছোপ।
মোটা কাচের স্লাইডীং ডোর। তাতে লাথি, কিল মেরে পা হাত ব্যাথাই হয়েছে শুধু। রুমে এসি আছে, তবে বাতাস কোনদিক দিয়ে ঢোকে তা বের করতে পারেনি।
রুমের এক কোণায় একটা ফুটো আছে। ওটা নাকি টয়লেট করার জন্য। ইয়াক! ওটা দেখেই টয়লেট করার সব ইচ্ছা চলে গেছে তমার। গত দুদিন টয়লেট পায়নি, আর পাবেও না বোধহয়। তবে এই ফুটোটা সম্ভবত বাড়ির মেইন টয়লেটের লাইনের সাথে লাগানো না। কারণ, ফুটোর উপর হাত রাখলে খুব হালকা বাতাস চলাচল টের পাওয়া যায়।
রুমের ছাদের কাছটা কাচের। তা দিয়েই দিন আর রাত বোঝা গেছে।
দুদিন নানাভাবে ও চেষ্টা করেছে বাইরের দৃষ্টি আকর্ষণ করার। লাফিয়ে ছাদের কাছটার কাচে হাত দিয়ে বাড়ি দিয়েছে, চিৎকার চেঁচামেচি, তোষক ধরে আছড়ানো এবং থাকতে না পেরে, টয়লেট করার ফুটোটা দিয়ে চিৎকার করে সাহায্য চেয়েছে কাজ হয়নি।
শেষমেশ সব শক্তি হারিয়ে তোষকের উপর পড়ে আছে।

৩.
পরদিন দুপুর নাগাদ ওসি নেয়ামত সাহেব তমাদের বাসায় গেলেন। এখন পর্‍্যন্ত কোনো রিপোর্ট না আসায় একটা রুটিন ইনভেস্টিগেশনের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই বাসার পরিবেশ খুবই স্তব্ধ। প্রশ্ন করে কারো কাছ থেকেই ঠিকমত উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। শেষমেশ ওসি সাহেব ক্ষেপে গেলেন।
- এভাবে করলে মেয়েটাকে খুজে বের করব কিভাবে? হুম। আপনারা কি আমাকে সাহায্য করতে চাননা নাকি? এভাবে থম মেরে বসে থাকলে কি মেয়েটা অটো ফিরে আসবে?
এবার সবার মুখে কথা ফুটল। তমার বিস্তারিত ইতিহাস শুনে ওসি সাহেব বেশ তৃপ্তি বোধ করলেন। তার অনুমান ঠিক আছে। কালকে যে ব্যাটা কেস করতে গেছিল, তাকে পেলে ভালো হত। আরো একটু রগড়ে দেওয়া যেত। ব্যাটা বলে কিনা মেয়েটার কোনো দোষ নেই।
- গতকাল যে ভদ্রলোক থানায় গেলেন, উনি কোথায়? কালতো আমাকে এসব কিছুই বলেননি।
- উনি এসব কিছুই জানেন না।
- তা মেয়ে যখন রাগ করে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন কেউ দেখেন নাই?
- জ্বী না। দেখলে কি আর বেরুতে পারতো?
- এইসব পেরেম পিরিতি যখন পছন্দই করেন না, তো ছেলে মেয়েকে সেইভাবেই মানুষ করতে পারেন নাই?
- আমরা কি অদেরকে প্রেম করার তালিম দিয়েছি?
- ডাইরেক্টলী দেন নাই, ইনডাইরেক্টলী দিছেন।
- কিভাবে?
- এখনকার মেয়েরা সারাদিন সিরিয়াল দেখে। আর সিরিয়ালে এইসব ছাড়া আর আছে কি? কেউ যদি সারাদিন মানুষরে প্রেম করতে দেখে, তাইলে নিজের কি মন চাইব না?
তমার বাবা আর কিছু বললেন না। মন মেজাজ খারাপ। পুলিশ ব্যাটার সাথে অনর্থক তর্ক করতে ইচ্ছে করছে না। এর বাসার টিভিতে সবাই কি দেখে তা জানতে ইচ্ছে করছিল কিন্তু জিজ্ঞেস করলে ব্যাটা আবার মাথা গরম করা উপদেশ দেওয়া শুরু করবে ভেবে আর করলেন না। ওসি সাহেবই আবার বললেন,
- মেয়ের সাথে মোবাইলও নাই। থাকলে তাও ট্রেস করার একটা চেষ্টা করা যেত।
আরো কিছুক্ষণ বকবক করলেন উনি। কিন্তু ছেলেমেয়ে মানুষ করা বিষয়ে উনার লেকচারে কারো বিশেষ আগ্রহ দেখতে না পেয়ে তমার একটা ছবি এবং ওর প্রাক্তন প্রেমিক আর কয়েকজন বান্ধবীর ফোন নাম্বার নিয়ে বেরিয়ে এলেন।
থানায় ফিরে তমার বান্ধবীদের ফোন দিলেন। প্রচুর ধমক এবং হুমকির পরও কেউ তমার খবর দিতে পারলো না। তমার প্রেমিক নাম্বার বদলে ফেলেছে। তাই তার হোস্টেলে খোঁজ করতে গেলেন। ওসি সাহেবকে অবাক করে দিয়ে বহাল তবিয়তেই তাকে হোস্টেলে পাওয়া গেল। তমা যাতে তার সাথে আর যোগাযোগ করতে না পারে সে জন্যই সে নাম্বার বদলেছে। তাকেও প্রচুর ধমক দেওয়া হল কিন্তু কাজ হল না। সেও জানে না তমার খোঁজ। তমাকে খুজে পাওয়ার আগ পর্‍্যন্ত যেন সে কোথাও না যায় এবং যদি তমার নিরুদ্দেশ হওয়ার সাথে তার কোন সংযোগ পাওয়া যায় তাহলে তার পরিনতি কি হতে পারে সে বিষয়ে সাবধান করে ওসি সাহেব বিদায় নিলেন।
খবরটা শুনে তমার প্রেমিক মানে শফিকের মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। তমাকে সেও ভিতরে ভিতরে খুব পছন্দ করত। নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে ও। তমার বাবা তাকে যেসব কথা শুনিয়েছেন, আর যেসব শর্ত দিয়েছেন, সেসব পূরণ করা তার পক্ষে কখনোই সম্ভব না। তাই কষ্ট হলেও, নিজের মনকে বুঝিয়ে ও সরে এসেছিল। কিন্তু তমা পারেনি। তমা হয়ত ওর কারণেই এটা করেছে।
সেই অপরাধবোধ থেকেই ও বিকেলে তমাদের বাড়ি গেল। ওকে সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত করে দিয়ে তমার মা তাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দিলেন। তার একটাই মিনতি, ‘আমার মেয়েকে এনে দাও। তোমরা যা চাও সেটাই হবে। যেখান থেকে পার আমার মেয়েকে এনে দাও।’ তমার বাবা যদিও কিছু বললেন না। কিন্তু তার চোখে মুখেও একই আকুতি ধরা পড়ল। আগের চেয়ে মনটা আরও বেশি খারাপ করে সে ওখান থেকে বেরিয়ে এল।
তমাদের বাসার গলি থেকে বেরুতেই কয়েকটা ফার্মেসী চোখে পড়ল। তমা ওকে বলেছিল যে, ওর সাথে রিলেশন না রাখলে ও সুইসাইড করবে। সেই ভাবনা থেকেই শফিক ফার্মেসীগুলোর দিকে এগিয়ে গেল। মোবাইলে তমার ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করল যে মেয়েটা কখনো ঘুমের ওষুধ কিনেছে কিনা। দ্বিতীয় দোকানেই চিনতে পারল তমাকে। তমা ঘুমের ওষুধ কিনতে এলেও ডাক্তারের কাউন্সেলিং এর কারণে না কিনেই ফিরে যায়, এটা শুনে মনে মনে ডাক্তারের উপর খুব খুশি হল ও। তমা যেদিন নিখোঁজ হয় সেদিনও ডাক্তারের কাছে এসেছিল শুনে ও ডাক্তারের সাথে দেখা করতে চাইল। হয়ত ডাক্তার কিছু জানতে পারেন। কিন্তু ডাক্তার নাকি আজ চেম্বারে আসবেন না। তাই সে ডাক্তারের বাসার ঠিকানা নিয়ে নিল। দেরি করা যাবে না। যত দ্রুত সম্ভব তমাকে খুজে বের করতে হবে।

৪.
সারা দিন শেষে বিকেলে ডাক্তার এলেন তমার কাছে। ডাক্তারকে দেখেই উঠে বসতে চাইল সে, কিন্তু ডাক্তার তাকে নিষেধ করলেন। মুখের হাসিটা ধরে রেখে অভয় দিলেন যে, তিনি ওকে কিছু করবেন না। ডাক্তার নিজেও মেঝেতেই বসলেন। ঘোর লাগা বড় বড় চোখ করে তমা তার দিকে তাকিয়ে রইল। ওর চেতনা অবলুপ্ত প্রায়। আর কোন ক্ষতিতেই ওর আর কিছু এসে যায় না। কিন্তু তার পরও ওর চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।
- আরে বোকা মেয়ে কাঁদে কেন? আমি তোমাকে কিচ্ছু করব না। বিশ্বাস কর। না খেয়ে আছ বলে কষ্ট হচ্ছে? আজ রাতেই তোমাকে খেতে দেব। প্রমিস। সন্ধ্যার পর আমরা দুজন মিলে একটা এক্সপেরিমেন্ট করব। খুব সহজ এক্সপেরিমেন্ট। তোমার গায়ে টাচও করব না আমি।
তমা নিরুত্তর। শুধু চোখ দিয়ে পানি ঝরছে।
- আমার কথা বিশ্বাস হয়না, তাইতো? পুরোটা ব্যাপারটা তোমাকে ব্যাখ্যা করে বলি, তাহলে বিশ্বাস হবে। আর তুমি আমাকে এক্সপেরিমেন্টে সাহায্য করতে পারবে। ঠিক আছে?
তমা তাও নিরুত্তর। ডাক্তার কিছুক্ষণ চুপ থেকে নিজেই শুরু করলেন,
- আচ্ছা, পৃথিবীর সবচে সুন্দর দৃশ্য কোনটা, তা কি তুমি জান তমা? তুমি অনেক জায়গায় ঘুরেছ টুরেছ। তাই হয়ত এর উত্তরে তুমি বলবে কোনো জায়গার নাম বা খুব ভাব ভালবাসার কোনো দৃশ্য। আমার জীবনে আমি এলাকার বাজার ছাড়া আর কোথাও ঘোরার সুযোগ পাইনি। ছোট বেলাতেই বাবা মারা যায়, চাচারা বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়। নিজের মামার বাসায় কাজের লোকের মত থেকে বড় হয়েছি। তাই ভালবাসা জিনিসটা সেভাবে পাওয়া হয়নি। তাই এসব বিষয়ের কোন স্মৃতি আমার নেই। ভাবতামও না। একদিন আমাদের ক্লাসে বাংলা স্যার বাড়ির কাজ দিলেন, ‘আমার দেখা সবচে সুন্দর দৃশ্য’ এই শিরোনামে একটা রচনা লিখতে হবে। স্যার এরকম প্রায়ই আনকমন টপিকে রচনা লিখতে দিতেন। বাসায় ফিরে লিখতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, ঈদের দিন মামী যখন আমার পাতে একটা প্রমাণ সাইজের মাংস তুলে দেন, তখন সেই প্লেটের চে সুন্দর দৃশ্য আমি আর জীবনে দেখিনি। দুই ঈদের পর প্রায়ই ঘুরে ফিরে আমি এই দৃশ্যটা কল্পনা করি। আমি খুব করে ভাবতে থাকলাম। বহু চেষ্টাতেও আমি এরচে ভালো কোনো দৃশ্য মনে করতে পারলাম। বরং ভাবতে গিয়ে জীবনের দুঃসহ স্মৃতিগুলোই বারবার ফিরে ফিরে এল। খাতা ফেলে হাউমাউ করে কাদতে লাগলাম। পরদিন বাড়ির কাজ আর দেওয়া হল না। স্যার কানে ধরে দাঁড় করিয়ে রাখলেন। ঐ ক্লাসের পর ঐ রচনার আলোচনাও বন্ধ হয়ে গেল। স্যার নতুন রচনা দিলেন। কিন্তু আমার মনে জিনিসটা গেথে গেল। আমি পাগলের মত আমার জীবনের একটা সুন্দর দৃশ্য খুজতে লাগলাম। মানুষের হাসি খুবই সুন্দর হওয়ার কথা কিন্তু আমার মামী কিংবা মামাতো ভাইরা আমার সাথে তখনই হাসে যখন আমাকে বা আমার মাকে অপমান করতে পারে। সেই হাসি পৃথিবীর সবচে কুৎসিত দৃশ্য। আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজি করি না। করার সময় পাই না। কারণ স্কুলের বেতনের বিনিময়ে মামার বাসায় আমাকে কাজের লোকের বিকল্প সেবা দিতে হয়। ফলে এই সম্পর্কিত কোন স্মৃতিও আমার নেই। কিন্তু আমি আমার প্রতি পদক্ষেপে একটা সুন্দর দৃশ্য খুজতে লাগলাম। বিভিন্ন কবি বা লেখকদের লেখা পড়ে পড়ে, তাদের বর্ণিত সুন্দর দৃশ্যগুলো দেখে বেড়াতাম। কিন্তু জীবন যুদ্ধের একজন ব্যর্থ সৈনিকের কাছে কি আর ফুল পাখি, লতা পাতা ভালো লাগে? তাই যত যা-ই দেখি, আমার কাছে কিছুই সুন্দর মনে হয় না। অনেক খুজেও না পেয়ে আমি ভাবলাম, আমার জীবনে বোধহয় কোন সুন্দর দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আসবে না। কিন্তু না। আমার ধারণা ভুল। পৃথিবীর সবচে সুন্দর দৃশ্যটা দেখার সৌভাগ্য আমার হল।
বলে ডাক্তার চুপ করে গেলেন। ছাদের দিকে তাকিয়ে তিনি দৃশ্যটা মনে করার চেষ্টা করলেন। মনে করতে পেরে সন্তুষ্ট হয়ে তমার দিকে তাকিয়ে আবার একটা হাসি দিলেন।
- সুন্দর দৃশ্যটা যে এরকম হতে পারে, তা আমি জীবনেও ভাবিনি। মেডিকেলে চান্স পেয়ে মাকে যখন খবরটা দিলাম, মা আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেদে উঠেছিল। আমি মায়ের মুখটা দুহাতে জড়িয়ে ধরে অশ্রু মুছিয়ে দিয়েছিলাম। তখন দেখেছিলাম, অশ্রুর আড়ালে মায়ের চোখ দুটো কী এক অনাবিল উল্লাসে উদ্ভাসিত। তা দেখে আমি সব ভুলে গিয়েছিলাম। সারা জীবনের দুঃখ, কষ্ট, গ্লানি- সব। আমি আমার মাকে আর কখনোই এত বেশি খুশি করার সুযোগ পাইনি। তাই এই সুন্দর দৃশ্যটা আর আমার দেখার সৌভাগ্য হয়নি। হয়তো, যেদিন ডাক্তার হলাম, সেদিন যদি মাকে এসে সালাম করে বলতাম, ‘মা তোমার ছেলে আজ থেকে ডাক্তার, তোমার সব কষ্ট থেকে আজ মুক্তি।’ সেদিন হয়তো এর চেয়েও বেশি খুশি হতেন। কিন্তু তার আগেই মা আমাকে মুক্তি দিয়ে ঠুস করে মরে গেলেন।
আবার কিছুক্ষনের নীরবতা।
- তবে ঐদিনের পর থেকেই আমার একটা অভ্যাস হয়ে গেল বিভিন্ন অনুভূতিতে মানুষের চোখ খেয়াল করা। কারণ আমি পাগলের মত এই সুন্দর দৃশ্যটা আর একবার দেখতে চাইতাম। এভাবে আমি একটা জিনিস বের করলাম, চেহারা মিথ্যা বললেও চোখ মিথ্যা বলে না। তার প্রমাণ আমি ঐদিনই পেয়েছিলাম। প্রিয় বন্ধু মানিকের চোখে। আমার ক্লাসের ফার্স্ট বয়। আমাদের কলেজ থেকে একজনও যদি ভালো কোথাও চান্স পায় তো মানিকের পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু পেয়ে গেলাম আমি। মানিক পায়নি। আনন্দের আতিশয্যে মানিককে জড়িয়ে ধরে যখন খবরটা দিলাম, তখন ও হাসিমুখেই বলেছিল, কনগ্রাটস। কিন্তু ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সেখানে কোন ভাষা নেই, ওর চোখ হাসছে না বরং কেমন পাথুরে শীতলতা সেখানে। একই জিনিস দেখেছিলাম মামী আর মামাতো ভাই বোনদের চোখে। খুব অবাক হয়েছিলাম সেদিন। কিন্তু পরে আবিষ্কার করলাম, আমি নিজেই প্রত্যহ এই অভিনয়টা করি। মামার আন্তরিকতা থাকলেও, মামীর ক্যাচক্যাচানিতে প্রতিটা দিন দুর্বিসহ হয়ে উঠত। তাইতো প্রতি রাতে মায়ের স্বান্তনার জবাবে কিংবা ঈদে মামাতো ভাইয়ের পুরনো কাপড় নতুন জামা হিসেবে পেয়ে কিংবা এই আকালেও মামী আমাদের আশ্রয় দিয়ে অসীম মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন, এ ধরণের কথার জবাবে আমি যে হাসিটা দিতাম তা আর মানিকের হাসি একই ছিল।
তারপর থেকেই আস্তে আস্তে আইডিয়াটা আমাকে পেয়ে বসল। হাসির সাথে কান্না মিশলে এত সুন্দর দৃশ্য হয়। এর সাথে যদি আমি অন্য অনুভুতিগুলো মিশাতে পারি তাহলে কেমন লাগবে? হাসির সাথে হাসি দেখেছি, হতাশাও দেখেছি। কিন্তু তীব্র ঘৃণা নিয়ে কেউ কারো দিকে তাকিয়ে হাসলে কেমন লাগে? কিংবা তীব্র জিঘাংসা নিয়ে? সাধারণত এভাবে হাসতে পারার কথা না। কারণ ঘৃণা বা জিঘাংসা নিয়ে কারো দিকে তাকিয়ে হাসলেও সেই ঘৃণা করুনায় পরিবর্তিত হয়ে যায়। কারণ তখন হাসিটাই মুখ্য কাজ। হাসি নরম জিনিস, সে ঘৃণাটাকেও নরম করে দেয়। কিন্তু যদি এমন হয় যে ঘৃনাটা মুখ্য আর হাসিটা গৌণ, তাহলে নিশ্চয়ই সম্পুর্ণ অন্যরকম কিছু একটা হবে। কি মনে হয় তোমার? ভেবে দেখেছ কখনো?
তমা কিছুই বলে না। যদিও খুব আগ্রহ নিয়ে গল্প শুনছে। মজা ও পাচ্ছে বোঝা যাচ্ছে। তা দেখে ডাক্তারও মজা পেল।
- আচ্ছা বলতো, শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে কেউ হাসতে পারবে? গর্ভবতী মা তো জানে যে, তার ব্যথার পরেই তার নয়ন জুড়ানি সন্তান জন্ম নেবে, সেই চিন্তায় কি লেবার পেইনের সময় সে হাসতে পারবে?
জান না। জানতে ইচ্ছে করে না? আমার খুব করে। রবীন্দ্রনাথের হবুচন্দ্র রাজার রাজত্বে ঘুরে আসতে মন চাইত খুব। কত হাসি দেখলাম কিন্তু আমি যা খুজছিলাম তা দেখতে পেলাম না কোথাওই। ছোটখাট কাটাছেড়ায় গরীব রোগীদের ব্যাথানাশক দিতাম না, টাকার ভয় দেখালে তারাও ওটা ছাড়াই রাজী হত। সেলাই করার সময় বলতাম হাসো, ব্যথা কম লাগবে। কিন্তু তারস্বরে চিৎকার ছাড়া কিছুই পাইনি। রিকশাওয়ালাদের সাথে বিনা কারণে ঝগড়া বাধিয়ে চড় মেরে বসতাম। তীব্র ঘৃণা আর জিঘাংসা নিয়ে যখন তার তাকিয়ে থাকত, তখন বলতাম, এই অবস্থায় যদি হাসতে পারো তবে ৫০০ টাকা দিবো। না, কারো কাছ থেকেই হাসি পাইনি। কারো চোখে ঘৃণাই থেকে গেছে, কেউ পাগল ভেবে করুণার চোখে তাকিয়েছে।
শেষে বুঝতে পারলাম এভাবে হবে না। ঘৃণারও উদ্রেক করতে হবে সাথে সাথে হাসতেও বাধ্য করতে হবে।
মনে মনে প্ল্যান ঠিক করে ফেললাম। ততদিনে আমি ডাক্তার হয়ে গেছি। মামার বাসা ছেড়েছি মা মারা যাওয়ার পর কলেজে পড়া অবস্থাতেই। মামা মারা গেছে। একই শহরে প্র্যাকটিস করলেও বহুদিন ওখানে যাইনি। মামাতো ভাইরা বিদেশে সেটেল্ড। মামী এখন একাই থাকে ঐ বাড়িতে। মামীকেই টেস্ট সাব্জেক্ট হিসেবে সিলেক্ট করলাম।
মামীর বাসায় এসে অবাক হলাম। মামী আমাকে দেখে খুশি হয়েছেন। চোখ দেখে বুঝলাম মিথ্যে না, সত্যিই উনি খুশি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই ছেলেদের কথা তুলে কেদে ফেললেন। ছেলেরা কেউ তার খোঁজ নেয় না। বৌয়েরা সব ছেলেদের বশ করে রেখেছে। একা একা দিন কাটে না। কাজের বুয়াও রাখতে পারেন না। সবগুলো বজ্জাত, খালি থাকে চুরির ধান্দায়। কয়েকদিন আগেও একজন মামীর মোবাইল চুরি করে পালিয়েছে। বোনের ছেলেকে এনে রেখেছিলেন, সেও বাড়ি গিয়ে আর আসেনি। হাবিজাবি বকবক চলতেই থাকল। একা থাকেন, কথা বলার মানুষ নেই, আমাকে পেয়ে ঝাপি খুলে বসেছেন। তাই আমি আর বেশি কিছু বললাম না। বিকেলে বাজার করে এনে দিলাম। মামী রান্না করতে বসলেন। তখনই একটু ছাড়া পেলাম। পুরোনো বাড়িটা আবার একটু ঘুরে দেখলাম। এই এলাকাটা ঢাকা জেলার ভিতর হলেও এখনো মফস্বল। শহর বাড়ছে। এলাকার মানুষ জমি বেচে বেশ টাকার মালিক হয়েছে। তবে এখনো জাতে উঠতে পারেনি।
রাতে খেতে বসে মামী আমাকে মাছের সবচে বড় টুকরোটা তুলে দিলেন। আমার চোখে পানি এসে গেল। মার কথা মনে পড়লো খুব। মামার বাসায় থাকতে আমাদের ভাগে পড়ত মাছের লেজের আগের অংশটুকু। ফলে ভাত খেতে গিয়ে আমার মাছ কম পড়ত সবসময়। মা নিজের মাছটুক আমার পাতে দিয়ে বলতেন, ‘আমার মাছ গন্ধ লাগে।’
মামী এখনো বকবক করছেন। আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম,
- মামী, মার কথা মনে আছে?
- থাকবে না আবার? তোর মামা কতই না আদর করত। বেচারী! অল্প বয়সেই বিধবা হল। তোর চাচারাতো সব অমানুষ।.............
- মামী জানেন, মা সবসময় তার মাছটুক আমাকে দিয়ে দিত।
- তাই নাকি, বলিসনিতো কখনো।
- হুম, তার নাকি গন্ধ লাগত।
- অ, তা তখনতো কেউই বলেনি। তাহলে নাহয় মাছের বদলে অন্য কিছু দিতাম।
- মামী আপনার মাছে গন্ধ লাগছে, আমি খেতে পারব না।
- কি বলিস, গন্ধ আসবে কোত্থেকে? এত তেল মশলা দিলাম।
- জানিনা।
বলে আমি ওয়াক থু বলে এক দলা থুতু ভাতের প্লেটেই ফেললাম। মামী হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন।
আমি উনার চোখের দিকে তাকালাম, সেখানে কোন অনুভূতি নেই। যেন বুঝতেই পারছেন না কি হচ্ছে। আমি তরকারির বাটি আছড়ে ফেললাম। গরম ডাল মামীর গায়ে ছুড়ে দিলাম। চিৎকার দিয়ে মামী চেয়ার উল্টে পড়ে গেলেন।
চুলের মুঠি ধরে মামীকে সোজা করলাম।
- আপনি, আপনিই সব কিছুর জন্য দায়ী। আপনিই মেরেছেন আমার মাকে। আপনার অত্যাচারেই আমার মা শেষ হয়ে গেছে।
প্রচণ্ড এক চড় বসালাম উনার গালে। ব্যাথায় চিৎকার করতে ভুলে গেলেন বোধহয়।
- কি চাইত সে আপনার কাছে? আপনার সতীন ছিল? আপনার খাওয়া, শখ আহ্লাদ কোনটায় ভাগ বসাত? নিজের আর তার ছেলেটার একটা আশ্রয় চেয়েছিল শুধু। সেটাও আপনার সহ্য হল না? কেন তাকে মারতে হল?
মামীকে দেয়ালের সাথে চেপে গলা টিপে ধরলাম। প্রচণ্ড ব্যথায় মামীর দম বন্ধ হয়ে এল, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে। ব্যথার চরমতম বহিঃপ্রকাশ। কানে কানে বললাম,
- আপনি যদি এখন হাসতে পারেন, তাহলেই আপনাকে ছেড়ে দেব।
কিন্তু সে কথা মামীর কানে ঢুকল বলে মনে হল না। আর ঢুকলেও হাসতে যে পারতেন না তা আমি নিশ্চিত।
কিন্তু এবার আমি প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। পকেট থেকে একটা স্প্রে বের করলাম এতে আছে নাইট্রাস অক্সাইড। এই গ্যাস হাসপাতালে অজ্ঞান করার কাজে লাগে। তবে স্বল্প মাত্রায় ব্যবহার করলে এটা হাসির উদ্রেক করে। মামীর নাকের সামনে স্প্রে করলাম। কিন্তু উত্তেজনায় অতিরিক্ত স্প্রে করে ফেললাম। ফলে মামী অজ্ঞান হয়ে গেলেন। জ্ঞান ফিরলে দেখি মামী কথা বলতে পারছেন না। সম্ভবত আমার আচরণে খুব শক পান এবং তা থেকেই এই অবস্থা। শকটা মামী আর সামলে উঠতে পারেননি। কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান। মামীর সৎকার আমিই করি। কারণ মামাতো ভাইরা ফিরতে পারেনি। আর ফিরবে কিনা তারও ঠিক নেই। তাই তাদের অনুরোধে আমি তাদের বাড়িটায় বসবাস কাম দেখাশোনা করতে থাকি। এটাই সেই বাড়ি। আমি বাড়িটায় মনমত কিছু পরিবর্তন করেছি। যেমন এই সিক্রেট চেম্বারটা। এর মধ্যে আমি আমার এক্সপেরিমেন্ট চালাই। বাইরে থেকে কেউ এটা খুজে বের করতে পারবে না।
আমার এক্সপেরিমেন্টের গল্প শোনো। মজা পাবে। তাহলে বুঝতে পারবে আমি তোমাকে নিয়ে কি করতে চাচ্ছি। হেল্পও করতে পারবে। আমার সবচে সাকসেসফুল এক্সপেরিমেন্ট করেছিলাম একটা দম্পতির উপর.....
এমন সময় বাইরের দরজায় শব্দ হল।
- একটু ওয়েট কর। দেখে আসি কে এসেছে? যদিও আমার কাছে কারো আসার কথা না। বিদায় করে তাড়াতাড়িই ফিরছি।

৫.
ডাক্তারের বাড়িটা বের করতে একটু কষ্টই হয়েছে শফিকের। ভিতরের দিকে বাসা। বাসাটা মাঝারি ধরণের। চারপাশ কেমন জংলা হয়ে গেছে। বহুদিন পরিস্কার করা হয় না বোঝা যাচ্ছে। সবে সন্ধ্যা পেরিয়েছে তাতেই বেশ জাকানো অন্ধকার চারপাশে। এরকম জায়গায় একা থাকা, ডাক্তারের সাহস আছে। তমার ব্যাপারে কি বলবে ঠিকমত গুছিয়ে নিয়ে, দরজায় নক করে। অনেকক্ষণ সাড়া নেই। আবার জোরে আঘাত করে। আরো কিছুক্ষণ পর পায়ের শব্দ পাওয়া যায়। ডাক্তারের ঘুম ভাঙ্গালো নাকি? যাই হোক ক্ষমা চেয়ে নেবে। আর বিরক্ত করার কারণটা বললে উনি নিশ্চয়ই বুঝবেন। শফিকের ধারণাই সত্যি। ডাক্তার কিছু মনে করেননি। বরং ওকে ডেকে বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেলেন।
সব শুনে উনি বেশ দুঃখ প্রকাশ করলেন। তবে তমা কোথায় এ ব্যাপারে কোনো ধারণা দিতে পারলেন না। কারণ তমাকে তিনি বুঝিয়ে বাড়ি যেতে বলেছিলেন। তমাও তাতে সায় দিয়েই বেরিয়ে যায়। এরপর সে কোথায় গেছে সে ব্যাপারে উনি জানেন না।
শফিক উঠতে চাইল কিন্তু ডাক্তার তাকে এক কাপ চা খেতে খুব জোর করলেন। এতে নাকি সে নার্ভে জোর পাবে। প্রথমে মৃদু আপত্তি করলেও পরে রাজি হল।
বাড়িতে কেউ নেই। ডাক্তার নিজেই চা বানিয়ে আনলেন। চায়ে দ্বিতীয় চুমুক দিতেই শফিক চায়ের কাপ সমেত মেঝেতে আছড়ে পড়ল। জ্ঞান নেই।
শফিকের জ্ঞানহীন দেহটার ব্যবস্থা করে তমার কাছে ফিরে এলেন ডাক্তার। তমা এখনো আগের জায়গাতে, আগের মতই পড়ে আছে।
- কি খবর তমা? কেমন লাগছে আমার গল্প? ইন্টারেস্টিং না?
বরাবরের মতই নিরুত্তর তমা।
- বলতে হবে না। আমি জানি এটা কত ইন্টারেস্টিং। কোন পর্‍্যন্ত যেন বলেছি তোমাকে? ও আচ্ছা। আমার এক্সপেরিমেন্টের কথা বলতে যাচ্ছিলাম তোমাকে। বাবা মা আর ছেলের উপর চালিয়েছিলাম এক্সপেরিমেন্টটা। ওরা এসেছিল গ্রাম থেকে। নিতান্ত গরিব পরিবার। সচরাচর ডাক্তারের কাছে আসার কথা না। বাচ্চাটার সিভিয়ার অ্যাজমা। সে কারণেই বাধ্য হয়ে শহরের দিকে আসা। বাচ্চার বাবা মায়ের কথা শুনে বুঝলাম, এই দম্পতি অপত্য স্নেহে একদম পাগল। সেই সুযোগটাই আমি নিলাম। বাচ্চাটাকে এক পাফ ইনহেলার দিলাম। মূহুর্তেই বাচ্চাটার সব শ্বাসকষ্ট চলে গেল। তা দেখেতো এরা আমাকে কোন জায়গায় রাখবে ভেবে পায় না। কিন্তু তাদের উচ্ছ্বাসের বেলুন ফাটিয়ে দিয়ে বললাম বাচ্চাকে অপারেশন করতে হবে। অনেক টাকা লাগবে। এ কথা শুনে তারা পড়ল অকূল পাথারে। আমার হাত পা ধরে বলতে লাগল, যেন তাদের উপর একটু দয়া করি। শেষমেশ বললাম যে আমিই অপারেশন করে দিতে পারি। তবে এখানে হবে না। আমার বাড়িতে। আর আমি যে ফ্রি অপারেশন করছি এটা কাউকে বলা যাবে না। তাহলে সবাই ফ্রি করাতে চাইবে। ওরা তখন আমার যে কোন শর্তে রাজি। শুধু তার ছেলেকে ভালো করে দিতে হবে। তোমার মতই ওদেরকেও এখানে নিয়ে এলাম। এরপর এই রুমে। তুমি হয়ত জানো না। তোমার পিছনের দেয়ালটা একটা আয়না। আমি আমার রুম থেকেই সব দেখতে পাই। আর ঐ যে এসির ফুটো দেখছ, ওখান দিয়ে আমি আমার ইচ্ছা মত গ্যাস ঢুকাতে পারি। যখন যেটা মন চায়।
ওদেরকে এনে অবশ্য তোমার মত না খাইয়ে রাখিনি। ঐদিনই কাজে লাগিয়েছিলাম। প্রথমে অজ্ঞান করে তিনজনকে তিনটা চেয়ারে বাধলাম। বাবা মা একদিকে, বাচ্চাটা একদিকে। তিনজনের সামনেই শক্তিশালী তিনটা ক্যামেরা ফিট করে দিলাম। যাতে কোনো ডিটেইলস মিস না হয়, আর পরে আমিও দেখতে পারি ভালো করে। বাচ্চাটার জ্ঞান ফিরল সবার আগে। ওর সামনে সিগারেট ধরিয়ে ধোয়া দিলাম বেশ করে। কিছুক্ষণের মাঝেই শুরু হল বেদম কাশি। কাশির শব্দে বাবা মায়ের জ্ঞানও ফিরল। সব দেখে শুনে আতঙ্কিত হয়ে আমাকে ডাকাডাকি শুরু করল। বাচ্চাটার ভয়ানক শ্বাসকষ্ট হতে লাগলো। যেন ফুসফুসটা বুক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসবে এখুনি। বাবা মা বহু চেষ্টা করল বাধন খোলার। কিন্তু কাটা ছাড়া এটা খোলা সম্ভব না। আমি ধীরে ধীরে নাইট্রাস অক্সাইড ছাড়তে লাগলাম। পরিমাণ মত, যাতে অজ্ঞান না হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মাঝেই ওরা হাসতে শুরু করল। প্রথমে মুচকি হাসি। তারপর বেশ জোরে জোরেই।
বাচ্চাটার চোখ ভরা কষ্ট। এই দুর্বল ফুসফুস নিয়ে একই সাথে হাসতে আর কাশতে যে তার কতটা কষ্ট হচ্ছিল, তা কাউকে বোঝানো সম্ভব না। কিন্তু এত কষ্ট নিয়েও সে হাসছে। আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে রইলাম।
এদিকে বাবা মার চোখ ভরা আতঙ্ক। তারা হাসছে আর চিৎকার করছে।
এক সময় মায়ের চোখের ভাষা বদলে গেল। সেখানে ভর করল ভালোবাসা। কিন্তু মুখের হাসির সাথে তার কোন মিল নেই। সে চেষ্টা করছে হাসি আটকাতে কিন্তু পারছে না। ফলে তার হাসিটা হয়ে যাচ্ছে গা শিউরানো। ওহ! সে এক অপার্থিব দৃশ্য। আমি বাদে সে জিনিস আর কেউ দেখেছে কিনা জানিনা।
আমি তাদের চোখে আরও কিছু দেখতে চাইলাম। তাই দরজা খুলে ওদের সামনে গেলাম। প্রথমে আমাকে দেখে ওরা খুশি হয়ে উঠল। ওরা তখনও ভাবতে পারেনি যে, সব কিছু আমিই করছি। ভেবেছে আমি ওদের উদ্ধার করব। কিন্তু ওদের হতভম্ব করে দিয়ে আমি বাচ্চাটার সামনে আরো এক গাদা ধোয়া ছাড়লাম। তারপর যা দেখলাম, তার জন্য আমি আমার একটা হাতও দিয়ে দিতে রাজি।
ওরা আগের মতই হাসছে, কিন্তু বদলাচ্ছে চোখের ভাষা।
প্রথমে নিখাদ বিস্ময়, কিছুক্ষণ পরেই দিশেহারা ভাব, তারপর একরাশ শুণ্যতা, তারপর ঘৃণা সবশেষে জিঘাংসা। আমি স্থানুর মত দাঁড়িয়ে ছিলাম পুরোটা সময়। এ আমি কি দেখলাম! এই অনুভূতিগুলোর এত খাটি বহিঃপ্রকাশ আমি এর আগে দেখিনি। হাসতে হাসতে তো নয়ই।
এদিকে বাচ্চাটার শ্বাসকষ্ট তখন চরম পর্‍্যায়ে। বাবা মার নজর তখন ওর দিকে গেল। বাচ্চাটাকে যে কিছু বলে স্বান্তনা দেবে, হাসির দমকে তাও পারছে না।
বাচ্চাটা আর পারল, হাসি আর কাশির যৌথ আক্রমণে নাক মুখ দিয়ে রক্ত উঠে এল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা গেল। আমি এটা আশা করিনি। সত্যিই। বিশ্বাস কর। এক্সপেরিমেন্ট শেষে ঠিকই বাচাটার ট্রিটমেন্ট করতাম। তবে বাবা মাকে হাসি মুখে দেখে মরতে পেরেছে, আর বাবা মাও ওকে হাসি মুখেই বিদায় দিতে পেরেছে, তাই বা কম কি।
বাচ্চাটা মরার পর ওর বাবা মার হাসিটা শুধু পিশাচের হাসির সাথেই তুলনা করা যায়। ওর জন্য আমারো খারাপ লাগছিল। তাই গ্যাসের পরিমাণ বাড়িয়ে দিলাম। ওরা অজ্ঞান হয়ে গেল।
বাচ্চাটার লাশটা বাড়ির পিছনে মাটিতে পুতে ফেললাম। বাবা মাকে দিয়ে আরো কয়েকটা এক্সপেরিমেন্ট করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু জ্ঞান ফিরতে দেখলাম ওরা বদ্ধ উন্মাদ হয়ে গেছে। মেন্টাল হাসপাতালে পাঠাতাম কিন্তু তার আগেই দুজন একদিন দেয়ালে মাথা ফাটিয়ে মরে গেল। ভেরি স্যাড। তোমার বেডের ওপরের এই লাল দাগ ওদের রক্তের।
আমার সাবজেক্টদের এরকম দুঃখজনক পরিনতির কারণে আমি আর এক্সপেরিমেন্ট করিনি। কিন্তু হঠাৎ তোমাকে পেয়ে গেলাম, তাই আবার ব্যাপারটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। সে জন্যই তোমাকে আনা। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না। তোমার কাজ শুধু একটু হাসা। আর কিছু না। কাজ শেষ হলেই আমি তোমাকে নিজে বাড়িতে দিয়ে আসব। ততদিনে তোমার বাবা মাও নিজেদের ভুল বুঝতে পারবে। ফলে তুমি খুব সহজেই আবার সব ফিরে পাবে, এমনকি শফিককেও।
আমি যাই সব রেডি করি, তুমিও রেডি হও। কেমন? এক্সপেরিমেন্ট শেষে ভিডিওগুলো আমরা দুজন একসাথে বসে দেখব। আমার আগের ভিডিওগুলোও তোমাকে দেখাব। নিশ্চিত থাকো, প্রচুর মজা পাবে।
বলে ডাক্তার তার সুন্দর হাসিটা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। তবে হাসিটাকে এখন একটা বিশ্রী প্রেতাত্মার হাসি বলেই তমার মনে হল। দেয়ালের রক্তের দাগের দিকে তাকাতেই নাড়িভুঁড়ি উল্টে আস্তে চাইল। ওয়াক ওয়াক করলও কিছুক্ষণ। কিন্তু পেটে কিছুই নেই, কিছু টক তরল বাদে আর কিছুই বেরুল না। একটু পর ওর পরিনতি কি হবে ও ভাবতেও পারছে না। এক্সপেরিমেন্ট শেষে ও ও কি পাগল হয়ে যাবে? তখন আর বাবা মার কাছে ফিরে কি লাভ? এরচে বাচ্চাটার মত মরাই ভালো হবে। বহু কষ্টে উঠে বসল। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। হয়ত শেষ বারের মত কাদছে ও। বাবা মা, আপু ভাইয়া সবাইকে খুব মনে পড়ছে। দুনিয়ার প্রতিটা জিনিসকেই খুব আপন লাগছে ওর। কি মনে করে ও টয়লেট করার ফুটোটার দিকে এগুলো। শরীরের সব শক্তি জড় করে চিৎকার করল, ‘বাচাও, কেউ আছ, বাচাও।’
ডাক্তার রুমে এসে ওকে ওখানেই মুখ থুবড়ে পড়া অবস্থায় পেল।

৬.
জায়গামত পৌঁছে রুবেল দেখে কেউ আসেনি। আজ একটু তাড়াতাড়িই চলে এসেছে ও। দলের বাকিরা চলে আসবে এখুনি। একজনকে ফোন দেয় ও। আসছে ওরা। এলাকায় কোন ফাকা জায়গা আর নাই। সবখানে বিল্ডিং উঠে গেছে। এই একটা জায়গাই আছে যেখানে নিরিবিলি সময় কাটানো যায়। রুবেলের সময় কাটানো হল গাজা খাওয়া। জায়গাটাও ওরই আবিষ্কার। বাড়ির চারধারে জংলা। বাড়ির মালিক ডাক্তার সাহেবও থাকেন না বেশিরভাগ সময়। তাই ওদের কোনো সমস্যা হয় না। আজ পূর্ণিমা রাত। ভালোই জমবে ওদের। এ জন্যই সবাইকে একটু আগে আগে আসতে বলেছিল। কিন্তু শালারা দেরি করবেই। বিরক্ত মুখে একটা সিগারেট ধরিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে ও। হঠাৎ কেমন একটা ঘষড়ানো শব্দে ওর শরীর কেপে ওঠে। মুহুর্তে বসা থেকে সোজা দাঁড়িয়ে যায় ও। আবার শোনা যায় শব্দটা। পুর্নিমার রাতে নাকি পরীর আছর হয়। সেরকম কিছু নাতো? আবার ভেসে এল শব্দটা। আর থাকতে পারে না ও। ঝোপঝাড় ভেঙ্গে ঝেড়ে দৌড়। কোনদিকে যাচ্ছে কোন হুশ নেই।

তমার জ্ঞান ফিরল খাবারের সুঘ্রাণে। ওর সামনেই এক প্লেট বিরিয়ানী রাখা। কয়েকদিনের উপোষে তমার প্রতিটা ইন্দ্রিয় এখন খুব তীক্ষ্ণ। ও যেন পুরো শরীর দিয়ে বিরিয়ানীর ঘ্রাণ পাচ্ছে। লোভে চকচক করে উঠল ওর চোখ। ঝাপিয়ে পড়তে গেল প্লেটটার উপর, কিন্তু আচমকা টান খেয়ে থমকে গেল। একটা চেয়ারের সাথে ও আষ্ঠেপৃষ্ঠে বাধা। দপ করে চোখের আলো নিভে গেল, তার বদলে ভর করল হতাশা। কিন্তু কেমন যেন হাসি পেল ওর, যার ওপর ওর কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। মুচকি হাসি দিয়ে শুরু, আস্তে আস্তে হাসির বেগ বাড়তে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই খল খল হাসিতে ঘর ভরে গেল। তমার খুব কষ্ট হচ্ছে। হাসির দমকে শরীর কাপছে কিন্তু দুর্বল শরীর সেটা সহ্য করতে পারছে না। বাধন খোলার চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। মাথাটাও পিছনদিকে বাধা। হঠাৎ ডাক্তার ওর সামনে এসে দাঁড়াল। মুখটা হাসি হাসি। লোকটাকে দেখে ওর ঘেন্না হওয়া উচিত। কিন্তু তা হচ্ছে না। বরং কেমন হাসি পেল তমার। গ্যাসের প্রভাব ছাড়িয়ে সত্যিই হেসে উঠলো এবার সে। তা দেখে ডাক্তারের মুখভঙ্গি বদলে গেল, যেন ব্যাপারটায় খুশি হতে পারছে না। অথচ লোকটা তাকে হাসতে বলেছিল। তাহলেই নাকি ছেড়ে দেবে। ডাক্তার সামনে থেকে সরে গেল। আবারো জ্ঞান হারালো তমা।
আবার যখন জ্ঞান ফিরল, তখন তমা সামনে যা দেখল, সেটা ওর সুদূরতম কল্পনাতেও আসেনি। সামনে শফিক বসা। ওরই মত চেয়ারের সাথে বাধা। শফিক ওরচেও অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
- কি তমা অবাক হয়েছ? শফিক তোমার খোজেই এসেছিল। তোমার ধারণা ভুল। ও তোমাকে খুবই ভালবাসে। আর তুমিতো ওকে বাসোই। আচ্ছা চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষের মৃত্যু হাসতে হাসতে দেখতে পারবে? শফিক যখন তোমার সামনে মরবে, তখন তোমার চোখে কি থাকবে? ভালবাসা? ও মারা যাচ্ছে, আর তুমি হাসছ, ওর কেমন লাগবে বলত? হুম? জানোনা বুঝি? জানবে। তোমাকে আমি জানাব, কারণ শফিক মারা যাবে, তুমি না। তোমাকে আমি কিছু করব না বলে কথা দিয়েছি।
শফিক প্রচণ্ড গালাগাল দিচ্ছে। ডাক্তারের সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। একটা স্কালপেল নিয়ে শফিকের কবজির কাছে কেটে দিলেন। শফিক ব্যাথায় চিৎকার দিয়ে উঠল। কিন্তু তোমার আটকে ওঠার শক্তিও নেই। অবাক হয়ে ও একবার শফিকের রক্তাক্ত কবজি আরেকবার ডাক্তারের হাসিমুখ দেখতে লাগলো।
- আর একটু তমা। কিছুক্ষণ পরেই আমাদের এক্সপেরিমেন্ট শেষ হয়ে যাবে।
বলে অভয় দিয়ে রুম থেকে ডাক্তার বেরিয়ে গেলেন।
শফিক চিৎকার আর গালাগালি করেই যাচ্ছে। ব্যাথা যে পাচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে। এদিকে তমার আবারও হাসি পাচ্ছে। হাসতে চাচ্ছে না, তবুও। ওর চোখের সামনে শফিক মরে যাচ্ছে। ও কিছুই করতে পারছে না। কত কিছু বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু বলতেও পারছে না। বেচারা ব্যাথায় কাতরাচ্ছে কিন্তু হাসতেও শুরু করেছে। অপ্রকৃতিস্থ সেই হাসি তমা সহ্য করতে পারল না। চোখ বন্ধ করে ফেলল।

দৌড়াতে দৌড়াতে রুবেল কোথায় যাচ্ছে, সেদিকে রুবেলের খেয়াল নাই। হঠাৎ কার সাথে বেধে, তাকে নিয়েই হুড়মুড় করে পড়ে গেল। গালি দিয়ে এবং প্রত্যুত্তরে আরো কড়া ডোজের গালি খেয়ে দেখে থানার ওসি নেয়ামত সাহেবের উপর হুমড়ি খেয়েছে সে। বেচার মাত্র ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরছিল।
- হারামজাদা অন্দকারে এমনে দৌড়াস কেন? ভূত দেখছস?
- জ্বি, জ্বি স্যার। ভূত না পরী।
- বদমাইশ, আমি ফাইজলামি করসি বইলা, আমার সাথেও ফাইজলামি? থাবড়ায়ে সোজা কইরা দিমু।
- না স্যার। সত্যি। পরীর দাক শুনছি আমি।
- আইজকা গাঞ্জা বেশি টানছস? বাকিগুলান কই?
- না স্যার, এট্টুও টানি নাই। টানবার গেছিলাম, তয় পরীর ডাক শুইনা আমি দৌড়ায় চইলা আইছি।
নেয়ামত সাহেবকে বিস্তারিত বলে রুবেল। সব শুনে তাকে ওখানে নিয়ে যেতে বলেন উনি। রুবেল কিছুতেই আর ফিরবে না। কিন্তু ধমক দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে ওকে নিয়ে চলেন তিনি। পরী দেখা উদ্দেশ্য না। উদ্দেশ্য এলাকার গাজার আসরের জায়গাটা চেনা।

শফিকের কবজি কাটা হয়েছে কিন্তু ওর হাত, বাহু সবই খুব টাইট করে বাধা। এ কারণে রক্ত পড়ছে খুবই কম। ডাক্তার ও একটু পর ব্যাপারটা ধরতে পারল। এসে ওর কবজির কাছাকাছি দুটো বাধন বাদে হাতের আর সব বাধন কেটে দিলেন। রক্তের ধারা বড় হল।
- কি ব্যাপার তমা? চোখ বন্ধ করলে হবে? শফিক মারা যাচ্ছে। তোমাকে দেখতে হবে। ওকে হাসতে হাসতে বিদায় দেবে না?
বলে জোর করে তোমার চোখ খুলে দিলেন। তমার হাসি তখন সর্বোচ্চ পর্‍্যায়ে। ঘর ফাটিয়ে হাসছে সে। কিন্তু তার চোখ পাথর। অসীম শূন্যতা সেখানে।
- নাহ তমা, তোমাকে নিয়ে আমি হতাশ। এত তাড়াতাড়ি তোমার সব অনুভূতি শেষ। এখনো শফিকের মরা বাকি। এভাবে করলে এক্সপেরিমেন্ট সফল হবে কি করে?
হঠাৎ নতুন একটা আইডিয়া এল ডাক্তারের মাথায়। শফিকের দিকে তাকিয়ে বললেন,
- আচ্ছা শফিক, তুমি তোমাকে এত ভালোবাস। তোমার সামনে যদি আমি তমাকে আদর করি, বিশ্রীভাবে হাতাহাতি করি, তাহলে তোমার কেমন লাগবে? হুম? রাগ লাগবে, তাই না? হাসতে হাসতে রাগতে কেমন লাগবে?
বলেই তমার গালটা চেটে দিলেন। তা দেখে প্রচণ্ড আক্রোশে শফিকের হাসি গোঙ্গানিতে রুপ নিল। চোখে আগুন। ডাক্তারের মুখে তৃপ্তির হাসি। আবার তিনি তমার দিকে ফিরলেন। লক্ষ্য তমার ঠোঁট। এটা করতে গিয়ে শফিকের দিক থেকে সম্পূর্ণ পিছন ফিরে গেলেন তিনি।
এদিকে রক্ত ঝরে শফিকের বাধা দড়িটুক পিছল হয়ে গেছে। সবটুকু শক্তি এক করে সে হ্যাঁচকা টান দিতেই হাত বাধন মুক্ত হয়ে গেল। ডাক্তারের পকেট থেকে স্কালপেল উকি দিচ্ছে, যেটা শফিকের বাধন কাটতে এনেছিল। শফিক ওটা টেনে নিয়েই কোমর বরাবর ঢুকিয়ে দিল। অ্যানাটমির জ্ঞান থাকলে ও জানত স্কালপেলটা ডাক্তারের কিডনী ফুটো করে দিয়েছে। ডাক্তার চকিত উল্টো দিকে ফিরল। তাতে আরও বেশি কেটে গেল। পেট ফাক হয়ে নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে এল। ডাক্তার একটা লোমহর্ষক চিৎকার দিয়ে লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। শফিক হাতে ঠেলে মাথার বাধন আলগা করে ফেলল, দ্রুত চেষ্টা করল অন্য হাতের বাধন খুলতে। কিন্তু হাতে কোন শক্তিই নেই। এদিকে ডাক্তার আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। গ্যাসের প্রভাবে সে নিজেও এখন হাসছে। চোখে ব্যথা, মুখে হাসি। সে নিজেই একটা এপিক দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে সে কথা তার মাথায় নেই। এক হাতে পেট চেপে, অন্য হাতে স্কালপেল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়ল শফিকের উপর। লক্ষ্য ওর বুক। শফিক স্কালপেল ধরা হাতটায় একটা থাবা দিল। ডাক্তারের হাত নড়ে স্কালপেল সোজা গিয়ে বিধল শফিকের বাধা হাতে। ডাক্তার পড়ল শফিকের উপর। শফিক মুখ বাড়িয়ে ডাক্তারের কান কামড়ে ধরল। ডাক্তার ব্যাথায় স্কালপেলটা রেখেই পিছু হটল। দাতে দাত চেপে স্কালপেলটা বাহু থেকে বের করল শফিক। রক্ত ভেজা, পিছল আর দুর্বল হাতে অন্য হাতের বাধন কাটার চেষ্টা করতে লাগল। ডাক্তার আবার ছুটে এল। শফিক না তাকিয়েই স্কালপেল ধরা হাতটা চালালো। ডাক্তারের চোখের নীচ থেকে থুতনি পর্‍্যন্ত দুভাগ হয়ে গেল। ডাক্তার মুখ চেপে ধরতেই শফিক হাতের মুঠি দিয়ে ঘুষি দিয়ে তাকে মেঝেতে শুইয়ে দিল। আরো কয়েকবারের চেষ্টায় হাতের বাধন কেটে ফেলল শফিক। পায়ের বাধন কেটে এগিয়ে গেল তমার দিকে।
তমার চোখ এখনো অনুভুতিশুণ্য। এত কিছু হয়ে গেল, কিন্তু ও যেন কিছু বোঝেইনি। পাথুরে চোখে হেসেই চলেছে।

রুবেলকে নিয়ে নেয়ামত সাহেব ডাক্তারের বাড়ির পিছনে পৌঁছে দেখেন আসর বসে গেছে। রুবেল পালালেও ওর সাঙ্গপাঙ্গরা পরে এসে বসে গেছে। পুলিশ দেখেই সবগুলো ভোঁ দৌড়। ভবিষ্যতে আর এসব করলে খবর করে দেবেন, এই হুমকি দিয়ে রুবেলকে ছেড়ে দিলেন। তারপর বাড়ির ভিতর ঢুকলেন। বাড়ির মালিককে বলবেন যেন আশপাশটা পরিষ্কার করেন, যাতে পোলাপান আর এসব করতে না পারে।
বাড়ির গেট খোলা, বসার ঘরে লাইট জ্বলছে, অথচ এত ডাকাডাকির পরও কেউ সাড়া দিচ্ছে না। কিছুক্ষণ দোনোমনা করে শেষমেশ বাড়ির ভিতরটা চেক করতে ঢুকলেন নেয়ামত সাহেব। দুটো রুমের পর একটা রুমে ঢুকে দেখেন, একপাশে দেয়ালের অর্ধেক নেই। সেখানে দেখা যাচ্ছে দুটো লোক আর একটা মেয়ে। মেঝে ভরা রক্ত। তিনজনই চিৎকার করছে কিন্তু কোন শব্দ হচ্ছে না। প্রথমে দেখায় ভেবেছিলেন টিভি বোধহয়। সাউন্ড অফ করা। একটু পরই ভুল ভাঙল। ওখানে যা হচ্ছে, তার সবই সত্যি। দৌড়ে গিয়ে দেয়াল হাতড়ে দেখলেন, ভিতরে ঢোকার কোনো দরজা বা কিছু আছে কিনা। না পেয়ে, পিস্তল বের করে গুলি করলেন। ঝন ঝন শব্দে ভাঙল কাঁচ।

ঐ মূহুর্তে শফিক তমার বাধন কাটছিল। কাঁচ ভাঙ্গার শব্দে চমকে গিয়ে তমাকে জড়িয়ে ধরে মেঝেতে ঝাপিয়ে পড়ল। এক গড়ান দিয়ে ঠিক ডাক্তারের সামনে গিয়ে পড়ল। হঠাৎ শব্দ আর মেঝেতে পড়ার ঝাকিতে তমার সম্বিত ফিরল। নিজেকে শফিকের বুকে আবিষ্কার করে তো বিশ্বাসই করতে পারছিল না ব্যাপারটা। মুহুর্তেই কত কথা জমা হল বলার জন্য, কিন্তু মুখ দিয়ে কিছুই বেরুল না, শুধু চোখের বাধ উপচে গড়িয়ে পড়ল জল। সেই জলের আড়ালে কান্না নেই। আছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম আনন্দের সন্ধান।
ডাক্তার অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। তিনি ভেবেছিলেন, এই সুন্দর দৃশ্যটা আর কখনো দেখতে পাবেন না। কিন্তু তার পরম সৌভাগ্য পৃথিবীর সবচে সুন্দর দৃশ্যটা দেখতে দেখতেই তার মৃত্যু হচ্ছে।
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×