নির্বাচন নিয়ে চলমান সংকট নিরসনে দুই বড় দলের মহাসচিব পর্যায়ে সংলাপে বসার জন্য ব্যবসায়ী নেতাদের প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
Published : 02 Nov 2013, 10:26 PM
শনিবার রাতে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে আড়াই ঘণ্টার বৈঠকের পর এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সংকট নিরসনে নিঃশর্তভাবে দুই দলের মহাসচিবকে আলোচনায় বসার জন্য বিরোধীদলীয় নেতার কাছে প্রস্তাব করেছি। এই প্রস্তাবে বিরোধীদলীয় নেতা রাজি হয়েছেন।”
গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রাত পৌনে ৯টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই বৈঠক চলে।
কাজী আকরাম বলেন, “আমরা এখন এই প্রস্তাবটি আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করবো। যাতে ২/১ দিনে দুই মহাসচিবকে আলোচনার বসার ব্যবস্থা করা যায়।”
এফবিসিসিআইয়ের এই প্রস্তাবকে ইতিবাচক অভিহিত করে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “এফবিসিসিআইয়ের এই প্রস্তাবকে বিএনপি স্বাগত জানিয়েছে। আমরা চাই- মহাসচিব পর্যায়ে আলোচনা শুরু হউক। তারপর সেখানে সংলাপের আলোচ্যসূচি কি হবে- তা নির্ধারিত হবে।”
নির্বাচন নিয়ে চলমান সংকট ও বিরোধী দলের হরতালসহ নানা কর্মসূচির ফলে অর্থনীতির উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনায় ব্যবসায়ী নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।
আলোচনা শর্তহীন হবে কি না জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে আমীর খসরু বলেন, “আমরা দুই দলের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছি। দুই দলতো এদেশের মালিক নয়। জনগণই এদেশের মালিক। দেশের ৯০ ভাগ মানুষের চাহিদা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন- তা আলোচনায় আসতে হবে।”
“আমরা মনে করি, এই সংলাপের মাধ্যমে যে সুযোগ সৃষ্টি হবে, এরপর আলোচনায় কি কি থাকবে, তা উঠে আসবে।”
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ৫০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে এম এ কাশেম, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন, মীর নাসির হোসেন, আনিসুল হক, এ কে আজাদ ছাড়াও এফবিসিসিআইয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ছিলেন এমসিসিআইয়ের সভাপতি রোকেয়া আফজাল রহমান, বিজেএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম, ডিসিসিআইয়ের সভাপতি সবুর খান, বিটিএমএ’র সভাপতি জাহাঙ্গীর আলামিন, উইম্যান এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভানেত্রী নাসরিন আউয়াল মিন্টু।
অন্যদের মধ্যে বিজেএমইর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, কাজী মুনিরুজ্জামান, বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম হায়দার এবং এফবিসিসিআইয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রথম সহ-সভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন প্রমুখ ব্যবসায়ী নেতা বৈঠকে অংশ নেন।
বিরোধী দলীয় নেতা ব্যবসায়ী নেতাদের কথা শুনে তাদের কাছে বিরোধী দলের অবস্থান এবং নির্দলীয় সরকারের দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করেন। ৫০ মিনিট স্থায়ী খালেদা জিয়ার বক্তব্যে সরকারের সঙ্গে সংলাপে তার দলের আন্তরিকতার কথাও উল্লেখ করেন।
বৈঠকের পর এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি দীর্ঘ সময় দেয়ার জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের জন্য যেমন সমান সুযোগের কথা বলে। আমরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সমান সুযোগ চাই। দেশের অর্থনীতি ভালো হলে জাতির মর্যাদা বাড়বে। আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের নিশ্চয়তা চাই।”
এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। বিরোধী দলীয় নেতা নির্দলীয় সরকারের আরেকটি প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা বলেছি- এই দুইটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হতে পারে।”
“সেজন্য আমরা বিরোধী দলীয় নেতাকে বলেছি, মহাসচিব পর্যায়ে নিঃশর্তভাবে আলোচনায় বসতে। এতে তিনি রাজি হয়েছেন। বিরোধী দল থেকে আমরা সিগন্যাল পেয়েছি। এখন আমরা আজ থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ করে সংলাপ বসানো চেষ্টা চালাবো।”
কবে নাগাদ সংলাপ হতে পারে- প্রশ্ন করা হলে আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, “কাল-পরশুর মধ্যে বসানোর চেষ্টা চালাবো।”
এফবিসিসিআইযের সভাপতি সংকট নিরসনে দুই দলকে সংলাপে বসানোর উদ্যোগে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চান।
হরতাল প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দুই-একদিনের মধ্যে সংলাপ শুরু হলে এই প্রশ্নটি চলে আসবে। আগে আলোচনাটা শুরু করতে দিন।”
খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুক, সাবেক বাণিজ্য উপদেষ্টা বরকত উল্লাহ বুলু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।