somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষাব্যবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে?

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বিরাজ করছে চরম অস্থিরতা। কয়েকদিন পর পর সংঘাত, সংঘর্ষ আর আন্দোলনের মুখে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এক একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর মুখ থুবড়ে পড়ছে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। উচ্চ শিক্ষার আধার প্রায় সবকয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলবাজ ভিসিদের নিয়োগ দেওয়ায় তারা দুর্নীতি, শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ, আত্মীয়করণ আর নিয়োগবাণিজ্যে মেতে উঠে।

এসব দুর্নীতি, দলীয়করণ আর নিয়োগবাণিজ্য যখন সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন দলবাজ ভিসিদের বিরুদ্ধে জেগে উঠে সচেতন ছাত্রসমাজ। ভিসিপন্থী ও ভিসিবিরোধী- দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে শিক্ষকবৃন্দ। ফলশ্রুতিতে ভিসি-বিরোধী ও ভিসি-সমর্থনে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয় শিক্ষাব্যবস্থায়। এই অচলাবস্থায় নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে প্রশাসনিক মদদে পুষ্ট সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন, কখনো শিক্ষকদেরকে লাঞ্চিত করে, শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলে আবার কখনো বা শিক্ষকদের গায়ে এসিড নিক্ষেপ করে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে সর্বত্র। দিনের পর দিন বন্ধ থাকে ক্লাস-পরীক্ষা, সেশনজটের কবলে পড়ে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যায় বেশকিছু মূল্যবান সময়। সরকার পরিবর্তন হলেও এই অবস্থার খুব বেশি পরিবর্তন দেখা যায় না।

একসময় এদেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসাবে খ্যাত ছিল। এই বিদ্যাপীঠ থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন দেশের খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবিরা। অথচ এই শীর্ষ বিদ্যাপীঠটির স্থানও বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষ এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও নেই। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা না হয় নাই বললাম। একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় বসে আমাদের শিক্ষকরা জ্ঞান বিতরণ করতেন আর সেই জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে উঠে আসত দেশের খ্যতিমান সাহিত্যিক, কথাশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। আর এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বসে শিক্ষকরা রাজনীতি চর্চায় ব্যস্ত সময় কাটান যার ফলে এখন আর আগের মত বরেন্য শিল্পী সাহিত্যিকদের আমরা খুঁজে পাইনা।

শিক্ষাকে বলা হয় জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষার্থীরা জাতির ভবিষ্যৎ আর বিদ্যালয়কে বলা হয় মানুষ গড়ার আঙ্গিনা। সেই মানুষ গড়ার আঙ্গিনায় যদি জাতির ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে দলবাজ ভিসি আর শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে এমন নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয় তাহলে জাতি মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবে কিভাবে?

আমার মনে হয়, রাজনৈতিক মতপার্থক্যের উর্ধ্বে উঠে জাতির কর্ণধারদের এই বিষয়টা গভীরভাবে ভাবা উচিত যে মানুষ গড়ার কারিগর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দলীয় ভিসিদের নিয়োগ দিয়ে যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয় এর ভবিষ্যত পরিণতি কি হতে পারে? কোথায় গিয়ে ঠেকবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মান?

অতিশীঘ্রই এ ব্যাপারে আমাদের রাজনীতিবিদদের একটা মতৈক্যে পৌঁছা উচিত যে, দলমতের উর্ধ্বে উঠে সবাই অন্ততঃ মানুষ গড়ার কারিগর এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে রাজনীতির বাইরে রাখতে হবে এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে প্রদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধ হলে শিক্ষকদের দলবাজিও বন্ধ হবে এবং তারা ক্লাস পরীক্ষার দিকে মনোযোগী হবে। তাছাড়া এতে শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ ও নিয়োগবাণিজ্যও বন্ধ হবে এবং প্রকৃত মেধার মূল্যায়ন হবে। এতে করে শিক্ষার মানও উন্নত হবে।

আমরা যদি আমাদের দেশকে ভালোবাসি, দেশের মানুষকে ভালোবাসি, দেশের ভবিষ্যতকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিতে না চায় তাহলে অতিসত্ত্বর দলমতের উর্ধ্বে উঠে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ক্রমবর্ধমান অধঃপতনের হাত থেকে রক্ষা করতে হলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোন বিকল্প নেই।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন অধঃপতনের হাত থেকে অতিসত্ত্বর রক্ষা করা সম্ভব না হলে সেদিনও হয়তো আর বেশি দূরে নয় যেদিন ছাত্ররা পাশ করার জন্য পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখারও প্রয়োজনবোধ করবেনা, পাশ করার জন্য তখন তারা রাজনীতিবিদদের পিছনে ধর্ণা দেওয়াটাকেই অগ্রাধিকার দেবে। এখনও যার কিছু নজির দেখা যায় কিছুদিন আগে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটউট বন্ধের ঘটনা থেকে। সেখানে ফেল করা দুই ছাত্রকে পাশ করিয়ে দেওয়ার দাবিতে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙ্চুর চালায় যার ফলশ্রুতিতে প্রতিষ্ঠানটি এখন অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে। এমন ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো দুএকটি প্রতিষ্ঠানে ঘটার অভিযোগ পাওয়া গেলেও তবে এখনও তা ব্যাপকভাবে দেখা দেয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন দলবাজি ও নৈরাজ্য চলতে থাকলে একসময় এটাই হয়তো অবধারিত নিয়মে পরিণত হতে পারে। আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতবিরোধ থাকলেও এমনটা আমরা কেউই প্রত্যাশা করি না।

তাই জাতির কর্ণধারদের আমরা আহবান জানাবো অবিলম্বে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে দল-মতের উর্ধ্বে উঠে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আশু প্রদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে শক্ত নীতিমালা প্রণয়ন করুন যাতে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বা কোন দলীয় বিবেচনার সুযোগ না থাকে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×