somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ের রথ.........

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই তো সেদিন বাবার হাত ধরে কপোতাক্ষের পাড় দিয়ে বৈকালি ভ্রমণ। সূর্যের তির্যক আলোয় চৈতন্যের মগডালে দোয়েলের মিষ্টি গান আজও হৃদয়ে তোলপাড় করে যায়। ক্লাস টু কি থ্রিতে পড়ি তখন। কপোতাক্ষে অবাধ সাঁতার আর রকমারি দুষ্টামি।নদের পাশ ঘেঁষে আমার স্কুল। সেই কপোতাক্ষ আজ বলতে গেলে একেবারেই মৃত। মনে পড়ে সেই ব্রিজটির কথা। ঠিক স্কুলটার মাইলখানেক দুরে। বাবার সাথে ব্রিজে বসে কত গল্প। আর হারিয়ে যাওয়া শাপলা শালুকের ভিড়ে। কচুরীপনা আর নদের ছোট মাছগুলোর সাথে সে কি বন্ধুত্ব। চুনোপুঁটির রুপোলি গায়ে বিকেলের সোনা ঝরা আলোর ঝিকিমিকি আজো আমাকে টেনে নিয়ে যায় সেই সুদুর অতীতে। বাবার চোখ ফাাকি দিয়ে মার্বেল না খেলতে পারলে যেন পেটের ভাত হজম হত না। বাবা স্কুলের শিক্ষক হওয়াতে সুবিধাটা ছিল ঢের বেশি। এখানে দাওয়াত ওখানে দাওয়াত। বন্ধুরাও চাইত এক্সট্রা খাতির। আজো মনে পড়ে সবাই মিলে স্কুলের মাঠ পরিষ্কার করার কথা। স্কুলমাঠের ভাটই আর আবর্জনা পরিষ্কার করিনি এমন কোন ছাত্র-ছাত্রী মনে হয় ছিলনা। কপোতাক্ষ পাড়ের সেই মুক্তরাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে মনের মণি কোঠায়। মুক্তারপুর গ্রাম ছিল কায়েমকোলা থেকে প্রায় ৫ মাইল দুরে। আমর গ্রামের নাম কায়েমকোলা। বৃহস্পতিবার হেঁটে চলে যেতাম বাড়ি। একবার ঘটল এত আজব কাহিনি। বৃহস্পতিবার বাড়ি গিয়ে আর মুক্তরপুর আসতে মন চাচ্ছিল না। শনিবার স্কুল খোলা। গেলাম না। সোমবারে মা বলল এবার চলে যা। আমার দুই বড় বোন ছিল সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষক। মার বকবকানিতে অবশেষে রওনা দিলাম। তবে বাধ সাধলাম আমি একা যেতে পারব না। যথারীতি সঙ্গী হলো দু'বোন। হাটতে হাটতে পাড়ি দিচ্ছি একেক গ্রাম - বুড়িন্দিয়া, উজিরপুর,খলশী...। শুরু হয়ে গেল তুমুল বৃষ্টি। ভিজতে ভিজতে পৌঁছলাম স্কুলের বারান্দায়। আমার মনটা পড়ে ছিল বাড়ি। বোনরা বলল তুই এবার একা একা আব্বার কাছে চলে যা। আমি বললাম আচ্ছা তোর একটু দাড়া আমি আসছি। তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি একটু পরে এসে বললাম আব্বা আমাকে আবার তোদের সাথে আমাকে চলে যেতে বলেছে। ওরা বিশ্বাস করতে চাচ্ছিল না। তারপর আমি বিভিন্নভাবে ওদের বোঝাতে সক্ষম হই। অথচ আব্বার সাথে আমার দেখাই হয় নাই। ভিজতে ভিজতে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা।পরের বৃহস্পতিবার আব্বা বড়িতে এলো। উন্মোচিত হলো আমরা ভন্ডামি।আব্বা একটু হেসে বললেন পাগল ছেলে আমার এ রকম করতে নেই।আবার চলে গেলাম মুক্তারপুর। আব্বার সেই মিষ্টি শাসন ও আকাশচুম্বী আদর বড়ই মিস করি। বোনদের সেই বডিগার্ডের মতো আগলে রাখা মিস করি। বোনরা আজ শ্বশুরবাড়ির রান্নাঘরে আশ্রয় নিয়েছে। সংসারের ঘানি টানতে টানতেই তাদের জিবন ওষ্ঠাগত। আর বাবাও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আমিও বড় হয়েছি। শুধু বয়সে। বাবার মত সেই শুদ্ধ চৈতন্য আমার নেই। সময় বড়ই বেরসিক। সময় যাওয়ার পথে সঙ্গী করে আমাকে তোমকে এটাকে ওটাকে সবাইকে সববিছুকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×