somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রম্য রচনা-- বয়স সমাচার

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রি পোস্ট

চিকিৎসকগণ তাঁদের ব্যবস্থাপত্রে বেশ কিছু তথ্যের জন্য ঘর রাখেন। যেমন নাম, বয়স, তারিখ, জেলা, ওজন, জেন্ডার ইত্যাদি। এর মাঝে সবচেয়ে বিরক্তিকর ঘর হচ্ছে ‘বয়স’। সবসময়ে না, তবে মাঝে মাঝে। এই তথ্য বের করতে বেশ কিছু সময় এবং মেধা খরচ করতে হয়। কখনও ব্যাপারটা উপভোগ করি, কখনও বা হাপিয়ে উঠি। আর কখনও মেনে নিই, ‘এটাই আমাদের জীবন’
রুগী বসবার পরে প্রথম যে প্রশ্নটি করি তা হচ্ছে ‘আপনার নাম?’। উত্তরটা লেখার পরে বয়স টা জিজ্ঞেস করি, এবং প্রায়ই বিপত্তিতে পরি। ‘কত আর হবে?’ ‘দেন একটা’, ‘বলতে পারব না বাবা।‘ এমন উত্তর প্রায়ই শুনতে হয়। মহিলা রুগীর ক্ষেত্রে পাশে বসা স্বামী দেবতা প্রায়ই আগ বাড়িয়ে উত্তরটা দিয়ে দেন, স্ত্রীটি আবার কি বলতে কি বলে ফেলে। কখনও সঙ্গে আসা মুরুব্বী ধাঁচের লোকটি শুরু করেন, ‘সার্টিফিকেটে তো আছে ১৮ তবে আসল বয়স...।‘
সুন্দরভাবে কিভাবে বয়স জানতে চাওয়া যায়? যেন উত্তর পেতে বেগ পেতে না হয়? পরিচিত কিছু জনপ্রিয় ডাক্তারের কথোপকথন মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। একজন বলতেন, ‘বয়স কত লিখবো?’ কেউ আবার একটা আন্দাজের বয়স বলেন, বয়স কি ৫০ হয়েছে?’ উত্তর পেতে একটু সুবিধা হয়। তবে সব ক্ষেত্রে না। রুগী অনেক সময় গভীর চিন্তায় ডুবে যায়, আর আমিও অপেক্ষা করে আছি, কখন উত্তর পাবো।
স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের বয়স জানতে চেয়ে সবচেয়ে স্বস্তি বোধ করি। সুন্দর উত্তর পাওয়া যায়। যদিও বাচ্চা রুগী দেখি না, তারপরও অনেক সময় চলে আসলে দেখতে হয়। এদের বয়স জানতে সবচেয়ে ভালো লাগে। ঠিক তোতা পাখির মত সুন্দর ভাবে নাম, বয়স বলে। কখনও পাশে বসা মা মৃদু ধমক দেয়, পুরো নাম বল (যখন বাচ্চাটি ডাক নাম বলে)। কখনও বয়সে সংশোধন আসে, ৬ এখনও হয় নি, সামনে জানুয়ারীতে হবে।
মহিলা রুগীদের ক্ষেত্রে সমস্যাটা সবচেয়ে বেশী হয়। যেন দারুণ গোপন একটা তথ্য জানতে চেয়েছি। কত বয়স বললে ডাহা মিথ্যে বলা হয় না, এমন একটা বয়সের খোঁজ শুরু করেন। কখনও একটা ধারণা দেন, ‘এই বাইশ তেইশ হবে’। কখনও আমাকে অনুমান করতে বলেন। যেন এক কঠিন ধাঁধা, পারলে পুরস্কার। আমার আন্দাজ মিলে গেলে তো ভালো, কিন্তু বেশী বললে মহা সর্বনাশ। ‘আমাকে ডাক্তার এতো বুড়ি ভাবল? আর দেখাবোই না এই ডাক্তারকে।‘
মহিলা রুগীদের ক্ষেত্রে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, বিয়ের বয়সটা প্রায় সবাই মনে রাখে। এবং কতদিন পরে বাচ্চা হয়েছে। এরপর জানতে চাই বড় বাচ্চার বয়স কত। এতো সব তিনি মনে রেখেছেন শুধু নিজের বয়সটা ছাড়া। ক্লাস ওয়ানে যোগ শিখানোর যেসব অংক থাকে, রুগীর উত্তরে পাওয়া তথ্য সহযোগে আমার কাজ হচ্ছে ‘যোগ অংক’ প্র্যাকটিস করা।
বয়স্করা অবশ্য নিজের বয়স মনে রাখা জরুরী মনে করেন না। বিশেষ করে পঞ্চাশ ঊর্ধ্ব এবং গ্রামে বসবাস কারীরা। সঙ্গে আসা পুত্র কন্যারা অনেক সময় সাহায্য করেন, একটা আন্দাজ দেন। কেউ সঙ্গে না থাকলে যে উত্তরটা পাই, ‘ষাইট সত্তর হবে’। কিংবা ‘বয়স তো কইবার পারুম না’। তাই বয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশিরভার যে কাজটা করি টা হচ্ছে, জানতে চাই স্বাধীনের সময় বয়স, কিংবা মনে আছে কিনা ?
একদিন এক বৃদ্ধ ভদ্রলোক এলেন। বয়স জানতে চাইলে বললেন, কত আর হবে ৬০। বিশ্বাস হল না। বললাম, এতো কম হবে না।
‘তাহলে বাবা ৭০ দাও।‘
এক ধাক্কায় ১০ বছর। দেখলাম আরও দুএকবার অবিশ্বাস করলে ১০০ ছাড়িয়ে যাবে। ক্ষান্ত দিলাম। তিনি আসলে নিজের বয়স গোনা অনেক আগেই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। যে যা বলে তাতেই রাজী।

তবে কিছু ১০০ বছরের রুগী দেখবার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বয়স যে একশো র ওপরে এই তথ্যটা বেশ গর্বভরে জানানো হয় ডাক্তারকে। সঙ্গে আরও জানানো হয়, জ্ঞান বেশ টনটনে, সবাইকে চিনতে পারে। সঙ্গে যারা এসেছেন তাঁরা ঠিক কয় নম্বর জেনারেশান জিজ্ঞেস করতে হয় না। নিজেরাই বলেন। মুগ্ধ হয়ে শুনতে হয়।
সবচেয়ে সমস্যায় ফেলেন নববিবাহিতারা। বয়স জানতে চাইবার পরে লাজুক চোখে বরের দিকে তাকান। ‘এই উত্তরটা বরই দিক।‘ স্বামীও অনুরোধটা উপেক্ষা করেন না। তবে বয়স বেশী বলে ফেললে, মৃদু আপত্তি, ‘না, অত হবে না’। বয়স ভুল বলার অপরাধে আজকে পতিদেবের কপালে নতুন কিছু লেখা যুক্ত হতে পারে। কম বললে শুধু একটা হাসি, ‘এতো বাচ্চা মেয়ে আমি না’।
সেদিন এক রুগিনিকে বয়স জানতে চেয়ে বসে আছি। উনার চিন্তা শেষ হচ্ছে না দেখে বললাম, ৩০ হবে?
মহিলা আঁতকে উঠলেন, ‘না না অত না’
বললাম, ’২৮?’
‘জ্বি, তা হবে’
একটু শিক্ষিত রুগী গুলো কেন যেন বয়সটা ইংরেজীতে বলতে পছন্দ করেন। ‘ফরটি এইট’ কিংবা ‘সেভেন্টি প্লাস’। কখনও বা ‘এইটটি এখনও হয় নি’
তখন জিজ্ঞেস করি, সেভেনটি নাইন?
‘তা হবে’
কিছু অসুখের ক্ষেত্রে বয়স যদিও একটা প্রয়োজনীয় ব্যাপার। কিছু অসুখ বেশী বয়সে হয়, কিছু অল্প বয়সে। কিছু ক্ষেত্রে জানা দরকার হয়ে পরে অসুখটা ঠিক কত বছর বয়সে শুরু হয়েছে। কতদিন ধরে ভুগছে। চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বয়স ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হয়। কিছু ওষুধ অল্প বয়সে না দেয়ার চেষ্টা করি, কিছু ওষুধ বেশী বয়সে। তবে একদম ঠিকঠাক বয়স জরুরী না। একটা আন্দাজ দিয়েও কাজ চলে যায়।
একদিন ঠিক করলাম বয়স জানতে চাইবো না। রুগী দেখবার পরে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা লিখে দিলাম। পরীক্ষা করাবার জন্য যেই সে কাউন্টারে আমার প্রেস্ক্রিপশান দেখাল, রিসেপসানিস্ট জিজ্ঞেস করলেন বয়স কত। ডাক্তার সাহেব এখানে বয়স লেখেন নি। ক্ষিপ্ত রুগী কিছুক্ষণ পরে রুগী পুনরায় এসে হাজির। ‘ডাক্তার সাহেব আপনি তো বয়স লিখেন নি।‘
অপরাধ মেনে নিলাম। বয়স জিজ্ঞেস করে বয়সের ঘরে লিখে ব্যবস্থা পত্রটা ঠিক করে দিলাম।
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×