somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রয়োজন অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তি

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায়ে আল-বদল কমান্ডার আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল ৩ নভেম্বর, ২০১৩ ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘‘আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনের সর্বোচ্চ শাস্তির আদেশ না দিলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে না।’’

১৯৭১ সালের ১১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় নেতা আশরাফুজ্জামান ও মুঈনুদ্দীন কীভাবে আল-বদর সদস্যদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও হত্যার পর বধ্যভূমিতে লাশ গুম করেছিলেন তা আদালতের রায়ে উঠে এসেছে। আশরাফুজ্জামান খান ছিলেন সেই হত্যাকাণ্ডের চিফ এক্সিকিউটর, আর চৌধুরী মুঈনুদ্দীন ছিলেন সেই পরিকল্পনার অপারেশন ইনচার্জ।

উল্লেখ্য যে, এই দুই অপরাধীর অনুপস্থিতিতেই আদালত রায় দিয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আশরাফুজ্জামান খান পালিয়ে পাকিস্তানে চলে যান। তারপর সেখান থেকে যান যুক্তরাষ্ট্রে। বর্তমানে তিনি নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকায় বসবাস করছেন।

চৌধুরী মুঈনুদ্দীনও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানে পালিয়ে যান এবং সেখান থেকে যান যুক্তরাজ্যে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন।

দুজনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ শিক্ষক, ৬ সাংবাদিক এবং ৩ চিকিৎসকসহ ১৮ বুদ্ধিজীবীকে অপহরণের পর হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের ১১টি অভিযোগের সবগুলোতেই দুই আসামীর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হয়েছে।

বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যায় নেতৃত্বদানকারী বিদেশে অবস্থানরত ঘৃণ্য দুই আল-বদর নেতার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়ায় দেশের মানুষ নিঃসন্দেহে স্বস্তিবোধ করছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতিবিরোধী ভূমিকা পালন করার জন্য এই বর্বরদের সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য ছিল। বিলম্ব হলেও আদালত তাদের এই শাস্তি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন।

তবে এই দুই অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে এনে তাদের বিরুদ্ধে দেওয়া দণ্ড কার্যকর করা আদৌ সম্ভব হবে কিনা সে প্রশ্নও দেশাবাসীর মনে দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পর্যন্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মোট ৯ জনের বিচার সম্পন্ন করে শাস্তি ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলে তার প্রতিবাদে রাজধানীর শাহবাগে তরুণ প্রজন্মসহ লাখ লাখ প্রতিবাদী মানুষ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে তোলেন।

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দেশব্যাপী প্রবল আন্দোলন গড়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবব্যুনাল আইনে সংশোধন এনে দুপক্ষেরই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়। আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে প্রাণদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা চালায়। এছাড়া অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা কেন্দ্র করেও জামায়াত-শিবির ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য জামায়াত-শিবির দেশে-বিদেশে নানা ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।

বর্তমান সরকারের মেয়াদকাল শেষ হয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত একজন যুদ্ধাপরাধীরও শাস্তি কার্যকর না হওয়ায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আগামী নির্বাচনে সরকার পরিবর্তন হলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ অব্যাহত থাকবে কিনা এবং ইতোমধ্যে যাদের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হয়েছে সে রায়ও বাস্তবায়ন হবে কিনা সে প্রশ্ন উঠেছে।

কারণ প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করছে। বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলছেন, বর্তমান সরকার বিদায় নিলে কারাগারে আটক সকল রাজনৈতিক নেতা মুক্তি পাবেন। এই নেতাদের মধ্যে যে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গ্রেফতারকৃত জামায়াত-বিএনপির নেতারাও রয়েছেন, সেটা বেগম জিয়া পরিষ্কার করে না বললেও দেশের মানুষের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে দেশের মানুষ কি এমন শক্তিকে নির্বাচিত করবে যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বন্ধ করে দিবে?

যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, যারা একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে চান এখন আর তাদের নিষ্ক্রিয় থাকার সময় নেই। ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে রাজাকার, আল-বদররা যাতে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ না পায় তার জন্য নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বিজয়ী করতে সর্বশক্তি নিয়ে প্রচারণায় নামার কোনো বিকল্প নেই।

আওয়ামী লীগের দুর্বলতা-সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিতর্ক করে শত্রুপক্ষকে উৎসাহ না দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও শাস্তি কার্যকর করা সম্ভব হবে। আবার আওয়ামী লীগকেও সব ধরনের অহমিকা পরিহার করে নিজেদের ভুল-ত্রুটি শুধরে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে মোকাবেলায় দৃঢ়তার সঙ্গে সামনে অগ্রসর হতে হবে।

শত্রুদের দুর্বল ভাবার চেয়ে বড় বোকামি আর কিছু নেই। শত্রুশিবির ঐক্যবদ্ধ। মিত্রশিবিরের বিভেদ পরাজিত শক্তিকেই উৎসাহ যোগাবে।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×