somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনগণের পার্টি কোথায়?

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই লেখাটা যখন লেখা শূরু করেছিলাম তখন প্রায় রাত সাড়ে দশটা। লেখা শুরুর প্রায় মিনিট দশেক আগে ঔষধ কিনতে বের হয়েছিলাম। অনেক খোঁজাখুজি করে একটি দোকানে ঔষধ পাই। পল্টন এলাকা সাধারণত রাত ১টা পর্যন্তও সরগরম থাকে। কিন্তু আজ চিত্রটা পুরো ভিন্নরকম। রাত সোয়া দশটায় ঢাকাকে একটা মৃতপুরি মনে হয়েছে আমার। দু’একটা রিকসা চলছে আর অল্প কিছু মানুষ। হঠাৎ জোরে সাইরেন বাজিয়ে পুলিশের যান চলে গেলো মুখের সামনে ধুলো উড়িয়ে। যেন অঘোষিত কারফিউ চলছে শহর জুড়ে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে চলমান হরতালের কারণেই এমন অবস্থা এটা সবাই জানেন। তবে এমন হরতাল এর আগে দেখিনি। মজার বিষয়, এমন চিত্র অবশ্যই প্রমাণ করে না যে জনগণ এই দাবিতে একমত পোষন করেছে বিরোধীদলের সাথে। যদি তাই করতো তাহলে সবাই গত ২৫ তারিখেই রাস্তায় নেমে যেত। হাসিনা সরকার এক মুহুর্ত আর গদি আঁকড়ে বসে থাকতে পারতো না।

আমার কাছে মনে হয়েছে এই অঘোষিত কারফিউর মুল কথা ‘আতংক’। মানুষ নিজের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। ঘর থেকে বের হলে বাঁচবে কি মরবে তার নিশ্চয়তা কে দিবে? এ কারনেই আমার চিরচেনা পল্টন এত নিস্তব্ধ। এমনটা সারা ঢাকা জুড়েই। এমন পরিস্থিতি থেকেই বোঝা যায় আমরা জনগণ কতটা জিম্মি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে।

বিরোধীদল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অনড় অবস্থানে। সরকার পুরো উল্টো অবস্থানে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রি যখন বিরোধীদলীয় নেত্রীকে সংলাপের জন্য দাওয়াত করলেন তখন আমরা আনন্দে আত্মহারা। হওয়াটাই স্বাভাবিক। এমন অচল আর আতংকিত অবস্থা নিরসনে এমন উদ্দ্যোগ সবার মনে স্বস্তি এনেছে। মানুষ ভেবেছে এইবার হয়তো বরফ গলতে শুরু করবে। কিন্তু বরফ তো গলেনি বরং আরো জমাট বেঁধেছে।

এত বরফ গলা না গলার মাঝে আমার প্রশ্ন অন্য যায়গায়। আমরা কেন আনন্দে আত্মহারা হবো? ত্বত্তাবধায়ক হলে অথবা না হলে, সর্বদলীয় সরকার হলে অথবা না হলে আমাদের জনগণের কি লাভ? আমরা কি তারেক রহমান গংদের খাম্বা বিজনেস, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি, পদ্মা সেতু, বিশ্বজিত, হলমার্ক, রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, টিকফা চুক্তি, দ্রব্যমুল্যের উর্ধোগতি, রাজাকার বাঁচানোর হরতালে মানুষ মারা, স্বৈরাচার এরশাদের পাহাড় সম দুর্নীতি সব ভুলে যাবো? নাকি এই সবগুলোর সমাধান হবে? কিছুই হবে না। তাহলে কিসের আশায় এই আনন্দ? এই ব্যাপারগুলো পরিস্কার হবার আগে কেন আমরা এদের আবার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো? এই বিষয়গুলোর মিমাংসা হওয়া জরুরী নয় কি? নাকি এক জালিমের হাত থেকে আরেক জালিমের হাতে নিজেদের বারবার সোপর্দ করবো?

বিষয়টা কিন্তু খুবই সাধারণ। জাস্ট ক্ষমতা হস্তান্তর। আর এই সাধারণ একটা বিষয়কে আমাদের সামনে অসাধারণ আর দুর্বোধ্য করে তুলছেন আমাদের দু’জোটের মহান নেতরা। গদিটা আমার দেখার খুব শখ। কি আছে এই গদিতে? বাংলাদেশের ইতিহাসে কেউ সহজে গদি ছাড়তে চায় না। একবার বসলে কোনো না কোনো ভাবে তারা গদিতে চিরকাল বসে থাকতে চায়। আমাদের জনগনকে বোকা পেয়ে মুল বিষয় থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। আর তাদের গদি দখলের যুদ্ধে আমাদের মনোনিবেশ করায়। এটাই তাদের রাজনীতি। কিন্তু গদি দখলের আগে কিছু বিষয় মিমাংসা না করে নির্দলীয় না সর্বদলীয় মূলা ঝুলানোকে কি ধরনের রাজনীতি বলে তা একটু জানা দরকার। এই রাজনীতির অবসান কখনোই আসবে না যতদিন জনগনের পার্টি ক্ষমতায় আসবে। তাই আনন্দে মাতয়ারা না হওয়াই উত্তম, একই সাথে বুদ্ধিমানের কাজ।

বামপন্থি দলগুলো এই সময় শক্ত অবস্থান নিতে পারে। অবশ্যই তারা ক্ষমতায় যেতে পারবে না। কিন্তু জনগণের মাঝে এই বার্তাটা পৌঁছানো দরকার এই দুই জোট দিয়ে আর হবে না। কিন্তু কিছুদিন যাবত সিপিবির সভাপতিকে দুই জোটের মিলন ঘটানোর জন্য বেশ তৎপর দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ এরাও দুই দল বা জোটের সীমানা প্রাচীর ডিঙানোর সাহস করে না। আওয়ামীলীগ যে বামপন্থিদের বন্ধু না তা আর কি করে প্রমাণ করতে হয় আমার জানা নেই। সেটা সিলেটে ছাত্রলীগ সিপিবি সভাপতিকে মেরে নতুন করে প্রমাণ করছে। আর সূচনা তো সবার জানা। সেই ৭৪-এ বঙ্গবন্ধুর সিরাজ সিকদারকে ক্রসফায়ারে দিয়ে সংসদে দম্ভোক্তি ‘কোথায় সিরাজ সিকদার’।

আসলে এদের বন্ধু ভাবার কথা কোন ভাবেই কল্পনা করা যায় না। দুটি দুই রাজনৈতিক আদর্শ। বন্ধু হবার প্রশ্নই ওঠে না। সেটা আওয়ামীলীগ বুঝলেও বামপন্থিরা বোঝে না। তবু সিপিবি-বাসদ তাদের রাজনৈতিক মিত্র মনে করে আওয়ামীলীগকে। নয়তো সেদিন সিপিবির সভাপতিকে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা যেভাবে সিলেটে মেরেছে তাতে ভেবেছিলাম তারা হার্ড লাইনে যাবে। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয় একটা টু’শব্দ হলো না।

মজার বিষয় হলো জামায়াত ঠেকানোর জন্য নাকি এই বন্ধুত্ব। জামাত যে একটা সন্ত্রাসী দল। এরা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তা এদেশের অধিকাংশ মানুষই জানে। জামায়াত ঠেকাতে আওয়ামীলীগের লেজ ধরার কোন মানে হয় না। নিজেদের রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার কারনেই জামায়াত আজ এত দম্ভ দেখাচ্ছে। চিহ্নিত রাজাকারদের পক্ষে কথা বলছে। কয়েক বছর আগেও এমন ছিলো না। যত বামপন্থিরা দুর্বল হয়েছে তত তারা শক্তিশালী হয়েছে। কোন কিছুই শুণ্য থাকে না এই কথা আমাদের প্রগতিবাদিরা ভূলে যান।

অন্য বামপন্থি দলগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। ভাঙতে ভাঙতে হাজার টুকরো। এরা জনগনকে এক করবে কি? নিজেরাই ভেঙে চুরমার। বামপন্থিরা একমাত্র জাতীয় কমিটির কোন কর্মসূচি ছাড়া আর কোন কিছূতেই জোটভুক্ত হতে পারেনি। এমন কি জাতির এই ক্রান্তিকালেও। যারা দ্বীদলীয় বৃত্ত ভাঙার কথা বলে তারাই যেন সেই বৃত্তের ভেতরে অবিরাম ঘুরপাক খাচ্ছে।

এমন বাস্তবতায় বলাই যায়, দেশের মানুষের জন্য কাজ করবে এমন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশে নাই। জনগনের পার্টি যাকে বলে সেই পার্টি হারিকেন দিয়ে খুঁজলেও পাওয়া যাবে না। বামপন্থিদের নিয়ে এত কথা বললাম কারণ তাদের জনগেনের কাছের কেউ একজন ভেবেছিলাম। কিন্তু তারাও দিন দিন হতাশ করছে। সবচেয়ে মজার বিষয় বিশ্বব্যাপি বামপন্থার নতুন করে হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সেই হাওয়া বাংলাদেশের বামরা এখনো গায়ে লাগাতে পারেনি। কিউবা, ভেনিজুয়েলা, উত্তর কোরিয়া, বলিভিয়া, চিলি, ভারত, নেপাল, ভিয়েতনাম, চীন, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে হয় বামপন্থি সরকার ক্ষমতায় অথবা কোথাও কোথাও ক্ষমতা দখলের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে জনগনকে সাথে নিয়ে। সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আমাদের বাম রাজনীতিকরা কি করছেন? আসলেই সত্যিকার জনগনের পার্টি নেই এদেশে। একটিও না, আর এটাই আফসোস।



ঢাকা, ২৮ অক্টোবর ২০১৩
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×