somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শুধুই মা......

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যখন রাত্রি নিঝুম নেই চোখে ঘুম,
একলা শূন্য ঘরে, তোমায় মনে পড়ে
মাগো তোমায় মনে পড়ে ..................

জানি অনেকেই গানটি শুনেছেন আর অনেকের হয়তো অনেক প্রিয় গান ও এটি। আমার অনেক ভালো লাগে গানটি। তবে গানের কথার মতো শুধু নিঝুম রাতেইনা মাকে যে কত সময় কতভাবে মনে পড়ে আমার, অনেকেরই হয়তো আমার মতো এমন অনুভূতি হয়। বিয়ের পর থেকে যেন মাকে মিস করার পরিমাণ দিন দিন বাড়তে থাকে। নতুন সংসারে প্রতি পদে পদে মেয়েরা মায়ের অভাব অনুভব করে, বিশেষ করে তখন যখন সেই ঘরের পরিবেশ তার অনুকূলে না থাকে। আমি অবশ্য খুব বেশী প্রতিকূল অবস্থায় ছিলাম্না, তবু শাশুড়িকে খুব ভয় পেতাম বলে একটু দূরে দুরেই থাকতাম।

ছুটির দিনগুলোতে বাসায় থাকলে টুকিটাকি রান্নার চেষ্টা করি। একটু স্পেশাল আইটেম ট্রাই করি। কিন্তু আগে রান্নার অভিজ্ঞতা না থাকাতে সেই রান্নার আগে থেকে শুরু হয় আম্মুর কাছে ফোনে কোচিং ক্লাস নেয়া। আর রান্নার মাঝখানে তো আরও বেশ কয়েকবার এটা সেটা জিজ্ঞেস করে জ্বালাতামই আম্মুকে। আম্মু কখনো বিরক্ত হয়না । এটা একটা অবাক করার মতো বিষয় যে আমার আম্মু খুব একটা বিরক্ত হয়না। এতো ধৈর্য নিয়ে থাকতে পারে এমন মানুষ খুব কম দেখেছি আমি জীবনে। এটা ছোটবেলা থেকে দেখছি। আমরা ছোটবেলায় অনেক দুষ্ট ছিলাম, বিশেষ করে আমার ভাইয়া। আম্মু এজন্য কখনো আমাদের মেরেছেন বলে মনে পড়েনা। আব্বু বাধ্য হয়ে কঠোর রূপ ধারণ করেছিলেন তখন।

রান্না করতে গেলে আম্মুর কাছে বারবার ফোন করে জেনে নেই এই রান্নাটা আম্মু কিভাবে করতো। তখন যতই আম্মুর রেসিপি ফলো করে রান্না করিনা কেন, আম্মুর হাতের রান্নার মতো যেন স্বাদ পাইনা। মায়ের হাতের রান্না করা খাবারের জাদুই যেন অন্যরকম।

আম্মুকে এখনো বাসায় থাকলেও মিস করি। মনে হয় যদি এখন আম্মুর কাছে থাকতাম বা আম্মু যদি আমার কাছে থাকতো। পড়াশুনা শেষ করে যখন চাকরির অপেক্ষায় বাসায় অলস সময় কাটাচ্ছিলাম, সেই দিনগুলো যে কি আরামে কাটিয়েছি। সকাল ৯টা/ ১০টায় ঘুম থেকে উঠতাম, উঠেই মজার মজার নাস্তা রেডিমেড পেতাম। কখনো আম্মু ডাকতোনা কোন সাহায্যের জন্য। আমিও স্বার্থপরের মতো নিজে আরাম করে ঘুমিয়ে তারপর উঠতাম। আর এখন কখনো নিজে নাস্তা বানাতে গেলে বুঝি এই সময়টায় একটু সাহায্য কতটা উপকারী।

অসুস্থ হলে আরও বেশী গায়ে লাগে আম্মুর পাশে না থাকাটা। ছোটবেলা থেকে আমাদের দুবোনের একটা বদভ্যাস ছিল আমরা অসুস্থ হলেই আম্মুকে জোর করে পাশে বসিয়ে রাখতাম। অন্য কোন কাজে যেতে দিতামনা। কেমন অদ্ভুত মানসিকতা কাজ করতো তখন, মনে হতো আম্মু পাশে বসে থাকলেই বুঝি যন্ত্রণাটা অনেক কমে যেতো। মায়ের ক্ষমতা বুঝি এমনই । সব ডাক্তারি বিদ্যার উর্ধে মায়ের ভালোবাসা বা একটুখানি স্পর্শ।

বিয়ের আগে দেখা যেতো হয়তো ছোটখাটো কারনে আম্মুর উপরে রেগে যেতাম বা রাগারাগি করতাম। বিয়ের পর থেকে যখন আম্মুর অভাব প্রতিদিন হারে হারে টের পেতাম তখন থেকে চেষ্টা করেছি কোনভাবেই আম্মুর সাথে রাগারাগি বা খারাপ ব্যবহার না করতে। নিজে মা হওয়ার পর থেকে মনে হয় সেই চেষ্টা আরও জোরদার হয়েছে। কারণ তখন থেকেই পরিপূর্ণ ভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি আমাদের বেড়ে উঠা বড় হওয়া আর ভালো মানুষ হয়ে উঠার পেছনে একজন মায়ের অবদান কতটা। এ ব্যাপারে কোন ভাষার ব্যাবহারই যেন পর্যাপ্ত নয়।

খাওয়া দাওয়া নিয়ে আমরা তিন ভাইবোনই খুব বিরক্ত করতাম। অনেক সময় রাতে না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়তাম। আম্মু তখন কতশত বার অনুনয় বিনয় চালাত আমাদেরকে খাওয়ানর জন্য। এটা আমার মা এখনো করে মাঝে মাঝে ভাইয়া বা ছোট বোনটা খাওয়া নিয়ে যন্ত্রনা করে বলে। শেষ পর্যন্ত জয়ী হয় আম্মুই। কত বিরক্ত যে হতাম তখন। আর এখন মেয়েটা না খেয়ে থাকলে বুঝি আম্মু কেন এমন করতো। আমরা তখন খেয়ে উঠলে মনে হতো যেন আম্মুর পেটটা ভরত।

এখন প্রতিদিন কথা বলি আম্মুর সাথে, সকালে বিকালে বা যখনই মনে পড়ে। তবু যেন মনটা ভরেনা। ছুটির দিনে সকাল থেকে শুরু হয় আম্মুর ফোন দেয়া, বারবার একই কথা, বাসায় আয় বাসায় আয়। সপ্তাহে একটি বা দুটি ছুটির দিন, দেখা যায় অনেক কাজ জমে থাকে সেই দিনের জন্য। তাই অনেক ইচ্ছে থাকা স্বত্তেও সম্ভব হয়না মায়ের অনুরোধ রাখা। উল্টো আম্মুকে অনুরোধ করি আমার বাসায় আসার জন্য। তার পক্ষেও সংসারের কাজ ফেলে আসা সম্ভব হয়ে উঠেনা। সে আবার উল্টো আমাকে অনুরোধ করতে থাকে যাওয়ার জন্য। এটা সেটা কাজের দোহাই দেই, পরে আম্মুও লক্ষী মেয়ের মতো মেনে নেয় আমার না যাওয়াটা আর আবার আমার পরবর্তী ছুটির দিনের অপেক্ষায় থাকে।

মাকে নিয়ে লেখা অনেক কষ্টের। হাজারো স্মৃতি মাকে নিয়ে। কোনটা ছেড়ে কোনটা লিখি। আবার যাই লিখিনা কেন, মনে হয় মন মতো মনের ভাব ফুটিয়ে তুলতে পারছিনা। পরম নির্ভরতার স্থান মায়ের কোল। সবচেয়ে বড় আশ্রয় মা। আমার মেয়েটা তার বাবার ভক্ত বেশী, তবুও রাতের বেলা একবার না একবার আমার বুকে আসবেই। মাকে অনেক অনেক বিশেষণে বিশেষিত করেও তার প্রকৃত মহিমা তুলে ধরা যায়না। বেশীরভাগ মানুষেরই সফল অবস্থানের পেছনে মায়ের অবদান থাকে সবচাইতে বেশী। তাই সবার কাছে অনুরোধ থাকবে আর যার সাথে যাই করেন না কেন মায়ের মনে কখনো কষ্ট দেবেন না দয়া করে। মাকে খুশী না রাখতে পারেন সমস্যা নেই কিন্তু তাকে দুঃখী যেন না করেন সেই দিকে খেয়াল রাখবেন। কারন মাকে কষ্ট দিয়ে জীবনে কেউ কখনো ভালো থাকতে পারেনা। সব মায়েরা তাদের সন্তানদের নিয়ে অনেক ভালো থাকুক এই দোয়া করি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০২
৩০টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×