somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুবাদ গল্প: মির‍্যাকল অভ দ্যা ফিফটিন মার্ডারারস

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‌‌মূল: বেন হেক্ট

বেন হেক্ট মূলত পরিচিত ছিলেন ‘দ্যা ফ্রন্ট পেইজ’ নাটকটির সহলেখক হিসেবে। আমেরিকান সাংবাদিক ও নাট্যকার মৃত্যুবরণ করেন ১৯৬৪ সালে।

“দ্যা কালেক্টেড স্টোরিজ অভ বেন হেক্ট” থেকে সংক্ষেপিত

উৎস: রীডার’স ডাইজেস্ট

ভলিউম: ৩৮, সংখ্যা: ২২৮, মার্চ ১৯৮২

নির্ঘন্ট:

১.রোগ নির্ণয়

২.অ্যাবডোমেন বা উদর গহ্বরটাকে ঢেকে রাখে যে পর্দা তার নাম পেরিটোনিয়াম। ইনফেকশন বা অন্য কারণে এই পর্দায় ব্যথা হলে বা ফুলে গেলে তাকে বলে পেরিটোনাইটিস।

৩.অ্যাকিউট গলব্ল্যাডার পিত্তাশয়ে প্রদাহ বা ফুলে যাবার রোগ। রোগ হঠাৎ হলে তাকে বলে অ্যাকিউট। সময় নিয়ে থাকলে তাকে বলে ক্রনিক।

৪.মৃত্যুর কারণ অথবা রোগের তীব্রতা নির্ণয়ে করা পোস্ট মর্টেম।

৫.হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনিগুলোর মধ্যে ডানপাশেরটার নিম্নগামী শাখার কোষগুলা অক্সিজেনের অভাবে মরে যাওয়া।

৬.রোগসৃষ্টিকারি

৭.কোলন বা বৃহদন্ত্রের আলসার বা ঘা

৮.পেটে চাপ দিলে ব্যথা অনুভব করা হল অ্যাবডোমিনাল টেন্ডারনেস। জেনারেলাইজড বলা হয় এর পেছনে একাধিক কারণ থাকলে

৯.ফুটো হয়ে যাওয়া

১০.খাদ্যনালী

মেডিকেল পেশাজীবীদের গোপন সভাগুলো সবসময়ই একটা রহস্যময়তার বাতাবরণে মোড়া থাকে। প্রশ্ন জাগতে পারে, ফ্যাটার্নিটি তার অধিবেশনগুলোকে যে গোপনীয়তায় মুড়ে রাখে তা সর্বসাধারণকে কোন বিষয়টি জানতে বাধা দেবার জন্যে- ফ্যাটার্নিটি কতটা জানে নাকি ফ্যাটার্নিটি কী কী জানে না।

নিউ ইয়র্কে এই প্রজন্মের সবচেয়ে রহস্যময় মেডিকেল গেট-টুগেদারগুলো আয়োজন করে প্রথীতযশা ডাক্তারদের একটি দল যারা নিজেদের “এক্স ক্লাব” নামে ডাকে। ২০ বছর ধরে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর ওয়াল্টন হোটেলে বৈদ্যগণের এ ছোট দলটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হয় আর তাদের অজানা রোমাঞ্চ ভোর পর্যন্ত চলে।
এক্স ক্লাবের শেষ নাটকীয় অধিবেশনটি হয়েছিল এক বিষণ্ন, বৃষ্টিভেজা রাতে। প্রতিকূল আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও ১৪ দস্যের সবাই এসেছিল, কারণ এ অধিবেশনটির একটা বাড়তি আকর্ষণ ছিল। একজন নতুন সদস্যের, যোগ দেবার কথা ছিল যিনি হবেন ১৫তম। ডা: স্যামুয়েল ওয়ার্নার একজন মেডিকেল জিনিয়াস হিসেবে বিরলভাবে বেশ তরুণ ছিলেন- একজন স্বীকৃত মেডিকেল জিনিয়াস। আর এক্স ক্লাবের সদস্য হিসেবে মনোনীত হবার চেয়ে পরিপূর্ণতর স্বীকৃতি তিনি কখনই তার কেরামতির জন্য পান নি। যে ১৪ সদস্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তাঁরা একেকজন স্ব স্ব ক্ষেত্রে পথপ্রদর্শক ছিলেন। আসলেই, ডা: ওয়ার্নারের মেডিকেল হিরোদের অর্ধেকেই ক্লাবটিতে ছিলেন।

ক্লাবের প্রথীতযশা সদস্যদের অভিবাদন করার পর ডা: ওয়ার্নার এক কোণায় গিয়ে বসলেন আর একে একে একটা হাইবল, একটা ককটেল আর বেশ কিছু ব্র্যান্ডি নীরবে প্রত্যাখ্যান করলেন। তার চেহারা চিন্তাক্লিষ্ট হয়ে রইল, তার অ্যাথলেটিক শরীরটা চেয়ারে এমনভাবে সোজা ছিল যেন তা কোন অধিবেশনের চেয়ে একটা স্প্রিন্টের জন্য তৈরি হয়েছিল।

ন’টা বাজে সম্মানিত ডায়াগনস্টিশিয়ান ডা: উইলিয়াম টিক এক্স ক্লাবের এবারের অধিবেশনের আরম্ভ ঘোষণা করলেন। “ডা: ওয়ার্নার,” তিনি শুরু করলেন, “এক্স ক্লাব, যা কিনা এক্স মার্কস দ্যা স্পট ক্লাবের সংক্ষিপ্ত নাম, তার একটাই উদ্দেশ্য। সদস্যবৃন্দ প্রতি ৩ মাসে একত্রিত হন এবং তাঁদের মধ্যে যে কেউ শেষ অধিবেশনের পর থেকে এ পর্যন্ত কোন খুন করে থাকলে তার স্বীকারোক্তি দেন।”

“আমি অবশ্যই এখানে মেডিকেল মার্ডারের কথাই বলছি- যদিও আমাদের পক্ষে কাউকে কোন কিছুর বশঃ আমবর্তী হয়ে খুন করতে শোনা একটি হাঁপ ছেড়ে বাঁচার মত ব্যাপার, বোকামো করে খুন করতে শোনার চেয়ে। আমাদের কাজ কেবল সেসব কেইস নিয়ে যেখানে ডাক্তার ভুল ডায়াগনসিস১ বা পরিষ্কারভাবেই ভুল ওষুধ বা ভুল সার্জারির দরুন কোন রোগীকে মেরে ফেলেছে যে কিনা এখন বহাল তবিয়তে বেঁচে থাকতে পারত।”

“আমি স্বীকার করছি যে এটিই আমার প্রথম অধিবেশন,” নতুন সদস্যটি অস্থিরভাবে বিড়বিড় করলেন, তারপর গলা চড়ালেন, “কিন্তু তবুও আমার গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলার আছে।”

“একটি খুন?” টিক শুধোলেন।

“জ্বী,” নতুন সদস্যটি বললেন।

“বেশ,” বুড়ো অধ্যাপক মাথা নাড়লেন। “আমরাও আপনার কথা শুনলে বেশ খুশি হব। কিন্তু আমাদের তালিকায় আপনার সামনে আরও দু’জন খুনী আছেন।”

এরকম পরিস্থিতিতে বেশ ক’জন সদস্য খেয়াল করলেন তরুণ শল্যবিদের মাঝে কেবল মঞ্চভীতির চেয়ে ভিন্ন কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা কাজ করছিল। উপস্থিত সদস্যবৃন্দ এ বিষয়ে নিশ্চিত হলেন যে, ডা: ওয়ার্নার এক্স ক্লাবে তাঁর প্রথম অধিবেশনে নিজের মাঝে টগবগ করা নৃশংস ও রহস্যময় কিছু একটা এনেছেন।

ডা: ফিলিপ কার্টিফ, প্রথীতযশা নিউরোলজিস্ট, ওয়ার্নারের বাহুতে হাত রেখে আস্তে করে বললেন, “আমরা সবাই বাজে কাজ করেছি- তা সে যাই হোক না কেন।”

“আপনি যদি স্যাম ওয়ার্নারের হাত ধরতে চান, কার্টিফ, দয়া করে ওটা নীরবে করবেন,” বুড়ো টিক শুধোলেন। “এটা অনুতাপ-জটিলতায় ভোগা ডাক্তারদের জন্য কোন মানসিক হাসপাতাল না। এটা ভুল সারানোর ক্লিনিক। আমাদের উদ্দেশ্য বৈজ্ঞানিক। আজকের প্রথম কেইস,” বুড়ো টিক বলে গেলেন, “উপস্থাপন করবেন ডা: ওয়েন্ডেল ডেভিস।”

নীরবতা বজায় থাকল যখন গুণী পাকস্থলি বিশেষজ্ঞ উঠে দাঁড়ালেন। “গেল গরমের মাসে হরোউইটজ নামের ফ্রিজ মিস্ত্রির বাড়িতে ডাক পড়েছিল,” তিনি শুরু করলেন। “সিনেটর বিল তার গরীব ভোটারদের জন্য একটা পিকনিক দিয়েছিলেন। আর ঐ অনুষ্ঠানের ফলশ্রুতিতে হরোউইটজের তিন বাচ্চার ফুড পয়জনিং হল। সিনেটর মেহমানদার হিসেবে দায়িত্বটা অনুভব করলেন আর আমি তার একান্ত অনুরোধে হরোউইটজের বাড়ি গেলাম। আমি বাচ্চাদের মধ্যে দু’জনকে, বয়স নয় আর এগারো, ভালই বমি করতে দেখলাম। তাদের মা তারা তিনজন কী কী খাবার খেয়েছে তার একটা লিস্ট আমাকে দিলেন। স্তম্ভিত করার মত ছিল সেটা। আমি তাদের ক্যাস্টর অয়েলের একটা ভাল ডোজ দিলাম। তিন নম্বর বাচ্চাটা, বয়স সাত, বাকিদের মত এতটা অসুস্থ ছিল না। চেহারা ফ্যাকাশে ছিল, হালকা জ্বর ছিল, বমিবমি ভাব ছিল- কিন্তু বমি করছিল না। মনে হল, সেও পয়জনড্, কিন্তু কম মাত্রায়। সাবধানতার জন্য, আমি একই ডোজের ক্যাস্টর অয়েল প্রেসক্রাইব করলাম।

“মাঝরাতে, তাদের বাবা ডাকলেন, সাত বছরের বাচ্চাটার অবস্থা নিয়ে ভয় পেয়ে। (বাকি দুই বাচ্চা যথেষ্টই উন্নতি করেছে।) আমি
এই বলে তাকে চিন্তা করতে মানা করলাম, যে সবচেয়ে কমবয়সীটির ফুড পয়জনিং দেরীতে ডেভেলপ করেছে আর সকালের মধ্যেই প্রশ্নাতীতভাবে সে ভাল হয়ে যাবে। যখন আমি লাইনটা কেটে দিলাম তখন চিকিৎসার জন্য ক্যাস্টর অয়েল প্রেসক্রাইব করায় নিজেকে নিয়ে যথেষ্টই খুশি ছিলাম। পরদিন আমি দেখলাম বড় দুই বাচ্চা বাস্তবিকই রিকভার করেছে। সাত বছরেরটাকে, কোন কারণে, খুব অসুস্থ লাগছিল। বাচ্চাটার ১০৫ ডিগ্রি টেম্পারেচার ছিল। সে ডিহাইড্রেটেড ছিল, চোখ বসে গিয়েছিল আর কালচে হয়ে গিয়েছিল, চিনচিনে ব্যথা ছিল, নাকের পাটা চওড়া হয়ে গিয়েছিল, ঠোঁট নীলচে হয়ে গিয়েছিল আর চামড়া ঠাণ্ডা আর চটচটে ছিল।”

ডা: ডেভিস থামলেন।

ডা: মিল্টন মরিস, বিখ্যাত ফুসফুস বিশেষজ্ঞ, এবার কথা বললেন।
“ও দু’ঘন্টার মধ্যে মারা গিয়েছিল?”

ডা: ডেভিস মাথা নাড়লেন।

“বেশ,” ডা: মরিস ধীরেসুস্থে বললেন, “বাচ্চাটা সম্ভবত অ্যাকিউট অ্যাপেন্ডিসাইটিসে ভুগছিল যখন আপনি প্রথম তাকে দেখলেন। ক্যাস্টর অয়েল তার অ্যাপেন্ডিক্স ফাটিয়ে দিয়েছিল। যখন আপনি আবার দেখতে গেলেন, ততক্ষণে পেরিটোনাইটিস২ শুরু হয়ে গিয়েছিল।”

“হ্যাঁ” ডা: ডেভিস ধীরে বললেন, “ঠিক এটাই ঘটেছিল।”

“ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে খুন,” বুড়ো টিক হাসল। “এবার ফ্লোর ডা: কেনেথের।”

ডাক পাওয়া স্কটিশ শল্যবিদ উঠে দাঁড়ালেন। “বেশ,”- তিনি তাঁর হসপিটাল কলিগের দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন, যিনি নতুন সদস্য- “তুমি জান অ্যাকিউট গলব্ল্যাডারসে৩ কী হয়, স্যাম। রোগীকে আনা হয়েছিল গভীর রাতে। অ্যাবডোমেনের রাইট আপার কোয়ার্ডেন্টে তীব্র ব্যথা ছিল। এটা পিঠে আর ডান কাঁধে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি তাকে ওষুধ দিলাম ব্যথার জন্য, কিন্তু সকালে মধ্যে এটা এত তীব্র হল যে নিশ্চিতভাবেই মনে হল গলব্ল্যাডার ফুটো হয়ে গেছে। আমি অপারেশন করলাম। কিন্তু তার হতচ্ছাড়া গলব্ল্যাডারে কোন কোন সমস্যাই ছিল না। এক ঘন্টা পর সে মারা গেল।”

“অটোপসিতে৪ কী পেলেন?” ডা: স্যুইনী জিজ্ঞেস করলেন।

“একটু দাঁড়ান,” উড জবাব দিলেন। “ওটা তো আপনাদের বের করার কথা।”

“আপনি তার হিস্টোরি নিয়েছিলেন?” ডা: কার্টিফ কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করলেন।

“না,” উড ইত্তর দিলেন। “ওটা ইমার্জেন্সি ছিল।”

“আহা!” টিক ঘোঁৎ করে উঠলেন। “এই তো! আবার কানামাছি ভোঁ ভোঁ। ডা: উড একজন মহিলাকে খুন করেছেন কারণ তিনি ব্যথার উৎস ভুল চিনেছেন। গলব্ল্যাডার ছাড়া এরকম ব্যথা কোথা থেকে হতে পারে যেমনটা আমাদের গুণী সার্জন শুনালেন?”

“হার্ট,” ডা: মরিস দ্রুত জবাব দিলেন।

“আপনি প্রায় ধরে ফেলেছেন,” বলেন উড। “অটোপসিতে পেলাম রাইট করোনারি আর্টারির ডিসেন্ডিং ব্র্যাঞ্চে ইনফার্কশন৫ হয়েছে।”
“পণ্ডিতমূর্খের হাতে খুন,” বুড়ো টিক রাগের সাথে উচ্চারণ করলেন। “জেন্টলমেন, আমরা এসব শিশুতোষ অপরাধ থেকে কেবল এটাই শিখলাম যে বিজ্ঞান আর নির্বুদ্ধিতা হাত ধরাধরি করেই চলে। যাই হোক,আমাদের সাথে আছেন তরুণ কিন্তু মেডিকেলীয় হাতিয়ার চালনায় প্রচণ্ড প্রতিভাবান একজন শিল্পী। আর আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যদিও তিনি কোন খুন করেই থাকেন এটাকে তাহলে বলতেই হবে আমার কিছু ছাত্রীর ভাষায় ‘চরম’। তিনি এখানে বসে একজন সত্যিকার অপরাধির মত মোচড়ামুচড়ি করছেন, অনুতাপে এবং সবাইকে শোনানোর ব্যাগ্রতায় ঘামছেন। জেন্টলমেন, আমি আপনাদের সামনে আনছি আমাদের নতুন ও কনিষ্ঠতম আসামী, ডা: স্যামুয়েল ওয়ার্নার।”
ডা: ওয়ার্নার তার ভেজা রুমাল দিয়ে ঘাড় মুছলেন। “রোগী ছিলেন তরুণ, ১৭ বছর বয়েসী, আর চমৎকার মেধাবী,” ওয়ার্নার বললেন। “সে কবিতা লিখত। আমাকে ডাকার দু’ সপ্তাহ আগ থেকেই সে অসুস্থ। যখন আমি দেখলাম সে কেমন অসুস্থ, আমি একবারেই তাকে একটা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিলাম। অসুস্থতা শুরু হয়েছিল অ্যাবডোমেনের বামপাশের ব্যথা থেকে। সে আমাকে ডাকতে গিয়েছিল, কিন্তু ব্যথা তিনদিন পরই কমে গিয়েছিল তাই রোগী ভাবল সে সেরে গিয়েছে।”

“কিন্তু দু’দিন পর এটা আবার শুরু হল আর টেম্পারেচার বাড়তে থাকল। তার ডায়রিয়া হল। পুঁজ আর রক্তও বের হত, কিন্তু কোন অ্যামিবা বা প্যাথোজেনিক৬ ব্যাকটেরিয়া ছিল না যখন আমাকে ডাক পাঠাল। প্যাথোলজিক্যাল রিপোর্ট পড়ার পর আলসারেটিভ কোলাইটিসের৭ জন্য একটা ডায়াগনসিস করলাম। সিমটমগুলো অ্যাপেন্ডিসাইটিসের দিকে নির্দেশ করছিল না। আমি পেশেন্টকে অ্যাজালফাডিন আর ক্লিয়ার লিকুইডস দিলাম। এই ট্রিটমেন্ট দেবার পরও পেশেন্টের অবস্থা খারাপ হতে থাকল। তার জেনারেলাইজড অ্যাবডোমিনাল টেন্ডারনেস৮ ডেভেলপ করতে থাকল। দুই সপ্তাহ সাবধানে ট্রিটমেন্টের পর পেশেন্ট মারা গেল।”

“আর অটোপসি দেখাল আপনি ভুল?” ডা: উড জিজ্ঞেস করলেন।

“আমি অটোপসি করিনি।” ডা: ওয়ার্নার বললেন। “আমার উপর ছেলেটার মা-বাবার পুরো ভরসা ছিল। যেমন ছেলেটার ছিল। তারা সবাই বিশ্বাস করতেন আমি তার জীবন বাঁচাতে যা সম্ভব ছিল তাই করছি।”

“তাহলে আপনি কীভাবে জানলেন আপনার ডায়গনসিসে ভুল ছিল?” ডা: হিউম জিজ্ঞেস করলেন।

“এই সাধারণ ব্যাপারটা থেকে,” বিরক্ত হয়ে ওয়ার্নার বলল, “যে পেশেন্ট সেরে যাওয়ার বদলে মারা গেছে। আমি তাকে একটা ভুল ডায়াগনসিস করে মেরে ফেলেছি।”

“এটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত,” বললেন ডা: স্যুইনী।

“বেশ, জেন্টলমেন,” বুড়ো টিক টেবিলের পেছন থেকে হেসে উঠলেন, “আমাদের মেধাবী নতুন সদস্য নিশ্চিতভাবেই একজন কবিকে খতম করে ফেলেছেন। এবার অভিযোগপত্র পেশ করা হোক।”

কেউ কথা বললেন না। শল্যবিদের টেনশন তাঁদের এই বোধ দিল যে এই মৃত কবির গল্পে কিছু ফাঁক আছে। তাঁরা সমস্যাটা সাবধানতার সাথে নিলেন।

“পেশেন্ট কতক্ষণ আগে মারা গেছে?” ডা: রসন জিজ্ঞেস করলেন।

“গেল বুধবার,” উত্তর দিলেন ওয়ার্নার। “কেন?”

“আপনি বললেন সেই মা-বাবার আপনার উপর ভরসা ছিল,” কার্টিফ বললেন। “তারপরও আপনাকে মনে হয় অদ্ভূতভাবে কোন কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন। কোন থানা তল্লাশি হয়েছিল?”

“না,” বললেন ওয়ার্নার। “আমার অপরাধ নিখুঁত ছিল। শুনুন,” তিনি বলে গেলেন, “এমনকি আপনারাও আমার ডায়াগনসিস ভুল প্রমাণ করতে পারবেন না।”

এই উদ্ধত চ্যালেঞ্জ বেশ কয়েকজন সদস্যকে বিব্রত করল।

“কিছু একটা গড়বড় আছে,” ধীরে বললেন উড, তার চোখগুলো যেন ওয়ার্নারকে ভেদ করে ফেলছিল।

“একমাত্র গড়বড়,” দ্রুত বললেন ওয়ার্নার, “হচ্ছে এই কেসের জটিলতা। আপনারা জেন্টলমেন পরিষ্কারভাবেই এর চেয়ে সহজ অপরাধ পছন্দ করেন, যেমনটা কিনা আজ রাতে দেখলাম।”
ডা: স্যু্‌ইনী নরম স্বরে বললেন, “ডা: ওয়ার্নারের কেইসটা অদক্ষ ডায়াগনসিসের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। যেসব সিমটম তিনি উপস্থাপন করলেন সেগুলো অনেক অসুখের দিকেই নির্দেশ করে।”
ওয়ার্নার জ্বলে উঠলেন। “আপনি কি দয়া করে আপনার অপমানগুলোর পক্ষে একটু বিজ্ঞানের সমর্থন দিবেন?” তিনি জিজ্ঞেস করলেন।

“আপনি শেষ সিমটমগুলোর একটায় অ্যাবডোমেনের জেনারেল টেন্ডারনেসের কথা উল্লেখ করলেন।” বললেন ডা: ডেভিস। “এটা পেরিটোনাইটিসের দিকেই নির্দেশ করে।”

“আর নির্দেশ করে আলসারের বদলে পার্ফোরেশনের৯ দিকে,” যোগ করলেন স্যুইনী।

ডা: ওয়ার্নার তার ভেজা রুমালটা দিয়ে মুখ মুছলেন আর নরম স্বরে বললেন, “আমি কোন বস্তুর মাধ্যমে পার্ফোরেশনের কথা একদমই ভাবিনি।”

“আপনার উচিত ছিল,” ডা: কার্টিফ হাসলেন।

“আসুন, আসুন,” বুড়ো টিক থামালেন, “আমরা অন্যদিকে না যাই। পার্ফোরেশনটা হয়েছিল কী দিয়ে?”

“তার বয়স সতের ছিল,” কার্টিফ উত্তর দিলেন, “আর আলপিন গিলে ফেলার ক্ষেত্রে এই বয়সটা বেশি।”

“বেশ,” ডা: উড বললেন, “এটা মুরগির হাড় না হবারই সম্ভাবনা বেশি। মুরগির হাড় হলে ইসোফ্যাগাসে১০ আটকে যেত আর স্টমাকেই যেত না।”

“এই তো পেয়ে গেলে, ওয়ার্নার,” বুড়ো টিক বললেন। “আমরা কারণটা আরও সুনির্দিষ্ট করে ফেললাম। টেন্ডারনেস ছড়িয়ে পড়ার মানে হতে পারে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়া। ইনফেকশন যে প্রক্রিয়ায় এগিয়েছে তা পার্ফোরেশনকেই নির্দেশ করে আলসারের বদলে। এবং এ ধরণের পার্ফোরেশনের মানে কোন বস্তু গিলে ফেলা হয়েছে। আমরা পিন আর মুরগির হাড় বাদ দিলাম। তাতে আমাদের হাতে থাকে কেবল একটিই সাধারণ অনুমান।”

“মাছের কাঁটা,” বললেন ডা: স্যুইটনী।

“একদম ঠিক,” বললেন টিক।

ওয়ার্নার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উদ্বিগ্নতার সাথে তার ডায়াগনসিসকে স্বীকৃতি দেয়া কণ্ঠস্বরগুলো শুনতে লাগলেন। টিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন।

“আমি মনে করি আমরা সবাই একমত,” তিনি বললেন, “যে স্যাম ওয়ার্নার তার পেশেন্টকে হত্যা করেছেন আলসেরাটিভ কোলাইটিসের ট্রিটমেন্ট দিয়ে যেখানে কিনা মাছের কাঁটা অপসারণের অপারেশন তার জীবন বাঁচাতে পারত।”

ওয়ার্নার দ্রুত ঘরের অপর প্রান্তে আলমারির চলে গেলেন যেখানে তাঁর হ্যাট আর কোট ঝুলছিল।

“কোথায় যাচ্ছেন?” ডা: উড তাঁকে ডাকলেন। “আমরা তো অধিবেশনটি মাত্র শুরু করলাম।”

ওয়ার্নার তাঁর কোট পরছিলেন আর একটা চওড়া হাসি হাসছিলেন।

“আমার কাছে খুব বেশি সময় নেই,” তিনি বললেন। “কেইসটার গড়বড়ের ব্যাপারে আপনারা ঠিক ছিলেন। গড়বড়টা হচ্ছে যে আমার পেশেন্ট এখনো বেঁচে আছে। আমি আলসেরাটিভ কোলাইটিসের জন্য দুই সপ্তাহ ধরে তার ট্রিটমেন্ট করছি, আর আজ বিকেলে বুঝতে পারলাম আমি কেইসটার ভুল ডায়াগনসিস করেছি- আর সে ২৪ ঘন্টার মধ্যে সে মারা যাবে যদি আমি বের করতে না পারি তার সাথে আসলে কী হয়েছে। ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে ডায়াগনসিসের জন্য। এটার জন্য আমি আমার পেশেন্টের জীবন বাঁচাতে পারব।”

আধঘন্টা পর এক্স ক্লাবের মেম্বাররা সেন্ট মাইকেল’স হসপিটালে ওয়ার্নারকে অপারেশন করতে দেখছিলেন। মিনিটগুলো কেটে গেল। নার্সরা নীরবে যন্ত্রপাতি সার্জনের হাতে দিচ্ছিলেন। তাদের হাত রক্তে মাখা ছিল।

চৌদ্দ মহান মেডিকেলপুরুষের আশাণ্বিত দৃষ্টি ব্যথার্ত অজ্ঞান ছেলেটির দিকে যে কিনা মাছের কাঁটা গিলেছে। কোন রাজা বা পোপ কখনই সম্মিলিতভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে থাকা এর বেশি মেডিকেল জিনিয়াসদের ঘেরাওয়ে যন্ত্রণাক্লিষ্ট হয়ে শুয়ে থাকতে পারেন নি।
হঠাৎ ঘর্মাক্ত শল্যবিদ তার গ্লাভসে ঢাকা আঙুল দিয়ে কিছু একটা তুলে ধরলেন।

“এটা ধুয়ে ফেলুন,” নার্সদের ফিসফিস করে বললেন তিনি, “আর ভদ্রলোকদের দেখান।”

বুড়ো টিক সামনে এগোলেন আর বস্তুটা নার্সের হাত থেকে নিলেন।

“একটা মাছের কাঁটা,” তিনি বললেন।

এক্স ক্লাব ওটার চারপাশে জড়ো হলেন যেন ওটা একটা বর্ণনাতীত গুপ্তধন। তিন সপ্তাহ পরে, রোগীর নিরাময় সম্পূর্ণ হল।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×