somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গত ৫০০০ বছরের ইতিহাস আমাদের নিজেদেরকে নিজেদের থেকে আলাদা করতে চাওয়ার ইতিহাস

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কে কি ভবলো তাতে কি এসে যায়? আমি কিসে পূর্ণ হব, তৃপ্ত হব সেটাই ভালমত ভেবে দেখা উচিত। আমরা আসলে জানিনা কিসে আমাদের সুখ। আর কোনভাবে যদি জেনেও যাই তাতে খুব একটা কিছু এসে যায়না। কারণ, আমরা সুখ-মুখী নই মোটেও। আমাদের সামনে অজস্র উদাহরণ লুটোপুটি খাচ্ছে যেসব উদাহরণের যেকোন একটি আমি হতে চাই। এবং আদতে তারা সুখে নেই। তবুও আমরা সেটাই হতে চাই। কেমন যেন একটা ঘোর, একটা সম্মোহন। দেখেও যেন আমরা দেখতে চাইনা। কি অদ্ভুত আমরা- প্রত্যেকে! পাগলেও মত পড়িমরি করে ছুটে চলেছি অজানায়। একটা ভিন্ন কিছু পাবার আশায়। কিন্তু, ভিন্ন কিছুটা আসলে কি সেটা নির্ধারণ এখনও করতে পারিনি। কি চাই আসলে আমরা? আমি কি চাই? আমি কি চাই এই প্রশ্নটা আমি নিজেকে করেছি বহুবার। প্রতিধ্বনিত হয়েছে আমার মনের অন্ধগলিতে। উত্তর খুঁজে পাইনি। ভেবেছি পুনর্বার- কি চাই আমি? একটা আধুনিক বিলাসি ফ্ল্যাট, দামি একটি/দুটি গাড়ি সুন্দরী স্ত্রী, ফুটফুটে কয়েকটি ছেলেমেয়ে- এসব? নাকি ব্যাপক পরিচিতি পেতে চাই অপরিচিতের মাঝে নিজেকে যোগ্যতম করে? যদি তাই হয় তবে সেটা কিভাবে- কোন পথে? নিজের মনের গহীনে আমি হতে চাই একজন পুরো দস্তুর গবেষক, একজন ভালো বিজ্ঞানি। অমানুসিক পরিশ্রম করে এই দুনিয়ায় রেখে যেতে চাই কিছু তত্ত্ব যা মানুষের বৃহৎ কিছুকে বিশুদ্ধভাবে ব্যাখা করতে পারবে। পথটা কঠিন নাকি সহজ এটা কোন ভালো প্রশ্ন হতে পারেনা। ভালো প্রশ্ন হতে পারে – কোনকিছুতে কি আসলেই কোনকিছু এসে যায়, কারো? গত প্রায় ৫০০০ বছর ধরে বুদ্ধিমান মানুষেরা নানাভাবে নানা তত্ত্ব দিয়ে গিয়েছে -পুরাণ, বেদ, ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউ টেস্টামেন্ট, ত্রিপিটক, কোরআন! মহান এরিস্টটল, প্লেটো, থেকে শুরু করে কার্ল মার্কস, ম্যাক্স ওয়েবার (বেভার), বার্ট্রান্ড রাসেল এবং এদের বাইরে আরও অনেক মহান মানুষ! কি এসে গিয়েছে আসলে আমাদের? কিছু এসে গিয়েছে কি? আমার মতে, না! কিছুই এসে যায়নি। এক-একটা সময় একেকটা মতবাদকে প্রধান মনে করেছে। সেভাবে তারা ভাববার অথবা আচার-আচরণ করবার চেষ্টা করেছে! পরবর্তিতে একটা অবশ্যম্ভাবী শূণ্যতা তৈরি হয়েছে । কিছু অতিবুদ্ধিমান মানুষ এই শূণ্যতা নিয়ে ভেবেছে এবং অবশ্যম্ভাবীরূপে আরেকটা মতবাদ এসে আগেরটিকে প্রতিস্থাপন করেছে! কিছু ক্ষেত্রে একাধিক মতবাদ সমান্তরালে চলেছে। চলতে চলতে হয়ত মুখ থুবড়ে পড়েছে অথবা কিয়োদংশ পরিবর্তিত রূপ লাভ করেছে। মানুষ আগেও গাছ থেকে ফল পেড়ে খেত, এখনও খায়। মানুষ আগেও বহুগামী ছিল এখনও আছে। একশ্রেণীর মানুষ আরেক শ্রেণীর মানুষকে আগেও শোষন করত এখনও করে। আগেও মানুষ শূণ্যতায় –হাহাকারে, অতৃপ্তিতে, অযোগ্যতায় বিষণ্ন বোধ করত এখনও করে। মানুষ আগেও বর্তমানকে ভালোবাসত না এখনও বাসেনা। বর্তমানে কেউ বাঁচেনা-বাঁচতে চায়না! সব্বাই “ভবিষ্যতের” নিজেকে নিয়ে বাঁচে- বাঁচতে চায়! প্রতিটি দিন বাঁচে সেদিনের জন্যে নয় ভবিষ্যতের জন্যে! উত্তরণের পথ খুঁজে বেড়ায় প্রতিনিয়ত! কিন্তু, সে জানেনা কি থেকে উত্তরণ চায় সে!
মানুষ একই সাথে চেয়েছে কেউ আমায় শক্ত করে বেঁধে রাখুক। আবার যখনি কেউ তাকে শক্ত করে বাঁধতে চেয়েছে তখনি মুক্তির জন্যে ছটফট বোধ করেছে। দ্বৈততা চিরন্তনভাবে আমাদের সাথী হয়ে ছায়ার মত পথ চলেছে। তবে কি দ্বৈততাকে আমরা ভালোবেসেছি? নাকি দ্বৈততা আমাদের ভালোবেসে আকঁড়ে ধরে আছে? দ্বিতীয়োক্তটি যৌক্তিক হতে পারেনা। কারণ, ভালোবাসা শুধুমাত্রই আমাদের প্রজাতিগত সম্পত্তি! তাহলে কি দ্বৈততা এবং দ্বিমুখীতা আমাদের সহজাত? মনোবিজ্ঞানিরা বলবার চেষ্টা করছেন, হ্যাঁ! এটা একটা মানব-বৈশিষ্ট্য। আমি লোহা হলে লোহার বৈশিষ্ট্যসমূহ মেনে চলব-এটাই তো হওয়া উচিত! কোনকিছুর প্রতিটি বৈশিষ্ট্যকে যখন কোনকিছু ধারণ করে তখন আমরা তাকে সেই নামে আখ্যায়িত করি। একটু এদিক-অদিক হলে আমরা সেটা নিয়ে গবেষনা করি এবং তাকে ভিন্ন একটা নামকরণ করি। উদাহরণস্বরূপ লোহার কথাই ধরা যাক। লোহা এবং অন্য ধাতুর নানা আনুপাতিক সংমিশ্রণে আমরা নানা ধাতব পদার্থ তৈরি করি এবং স্বভাবতই আমরা আর সেই বস্তুকে অন্য যাই বলিনা কেন- লোহা বলিনা। এটা গেল লোহার সাথে অন্য বাহ্যিক কোন কিছুর সংমিশ্রণ প্রসঙ্গ। এবার আসি লোহার ভেতরের আনবিক গঠন এবং কার্বনের নানা যোজন-বিয়োজনে লোহার পরিবর্তন। লোহায় কার্বনের আনুপাতিক হারের সাথে সাথে তার বৈশিষ্ট্যও পালটে যায় এবং সেই নতুন ধাতব পদার্থটিকে আর লোহা নামে আখ্যায়িত করা হয়না। তার নতুন নামকরণ প্রয়োজেন হয় এবং সঙ্গত কারনেই ধাতব পদার্থটির নতুন নাম দেয়া হয়। এবার আসি, প্রানি প্রসঙ্গে। বানর, গরিলা, হনুমান ইত্যাদি দেখতে একইরকম হলেও বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য তাদেরকে একে অন্যের থেকে আলাদা করেছে। চিংড়ির কিছু বৈশিষ্ট্যর জন্যে তাকে মৎস্যকূল থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। কিন্তু মানুষ, মানুষ থেকেছে কম করে হলেও ১০০০০ বছর! আসলে কি আমরা মানুষ? না তারা মানুষ ছিল- যাদের আমরা আদিম মানব বলি? জানিনা। আমরা কি করেছি এই গত ৫০০০ বছর? আমরা মানব- বৈশিষ্ট্যগুলোকে ঘষা-মাজা করেছি, নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছি নানা উপায়ে- ধর্ম দিয়ে, মতবাদ দিয়ে, আইন-কানুন দিয়ে, মূল্যবোধ দিয়ে। গত ৫০০০ বছরের ইতিহাস আমাদের নিজেদেরকে নিজেদের থেকে আলাদা করতে চাওয়ার ইতিহাস! আমরা স্বীকার করি আর নাই করি ততে সত্যের কিছুই এসে যাবেনা। আমরা স্বীকার করি আর নাই করি আমরা এখনও ৫০০০ বছর আগের মানুষই! সমাজের এই নানা আইন-কানুন, ধর্মের বিধি-নিষেধ আমাদের কিছুরই পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি! যা করেছে, যা শিখিয়েছে তা হচ্ছে কপটতা, ভন্ডামি আর চৌর্যবৃত্তি। আমরা এখনও আদিম মানুষদের মতই সবকিছু করে যাচ্ছি কিন্তু গোপনে, নিভৃতে- চোরের মত। তাই আমি বলব- এই ৫০০০ বছরের মতবাদগুলো আমাদের মানুষ করেনি, করেছে অমানুষ এবং খুব ভ্রান্ত ভাবে দাঁড় করিয়েছে মানুষ হওয়ার নয়া নকশা- এমন একটি নকশা যা কেউ কখনও অনুসরণ করেনি, মেনে চলেনি। এবং সর্বোপরি আমি বলব যে এই ৫০০০ বছর আমাদের দিয়েছে পুঞ্জিভূত হতাশা, বিষণ্নতা, হাহাকার, ক্লেদ, দ্বান্দিকতা এবং পাপবোধ- জন্ম দিয়েছে কান্নার এবং শূণ্যতার। মানুষ এখন এমন একটি ফাঁদে আটকা পড়ে গিয়েছে যে চাইলেও ফিরে যেতে পারছেনা ৫০০০ বছর আগের দশায় এবং পারছেনা এই আজকের এই নয়া নকশার অচেনা, অজানা মানুষটিকে মনে-প্রাণে আলিঙ্গন করতে। মানুষ আজ গন্তব্যহীন, কুয়াশাচ্ছন্ন দ্বিমুখী পথের মোড়ে দাঁড়িয়ে দিশেহারা; ক্রন্দনরত।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×