somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইতালীর মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক আন্তনিও গ্রামশি

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আন্তনিও গ্রামশি। জন্ম ১৮৯১ সালের ২২ জানুয়ারি। জন্মস্থান ইতালীর সার্দানিয়া দ্বীপের গির্জা শহর আলেসে। পিতার নাম ফ্রান্সেসকো গ্রামশি। মাতা জিওসেপ্পিনা মারসিয়াস। পিতা একজন নিন্মপদস্থ কর্মচারী ছিলেন।
গ্রামশি ছিলেন পিতা মাতার সাত সন্তানের চতুর্থতম।
গ্রামশির যখন চার বছর বয়স তখন এক দুর্ঘটনায় তার মেরুদন্ড কুঁজো হয়ে যায়। তবে অন্য তথ্যমতে তার টিউবারকুলোসিস রোগের কারণে পিঠ কুঁজো হয়ে যায়। তার সারাজীবন কুঁজো হয়েই কাটাতে হয়। এজন্য তার উচ্চতা ৫ ফুটের কম ছিলো।
গ্রামশির যখন ৮ বছর বয়স তখন তার পিতা ফ্রান্সেসকো গ্রামশি অর্থ তছরূপের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। এবং তাকে কারাভোগ করতে হয়। এতে গ্রামশিকে স্কুল ছাড়তে হয়। এবং সংসার চালানোর জন্য কাজে নেমে পড়তে হয়। এ সময় তাকে প্রতিদিন গড়ে ১০ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়েছে। তার পিতা ১৯০৪ সালে ছাড়া না পাওয়া পর্যন্ত তাকে এই কাজ করে যেতে হয়।
গ্রামশির মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন করেন কালজিয়ারি অঞ্চলের একটি স্কুলে।
১৯১১ সালে তিনি তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য স্কলারশিপ অর্জন করেন। এ সময় তিনি সাহিত্য, ইতিহাস, দর্শন ও ভাষাতত্ত্বে পড়াশুনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময় তিনি আন্তোনিও ল্যাব্রিওলা, রোডলফো মোনডলফো, জিওভান্নি জেন্টিল এবং বেনেদিত্তো ক্রোচের সংস্পর্শে আসেন। তারা হেগেলের দাশনিক তত্ত্বের চর্চা করতেন। আন্তোনিও ল্যাব্রিওলা হেগেলের এই দর্শনের নাম দিয়েছিলেন ‘ফিলজফি অব প্রাক্সিস’।
১৯১৩ সালের শেষদিকে ইতালীয়ান সোস্যালিস্ট পার্টিতে যুক্ত হন। ১৯১৪ সালে তিনি সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার পত্রিকা গ্রিডো দেল পোপলো( Il Grido del Popolo ) তে লেখালেখি করা শুরু করেন। এতে তিনি পরিচিতি অর্জন করেন। পরে তিনি উক্ত পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
আর্থিক দৈন্যতার কারণে ১৯১৫ সালের দিকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ থেকে বিদায় নিতে হয়।
১৯১৬ সালের দিকে তিনি সমাজতান্ত্রিক পার্টির মুখপত্র ‘অভন্তি’(Avanti!,) এর সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।
১৯১৭ সালে ইতালীতে সমাজতান্ত্রিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন।
১৯১৯ সালের এপ্রিলে তিনি তোগলিয়াত্তি, এনজেলো টাসকা এবং উমবারটো এই তিনজনের সাথে মিলে দ্য নিউ অর্ডার নামে একটি প্রকাশনা বের করেন। এসসময় অক্টোবরের দিকে ইতালীর সমাজতান্ত্রিক দলে নানা উপদল দেখা দেয়। তবে একটি অংশ তৃতীয় আন্তর্জাতিকের সাথে যোগ দেয়। গ্রামশি সেই দলে ছিলেন।
১৯১৯-২০ সালের শ্রমিক ধর্মঘটের সময় গ্রামশি শ্রমিক কাউন্সিল গঠন করেন। এবং এই কাউন্সিলের মাধ্যমে কারখানার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। তবে এই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়।
কারখানায় গঠিত শ্রমিক কাউন্সিল সম্পর্কে তিনি বলেন- একটি কারখানার সমস্ত শ্রমিক কমিশার বা প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করবে। এবং এই কমিশারদের থেকেই নতুন কার্য নির্বাহী কমিটি মনোনীত করা হবে। এই কমিটির তিনটি কর্তব্য থাকবে। সেগুলো হলো-
১. শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করা।
২. শ্রমিকদের রাজনৈতিক বা অধিকার সম্পর্কে ধারণা বা শিক্ষার ব্যবস্থা করা। উপকারী প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে কাজে লাগানোর বা ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া।
এ সময় তিনি সংসদীয় প্রথার বিরোধীর আমেদিও বোরদিগার সাথে মৈত্রী গঠন করেন। এবং ১৯২১ সালের ২১ জানুয়ারি গঠন করেন কমিউনিস্ট পার্টি অব ইতালী(PCI)।কিন্তু আমেদিও বোরদিগার সাথে তার মতের অমিল দেখা দেয়।
১৯২২ সালে তিনি রাশিয়ায় যান। সেখানে ভায়োলিন বাদিকা Julia Schucht এর সাথে তিনি পরিচিত হন। পরে ১৯২৩ সালের দিকে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দেলিও এবং জিওলিয়ানো নামে দুই সন্তান হয়।
রাশিয়ায় গ্রামশি দুই বছর কাটান বলে জানা যায়।
তিনি যখন রাশিয়ায় ছিলেন তখন ইতালীতে ফ্যাসিস্ট বেনিতো মুসোলিনি ক্ষমতায় আসেন। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই ভিন্নমতের দল সংগঠন বা পার্টির উপর নিপীড়ন চালান। এসময় ইতালীর কমিউনিস্ট পার্টির অনেককেই তিনি জেলে পুরেন। বোরদিগাও এ সময় আটক হন।
এমন পরিস্থিতিতে তিনি ১৯২৩ সালের শেষের দিকে রাশিয়া থেকে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় আসেন। এবং ১৯২৪ সালে তাকে ইতালীর কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান নিযুক্ত করা হয়। রোমে এসে তিনি পার্টির নতুন মুখপত্র ‘ইউনিটি(L’Unità) প্রকাশ করেন।
১৯২৬ সালের জানুয়ারিতে লিয়নস শহরে পার্টির কংগ্রেসে তিনি যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রস্তাব করেন এবং তার এই প্রস্তাব কংগ্রেসে গৃহীত হয়।
১৯২৬ সালের নভেম্বরে ইতালীর মুসোলিনী সরকার দেশে জরুরী আইন জারি করে। এবং গ্রামশিকে ঐ মাসের ৮ নভেম্বর গ্রেপ্তার করে। তাকে ৫ বছরের সাজা দিয়ে উসটিকা(Ustica ) নামে এক দ্বীপে নির্বাসন দেয়া হয়। সেখানে থাকার সময় তাকে নতুনভাবে ২০ বছরের সাজা দেয়া হয়।
তাকে সাজা প্রদানের সময় তার বিরুদ্ধে মামলা প্রদানকারী বা প্রসিকিউটর বলেন- আগামী বিশ বছরের জন্য আমাদের অবশ্যই এই (গ্রামশির) মেধার কর্যকারিতাকে থামিয়ে দিতে হবে (For twenty years we must stop this brain from functioning)।
১৯৩২ সাল থেকেই তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এবং স্বাস্থ্যগত কারণে শর্তসাপেক্ষে তিনি মুক্তি পান।
১৯৩৭ সালের ২৭ এপ্রিল ৪৬ বছর বয়সে রোমের কুইসিসানা হাসপাতালে তিনি বন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
জেলে থাকার সময় তিনি ৩০টি নোটবুকে প্রায় ৩ হাজার পৃষ্ঠার মতো লেখা লিখে যান। পরে তার এই লেখাসমূহ প্রিজন নোটবুকস নামে প্রকাশিত হয়।
গ্রামশির অবদান:
মার্ক্সীয় রাজনীতিতে এখনো গ্রামশির অনেক মতবাদকে অনেকে অনসরণীয় মনে করে থাকেন।
নিচে গ্রামশির কিছু তাত্ত্বিক আলোচনাকে সংক্ষেপে উল্লেখ করা হলো-

রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকে থাকা সম্পর্কে তিনি বলেছেন- সামাজিক কর্তৃত্ব বা আধিপত্য প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সম্মতির ভিত্তিতেই রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকে থাকে।
অত্যাচারী রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিতটিকে টলানোর কাজটিকেও তিনি এই ভিত্তি বা কর্তৃত্ব বা আধিপত্য ভাঙার প্রচেষ্টা বা উদ্যোগ নেয়ার উপরই গুরুত্ব প্রদান করেছেন।
তার অভিমত, এই আধিপত্যকে ভাঙতে হলে সাংস্কৃতিক আধিপত্য বা কালচারাল হেজিমনি সৃষ্টি হবে।
তার মতে, বর্তমান পরিস্থিতি বা অবস্থায় নিজস্ব সংকীর্ণ অর্থনৈতিক স্বার্থ নিয়ে অগ্রসর হয়ে একটি শ্রেনী তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারে না। এবং শুধুমাত্র শক্তি প্রদর্শন বা দমন নির্যাতনের মাধ্যমেও এই আধিপত্য বজায় রাখা সম্ভব নয়। বরঞ্চ, শ্রেনী আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে অবশ্যই বৌদ্ধিক এবং নৈতিক নেতৃত্বকে প্রয়োগ করতে হবে এবং বিভিন্ন শক্তির সাথে মৈত্রী ও সহযোগিতা করে এগোতে হবে।
তিনি আরো বলেছেন, সাধারণভাবে সকলেই ইন্টেলেকচুয়াল বা যুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন এবং সকলেরই যুক্তিবোধ ও বিচারবোধ থাকে। তবে সকলেরই সামাজিকভাবে কার্যকরী যুক্তিবোধ থাকে না।

“All men are intellectuals, but not all men have in society the function of intellectuals”
― Antonio Gramsci, Selections from the Prison Notebooks of Antonio Gramsci

পার্টি বিষয়ে তিনি বলেছেন, তিনটি বিষয় একটি পার্টিকে পূর্ণতা দান করে। এগুলো হলো- একটি দার্শনিক মতবাদ, সুদক্ষ কর্মী বা কর্মীসমষ্টি এবং প্রকৃত ঐতিহাসিক আন্দোলন। পার্টি কাঠামোতে তিনটি বিষয় অপরিহার্য। এগুলো হলো- সাধারণ কর্মী, ক্যাডার ও নেতৃত্ব।
লেখাটি এখনো অসম্পূর্ণ। নতুন তথ্য যখনই পাবো তখনই তা যোগ করার আশা রাখছি…

ধন্যবাদ

প্রয়োজনীয় তথ্যসূত্র:

১. উইকিপিডিয়া
২. মার্ক্সিস্টস.অর্গ
৩. umich.edu
৪. গ্রামশি চিন্তা- সোশোভন সরকার
৫. গ্রামশি জীবন ও চিন্তা- নরহারি কবিরাজ সম্পাদিত।
৬. ইনফেড.অর্গ
৭. ইন্টারন্যাশনাল গ্রামশি সোসাইটি
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×