somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের মঙ্গল অভিযানের নেপথ্যে

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বলিউডের কল্যাণে আমরা চাকচিক্যময় যে ভারতকে দেখি বাস্তবতায় ভারত তেমন কোন দেশ নয়। বিশেষ করে শহুরে অবকাঠামো, পয়ঃনিষ্কাসন ব্যবস্থা, শিশু মৃত্যুহার, নারী শিক্ষাহার, বার্ষিক গড় আয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভারত অনেক পিছিয়ে আছে। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকের করা হিসাব মতে ভারতে শতকরা ৩৩ ভাগ লোক দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। ১.২৫ ডলার ডলারে নিচে তাদের দৈনিক আয়। দেশের অর্ধেকের মত শিশু অপুষ্টির শিকার। সেনিটেশন ব্যবস্থার অপ্রতুলতা থাকার কারণে সেদেশে প্রায় অর্ধেকের মত মানুষ খোলা আকাশের নিচে পায়খানা করে। কিন্তু জাতিকে এই অবস্থায় রেখে ৪৫০ কোটি রুপি ব্যয় করে তারা মঙ্গলে অভিযান পরিচালনা করছে ভারত যা অন্যদের চোখে উচ্চাকাঙ্খা হিসেবেই পরিলক্ষিত হচ্ছে। যদিও ভারতের কর্ণধাররা মনে করছেন এতে ভারতের সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।

একথা সত্য যে, প্রযুক্তিগত উন্নতি, বৈজ্ঞানিক গবেষণা, অজানাকে জানার জন্য অভিযান ইত্যাদি মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়। সে হিসেবে ভারত যদি সে কাজটিকে সামনে এগিয়ে নেয় তবে পুরো মানবজাতিই সেখান থেকে উপকৃত হবে। তাদের একাজ উৎসাহ পাবার যোগ্য। কিন্তু প্রশ্ন আসে যখন ভারতের মত তৃতীয় বিশ্বের কোন দেশ এই কাজটি করতে যায়। কেননা বেঁচে থাকার জন্য মানুষের প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণের পরই প্রশ্ন আসে মঙ্গলে অভিযানের মত একটি ব্যয়বহুল অভিযাত্রা। মূল সে কাজেই এখনো তারা সফল নয়। বৈদেশিক সাহায্য ছাড়া এখনো তারা চলতে পারে না। উল্লেখ্য, এর আগে কেবল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং ইউরোপোর মিলিত প্রচেষ্টায় মঙ্গলে অভিযান পরিচালিত হয়েছে। খোদ চীনও এখন পর্যন্ত মঙ্গলে অভিযান চালাতে সক্ষম হয় নি।

এতো গেলো একটি দিক। আরো একটি দিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশ ভারত অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে । আর তা হোল অস্ত্র আমদানি। অস্ত্র আমদানীতে ভারত এখন পর্যন্ত শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। সুইডেনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস্ রিসার্চ ইন্সটিটিউট (সিপ্রি) এ কথা জানিয়ে বলেছে, ২০০৭ থেকে ২০১১-র মধ্যে ভারত যতো টাকার অস্ত্র আমদানি করেছে তা আর কোন দেশ করেনি। বিশ্বের ১০ শতাংশ অস্ত্র এই সময়ে আমদানি করেছে ভারত। আর এই আমদানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দও।

অস্ত্র আমদানী কেন এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল শঙ্কর প্রসাদ এর কাছে। তিনি এই প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “অবশ্যই এই অস্ত্রের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ চারদিকে রয়েছে বিপজ্জনক প্রতিবেশী। একদিকে পাকিস্তান আর অন্যদিকে চীন। পাকিস্তান সন্ত্রাসী হামলায় মদদ দিচ্ছে, আর অন্যদিকে চীন তো পারলে অরুণাচল প্রদেশ আর পূর্ব লাদাখকে এখনই দখল করে। সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে গেলে ভারতকে চীনের সমকক্ষ হতে হবে। কারণ সমঝোতা হয় সমানে সমানে। ফলে আরো অস্ত্র আমদানি করা প্রয়োজন।” তাহলে ৪৫০ কোটি রুপি ব্যয়ে মঙ্গলাভিযান কেন? এরও উত্তর আছে। এর উত্তর হচ্ছে চীন এবং পাকিস্তানকে মনস্তাত্তিকভাবে চাপে রাখা। কিন্তু সত্যিই কি চীনকে মঙ্গলাভিযানের মাধ্যমে চাপে রাখা সম্ভব? কারণ, চীনের ভারতের মত অস্ত্র আমদানি করার প্রয়োজন হয়না। তারা নিজেরাই নিজেদের জন্য অস্ত্র তৈরি করতে সক্ষম।



এই ভারতে যৌতুকের ভয়ে মেয়েশিশুকে বিবেচনা করা হয় ‘অবাঞ্ছিত বালিকা’ (আনওয়ান্টেড গার্ল) হিসেবে। যদি গর্ভাবস্থায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে, অনাগত শিশুটি মেয়ে, তবে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান মায়ের গর্ভেই তাকে হত্যা করা হয়। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী ভারতে প্রতিদিন ২০০০টি মেয়েকে জন্মানোর আগেই মেরে ফেলা হয়, এই ভ্র“ণ হত্যার জন্য অনেকক্ষেত্রেই মাকে নির্মমভাবে প্রহার করা হয় এবং পেটে আঘাত করা হয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক দশকেই ভারতে অন্তত ৮০ লাখ মেয়েশিশুর ভ্রƒণ (গর্ভের শিশু) হত্যা করা হয়েছে। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর অন্তত ৫ কোটি মেয়েশিশুর ভ্রƒণ হত্যা করা হোয়েছে। গবেষকরা বলছেন, বর্তমান পৃথিবীতে যুদ্ধ, ক্ষুধা, মহামারী, প্রাকৃতিক দুর্যোগে যতলোক মারা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশি মেয়েশিশুকে এই ‘সাইলেন্ট জেনোসাইড’ এর মাধ্যমে হত্যা করা হয় ভারতে। সুতরাং ভারতের উচিৎ পাশ্ববর্তী দেশের সাথে আধিপত্যের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত না হয়ে বরং অভ্যন্তরীণ সমস্যায় নিজেদের এই বিপুল পরিমাণের অর্থ কাজে লাগানো।

২টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×