কবিতাঃ হেমন্ত
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
যদি এই শহরের ব্যস্ত ম্লান গলি
হয়ে যায় আমার এ আলস্যে মোড়া শান্ত-জীর্ণ মলিন বিছানা
যদি এই পৃথিবীর একমাত্র চাঁদ ওঠে
আমার পুরোনো ছেঁড়া ছিদ্রিত মশারীর গায়
আমার অবুঝ চোখ যদি দেখা পায় সেই অদ্ভুত হেমন্তের হায় !
যে হেমন্তে কুয়াশারা গিয়েছিল মেখে...
আকাশের কাছাকাছি কোন
অদেখা মেঘের সাথে হয়ে মাখামাখি
প্রেম’ও ঢলে পড়েছিল যেইদিন নিভন্ত রাত্রির বুকের পাঁজরে
উত্তর আকাশে দুটো ফ্যাকাশে সবুজ তারা মিটিমিটি জ্বলেছিল শুধু
ধোঁয়াশা ও কুয়াশার ছায়ার ভেতরে
ছিঁড়ে যাওয়া পাপড়ির মত তারা ঝরেছিল আমাদের দুজনার কোলে
আমার ময়লা শাদা শালের প্রাচীরে...
আজ আমার নরম বালিশে
যদি শুয়ে পড়ে দুঃখের ক্লান্ত কালো অশ্বারোহী দল,
তাদের ঘুমেলীন চোখ বুজে গেলে
আমার অবুঝ চোখ যদি দেখা পায় সেই অদ্ভুত হেমন্তের হায় !
যে হেমন্তে কুয়াশারা গিয়েছিল মেখে...
প্রহরে প্রহরে সব অবাক বৃদ্ধ স্বপ্ন আমাকেই তাড়া করে ফেরে
যে স্বপ্ন দেখেছি সে কবে- চাইনা দেখিতে আমি আরও একবার
তাদের বৃহৎ দল অপ্সরাদের মত কোমল শরীর পাতে অবোধের মত
আমার এই গরম দীর্ঘ লেপের উষ্ণতার ’পরে
চক্ষু নীমিলিত করে চলে যায় প্রগাঢ় ঘুমের দেশে তারা
অথচ এইখানে আমি
অপেক্ষারত এই জীর্ণ বিছানায়
সেই কালো অশ্বারোহীদের ক্লান্ত ক্ষুর স্তব্ধতা অনুভবে কান পেতে আছি
ক্লান্ত কি হবে তারা ? ঘুমাবে আমার শান্ত-জীর্ণ বিছানায় ?
শহরের ব্যস্ততম সুখী মানুষের ভীড়ে ন্যুব্জ-ম্লান অলিগলি ভেবে-
পৃথিবীর একমাত্র চাঁদের আলোয়
ভিজে কি ঘুমাবে তারা সচ্ছিদ্র মশারীর নীচে রূপকথার রাজ্য ভেবে কোনও
কখনো রাজপুত্র আর যেই ঘুম ভাঙাবে না এসে...
রূপা বা সোনার কাঠি বদল হবে না কোনদিনও
ক্লান্ত হয়ে ঘুমোবে অঘোরে তারা আমার শান্ত বিছানায়...
পুরোনো অশীতিপর স্বপ্নরা তবে
কেন আসে রোজ বুধবার
আমার বাদামী অ্যালুমিনিয়াম জানালায় টোকা দিতে রাতে ?
প্রতি সপ্তায় কেন ঘুম ভেঙে যায় ?
ঘুম ভেঙে আমি ভয়ে কাঠ হয়ে থাকি,
আজ বুঝি বুধবার ?
আজ বুঝি তার চিঠি এসে
আবার আমায় ধোঁকা দেবে-
আবার ধোঁয়াটে হবে আমাদের পরিনতিহীন ভালবাসা
ভয়ানক বড় বড় স্বপ্নেরা ইচ্ছেমতোন দৌড়োবে
আমার ছন্দহারা মাথার ভেতরে !
আবার হেমন্ত এসে এঁকে যাবে রঙে ভেজা ছোপ
ধোঁয়াশা ও কুয়াশার ছায়ার ভেতরে
আবারও কি মনে হবে ফ্যাকাশে সবুজ তারা
ঝরেছে আমার শাদা শালের প্রাচীরে ?
আবারও হেমন্ত এসে নরম সুতোয় শুরু করবে সেলাই
প্রেমের নূতন জামা পুরোনো ছেঁড়া-ছিদ্রিত মশারীর গায় ?
যে হেমন্তে কুয়াশারা গিয়েছিল মেখে...
কুয়াশায় স্নানরত নিয়ন আলোয় জ্বলা পথে
অদেখা মেঘের ফাঁকে বিদ্যুতের গর্জনে
তিনটে শব্দই কেবল ভেসে যাবে নিঃশব্দে হারানো গলিতেঃ
‘আমি তোমাকে ভালবাসি...’
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
মাটির কাছে যেতেই..
মাটির কাছে
যেতেই..
ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও
স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার
চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
বেলা বয়ে যায়
সূর্যটা বলছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা কবে কখন
ফুটেছে রজনীগন্ধ্যা।
বাতাসে কবে মিলিয়ে গেছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছুটেছি কেবল ছুটেছি কোথায়?
পথ হারিয়ে অন্ধ।
সূর্যটা কাল উঠবে আবার
আবারো হবে সকাল
পাকা চুল ধবল সকলি
দেখছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!
ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন
আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন