somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিটেকটিভ ফটোগ্রাফার

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১/

মুটোফোনে খবরটা যখন পেলাম তখন সকাল সাতটা বেজে কয়েক মিনিট হবে। আমি সবে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে টেবিলে দেওয়া ধূঁয়া উড়ন্ত চায়ের কাপটাকে সামেনে রেখে বেতের চেয়ারটাতে আরাম করে বসেছি। তখনই ফোনটা বাঁজল। ডিসপ্লেতে কাকীমার নামটা দেখে সসম্মানে রিসিভ করলাম। কাকীমার কণ্ঠটা জড়ানো, কান্নার একটা আভাস পাওয়া গেল। সংবাদটা শোনে আমিও যে উদ্বিগ্নতার সাথে আবেগ প্রবণ হইনি, তেমন নয়। উর্মী আমার একমাত্র চাচাত বোন। তাকে আমি যথেষ্ট স্নেহ করি। সেই উর্মী-আমার কাকীমার একমাত্র আদরের দুলালী গতরাতে রহস্যজনক ভাবে তার নিজের ঘরে খুন হয়েছে! অন্ততঃ সবার ধারনা এই।

আমি চায়ের কাপটাতে চুমুক দেইনি এখনো ঠিক কিন্তু আমার দৃষ্টি হঠাৎ এই কাপটার উত্তপ্ত ধূঁয়ায় স্থির হয়ে গেল। ধূঁয়াটা কেমন হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। একটা মানুষের প্রাণ কি তবেÑ। ব্যাস্ত হয়ে সেলফোনে নম্বরটা ডায়াল করলাম। Ñ হ্যালো, ডর্ব?
Ñগুড মনিং প্রণয়। ডর্ব আমাকে প্রভাতী ভাষায় অভিবাদন জানাল। ‘
‘একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে! তোমাকে প্রয়োজন।’ আমি আগে পিছে কোন সামঞ্জস্যপূর্ণ কথা না জুড়ে দিয়ে সরাসরি জানালাম।
Ñও কে। আমি আসছি এক্ষুণি।

পি জি ডর্ব একজন ফটোশিল্পী এবং জার্নালিস্ট। ওঁর সাথে আমার সম্পর্কের সূত্রটাও এক। ও ফটো শিল্পী আর আমি যন্ত্র শিল্পী। ওঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয় সেন্টমার্টিনে। ওঁেদর জার্নালিস্ট ক্লাবের-স¤প্রতি ভোলা উপকূলের তাইফুন আক্রান্ত ক্ষতিগ্রস্থদের পূনঃবাসনে আয়োজিত ওপেন কনসার্টে। আমার পিয়ানো নাকি সেখানের আর্ত মানুষের কাতর গলার স্বরে বেঁজেছিল। ও আমাকে কনগ্রাচুলেট করেছিল। তারপর ঘনিষ্ঠতা বাড়তে বাড়তে বন্ধুতে এসে দাড়িয়েছে। সেই সুবাধেই তার বলিষ্ঠ দুঃসাহসিক কর্মকান্ডের সাথে অল্প-বিস্তর পরিচয় ঘটেছে। তার দূর্লভ ফটোগ্রাফ গুলো দেখেই বুঝা যায় কতটা বিচক্ষণ, প্রতিভাধর বুদ্ধিমান হলে এই জ্বলন্ত মূহুর্ত গুলোর প্রমাণ মুষ্ঠিগত করা সম্ভব।

ইতোমধ্যে আমার ফ্ল্যাটের সিঁড়িতে বুটের আওয়াজ শুনতে পেলাম। শহরে আমরা বলতে গেলে প্রতিবেশী হয়েই আছি। বুঝলাম বন্ধুবর এসে পড়েছে। আমি তৈরী হয়েই বসেছিলাম কারণ আমি জানি ঘটনার বিবরণ শুনে চাক্ষুষ না করে তার প্রশান্তি মিলবে না।
তাকে দেখেই বুঝতে পারলাম তাড়াহুড়ো করেই চলে এল । সকালে শেভটা পর্যন্ত করেনি। আমি মনঃ কষ্টের মধ্যে খুশি হলাম। বন্ধুবর আমার সমস্যাকে যে যথার্থ গুরুত্ব দেয় এর একটা প্রত্যক্ষ প্রমাণও মিলল।
আমার মুখোমুখি সোফায় বসে একপায়ের উপর অন্যটি ভেঙ্গে বসল। ‘একটু চা অথবা কফি হবে প্রণয়!
Ñ বুঝলে, সকালে ওঠে কিছু মুখে দেওয়া হয়নি। ভাবলাম তোমার ওখানে চা খেতে খেতে বিষয়টা শুনব। তাছাড়া বিপদে উত্তেজিত হয়ে পড়লে ঘটনা এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। এ সময় মগজকে স্বাভাবিক রাখাই সঙ্গত।
এরি মধ্যে আমার স্ত্রী টেবিলে চা-বিস্কুট দিয়ে পি জি ডর্বকে সুপ্রভাত জানালে সে প্রতি উত্তর দিয়ে চায়ে চুমুক দিল। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই বলল,‘ হ্যা, এবার বলÑ

আমি বললাম,‘ আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা নৃসংশ ঘটনা ঘটে গেছে।’
Ñঘটনাটা কি? পি জি ডর্ব নির্বিকার ভাবেই জিজ্ঞেস করল।
Ñ‘আমার চাচাতো বোন উর্মী গতরাতে রহস্যজনক ভাবে তার ঘর থেকে উদাও হয়ে গেছে। সারা ঘরে রক্তের ছড়াছড়ি। ব্যপারটাকে সবাই খুন বলেই ধরে নিয়েছে।’ অবশ্য কথা গুলো আমার কাকীমার মুখ থেকেই একটু আগে ফোনালাপে শুনলাম।
Ñ তার মানে খুনের পড়ে লাশ গুম করার প্রয়াস করেছে খুনী?
আমি তার কথায় মাথা দুলালামÑ হয়তো তাই।
Ñপুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে?
Ñসে সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারিনি। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন তিনি। এমন একটা ঘটনায় পুলিশকে খবর দেওয়াই স্বাভাবিক। Ñউর্মী কাকীমার একমাত্র মেয়ে।’ আমার গলায় আফসোসের স্বর।
পি জি ডর্ব তৎক্ষণাৎ ওঠে দাড়াল। ‘Ñপ্রণয় দেরি করা ঠিক হবে না। এক্ষুণি রওনা হওয়া দরকার। অকুস্থলে না গিয়ে এর কিছুই অনুমান করা সম্ভব নয়। পুলিশ পৌঁছানোর পূর্বেই আমাদের পৌঁছাতে হবে। তাহলে সূত্রগুলোতে আর কোন সন্দেহ থাকবেনা। যদিও আইনগত ভাবে ব্যাপারটা অনধিকার চর্চা হবে হয়তো। কিন্তু আমিতো আর কোন ক্লুর ক্ষতি করবনা।’

তক্ষুণি আমরা পি জি ডর্ব-এর মিনি কারটা নিয়ে রওনা হলাম। সারা রাস্তা থ’ হয়ে বসে থাকল পি জি ডর্ব, একটা কথাও বলল না। যখন আমাদের বাড়ির গেটে গাড়ী থামাল তখন চাকরটা গেট খুলে দিল। ডর্ব গাড়ি থেকে নেমেই আমাকে ইঙ্গিত করল অকুস্থলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এর ফাঁকে চাকরটাকে জিজ্ঞেস করে নিল পুলিশ এসেছে কিনা?
চাকরটা না সুচক মাথা নাড়ল।
পুলিশ এখনো আসেনি। আসলে তাদের ভ্যান চোখে পড়তো। এজন্যই ডর্ব ব্যস্ত হল ঘটনা স্থলে যেতে। পুলিশ এসে পড়লে অনেক কিছুতেই বাধা হতে পারে।
আমি আগে আগে হেটে বাড়ির লম্বা প্যাসেস পেরিয়ে ডর্বকে পথ দেখিয়ে কাঠের সিঁড়ি ভাঙ্গতে লাগলাম। বিশাল বাড়িটায় পা ফেলেই বুঝতে পারলাম শোকের মাতম চলছে। ডর্ব ইত পূর্বে আর কোনদিন আমাদের গ্রামের বাড়িতে আসেনি। তাই কারো সাথে তার চেনা জানা নেই। কিন্তু আমাকে দেখে বাড়ির অনেকেই এগিয়ে আসল। ডর্ব আমার হাত টেনে বলল,‘ প্রণয় এই মূহুর্তে এবাড়ির জ্যান্ত মানুষ গুলোর চেয়ে ঘটনাস্থল গুরুত্বপূর্ণ। Ñতাদের সাথে পরে কথা হবে।’
আমি সবাইকে উপেক্ষা করে পি জি ডর্বকে ঘটনা স্থলে নিয়ে চললাম। এ বাড়িটা আমাদের, আর উর্মী আমার চাচাতো বোন সুতারাং আমার জানাই ছিল উর্মীর শুবার ঘর কোনটি। কাকীমা বলেছেন তার ঘরেই ঘটনাটা ঘটেছে।

আমি দুতলার দুনম্বর ঘরটির দুয়ারে গিয়ে দাড়ালাম ডর্বকে নিয়ে। কাকীমা সেই ঘরের মেঝেতে দ্বারের কাছে আলোথালো হয়ে বসে আছেন। আমাকে দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। ‘Ñ প্রণয় বাবা, এটা কি করে সম্ভব! মেয়েটাকে আমি রাতে দশটা নাগাদ নিজে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে গেছি। সকালে দরজায় ডাকাডাকি করছি দরজা খুলছেনা। উদ্বিগ্ন হয়ে অবশেষে কপাট ভাঙ্গতে বাধ্য হলাম। কে জানতো এই নারকীয় দৃশ্য আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। রাতে জানালা গুলো নিজের হাতে যেভাবে আটকে রেখে গিয়েছিলাম তেমনি আছে। সারা ঘরে রক্তের মাখামাখি অথচ মেয়েটির লাশটির পর্যন্ত অস্থিত্ব পাইনি।’
আমি কাকীমাকে সান্তনা দেবার কোন ভাষা আবিষ্কার করতে পারিনি। ডর্বের দিকে তাকালাম। একি আশ্চর্য! ডর্বের শান্ত সৌম্য মুখটি কেমন স্থব্দ থমথমে কঠিন হয়ে গেছে। মনের ভিতরে যেন তার কোন গুরুতর আলোড়ন চলছে। আমি কাকীমাকে বললাম,‘ডর্ব আমার বন্ধু, সে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আবিষ্কার করতে পারে।’
হঠাৎ ডর্ব কাকীমাকে প্রশ্ন করল,‘ তাহলে আপনি বলতে চাইছেন, দরজা-জানালা সবদিক থেকে ঠিকঠাক বন্ধ থাকা অবস্থাতেই উর্মী অথবা তার ডেডবডি উধাও হয়ে গেছে? Ñ এ যে রীতিমত অলৌকিক ব্যপার-স্যপার ছাড়া আদৌ সম্ভব নয়।’ বলতে বলতে সে মেঝের কার্পেটে পড়ে থাকা রক্তধারার পাশ কেটে জানালার কাছে গিয়ে দুটো জানালাই খুলে ফেলল। তখনো পড়ার টেবিলের এক কোণে একটা মোম জ্বলতে জ্বলতে তলানিতে পড়েছে। এখন টেবিলের কাঠে আগুন ধরে যাওয়াও বিচিত্র নয়। ঘরে অপর্যাপ্ত আলোর প্রয়োজন ছিল, হয়তো তাই।
ঘরের কোন কিছুই নড়াচড়া করা হয়নি। আলামত যেমনি ছিল ঠিক তেমনি আছে। ফটোগ্রাফার পি জি ডর্ব তার হাই রেজুলেশন ক্যামেরা দিয়ে প্রথমে গোটা কতক ছবি তুলে নিল। তারপর খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ঘটনার আলামত গুলো দেখতে লাগল। প্রথমেই মেঝেতে সবুজ কার্পেটের উপর জঁমাট বাঁধা রক্তটার দিকে নজর দিল। মনে হচ্ছে হতভাগীকে জবাই করার ফলে রক্তপাত এক জায়গায় হয়েছে এবং সেখান থেকে একটা ছিকন ধারা সরীসৃপের মত এঁেকবেঁকে ফুট চারেক পর্যন্ত গড়িয়ে থেমে গেছে এবং স্থানে স্থানে রক্তের দাগ শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে আছে। দাগ গুলোকে দেখলে মনে হয় আততায়ীর হাতে আহত হওয়ার পর ধস্তাধস্তি করেছে। কার্পেটের উপর একটা দাগ বেশ স্পষ্ট। খালি চোখেই মালুম হয় যে, এটা নিহতের পায়ের গোঁড়ালীর ছাপ। কিন্তু ব্যপারটা ভালভাবে খেয়াল করে কোন যোগ সাজোশ তৈরী করতে গেলে বেটপ লাগে। খুনী নিশ্চই গলায় ছুরি কিংবা এই জাতীয় কিছু চালিয়ে খুন করেছে তাহলে আহতের পায়ে রক্ত যাওয়ার যুক্তি কি? পয়েন্টটা কাজে লাগবে।
এর অদূরে একটা কচি আম পড়ে আছে। আমটাকে হাতে নিয়ে তীক্ষè নজরে দেখতে লাগল। একপাশে ব্লেড জাতীয় ধারালো কিছু দিয়ে বর্গাকারে কাটা। কাটা টুকরাটা সংযুক্ত না থাকাতে এর ভিতরের অংশটা পরিষ্কার দেখা গেল। আমের নরম আঁটিটা কুঁড়ে কিছু একটা ক্ষুদ্রাকার বস্তু এখানে স্থাপন করা ছিল। সহসাই তৎপর হয়ে এদিক ওদিক খোঁজাখুজি শুরু করল পি জি ডর্ব । অবশেষে জানালার কাছে পাওয়া গেল বস্তুটা। একটুকরো কাগজ। হাতে নিয়ে দেখল উদ্ভট কয়েকটা অক্ষর দিয়ে গড়া শব্দমালা। ভাঁেজ ভাঁেজ গুটালে ছোট্ট তাবিজের আকার ধারন করে, যা সহজেই আমের ভিতরে ঠাঁই করে নিতে পারে। তাহলে আমটাই এই ক্ষুদে বার্তা বাহক!
পি জি ডর্ব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে প্রত্যেতটা ক্লু দেখছে এবং পকেট বুকে দরকারি কিছু নোট নিচ্ছে। খাটের উপর বিছানো সাদা ধবধবে ছাদরটা কুঁচকানো এবং সজোরে আকড়ে ধরা দুটি হাতের রক্তমাখা আঙ্গুলের ছাপ সুস্পষ্ট। সিরামিকের তৈরী সাঁজানো ফুলের টব গুলো পরীক্ষা করতে লাগল গম্ভীর হয়ে। অবশেষে দেয়ালের পাশে মেঝেতে রাখা বেশ বড়সড় একটা মাটির টবে গিয়ে তার হাত থেমে গেল। পরক্ষণেই হেঁচকা টানে কৃত্রিম ফুলের গাছটা টব থেকে আলাদা করে ফেলল। আমার চোখ বিষ্ময়ে ছানাবড়া হয়ে গেল। টবের ভিতরে ধুমড়ানো মুছড়ানো-স্থানে স্থানে জবজবে রক্তে ভিজা সেলুয়ার কামিজ। আমি অতি কষ্টে নিজেকে কৌতূহল থেকে সংবরন করলাম। কারণ এসময়ে ডর্বকে কিছু জিজ্ঞেস করে তার মনোযোগ নষ্ট করা ঠিক মনে করলামনা।
ডর্ব এরপর কাকীমাকে বলল, দেখুন তো এই কাপড় গুলো গতরাতে উর্মীর পড়নে ছিল কি না।
কাকীমা ব্যস্ত হয়ে বলে ওঠলেন, ‘হ্যা, রাতে এগুলোই তার পড়নে ছিল।’
‘Ñআপনার মেয়ের জামা-কাপড়ের সবগুলো সেট ঠিকঠাক আছে কিনা একটু খোঁজে দেখুন তো।’
কাকীমা ওয়ার্ডরোব, আলনায় খোঁজাখুঁজির পর জানালেন উর্মীর মিষ্টি কালারের এক সেট কাপড় পাওয়া গেলনা।
ডর্ব টবটাকে পূর্বের চেহারা ফিরিয়ে দিয়ে টেবিলের ওপর রাখা ছোট একটা শো-পিসে হাত রাখল। শো-পিসটা নিরবে যে অভিব্যক্তি প্রকাশ করে তাতে প্রেমিক প্রেমিকার অন্তরঙ্গ মূহুর্তই জীবন্ত হয়ে ওঠে। শো-পিসটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে আবিষ্কৃত হল এর তলার দিকটা খোলা যায়। ডর্ব সতর্কতার সাথে তলার এই অংশটা আলগা করল। সঙ্গে সঙ্গে শো-পিসের ভেতর থেকে ভাঁজ করে গুটানো ছোট ছোট অনেক গুলো কাগজ ঝুরঝুর করে টেবিলে ছড়িয়ে পড়ল। একটার ভাঁজ খোলেই বুঝা গেল এগুলো চিরকূট। ডর্ব তৎপর হয়ে চিরকূটের ছোট ছোট সাংকেতিক শব্দের চিহ্নগুলোর একটা রাফ করে নিল নিজের নোট বুকে। পরে শো-পিসটাকে নিজের আদলে ফিরিয়ে দিয়ে জানালার দিকে মনোযোগ দিল। দুটি জানালার একটিতে সটান হয়ে দাড়িয়ে তীক্ষè নজরে দেখল। জানালার শলা বিহীন গরাদে অস্পষ্ট দুটি দাগ পাওয়া গেল। এরপর খাটের পায়ায় প্রত্যক্ষ করল একই রকম দাগ।
সোজা ওঠে দাড়াল এবং খোলা জানালা দিয়ে দৃষ্টি দিল বাইরে। জানালার কাছাকাছি একটা সুপারি গাছ। গাছটার দিকে দীর্ঘক্ষণ চেয়ে থাকতেই পি জি ডর্বের ভ্র“ কুঁচকে ওঠল। পরক্ষণেই হন্যে হয়ে সারা ঘরে কি খোঁজতে লাগল। হতাশ দেখাল তাকে। জানালা গুলো আগের মতো আটকে দিয়ে দৃঢ়পদক্ষেপে নিচে নামতে যাচ্ছিল কিন্তু হঠাৎ ঘুরে দাড়াল। তার সুক্ষ্ম দৃষ্টিকে প্রতারিত করে কি যেন লুকিয়ে পড়ছিল। সেটাকে আবিষ্কার করতেই আবার ফিরে গেল জানালাটার দিকে। জানালার ফ্রেমের উপরের দিকে কাঠের দেয়ালের মাঝ বরাবর একটা সরু সুতার মাথা ঝুলছে। ডর্ব ছিমটি কেটে সেটাকে টানল। অমনি ফড়ফড় করে হাত পাঁচেক লাইনল সুঁতা বেরিয়ে এল। সুতাটা পরীক্ষা করে যথা স্থানে রেখে হরহর করে নিচে নেমে এল এবং সরাসরি গিয়ে জানালার পাশে সুপারি গাছটার নিচে দাড়াল। আমিও তার পিছু নিয়ে সুপারি গাছটার নিচে দাড়ালাম। অবশেষে সুপারি গাছের ক্লু ডর্বের দৃষ্টিতে ধরা পড়ল। সহসা যেন একটা বিজলী রেখা ঢেউ খেলে গেল ডর্বের মুখে। বুঝলাম বন্ধুবর রহস্যের একটা শক্ত খুঁটি ধরে ফেলেছে। আমার দিকে প্রসন্ন দৃষ্টি দিয়ে বলল,‘ বড় বিদঘুটে কেস হে বন্ধু। চল এবার তোমাদের বাড়ির দু’এক জনকে কিছু জিজ্ঞাস্য আছে।’
ডর্ব কাকার সাথেই প্রথম দেখা করতে চাইল। আমি তাকে কাকার ঘরে নিয়ে গেলাম। শোকাহত কাকাও ভাঙ্গা বাসনের মত সোফায় বসে আছেন। ডর্বকে পরিচিত করিয়ে দিতেই সবিনয়ে তাঁকে অভিবাদন করে পাশের সোফায় বসল। কাকা চোখ তোলে চাইতেই ডর্ব বলল,‘ আপনারা আমাকে একটু সাহায্য করলে হয়তো ঘটনাটার একটা কিনারা করতে পারব আশা করছি।’
কাকা বললেন,‘ আমার দিক থেকে কোন ক্রটি থাকবেনা। বলুন আমাকে কি করতে হবে?’
‘না, তেমন কিছু না। আমার কয়েকটি কথার জবাব দিলেই চলবে।’ ডর্ব কাকার দিকে আগ্রহ নেত্রে তাকাল।
‘ওকে, আমার জানা থাকলে নিশ্চই ’ কাকা স্বপ্রতীভ হলেন।
Ñআপনাদের এই বাড়িটি দেখছি সম্পূর্ণই কাঠের তৈরী -দরজা, জানালা, দেয়াল, পাটাতন সহ প্রায় সবকিছুই কাঠের, একমাত্র ছাউনিটা টিনের-তা বাড়িটি কতদিনের পুরনো? আই মিন, বাড়িটি কি আপনার আমলেই নির্মিত হয়েছে না কিÑ
Ñহ্যা, বাড়িটি আমার ছেলেবেলাতেই বাবা তৈরী করেছিলেন। তবে তখন আমি অবুঝ নই। আমার স্পষ্ট মনে আছে মিস্ত্রিরা অনেকদিন কাজ করেছিলেন।
Ñআপনার জানামতে বাড়ির দু’তলা থেকে কোন গুপ্ত বহির্গমন আছে?
Ñনা, সেরকম কিছু নেই।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×