somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বোকার স্বর্গ

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ ডলতে ডলতে ফয়েজ সাহেব ঘুম থেকে উঠলেন। এই গভীর রাতে কে যেন গেটে ধাক্কাধাক্কি করছে। বিরক্তিকর একটা অবস্থা। সারাদিন নানান ঝামেলা গেছে, তার উপর আগামীকাল সকালে একটা ক্লাসও আছে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে তার আবার আর ঘুম আসতে চায় না। মহা সমস্যা। এতো রাতে তাকে কে খুঁজতে এসেছে?
বিছানা থেকে নেমে লুঙ্গীর গিটটা আবার ঠিক করে নিলেন। একটু পানির পিপাসা পেয়েছে, প্রস্রাবের বেগও চেপেছে। পানি খেয়ে, টয়লেট সারতে মিনিট পাঁচেকের মতো সময় লাগবে। দরজা ধরে যে ধাক্কাধাক্কি করছিল সে কি তাকে এই মূল্যবান পাঁচ মিনিট সময় দেবে? তিনি বুঝতে পারলেন না। কেউ যখন অপেক্ষায় থাকে, তার জন্য সময় প্রায় স্থির হয়ে যায়। পাঁচ মিনিট তার জন্য পাঁচ ঘন্টার সমান মনে হবে। তাতে কি? বাইরে যে দাঁড়িয়েছিল সে এখন আর কোন শব্দ করছে না। হয়তো চলে গেছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, পানি খেয়ে, টয়লেট সেরেই গেট খুলবেন।
টয়লেটে বসে থেকে তিনি টের পেলেন অপেক্ষারত ব্যাক্তির এবার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। দরজার ওপর দুড়দাড় করে বাড়ি পড়ছে। গেটটা না ভেঙ্গে যায়! কার এতো বড় সাহস রে?
মেজাজ সপ্তমে তুলে তিনি টয়লেট থেকে বেরিয়ে এলেন। হুড়হাড় করে দরজা খুলে হাঁক দিলেন,
“এতো রাত্রে কে?”
গেটের বাইরে তিনি যা দেখলেন সেটা দেখে তার আবার পিপাসা পেয়ে গেল। এতো রাতে তার বাসায় পুলিশ কি করছে?
অত্যান্ত কঠিন চেহারার এক সাব ইন্সপেক্টর তাকে প্রশ্ন করলেন, “আপনি ফয়জুর রহমান?”
“হ্যাঁ।”
সাব ইন্সপেক্টরের বুকের ব্যাজে নাম লেখা সেলিম। সেলিম তার এক স্টুডেন্টের নাম। বাড়ি বরিশাল। উপর লেভেলে ছেলেটার অনেক যোগাযোগ আছে। পরীক্ষায় একবার নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে গিয়েছিল। স্বয়ং প্রিন্সিপ্যাল স্যার এসে তাকে হাতে নাতে ধরেছিল। প্রিন্সিপ্যাল স্যার অত্যান্ত রাগী মানুষ। তিনি সাথে সাথে ছেলেটিকে কলেজ থেকে বের করে দিলেন।
যে রুম থেকে সেলিমকে ধরা হয় ফয়েজ সেখানে ইনভিজিলেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ছেলেটা যে নকল করছিল সেটা তিনি দেখেননি। সারারাত তার ভয়ে ভয়ে কাটল এই ভেবে যে, সকালে কলেজে গিয়ে দেখা যাবে প্রিন্সিপ্যাল সাহেব তাকে শোকজ করেছেন।
কিন্তু ঘটনা ঘটলো তার সম্পূর্ণ উল্টো। সকালে দেখা গেল সেলিম তার দলবল নিয়ে কলেজের গেটে সিগারেট ফুঁকছে আর মেয়েদের দেখলে শীষ বাজাচ্ছে। আর প্রিন্সিপ্যাল সাহেবকে রাতের মধ্যেই বদলি করা হয়েছে খাগড়াছড়ি। বিনা বাঁধায় নকল করতে দেয়ায় সেলিম তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানালো। এমনকি সিগারেটটাও হাতের পেছনে লুকিয়ে রেখেছিল। গলায় জোর দিয়ে বলেছিল, “স্যার! আপনার কিছু লাগলে আমাকে একবার শুধু জানাবেন।”
ফয়েজ সাহেব তারপর আর বেশীদিন সেই কলেজে থাকেন নি। যেখানে এমন কলিকাল চলছে সেখানে এমন রাবণেরাই থাকতে পারে। তিনি রাবণ নন, রাম-লক্ষনও নন। সামান্য কলেজের শিক্ষক। মসির শক্তির উপর ভোর করে অসুরের সাথে যুদ্ধে তিনি পারবেন না।
এখন মনে হচ্ছে তিনি হিসেবে খানিকটা ভুল করে ফেলেছেন। সেলিমের নাম্বারটা নিয়ে রাখলে ভালো হতো। আধুনিক যুগে অসিও না, মসিও না, অস্ত্র হল মোবাইল ফোন।
সাব ইন্সপেক্টর সাহেব বললেন, “আপনাকে একটু আমাদের সাথে আসতে হবে।”
ফয়েজ সাহেব একটু ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। ইন্সপেক্টরের কথায় তিনি ধাতস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কেন?”
“আপনার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ এসেছে।”
“মানে?”
“মানে আপনি থানায় গিয়ে বুঝবেন। এখন যান জামা কাপড় বদলে আসেন। আমাদের হাতে বেশী সময় নেই।”
ফয়েজ সাহেব হতভম্ব হয়ে জামা কাপড় বদলাতে গেলেন। তারমনে আরও কিছু প্রশ্ন ছিল। কিন্তু তিনি নিজেকে নিবৃত করলেন। পুলিশের প্রশ্ন শোনার অভ্যাস নেই। উল্টো পাল্টা প্রশ্ন করলে হয়তো দু’চার ঘা দিয়ে বসতে পারে। থাক, কি দরকার। থানায় গেলেই সব জানা যাবে।

পরদিন পেপারে লিড নিউজঃ প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘কটূক্তি’: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক কারাগারে। হা হা হা! কি যে একটা দেশ এটা! ভাবতে ভালোই লাগে। এন্টারটেইনমেন্টের কোন অভাব নেই। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার আগে ওই লোক মনে হয় ভুলেও ভাবতে পারেননি যে তার সামনে কি ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন - যে দেশে ঘরের ভেতর মানুষ জনকে কুপিয়ে মোরব্বা বানিয়ে গেলেও পুলিশ তার কিছু করতে পারে না; সামান্য ফেসবুক স্ট্যাটাসের জন্য আমার আর কি হবে? গভীর রাতে তার বাসায় যখন পুলিশ হানা দিলো তখনও কি তিনি বুঝতে পেরেছিলেন কি হতে যাচ্ছে? মনে হয় না। জেলে ভরার আগে ভদ্রলোকের মুখের এক্সপ্রেশনটা কি ছিল সেটা খুব জানতে ইচ্ছা করছে। হা হা হা! একটা ছবি তুলে রাখতে পারলে এপিক হতো।

একজন শিক্ষককে নিয়ে সস্তা রসিকতা করাটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। জেল থেকে বের হয়ে এই লোক মনে হয় না আর সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। হঠাৎ দেখা যাবে শাহবাগের মোড়ে এক পাগল ট্রাফিক কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। হাতে একটা প্ল্যাকার্ড, যেখানে লেখা – “একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না” হা হা হা! হ্যাঁ! এমন জ্বালাময়ী স্ট্যাটাসকে দুর্ঘটনা বলাই ভালো!
আমি ভাবছি আমার ছেলেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বানাবো। তারপর দেখি কোন শালা আমাকে পাগল বলে!



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×