ছেলেটি ঢাকায় থাকে ।ছেলেটির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ ।ফুফু বাড়ি বেড়াতে যাবে ।তার ফুফু বাড়িটি মানিকগন্জ জেলার প্রত্যেন্ত এক গ্রামে ।যেই গ্রামে আজও আসেনি বিদ্যুত্ ।ছেলেটি গেল ফুফু বাড়ি বেড়াতে ।সকাল বেলা মাঠে ছেলেটি অন্য ছেলেদের সাথে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগলো ।ছেলেটির ফুফু বাড়ির ঠিক পশ্চিম পাশে একটি বাড়ি ছিলো ।সে বাড়ীতে থাকতো একজন জীনশীর্ন বৃদ্ধা মহিলা ।বৃদ্ধাটির স্বামী মারা গেছে অনেক বছর আগে ।একটি মাত্র ছেলে সন্তান বৃদ্ধাটির ।সেই ছেলের বাড়িতেই উনি থাকে ।ছেলে সহ ছেলের বউও ওনাকে পছন্দ করে না ।একবেলা ভাত দিলে তিনবেলা দেয় না ।প্রচন্ড শীতেও উনি পায় একটি মাত্র ছেড়া কাথা ।যাই হোক সেই বৃদ্ধা সেই ছেলেটিকে ডাক দিয়ে খেলার মাঠ থেকে নিজের ঘরে নিয়ে গেলো ।সামনে এনে দিলো দুইখানা পিঠা ।এবং পরম মমতায় ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আর বলতে থাকল"খাও বাজান খাও ।আমারেতো বেশি খাইতে দেয়না ।দয়া কইরা এই পিঠা দুইডা আমার পোলার বউয়ে আমারে দিছে ।তয় আমি না খাইয়া তোমার লাইগা থুইয়া দিছি ।ঢাকার বাড়িতে থাকো ।পিঠাপুলি ঠিক মতো খাইতে পারো না ।" ।
ছেলেটি একটি পিঠা খেয়ে আরেকটি বৃদ্ধা মহিলার জন্য রেখে দিলো ।
কয়েকদিন পরঃ
আজ কুরবানীর ঈদ ।ঢাকার সেই ছেলেটি ফুফু বাড়িতে এখনও । ঈদের নামাজ পড়ে এসে সকলের কাছ থেকে সালামী নিচ্ছে ।এমন সময় সেই বৃদ্ধা মহিলা এসে ছেলেটির হাতে দুটো দুটাকার নোট দিয়ে বললো "বাজান কিছু কিন্না খাইও" ।
ছেলেটি বললো আমার আব্বু আমাকে কত টাকা দেয় আপনি মাত্র চার টাকা দিলেন ।
বৃদ্ধা মহিলা বললো "বাজান আমার পোলায়তো আমারে কোন টাকা পয়সা দেয়না ।এই টাকাটাই অনেক কষ্টে জোগাড় করছি তোমারে দিমু দেইখা "।
ছেলেটি একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বৃদ্ধাকে সালাম করলো ।
ছেলেটি পাঁচ বছর ধরে তার ফুফু বাড়ি যায়না ।কারন ব্যাষ্ততা ।ছেলেটা বড় ঢাকা কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে ।তাছাড়া আছে পড়ালেখা কোচিং ইত্যাদি ।তবে ছেলেটি প্রায়ই তার ফুফাতো ভাইদের মুখে শুনতো সেই বৃদ্ধাটি তাকে দেখতে চায় ।তবে ছেলেটি যায় না কারন তার ব্যাষ্ততা ।
** সমাপ্ত **
যাদের আরও জানতে ইচ্ছে হচ্ছে নিচে দেখুন ।
কিছু কথা:ছেলেটি হলাম আমি ।আর সেই বৃদ্ধাটি গত বুধবার রাতে মারা গেছে ।আজও জানিনা সেই বৃদ্ধা কেন আমাকে এত ভালোবাসতেন আদর করতেন?
হয়তবা আমার মাঝে উনি উনার আপনজনকে দেখতে পেতেন ।
এখনও চোখে ভাসছে প্রায় ৮বছর আগে ঘটা উপরের ঘটনা দুইটি ।আল্লাহ তাকে বেহেশত নসীব করুক।
আজকে আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে খুব খুব ।