somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আলো আধার আগুন পাথরে আকাশ ভ্রমনঃ জার্নি টু দি এইজ অফ দি ইউনিভার্স পর্ব ২

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউরোপার রহস্য আপাতত রহস্যই আছে, কিন্তু সামনে অপেক্ষা করছে এমন এক গ্রহ যা বহুকাল ধরে মানুষের কাছে কাল্পনিক আর আকর্ষনীয়, "স্যাটার্ন"। সোলার সিস্টেম ক্রাউন এর অলংকার হিসেবে খ্যাত এই গ্রহটি আরো একটি বিশাল গ্যাস বল এবং এটি এত হালকা যে, পানির উপরে ভেসে থাকতে পারে।এই গ্রহের পাশে বৃত্তাকার অপার্থিব সুন্দর বলয়, যেটি পৃথিবী থেকে চাঁদ পর্যন্ত বিস্তৃত, সেটি কিন্তু মাত্র কয়েকশ মিটার প্রস্থ।স্যাটার্ন পৃথিবী থেকে ৯ গুন বড় কিন্তু সে তুলনায় মাত্র ৮ ভাগের ১ ভাগ ঘনত্বের।কিন্তু এই গ্রহের চারপাশে ঘূর্ণায়মার এই বলয়টি আসলে কি? নাসা প্রোবস ক্যসিনি আবিষ্কার করেছে, অসংখ্য পরিমানে বরফের টুকরো যার কিছু ছোট একটা আইস কিউবের মতন আর কিছু বিশাল পাহাড়।এর অবস্থা অনেকটা প্রাথমিক সোলার সিস্টেম সৃষ্টির সময়ের মত।সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকা অজস্র ডেব্রীশ ধীরে ধীরে নানা আঘাতে আর প্রতিঘাতের পর অবিশ্বাস্য গ্র্যাভিটির টানে সৃষ্ট কয়েকটা গ্রহ।


মহাকাশের কালো গভীর রহস্যের জালে কোথায় কোথায় কত অজানা গল্প লুকিয়ে আছে তা আজো ধরা ছোঁয়ার বাইরে, আর এরকমই আরেকটা অদ্ভুত স্থান হচ্ছে, "টাইটান" স্যাটার্নের একটা উপগ্রহ।দূর থেকে এতদিন পাওয়া তথ্য থেকে আমরা দেখেছি প্রায় পৃথিবীর মত এক পরিবেশ, শুধু একটু অস্থিতিশীল।এখানে আছে, নীল সমুদ্র, লেক এমনকি ঋতু পরিবর্তনও এখানে লক্ষ্য করা যায়।কিন্তু এই সমুদ্র কোন জলরাশির না বরং গলিত নাইট্রোজেন এর।ক্যসিনি থেকে পাঠানো ছোট স্পেস ইনভেস্টিগেটর হাইগেন এর মাধ্যমে জানা যায় এর তাপমাত্রা মাইনাস ১৮০ ডিগ্রীর ও নীচে।এখানে প্রাকৃতিক জ্বালানির পরিমান এত বেশী যে, যদি এই সম্পদকে পৃথিবীতে আনা যায় তাহলে জ্বালানী শক্তির আলো দ্বারা পৃথিবী আলোকিত থাকবে আরো হাজার বছর কিংবা কখনোই হয়ত জ্বালানীর অভাবে থেমে যাবে না কোন বাহন অথবা যদি আমরাই যেতে পারি সেখানে, অন্তত আর একটা পৃথিবীতে নিজেদের অস্তিত্বকে নিরাপত্তা দিয়ে বাচিয়ে রাখার জন্য।কিন্তু কোন প্রাণের অস্তিত্ব যে অসম্ভব এখানেও, যতদিন পর্যন্ত না এর তাপমাত্রা আরো বেড়ে যায় আর সৃষ্টি হয় পানির অস্তিত্ব।বিলিয়ন বছর আগের সেই পৃথিবীর মত কোন ক্রিয়া যদি হয়, তাহলে ১ বিলিয়ন কিলোমিটারেরও বেশী দুরত্বের এই উপগ্রহটি হয়ত হতে পারে একদিন আমাদেরই বাসস্থান


আমাদের পরম আদরের আবাস, আমাদের প্রিয় পৃথিবী থেকে আমরা আছি বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে।প্রসারিত এই মহাকাশ এর সুদির্ঘ আবিস্কার এর যাত্রায় পৃথিবী এখন আর আমাদের দৃষ্টিসীমায় নেই।বরং সোলার সিস্টেম এর এক তীরে এসে আমরা চোখ রাখছি আরো একটু দূরে, জানার জন্য; কি অপেক্ষা করছে আধারের জগতে আবারো চমকে দিতে।হ্যা, স্যাটার্ন এর মত আরো একটা বলয় সমেত নীল গ্রহ "ইউরেনাস"।
প্রাচীন গ্রীক দেবতা টাইটন ক্রনস এর পিতা অথবা দেবতা জিউস এর পিতামহ হচ্ছে এই ইউরেনাস। সূর্য থেকে প্রায় ২.৮ বিলিয়ন এরও বেশী দূরে থাকা এই গ্রহটি জুপিটার এবং স্যাটার্ন এর মত কোন গ্যাস জায়ান্ট না, বরং একে বলা যায় একটি বিশাল বরফ দানব বা আইস জায়ান্ট।-২২৪ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে জমে থাকা এই বরফ দানব জমিয়ে রেখেছে পানি, মিথেন, এমোনিয়া আর কিছু হাইড্রোকার্বন। আমরা ভেবেছিলাম হয়ত এটাই বিশ্বজগতের শেষ প্রান্ত, কিন্তু আমাদের এই সৌর জগতের শেষ প্রান্তে যেতে হলে উড়ে যেতে হবে আরো প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার।


আরো একটি বিশাল সমুদ্র দানব।সমুদ্র দেবতা নেপচুনাস থেকেই এর নাম করন হয় "নেপচুন"।
বিশাল মিথেন এর সাগরে ঝড় বইতে থাকে।প্রায় পৃথিবীর মত আকৃতি, শুধু একটা ঝড়ের, আর গতি?অবিশ্বাস্যভাবে, প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ্য কিলোমিটার আমাদের পার্থিব হিসেবে।নেপচুনের নীল শক্তির আড়ালে কি লুকিয়ে আছে, তা আমরা এখনও জানি না তবে সুবিশাল আমাদের সোলার সিস্টেম এর রহস্য অন্তত আরো একটু বাকি আছে, মিথেন গ্যাস এর দানব নেপচুনকে ঘিরে ঘুরতে থাকা উপগ্রহ, "ট্রাইটন"।

সলিড একটি উপগ্রহ, তবে ভয়ংকর রকম অশান্ত।একের পর এক অবিশ্বাস্য ভূ-কম্পন বার বার কাপিয়ে দিচ্ছে এর মাটিকে।ভূগর্ভস্থ গরম পদার্থ ফোয়াড়ার মত মাটিকে ধ্বসিয়ে দিয়ে সজোরে বেরিয়ে আসছে।ট্রাইটন, নেপচুনের ঘূর্ণনের বিপরীত দিকে ঘূর্ণায়মান উপগ্রহ। শক্তির বিপক্ষে শক্তির এই খেলায়, দানবীয় মধ্যাকর্ষন শক্তির নেপচুন একসময় ছিড়ে টুকরো করে নিঃশেষ করে দেবে, ট্রাইটনকে।অর্থাৎ সমুদ্র দানব একসময় পরাস্ত হবে সমুদ্র দেব নেপচুনাস এর কাছে আর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে পরবর্তী অসীম সময়ের জন্য।


আমাদের জন্য আমাদের সোলার সিস্টেম দ্বিতীয় কোন গৃহের ব্যবস্থা করেনি।হ্যা, আর আমরা চলে এসছি আমাদের সোলার সিস্টেমের শেষ প্রান্তে, একবোরে শেষ পান্তে। আমরা ভেবেছিলাম হয়ত সামনে সুবিশাল ফাঁকা অন্ধকার প্রান্তর, কিন্তু না আসলে এই শুন্য জায়গাগুলোতে বিরামহীন ভাবে ছুটে আসতে থাকে একের পর এক বরফ এর নানা আকৃতির টুকরো।এখানে আছে প্লুটো, একসময় একে ভূল করে গ্রহ ভাবা হত, কিন্তু আসলে এটি নিজেই নেপচুনের বিস্তৃত বলয়ের একটা অংশ।প্লুটোর পরে চোখ রাখতেই দেখা যায় ছুটে আসছে নানা ধরনের টুকরো, প্লুটিনোস, আইস ডোয়ার্ফস, কিউব রানারস, কিংবা আরো নাম না জানা বিশ্ব জগতের অবশিষ্টাংশ।সুতরাং আমাদের এবার তাকাতে হবে আরো দূরে, আরো বিশাল বিস্তৃত গভীর আগুন আর আধারের প্রান্তর জুড়ে।মহাকাশের সুনিপুন শিল্পের আড়ালে লুকিয়ে আছে আরো অনেক কিছু জানার।


অন্ধকারের মহাসমুদ্রে হাইপার ডাইভ দেয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে, পৃথিবী থেকে প্রায় ১৩ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে পাওয়া গেল আরেকটি বরফি গ্রহ।আর এটিই বোধ হয় সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা সবচেয়ে ডিস্ট্যান্ট প্লানেট।"সেডনা"।
সূর্যকে প্রদক্ষিন করতে এর সময় লাগে ১০ হাজার বছর এবং সেই সাথে ১১৩ বিলিয়ন কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়তে পারে এর দূরত্ব।ইনুইত মিথ এর এই সমুদ্র দেবী বা দানবী সম্পর্কে আমরা আর কিছুই জানি না। জানি না কি অথবা কে আছে এখানে। কিন্তু আমাদের গবেষনা থেমে থাকে নি।পৃথিবী থেকে প্রায় ১৬ বিলিয়ন কিলোমিটার দূরে দেখা যাচ্ছে একটি স্পেস প্রোবস, "ভয়েজার ১"।

এর রূপালী এন্টেনা পাথর বরফের জঙ্গল থেকে পাওয়া তথ্য পাঠাচ্ছে অনবরত। প্রোবস এর সাথে লাগানো আছে একটি গোল্ডেন ডিস্ক বা মেসেজ বক্স আর এই বক্সে আছে পৃথিবীর প্রায় সবগুলো ভাষার অভিবাদন।প্রোবস আমাদেরকে মেসেজ পাঠানোর সাথে সাথে অন্যদেরকেও পাঠাচ্ছে আমাদের সম্পর্কে তথ্য।পাঠাচ্ছে আমাদের সোলার সিস্টেম এর ম্যাপ এর তথ্য।হয়ত কোন দিন কেউ আসতে পারে আমাদের খোঁজ নিতে।বন্ধু কিংবা শত্রু সেটা জানা সম্ভব না এখনই, তবে জঙ্গলের মধ্যে কাউকে খঁজে বেড়ানোর চাইতে ডেকে নেয়াটাই মনে হয় বেশী সুবিধার।


না, আলো আধার আগুন পাথরে আকাশ ভ্রমন শেষ হয়নি এখনো, বরং মাত্র শুরু।নিজেদের অজান্তেই আমরা হঠাত করে বের হয়ে এসেছি আমাদের সোলার সিস্টেম এর বাইরে।ঘর পেরিয়ে, সীমানা পেরিয়ে গভীর সমুদ্রে দাড়িয়ে আমরা দেখছি আমাদের পেছনে ফেলে আসা, সোলার সিস্টেম।ক্লান্তিহীন দুর্বার নাবিকের মত আমাদের চোখ এখন সামনের দিকে, কেবলই সুদূর মহা দিগন্ত বরাবর।কি আছে সেখানে?আমরা কি পারব সেই অধরাকে স্পর্শ করতে? হ্যা, সেটা জানতেই তো "জার্নি টু দি এইজ অফ দি ইউনিভার্স"

১ম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:২৯
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙালি নারীর কাছে

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০২ রা জুন, ২০২৪ রাত ১২:৪৬

পরনে আজানুলম্বিত চিকন সুতোর শাড়ি, সবুজ জমিনের পরতে পরতে কবিতারা জড়িয়ে আছে বিশুদ্ধ মাদকতা নিয়ে, গোধূলির আলোয় হেঁটে যায় নিজ্‌ঝুম শস্যক্ষেতের ঘাসপাঁপড়ির আল ধরে, অতিধীর সুরের লয়ে, সুনিপুণ ছন্দে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসেন ইক্টু ঘুরাঘুরি করি.... :-B

লিখেছেন সোহানী, ০২ রা জুন, ২০২৪ সকাল ৯:২৩

এক কসাইয়ের লাশ আরেক কসাই কিভাবে কিমা বানাইলো কিংবা কত বিলিয়ন ট্যাকা টুকা লইয়া সাবেক আইজি সাব ভাগছে ওইগুলা নিয়া মাথা গরম কইরা কুনু লাভ নাইরে... আদার ব্যাপারীর জাহাজের খবরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×