somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজব চিকিৎসা

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ভাইয়া তখন ক্লাস টেন-এর ছাত্র। ভীষণ ফাঁকিবাজ।
তার খাওয়া-দাওয়া, খেলাধুলায় কোনো সমস্যা নেই। তার যত সমস্যা পড়ালেখার সময়। পড়তে বসলে তার একটি একটি করে সমস্যা বের হতে থাকে।
পড়তে বসল। পেট ব্যথা। কয়েক মিনিট পড়ার পরই সে হাত দুটো পেটে চেপে ধরবে। তারপর ধণুকের মতো বাঁকা হতে থাকবে।
মাথা ধরা। দু’হাতে মাথার চুল টানবে। ডানে-বায়ে ঘোরাবে মাথাটা।
বমি বমি ভাব। একটু পর পর উঠে গিয়ে বেসিনে উপুড় হয়ে ওয়াক, ওয়াক, থুঃ করবে।
গা ঝিমঝিম। হাত ঝাড়বে, পা ঝাড়বে। তারপর বলবে, এখানে টিপ ওখানে টিপ।
তাতেও সুবিধে হলো না। মুখটা বাঁকা করে লুঙ্গির গিঁটটা খুলতে খুলতে এমন একটা দৌড় দিবে বাথরুমের দিকে, দেখলে মনে হবে আর একটু হলে তার সর্বনাশ হয়ে যেতো। কমসে কম আধ ঘণ্টা কাটাবে বাথরুমে।
আব্বু অনেক চেষ্টা করলেন। কিন্তু ভাইয়ার রোগ আর সারে না। ভাইয়াকে নিয়ে আব্বু পড়ে গেলেন খুব চিন্তায়।
আব্বু ভাইয়ার এ সমস্যা নিয়ে এক ডাক্তার বন্ধুর সাথে আলাপ করলেন। ডাক্তার বললেন, আপনার ছেলের এসব লণ যদি খালি পড়ার সময় দেখা দেয় তাহলে বুঝবেন এটা তার ”পড়ারোগ”। মানে, না পড়ার ফন্দি। এ রোগের ওষুধ তো আমি দিতে পারব না। তবে ছেলের রোগের লক্ষণ বুঝে আপনিই এর ভাল চিকিৎসা করতে পারবেন।’ ডাক্তার আব্বুকে কিছু বুদ্ধি শিখিয়ে দিলেন।
আব্বু ব্যথানাশক মলম এনে রাখলেন বাসায়।
আমরা পড়তে বসলাম। ওমনি শুরু হয়ে গেল ভাইয়ার মাথা আর পেট ব্যথা। বই বন্ধ করে মুখ বাঁকিয়ে মাথা আর পেট টিপে ধরে উহ্, আহ্ শুরু করে দিল। সাথে সাথে আব্বু মলম নিয়ে এসে বললেন, ‘বাবা তোমার কোন জায়গায় ব্যথা করে আঙ্গুল দিয়ে দেখাও তো আমাকে।’
ভাইয়া মুখ বাঁকিয়ে আঙুলে পেট ও কপালের দিকে ইশারা করে দেখালেন। আব্বু হাতের তালুতে মলম নিয়ে ঘষতে ঘষতে বললেন, বাবা, তুমি লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ো, চিকিৎসা হবে তোমার। ভাইয়া আব্বুর চোখের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ভয়ে শুয়ে পড়ল খাটে। আব্বু মলম হাতে নিয়ে প্রথমে পেটে ও পরে কপালে শুরু করলেন ডলা। এই সেই ডলা না। ডলার চোটে ভাইয়া বাঁকা হয়ে গেল। আব্বু তো ডলতেই আছেন। ভাইয়া আব্বুর হাত ঠেলে দিয়ে বলে, 'আব্বু, আব্বু আর না, হয়েছে, আমার ব্যথা শেষ। একটু ব্যথাও নেই। ডলা বন্ধ কর, প্লিজ।' আব্বু হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ব্যথাটা ওঠলেই আমাকে জানাবে। বদ ব্যাথাটা কোথায় আর কিভাবে থাকে সেটা আমি দেখতে চাই।
কতণ পরেই ভাইয়া মুখ বাঁকিয়ে লুঙ্গির গিট খুলতে খুলতে বলে, ‘আব্বু, বাথরুম পেয়েছে আমার, বাথরুমে গেলাম।’ বলেই সে ছুটে গেল বাথরুমের দিকে। ফেরার আর খবর নেই। বাথরুমে তিরিশ মিনিট!

আব্বু রাগে গজ গজ করে বললেন, ’বাথরুম করতে এত সময় লাগছে কেন তোমার? হেহ্? পড়বে কোন সময়? তাড়াতাড়ি বের হয়ে এসো।‘
ভাইয়া বাথরুমের ভেতর থেকে বলে, ‘আব্বু, দেরী হবে আরো।‘
তারপর যখন সে বেরোলো তখন দেখা দিল আরেক সমস্যা। মনে হয় সে যুদ্ধ করে এসেছে। ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে এসে ঝাপ দিয়ে পড়বে খাটে। পা নাকি ফুলে বালিশ। ঝিঁঝিঁ করছে। তখন তার পা টিপে দেওয়ার পালা। সীসার মত ভারী তার পা দু'টো আমার ওপর ছুড়ে ফেলে দিয়ে বলে, টিপ, জোরে জোরে টিপ, মনে হচ্ছে পা দু’টি ফুলে ডোল হয়ে গেছে। তার পা টিপে দিতেই হয়; এছাড়া আমার কোনো উপায় থাকে না।
এসব করে সে কখনোই কাশের পড়া কমপ্লিট করতে পারে না। আব্বু কয়েকদিন তাকে বেশ করে শাঁসালেন কিন্তু তার রোগগুলো আর সারল না।
আব্বু অনেক খোঁজ করে ভাইয়ার জন্যে একজন ম্যাডাম ঠিক করলেন পড়ানোর জন্য। রাগী ম্যাডাম। আমাকেও বললেন ম্যাডামের কাছে পড়তে। খুব স্মার্ট ম্যাডাম। তিনি প্রথম প্রথম কিছুই বলেননি ভাইয়াকে। ভাইয়া কী করে, মেডাম তা দেখতে লাগলেন। ভাইয়াও ম্যাডামকে বুঝতে লাগল মনে মনে।
পড়ার সময় আগের মতো ভাইয়ার নানা সমস্যা দেখা দিতে লাগল। বাথরুমে গিয়ে অনেক সময় নষ্ট করতে লাগল।
কয়েকদিন পরের ঘটনা।
মেডাম পড়া ধরতেই ভাইয়ার প্রচন্ড মাথা ও পেট ব্যথা উঠল। মেডাম সাথে সাথে পার্স খুলে একটা ট্যাবলেট বের করে বললেন, ‘আমি লক্ষ করছি তোমার ব্যথাটা খুবই খারাপ। সময় বুঝে না, খালি পড়ার সময় ওঠে। আমি খুব দামি একটা ট্যাবলেট এনেছি তোমার জন্য। যত বড় ব্যথাই হোক এ বড়ি খাওয়ার সাথে সাথে ব্যথা ভাল হয়ে যাবে।‘ মেডামের কথায় ভাইয়া এক গ্লাস পানিতে বড়িটি খেল। মুখ মুছতে মুছতে বলে, ‘ম্যাডাম আমার পেট ব্যথাও নেই, মাথা ব্যথাও নেই। একদম ভালো হয়ে গেছি।‘
ম্যাডাম বললেন, ‘ঠিক আছে, তুমি কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ। এখন পড়ো।‘
হঠাৎ করে ওঠে ভাইয়া বাথরুমের দিকে ছুটে যাচ্ছে এমন সময় ম্যাডাম বললেন, বসো। ম্যাডাম ভাইয়ার হাতে একটা ট্যাবলেট দিয়ে বললেন, ‘এটা পড়ার সময় বাথরুম না পাওয়ার শক্তিশালী ট্যাবলেট। এটা খাওয়ার পর পড়ার সময় কখনো বাথরুম পাবে না। এ ট্যাবলেটে কাজ না হলে পেট কেটে অপারেশন করাতে হবে আর কি।‘ এ কথা শুনে ভাইয়া চোখ বড় করে ট্যাবলেটটা পানি দিয়ে গড় গড় করে গিলে ফেলল।
ভাইয়া পড়ার সময় আর কোনো সমস্যার কথা বলে না, এমনকি বাথরুম পর্যন্ত পায় না ভাইয়ার। একদিন ভাইয়া ম্যাডামকে বলে, ‘ম্যাডাম আমি তো একদম সুস্থ হয়ে গেছি। অপারেশন-টপারেশন কিচ্ছু লাগবে না।‘
এবার মন দিয়ে পড়ো, বললেন মেডাম।
ভাইয়া এখন মন দিয়ে লেখাপড়া করে। তার আর কোন সমস্যাই নেই।
পরে জানা গেল চিকিৎসার আসল খবর। মেডাম আসলে ভাইয়াকে খাইয়েছিলেন ভিটামিন ট্যাবলেট। এটা ভাইয়া জানার পর রাগের চোটে মুখটা যে কেমন করেছিল, যদি দেখতে!



সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫৪
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×