somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্বেত ময়ূরী প্রণরেনী -২

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বৃষ্টিতে ঝাপসা হয়ে আসা প্লাটফর্মের একপ্রান্তে ট্রেনের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকা, ক্লান্ত তামাটে চোখ দুটো যেন সবুজ সতেজ হয়ে উঠল। রেশমি চুলগুলো ফর্সা কাঁধ বেয়ে পিঠের উপর এসে থেমে গেছে। কোমল নিশ্চুপ নির্মল বড় বড় চোখ দুটো কাগজের স্কাল্পচারে স্থির হয়ে আছে। শান্ত শুভ্র ক্লান্তিহীন একাগ্র হাতের বুননের দিকে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রইল জায়ান। মেয়েটি হঠাৎ চোখ মেলে দিল জায়ানের দিকে। মায়া-মায়া টানা-টানা নীল মণির ভাসা-ভাসা দুটো চোখ। অসম্ভব সুন্দর চমৎকার দুটো চোখ, এমন দুটো চোখ যেন প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ার মত। মেয়েটির চোখগুলো দেখেই সাদা কাগজের স্কাল্পচারের চেয়ে মেয়েটির প্রতি আগ্রহটা এবার বেড়ে গেল জায়ানের। মনের মাঝে এমনভাবে দোলা দিয়ে গেল, মনে হল কল্পনায় হঠাৎ যেন কোন প্রণরেনীর সাক্ষাৎ পেয়ে গেছে জায়ান।

অনেকক্ষণ হল জায়ান মেয়েটার পাশে এভাবে বসে আছে, অথচ মেয়েটির কোন সাড়া শব্দ নেই। হঠাৎই যেন সর্পিল শীতল ভঙ্গীতে আবারও তাকাল জায়ানের দিকে। তাকিয়েই একটি মিষ্টি হাসি ছুড়ে দিল ওর দিকে। আহ! কি চমৎকার শুভ্র তাঁর হাসি, মনে হল পৃথিবীর সকল অস্থিরতা মুছে দিয়ে নিমিষেই মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠল।

চোখে চোখ পড়তেই জায়ান বলল, হায়, কি বানাচ্ছ? আবারও সেই হাসি।

তুমি বুঝি ময়ূর চেন না?

একটু অপ্রস্তুত ভঙ্গীতে লক্ষ্য করল সত্যিই তো কাগজের সাদা ময়ূর।
জায়ান বলল, হুম, তাইতো, অসম্ভব-সুন্দর, কথাটি শুনেই মেয়েটি আবারও একটি মিষ্টি হাসি ছুড়ে দিল ওর দিকে।

ভাল লেগেছে তোমার? এবার প্রশ্ন করল,

কেন নয়! এত চমৎকার আর ক্রিয়েটিভ ধবধবে সাদা একটি ময়ূর, ভাল লাগবেনা কেন? অদ্ভুত সুন্দর হয়েছে তোমার ময়ূরটা।

ধন্যবাদ, ধন্যবাদ। কিন্তু আমার মনে হয় তোমার প্রশংসাগুলো অতিরঞ্জিত আর উদ্দেশ্যমূলক, তাই নয় কি?

মেয়েটি তাঁকে এতটা অপ্রস্তুত করে দিবে চিন্তাই করেনি জায়ান।

সেই মিষ্টি হাসি দিয়ে এবার জায়ানকে বলল, মাইন্ড করেছ?

জায়ানের অবস্থা একটু এলোমেলোই হয়ে গেছে। এভাবে মেয়েটি কথাগুলো বলবে ভাবতেই পারেনি। একটু অপ্রস্তুত হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে জায়ান বলল, না, না, মাইন্ড করব কেন?

জিভের কোণে ফিঙে একটা হাসি দিয়ে মেয়েটি বলল, দ্যাটস গুড, মাইন্ড না করলেই ভাল।

হঠাৎ ট্রেনের শব্দ শুনতে পেয়ে প্লাটফর্মের শেষ প্রান্তে ট্রেনের পথের দিকে তাকাতেই জায়ানকে জিজ্ঞেস করল, তোমার ট্রেন? জায়ান মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ।

কোন দিকে যাচ্ছ তুমি? জায়ান জিজ্ঞেস করল

মনে হয় তোমার উল্টো দিকে, মেয়েটি উত্তর দিল। উত্তর দিয়েই জায়ানের হাতে ধবধবে সাদা ময়ূরটা দিয়ে বলল, এই নাও, দিস ইজ ফর ইউ। প্রশ্ন করোনা কেন ময়ূরটা তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।

জায়ানের চোক্ষু চরাক গাছ, এতটা অবাক কোনদিনই হয়নি জায়ান। পাগল নাকি মেয়েটা, এতোটা মাথা খারাপ কারো হয়, চেনা নেই জানা নেই, এভাবে কেউ কাউকে......ভাবতে ভাবতে তাড়াহুড়োর মধ্যে শুধু জায়ান বলল, তোমার নাম্বারটা? সাথে সাথে ময়ূরের এক কোণে লিখে দিল, শূন্য চার কোডের দশ সংখ্যার নাম্বারটি......।

ট্রেন আসতেই ধন্যবাদটুকু দিয়েই ঝটপট উঠে গেল জায়ান। হাতের ইশারায় বিদায় বলতে যাবে কিন্তু ততোক্ষণে মেয়েটি আড়াল হয়ে গেছে, জায়ান ওঁকে আর দেখতে পেল না।

আজ ট্রেনটা প্রায় চল্লিশ মিনিট লেটে দৌড়চ্ছে, সারাটা রাস্তা সে শুধু মেয়েটির কথাই ভাবছিল, হঠাৎ হাত ঘড়িটায় চোখ রেখে ভাবল, এখন আর ভার্সিটিতে গিয়ে কোন লাভ নেই। তাই চট করে দোলন ভাইয়ের ওখানে যাবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। দোলন হচ্ছে জায়ানের একজন বাংলাদেশী সিনিয়র ভাই। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হলেও সর্বাঙ্গে তার সভ্যতার ছাপ। গলায় ইয়ে মোটা সোনার চেইন, দুই হাতের পেশী ও কব্জিতে ট্যাটু, মাথার চুল একেবারেই নেই, তাই সব সময় ন্যাড়া করেই রাখেন, তাই মাথাটা সব সময় চকচক করতে থাকে। তাঁর ডজন খানেক সেলিব্রেটি বন্ধু, প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড চাচাও ওনার ভাল বন্ধু। হাওয়ার্ড চাচা ইন্ডিয়ান কারি খুব পছন্দ করেন তাই মাঝে মাঝে চাচা দোলন ভাইয়ের রেস্টুরেন্ট থেকে খাবারও নিয়ে খান। এন্থনি ম্যান্ডিন তো অনেকটা তাঁরই মত দেখতে, দুজনে পাশাপাশি দাঁড়ালে দুই ভাই বলে চালিয়ে দেয়া যাবে, বুঝার কোন উপায়ই নেই দুজন দুই ভুবনের বাসিন্দা।

ওখানে গেলে খারাপ হবে না, ভেবেই সে চলে এলো দোলন ভাইয়ের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট কিংসক্রসে।

দোলন ভাই জায়ানের দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি, এই ভর দুপুরে? লাঞ্চ টাইমে! একটা বিরক্তি ফুটে উঠল উনার চোখে মুখে। জায়ান বলল, ওহহো তাইতো, বলেই বেড়িয়ে আসবে এমন সময় দোলন ভাই বললেন, রাতে আসতাছ তো নাকি?

ক্যান দোলন ভাই কোন পার্টি-টার্টি আছে নাকি?

আরে নাহ, তোমার না আমারে এন্টি-ভাইরাস সফট দেয়ার কথা।

জায়ান বলল, ওহ-হো! না দোলন ভাই, আজ না, সত্যি কথা বলতে কি আপনার এইটার কথা ভুলেই গেছি।

দোলন ভাই একটা হাসি দিয়ে বললেন, ওহ তাই, আচ্ছা আচ্ছা, এতো তাড়াতাড়ি সব ভুইলা গেলে চলবো ক্যামনে, দাঁড়াও, সামনে টেবিলে গিয়া বস, চা নিয়া আসতাছি।

দুটো বড় বড় মগে চা নিয়ে হাজির হলেন দোলন ভাই, টেবিলে বসতে বসতেই, দোলন ভাই বললেন, তুমি মাসুমরে চেন, জায়ান?

কোন মাসুম, দোলন ভাই, স্ট্র্যাথ-ফিল্ডের মাসুমের কথা বলছেন, নাকি?
মাথা নাড়িয়ে বললেন, হ অর কথাই কইতেছি, মাসুম তো বিয়া করছে শুনছ?
জায়ান বলল, না দোলন ভাই, আগে শুনি নাই, ইন্টারেস্টিং কবে বিয়া করল?

মাসুম কোন এক ফিজিয়ান-অস্ট্রেলিয়ান মেয়েকে বিয়ে করেছে। এখানে বৈধ হওয়ার কত যে ফন্দি ফিকির, কেউ সমকামী প্রেমাত্মক হয়ে আবার কেউবা ফিরিঙ্গী ললনাকে বিয়ে করে আবার কেউবা এখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে বৈধ হয়। ইদানীং নাকি এইসব ব্যাপারগুলো খুব বেশী হচ্ছে বললেন, দোলন ভাই। দোলন ভাই তেমন পড়ালেখা জানেন না, কিন্তু দেশ থেকে আসা নবীন ছাত্রদের বেশ হেল্প করেন। কখনো কখনো কাজ দিয়ে আবার কখনো কখনো মূল্যবান পরামর্শ দিয়েও হেল্প করার চেষ্টা করেন।

লাঞ্চের সময়ে জম্পেশ একটি আড্ডা হয়ে গেল। এক অদ্ভুত প্রকৃতির লোক এই দোলন ভাই। অনেক সময় কাজের সময়ও চুটিয়ে আড্ডা দেন। আবার অনেক সময় আড্ডার সময়ও একেবারে কথা বলেন না। প্রচুর সিগারেট ফুঁকেন, কিচেনের সাথেই একটি খোলা জায়গা আছে। কাজের অবসরে ওখানে দাঁড়িয়ে সিগারেট ফুঁকেন। চা শেষ হতেই দাঁড়িয়ে বললেন, সিগারেট চলবে নাকি? বলেই কিচেনের দিকে চলে গেলেন। জায়ানও দোলন ভাইকে অনুসরণ করল।

আজ বিকেলে আবার অপেরা হাউজের পুরনো সেই প্রিয় যায়গাটায় বসে আছে জায়ান। দেশের কথা খুব মনে পড়ছে। ইদানীং মাঝে মাঝেই মনে হয় আর বুঝি লেখাপড়াটা শেষ করা হলো না। সবকিছু ফেলে দিয়ে বাবা-মায়ের কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে। দুদিন আগে বাবার একটি চিঠি পেয়েছে জায়ান। এরই মধ্যে অনেকবার পড়েছে তারপরও বারবার চিঠিটা পড়তে ভাল লাগছে, পকেট থেকে চিঠিটা বেড় করে আবারও পড়তে থাকে।

ঢাকা
৩১/১০/১৯৯৯ ইং

স্নেহের বাবা,
আমার অশেষ আন্তরিক দোয়া ও শুভেচ্ছা নিও। তোমাকে অনেকদিন থেকেই পত্র লিখব করে ভাবছিলাম। এমনি করেই পবিত্র মাহে রমজান চলে এলো। এই রমজানেও খুব একটা ‘ফ্রি’ ছিলাম না। কারণ পবিত্র কোরআন খতম করার প্রবল ইচ্ছা ছিল। এইতো মাত্র গত ২১ রমজানে এই পবিত্র কাজটি করার তাওফিক দিয়েছেন রহমানুর রাহিম।

আজ প্রথমেই তোমাকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। গত ঈদের মোবারক-বাদ ছিল সামনা সামনি। অথচ আজকের ঈদের মোবারকবাদ জানাতে হচ্ছে কাগজের মাধ্যমে। কিনা বিচিত্র আমাদের জীবন। এই কাগজটা তোমাদের হাতের কাছে আস্তে আস্তে হয়ত ঈদ পারই হয়ে যাবে। কিন্তু তাতে কি? কাগজের কথা বড় না হৃদয়ের কথা বড়? কাগজটা স্রেফ প্রকাশের মাধ্যম মাত্র, আসলটা হচ্ছে মানুষের হৃদয়। হৃদয়ে যদি কিছু না থাকে তাহলে কাগজ দিয়ে কি হবে! কাগজ তো ছিঁড়ে যায়, নষ্ট হয়ে যায়। হৃদয় তো ছিঁড়ে না নষ্টও হয়না।

যাক অনেক কথা লিখে ফেললাম। এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি। তুমি কোন একটা পত্রে লিখেছিলে “তোমার কষ্ট হয়- বিদেশে থাকায়ে কি কঠিন” ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি সবই বুঝি। তোমার জন্য আমার মনে ব্যথা লাগে। কিন্তু কিছুই করার নাই। মানুষের জীবনে একটা সময় আসে যখন কষ্ট করতে হয়। কষ্ট করে একবার দাঁড়াতে পারলে career নিয়ে বাকী জীবন আর ঝামেলা পোহাতে হয় না। তা ছাড়া তোমার তো কারো কারো সাথে কোন কোন ব্যাপারে commitment – bound আছে। জীবনে পরিশ্রম ও ধৈর্যের কোন বিকল্প নেই। কবির ভাষায় বলতে হয়, “মেঘ দেখে কেউ করিস না ভয়, আড়ালে তাঁর সূর্য হাসে, হারা শশীর হারা আলো অন্ধকারেই ফিরে আসে। মনিষীদের জীবনে আমরা কি দেখি। তাঁরা সকলেই কষ্ট করেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তোমার মরহুম দাদা বলতেন, সাধনায় সিদ্ধি লাভ হয়।

বিশ্ব কবি বলেছেন, “মুক্ত কর ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো নিজেকে করো জয়। অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ পরিস্থিতিই তোমার ভয় এই ভয়কে তোমার জয় করতে হবে। তবেই না তুমি তোমার মিশনে কৃতকার্য্য হবে। জয়ের মালা গলায় নিয়ে দেশে ফিরবে ইনশাআল্লাহ্‌। কতই না আনন্দ হবে তখন। কবি আরও বলেছেন, “অমঙ্গলকে তাড়াইয়া দেয়ার চেষ্টা করিও না। তাহা হইলে মঙ্গল সমেত উড়িয়া চলিয়া যাইবে। তাই মঙ্গল ও অমঙ্গল উভয়কে আমাদের সমানভাবে গ্রহণ করতে হবে।

আমার জীবনে একটা ইচ্ছা ছিল যে আমার কোন একটা সন্তান সেই Boeing টায় চড়ে বিদেশে পাড়ি জমাবে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে। তোমার জন্য আমি সুখী এবং দয়াময়ের কাছে কৃতজ্ঞ। তাই মিশন শেষ করে দেশে ফিরো তবেই পূর্ণ শান্তি পাব ইনশাআল্লাহ। সব সময়ই তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি।

আমি কি জীবনে কম কষ্ট করেছি? বাল্যকালে মা মারা গেলেন। কি কষ্ট! ঘরে সৎ-মা এলো। জীবনের একটা পর্যায়ে চট্টগ্রামে কোন এক বাড়িতে lodging ছিলাম। সেখানে তাঁরা আমাকে সকালের নাস্তা পানি দিত না। কি ক্ষুধার জ্বালা। এমনি করে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে আজ এ পর্যায়ে পৌছুতে পেরেছি। জীবনে কখনও ভেঙে পড়িনি। দৃঢ় মনোবল ছিল। উন্নতি করার ইচ্ছা ছিল।

তোমার চারটি কাজ করতে হবে। (১) কষ্ট/পরিশ্রম, (২) আত্মবিশ্বাস, (৩) আল্লাহর প্রতি ঈমান (তিনি সবই পারেন), (৪) ইবাদত। ইবাদতের মাধ্যমেই তাঁর কাছে চাইতে হবে। সুরায়ে বাকারা শরীফে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা ধৈর্য ও সালাতের (নামায) মাধ্যমে আমার কাছে চাও”।

অনেক কিছু লিখে ফেললাম। আমরা সকলেই ইনশাআল্লাহ ভালই আছি। আমার ও তোমার আম্মার দোয়া নিও। তানভীর ও আদনানের শুভেচ্ছা নিও। সবার সাথে মিলেমিশে চলবে। নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। সুস্বাস্থ্য maintain করা একটি ফরজ কাজ।

ইতি:
তোমার আব্বা,


এতদিন পর বাবার লেখা চিঠিটা বারবার পড়ে জায়ানের মনটা চঞ্চল হয়ে উঠে। বাবা কাছে নেই একথাটা ভাবতেই পারেনা। যতবার বাবার কথা মনে পড়ছে ঠিক ততবার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠছে। মাথা ও বুকের মাঝখানে খালি হয়ে আসছে, চিৎকার দিতে গিয়েও দিতে পারেনা, চিৎকারটা ভিতরে কোথায় যেন আটকে যায়। এমন অস্থির চঞ্চলতায় বারবার চিঠিটা পড়ে আগামীতে পথ চলার শক্তি খুঁজে পায় জায়ান।

পরিবার পরিজনকে ছেড়ে কতদিন হয়ে গেল এখানে আছে। এখানকার নাগরিকত্ব, আধুনিক ও উন্নত নাগরিক সুযোগ-সুবিধা। নিরাপদ, দুঃচিন্তা মুক্ত জীবন, সবকিছুর আড়ালেও, জ্যামের প্যাঁচে ঘুর্নিয়মান ঘুণে-ধরা সেই ফেলা আসা সমাজে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে। সমস্যার সাতকাহনে বাঁধা জরাজীর্ণ জীবন, দুর্গন্ধ আর অস্বাস্থ্যকর সেই ঢাকা শহরের কথাই বারবার মনে পড়ে, ছুটে যেতে ইচ্ছে করে প্রিয়জনদের কাছে। কিন্তু ইচ্ছে থাকলেও যখন তখন ফিরে যাওয়া যায় না। দেশে যেতে হলে অনেক অর্থের প্রয়োজন, শুধু যে অর্থটাই মুখ্য তা নয়, নিজের কাজ ও পড়াশোনা ম্যানেজ করে শত ইচ্ছে থাকলেও, উপায় থাকে না। তাই তো চিঠিটা পড়ে আজ তাঁর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।


বিনি-সুতোয় বাঁধলাম পাগল মন
তবু আমার এ মন,
যেতে চায় যে উড়ে
ভালবেসে বুকের মাঝে
রাখলাম আপন করে তাঁরে
তবু সে যেতে চায় যে দূরে

এমপি থ্রীতে গানটি শুনতে শুনতে মনটা খুব খারাপ হয়ে যায়। আলো ঝলমল উজ্জ্বল স্বপ্নগুলো বিবর্ণ ধুসর হয়ে যায়, সময়ের চাকায় যদিও জীবনটা যথারীতি বর্ণালী হয়ে উঠে, তবু সেই বর্ণালী রঙও কিছুটা ধুসর হয়ে রয়। এমনই রংহীন আমাদের রঙিন জীবন, এমন রংহীন জীবনের পথে চলাই যে জীবন। তাই তো চিঠিটা পড়ে একটা শক্তি সঞ্চয় করে, বাবার উৎসাহ ব্যঞ্জক কথাগুলো মনে পড়তেই মনটা আবার চাঙ্গা হয়ে যায়।

হার্বারের জলে চোখ রেখে কি যেন ভাবতে থাকে, পকেট থেকে সেলফোনটা বেড় করে কাকে যেন ফোন করে। হঠাৎই যেন ওর চোখ দুটো উচ্ছ্বাসে জ্বল জ্বল করে উঠে। হার্বারের জলে হেলে-দুলে উঠা উচ্ছ্বাসগুলো বেশ আবেশ মিশিয়ে উপভোগ করে আর কারো জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

কিছুক্ষণ পর রেলস্টেশনে দেখা সেই শ্বেত-ময়ূরী মেয়েটি অপেরা হাউজের বেদীতে জায়ানের পাশে এসে বসে। সেও হার্বারের জলে চোখ রাখে, সেই জলের বুকে ভালবাসার প্লাবন বয়ে যায়, দুজনার দুজোড়া চোখ যেন একজোড়া হয়ে মিশে যায়। এভাবেই কেটে যায় শুন্যতাহীন দুজনার সেই রাতটি। অপেরা হাউজের বেদীতে বসেই ভোরের প্রথম সূর্যলোকে দুজনকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করে। অনেক না বলা কথাগুলো অসাধারণ এক অনুভূতির ছোঁয়ায় মিশে যায় দুজনের মনে। ভোরের শুভ্র মৃদু বাতাসে ভালোলাগার পরশ দুজনের মনেও ভালবাসার ছোঁয়া দিয়ে যায়। দুইজোড়া চোখ স্বপ্নের শ্বেত ময়ূরের নায়ে উড়ে চলে দূর আকাশের দেশে, এমনই কল্পনারা জেগে থাকে জায়ানের নিভৃত মনের কোণে।


সমাপ্ত

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×