somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুষারের দেশে আনন্দের এক একটা দিন.................অষ্টদশ পর্ব।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সেবার আনন্দকে হাসপাতাল থেকে, এ্যলেন নিজের বাসায় নিয়ে এসেছিলো।

শত শংকা, ভয় আর অস্বস্তি কাটিয়ে কোন উপায় না দেখে বব আর এ্যলেন এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল মূলত ববের জোর করার কারনে। নতুবা এ্যলেন কোনদিনই আনন্দকে নিয়ে আসার সাহস পেতনা। এ্যলেন জানে, আনন্দ যতটুকু পারে নিজের কাজ নিজে করে, হোক সে বাজার করা , অল্প ভাড়ার কোন বাসা খোজা, অথবা দুর-দুরান্তে গিয়ে কোন চাকুরীর ইন্টারভিউ দেয়া। মাঝে মাঝে কেবল ভালো লাগার জন্য বব অথবা এ্যলেনের সাথে দেখা করে, কিন্তু কোন প্রয়োজনে ওদের সাহায্য নেয়না ইচ্ছে করে। আবার ওদের কোন কাজে সামান্য সাহায্য করবার কোন সুযোগ কখোনো ছাড়েনা।

আর অন্যকারোর বাসায় থাকা কিংবা কারোর অসুবিধার সামান্য কারন হতে চায়না আনন্দ। এমনি খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরকেও বিরক্ত করা আনন্দের অপচ্ছন্দ। তারপর আবার এ্যলেন ছেলে, আনন্দ সব ব্যপারে খুব আন্তরিক এবং খোলামেলা, তাই বলে নিজস্ব কিছু ব্যপারে আনন্দ খুব বেশি সর্তক।

এ্যলেন, আনন্দের বাসায় ছিল একমাসের চেয়ে বেশি। এতোদিন একসাথে থাকার পরও এ্যলেন কোনদিন আনন্দকে এতটুকু অসাবধান দেখেনি। চলার পথে, বাসে আনন্দ যেরকম ভাবে থাকে, বাসাতেও এ্যলেন ঠিক সেরকম ভাবেই পেত আনন্দকে, কেবল বাসায় আনন্দ জিন্স না পরে পায়জামা পরতো। তাছাড়া বাহিরের পরিবেশের আনন্দ আর ঘরোয়া আনন্দ একই রকম। আর সেই জন্যই এ্যলেনের অস্বস্থি কম হতো, আবার এ্যলেনের খারাপ লাগারও এটাই কারন। এ্যলেন বুঝতো , আনন্দ ইচ্ছে করেই এ্যলেনের সামনে খুব বেশি পরিপাটি চলাফেরা করে, নিজের পর্দা, কিংবা অসংযত কোন আচরনের প্রশ্রয় নেই ওর জীবনযাত্রায়।

কিন্তু একটা মানুষ ঘরে ফেরে নিজের মতো করে খোলামেলা থাকবার জন্য, কিছুটা স্বাভাবিক ব্যক্তিগত জীবনের জন্য। কিন্তু এ্যলেন ছেলে বলেই আনন্দ কোনদিনই সেই সুবিধাটা নিতো না, এমনকি নিজের ঘরের ভেতরেও একরকম পোশাকী ভদ্রতা বজায় রেখেই চলতো সব সময়, যা মেনে নেয়া এ্যলেনের জন্য ছিল বিব্রতকর। তাই এ্যলেন সুস্থ হবার পর এক সপ্তাহও থাকতে চায়নি আনন্দের বাসায়।

এ্যলেন, ঠান্ডায় অসুস্থ হবার কারনে সেই সেমিষ্টারের তিনটা ফাইনাল পরীক্ষাতেই অংশ নিতে পারেনি। অসুস্থতার কারনে পরীক্ষা ডিফার করতে কোন সমস্যাই হয়নি ঠিকই কিন্তু জরিমানা দিতে হয়েছিল সাড়ে চারশো ডলার। অসুস্থতার সময়টাতে পুরোপুরি একা চলাফেরা করতে পরতোনা এ্যলেন, কিন্তু সেই সময়টায় আনন্দ পুরোপুরি যেন নিজের পরিবারের একজন হয়ে গিয়েছিল। বারবার খাওয়া তৈরী করা থেকে শুরু করে সব কাজ করে দিত এ্যলেনকে।

ডিসাম্বরের শেষের দিকে এ্যলেন কিছুটা সুস্থ হবার পর, জোর করেই একটা বাসা ভাড়া করতে চায়। কিন্তু আনন্দ বেশ কিছুদিন থেকে পুরোপুরি সুস্থ হবার পর যেতে বলে ছিল, বিশেষ করে পরীক্ষাগুলো ওর বাসায় থেকে দেয়ার জন্য অনুরোধও করেছিল।কিন্তু এ্যলেনের জোরের কারনে মেনে নেয় সব। তবে সেসময়ও আনন্দ এ্যলেনকে খুব সাহায্য করেছিল। আনন্দের কথাতেই, ওর বাড়িওয়ালা কোন ডিপোজিট ছাড়া নীচতলার বেসমেন্টের রুমটাতে থাকবার অনুমতি দিয়েছিল মাত্র দুশো ডলারে।

ভাড়া খুব সস্তা কারন বেসমেন্টেটা নতুন করে ঠিক করা ছিলনা, তাই অন্ধকার, নোংরা আর দেয়ালে ফাটা দাগগুলো সহ্য করা ছিল কষ্টকর। তার উপর আবার একটা রুম আর তাতেই রান্নার জন্য ছোট করে ব্যবস্থা, টয়লেটটাও ছিল ডিট্চাড। সবমিলিয়ে এরকম একটা ঘরে থাকা ছিল এককথায় শাস্তিস্বরুপ। কিন্তু এ্যলেনের জন্য এটাই স্বর্গ, ভাড়াটা কম তারপর আবার আনন্দের সেল ফোনটা ইমারজেন্সি হিসেবে ব্যবহরের সুবিধা সাথে আনন্দের ইন্টারনেটের ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক।

প্রথম প্রথম আনন্দ যা-ই রান্না করতো এ্যলনের জন্য দিয়ে যেত। বেসমেন্টের চাবি আনন্দের কাছে ছিল লন্ড্রী ব্যবহারের জন্য, আর এ্যলেন কোনদিন ওর নিজের ঘরে তালা দিতনা। তারপরও আনন্দ রান্না করা খাবার থেকে শুরু করে ফল কিংবা সেলফোন সবই রেখে যেত এ্যলেনের দরজার সামনে। এ্যলেনের অস্বস্থি হলেও ততদিনে একরকম অভ্যেস হয়ে গিয়ে ছিল আনন্দের এই আচরনে। তবে কোনদিনই আনন্দ এ্যলেনের ঘরে ঢুকতো না।


আনন্দের বলাই ছিল, এ্যলেন চাকুরী পেলে পরিশোধ করতে হবে সব। কিন্তু এ্যলেন বুঝতো, আনন্দ আসলে টাকার জন্য এসব করেনা, ওর মনটাই অন্যরকম। খুব আন্তরিক, ভালো বন্ধু। তবে বিরক্তিকরও বটে, নিজে যা বোঝে তাই ঠিক, তার সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে। এ্যলেনের কোন বাধা নিষেধ কিংবা না, শুনতো না। এ্যলেন খুব করে অনুরোধ করেছিল, খাবার না দিতে, কিন্তু আনন্দ তা শুনতোনা, রেখে যেত দরজার সামনে।

সেই বেসমেন্টে এ্যলেন বেশিদিন থাকতে পারেনি, ঠান্ডার কারনে। হিটিং সিস্টেম বেসমেন্টে ঠিক মতো কাজ করতো না, তার উপর আবার এ্যলেনের ঠান্ডার সমস্যা, তাই দুমাস পরেই চলে যায় অন্য বাসায়।

বাসাটা আনন্দের বাসা আর এ্যলেনের কাজের জায়গা থেকে দশমিনিটের হাটা পথ তাই মাসে একবার অন্তত দেখা হতো কফি শপে, কিংবা এ্যলেন যেখানে কাজ করে। ওর কাজের জায়গার সবাই আনন্দকে খুব ভালো চেনে, ভালোও বাসে। আনন্দ যেন এক অজানা আকর্ষনের নাম, যেখানেই যায় সবাইকে সে আপন করে ফেলে তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে।

এ্যলেন কাজ করে একটা ছোট একটা ব্যক্তিমালিকানাধীন পারিবারিক রেস্টুডেন্টে, তবে এদের বারটা খুব জনপ্রিয়, সাথে নুডুলস্‌ও। তাই বিকেলদিকটায় বেশ ভীড় থাকে বিশেষ করে শুক্রবার সন্ধ্যায়। এ্যলেনকে এখানে বার টেন্ডার, সার্ভার থেকে শুরু করে সব কাজই করতে হয়। কেবল কুকের কাজ ছাড়া। মালিক কিংবা তার ছেলে ম্যানেজার, ক্যাশ সব দায়িত্ব পালন করে, স্ত্রীও একজন কুক। তাই ক্রেতা অথবা কর্মচারী সবার জন্যই পরিবেশটা বেশ ঘরোয়া, আন্তরিক ।

একবার আনন্দ এসেছিল, এ্যলেনের সাথে দেখা করতে। দোকানে খুব ভীড় ছিল কাষ্টমারের, সেদিন আবার দোকানে দুজন লোক আসেনি কাজে, তাই সামলানো ছিল অসম্ভব। কাজের চাপ এতো বেড়ে যায় যে ডিস ধোয়ার সময় না থাকায় একটা সময় সার্ভ করার জন্য কোন ডিস থাকেনা, আনন্দ বসে সবই দেখছিল এসব।

একটা সময় নিজেই ম্যানেজারকে বলে, দোকানের ভেতরে ঢোকে আনন্দ। ব্যাগটা পেছনের লান্চ টেবিলে রেখে নিজেই ধোয়া শুরু করে ডিস। ম্যনেজার কিছুটা আশ্চর্য হলেও, আপাদত বিপদের হাত থেকে বেচে যাওয়ার খুশিতে ছিল বেশি আত্বহারা । সেদিন রাতে, রেস্টুডেন্ট বন্ধ করা পর্যন্ত আনন্দ খুব সাহায্য করে সব কাজেই। তাই সব কাজ শেষ হবার পর ম্যনেজার সবাইকে নিয়ে একসাথে খাবারের প্রস্তাব দেয়, মূলত আনন্দে সম্মানে, সাথে বিয়ার ফ্রী। এই ঘটনার পর আনন্দ হয়ে যায়, সবার খুব বেশি কাছের মানুষ। এ্যলেনের সাথে দেখা করতে এলেও আনন্দ সময় কাটায় বাকি সবার সাথে। এ্লেনের মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগলেও, মানিয়ে নিয়েছে। আবার এটাও ঠিক আনন্দের এই আচরনটাই এ্যলেনের সবচেয়ে প্রিয়।

এ্যলেন এখানে কাজ করে, সবার সাথে ভালো সম্পর্ক কিন্তু কারোর সাথেই খাতির নেই। অথচ আনন্দের সাথে সবার এতো খাতির যে মাঝে মাঝেই এরা আনন্দকে বিশেষভাবে আসাতে বলে, আড্ডা দেবার জন্য। তখন কেবল ভদ্রতার কারনে এ্যলেনকে থাকতে বলে।

আবার আনন্দও যখন আসে, গল্প করে সবার সাথে। মনে রেখে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায়, সাথে আনে হাতে বানানো 'সমছা" কিংবা অন্য কোন খাবার সবার জন্য। ম্যনেজারও মনে করে দাওয়াত দেয় যে কোন আয়োজনে বিশেষভাবে।


সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:১৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। শেষ মুহূর্তে রাইসির হেলিকপ্টারে কী ঘটেছিল

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত খুব কমই জানা গেছে। এবার এ ঘটনার আরও কিছু তথ্য সামনে এনেছেন ইরানের প্রেসিডেন্টের চিফ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনারই মেরেছে এমপি আনারকে।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


ঝিনাইদহ-৪ আসনের সরকারদলীয় এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল তারই ছোটবেলার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন!

এই হত্যার পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের কিছু উল্টা পালটা চিন্তা !

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২২ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১০

১।
কলকাতা গিয়ে টুকরা টুকরা হল আমাদের এক সন্ত্রাসী এমপি, কলকাতা বলা চলে তার ২য় বাড়ি, জীবনে কতবার গিয়েছেন তার হিসাব কেহ বের করতে পারবে বলে মনে করি না, কলকাতার অলিগলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×