somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৎ সাহস

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রবাদ প্রবচনধর্মী গল্পগুলো সাধারণত উপদেশমূলক বা শিক্ষণীয় হয়ে থাকে। তবে ঐতিহাসিক সত্য হলো কালক্রমে প্রবাদ প্রবচনগুলোর আকার ছোটো হয়ে গেছে। এর কারণটা হলো প্রয়োজনীয় অংশটুকুই মানুষ মনে রেখেছে, বাকি অংশের প্রয়োজন মনে করেনি। এর বিভিন্ন কারণের কথা উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞগণ। আমরা সে বিষয়ে না গিয়ে বরং গল্পের দিকে নজর দেই।



আগেকার যুগে তো আজকালের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধাময় হোটেল কিংবা মুসাফিরখানার ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু বাণিজ্য ছিল, ব্যবসায়ী ছিল, মালামাল নিয়ে তাদের এক শহর থেকে অন্য শহরে, দূর দূরান্তে যাবার প্রয়োজন ছিল। দূরের মুসাফিরদের জন্যে তখন ছিল সরাইখানার ব্যবস্থা। ব্যবসায়ীরা এসব সরাইখানায় রাতের বেলা বিশ্রাম নিয়ে সকালে আবার রওনা দিতো গন্তব্যে। এরকম সরাইখানার মধ্যে দূর্গের মতো একটি সরাইখানা ছিল বেশ নামকরা। দূর্গের মতো বলার কারণ হলো দেয়ালগুলো ছিল বেশ উঁচু উঁচু। আর এতে প্রবেশের মূল দরোজা ছিল ইস্পাতের তৈরি মজবুত। কোনো চোরের পক্ষেই ওই দরোজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করার সাধ্য ছিল না। এ কারণে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তমনে এই সরাইখানায় বিশ্রাম নিতো।



সরাইখানার ভেতর এবং বাইরের পরিবেশ ছিল বেশ জাঁকজমকপূর্ণ। তিন চোর যুক্তি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা যে-কোনো ভাবেই হোক ভেতরে ঢুকবেই। চুরির পাশাপাশি তাদের লক্ষ্য ছিল এই প্রাসাদে যে চোর ঢুকতে পারবে না বলে একরকম রূপকথা ছড়ানো হয়েছে, সেটা ভেঙে দেওয়া। তিনচোর বহু চিন্তাভাবনা করে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলো মাটির অনেক নীচ দিয়ে একটা টানেল বানাবে যে টানেল সরাইখানার প্রতিরক্ষা প্রাচীরের নীচে দিয়ে ভেতরে গিয়ে শেষ হবে। প্রয়োজনীয় হাতিয়ার আর যন্ত্রপাতি নিয়ে তারা টানেল খুঁড়তে শুরু করে দিলো। অনেকদিন পর তারা টানেলের কাজ শেষ করলো সরাইখানার ভেতরের একটি কূপের মাঝখানে এসে। এরপর কোনো এক অন্ধকার রাতে চোরেরা নীরবে নিঃশব্দে টানেলের ভেতর দিয়ে এসে সরাইখানায় ঢুকে পড়লো এবং ব্যবসায়ীদের মালামাল সব চুরি করে টানেলের ভেতর দিয়েই আবার চলে গেল।



সকাল হতে না হতেই সরাইখানায় চুরির খবর বিদ্যুতের মতো ছড়িয়ে পড়লো। খবরটি শুনে গভর্নর দেরি না করে ঘোড়ায় চড়ে সরাইখানায় পৌঁছে গেল। তার বিশ্বাসই হচ্ছিল না-এতো মজবুত দেয়াল পেরিয়ে কিংবা লোহার দরোজা ভেঙে চোর ঢুকতে পারে সরাইখানায়। শাসকের পাইক পেয়াদারা ভালো করে পুরো সরাইখানা ঘুরে ফিরে দেখলো,কিন্তু কোত্থাও কোনো নাম নিশানাও দেখলো না। না কোনো সিঁদ কাটার চিহ্ন আছে না আছে কারো পায়ের ছাপ। গভর্নর বললো: ‘তাহলে নিশ্চয়ই এটা সরাইখানারই কারো কাজ হবে’। সরাইখানার ভেতরে হৈ হট্টগোল শুরু হয়ে গেল। দারোয়ানদেরকে ডেকে এনে লাথি ঘুষি মেরে কথা বের করতে চাইলো। কিন্তু কিছুতেই তারা বলতে পারলো না কে চুরি করেছে। চোরদের সাথে তাদের হাত থাকার বিষয়টিও বোঝা গেল না। এইফাঁকে চোরেরা কিন্তু মালামাল নিরাপদ স্থানে রেখে সরাইখানায় ফিরে এলো কী কাণ্ড ঘটছে তা দেখার জন্যে।



বলছিলাম, চোরেরা মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রেখে সরাইখানায় ফিরে এসেছিলো কাণ্ড দেখার জন্যে। এসেই তারা দেখলো দারোয়ানদের শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কষ্টে বেচারাদের চিৎকার আকাশে ছড়ালো। চোরদের সর্দার দারোয়ানদের কষ্ট দেখে মনে মনে বললো: ‘যারা কিছুই করে নি, তাদেরকে খামোখা এমন শাস্তি দেওয়া আল্লাহর গায়ে সইবে না’! এই বলে একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে চিৎকার করে বললো: ‘থামো’! সাথে সাথে সবার দৃষ্টি পড়ে গেল তার ওপর। চোরের সর্দার আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললো: ‘এদের সবাইকে ছেড়ে দাও! তারা নিদোর্ষ। আমিই চুরি করেছি’! গভর্নর তার দিকে তাকিয়ে বললো: ‘তুই চুরি করেছিস, কীভাবে’? চোরের সর্দার বললো: ‘আমি একটা টানেল তৈরি করেছি,যার সংযোগ কূপের সাথে’। সবার কূপের কাছে চলে গেল।



গভর্নর জিজ্ঞেস করলো: ‘ব্যবসায়ীদের মালামাল কোথায়, যদি সত্যি বলে থাকিস তাহলে বল্ চুরি করা মালগুলো কোথায়?' চোর বললো: ‘কূপের ভেতরে। যে কেউ গিয়ে দেখে আসতে পারে।’ কিন্তু কেউ যেতে সাহস করলো না। অবেশেষে চোরের সর্দারের পরামর্শে তার কোমরে শক্ত দড়ি বেঁধে দেওয়া হলো এবং তাকেই পাঠানো হলো কূপের ভেতর। চোর তো টানেল পর্যন্ত পৌঁছে কোমরের দড়ি খুলে দড়ির মাথায় বড়ো একটা পাথর বেঁধে টানেল পথে পালিয়ে গেল। তার সঙ্গীরাও আস্তে আস্তে পেছনে যেতে যেতে সরাইখানার সদর দরোজা দিয়ে বেরিয়ে গেল।গভর্নরসহ সরাইখানার ব্যবসায়ী মুসাফিররা অনেক সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করলো কিন্তু কূপের ভেতর পাড়ি জমানো চোরের কোনো খবরই হলো না।



সবাই পরামর্শ করলো, কী করা যায়..কী করা যায়...অবশেষে গভর্নরের আদেশে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে একজন সেপাই গেল কূপের ভেতর। সে টানেলের পথটি পেয়ে গেল এবং সেই পথ দিয়ে বের হয়ে সরাইখানার মূল দরোজায় এসে চিৎকার করে উঠলো। সবাই কূপের কাছেই জটলা পাকাচ্ছিল। চিৎকার শুনে সেপাইকে দেখে সবাই বুঝে গেল-‘চার সত্যিই বলেছে’ সরাইখানার সাথে বাইরে যাওয়া আসার জন্যে একটা পথ আছে। গভর্নর তাড়াতাড়ি দারোয়ানদেরকে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দিলো। গভর্নর কীসব ভাবতে ভাবতে আনমনেই কথা বলছিল। হঠাৎ এক ব্যবসায়ী মুসাফির-যার কিছু মাল চুরি হয়েছিল-চিৎকার করে বললো: ‘আমি আমার মালামাল ঐ সাহসী এবং বীরোচিত চোরকে দান করে দিলাম। আমার মালগুলো তারই, সেগুলো তার জন্যে হালাল করে দিলাম। কেননা ঐ চোর ছিল খুবই বুদ্ধিমান। এরকম একটা টানেল বানানো যে-সেই কথা নয়। এতো কঠোর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে এরকম একটা নিরাপদ পথ আবিষ্কার করা চাট্টিখানি কথা নয়। তারচেয়ে বড়ো কথা হলো: চোরটির সাহস এবং পৌরুষ। সে নিজেকে নিশ্চিত বিপদে ফেলে নিরীহ দারোয়ানদেরকে নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি দিয়েছে। চুরি একটা খারাপ কাজ, সন্দেহ নেই। কিন্তু কেউ যদি খারাপ কাজ করেও বসে, তারচেয়ে উত্তম হলো চোরটির মতো সাহসী এবং পৌরুষদীপ্ত হওয়া।’



এই ঘটনার পর থেকে কেউ কোনোরকম খারাপ কাজ করার পরও যদি এই চোরের সর্দারের মতো সাহসিকতার পরিচয় দেয়, তার ব্যাপারে ঐ চোরের প্রসঙ্গ টেনে বলে: ‘চোর হলেও সাহসী হও’।

(বি:দ্র: এই গল্পটি সম্পূর্ন কাল্পনিক, এতে কোন রকম রাজনৈতকতা, কাউকে ছোট করা, কোন কিছুই নাই। এটা সত্যের সাথের মিথ্যার ব্যবদান, চোর ও সত্যবাদী হতে পারে সে রকম একটা উদহরন মাত্র । এই গল্প পরে যদি কেউ ভাল কোন শিক্ষা পেয়ে থাকেন তবেই আমার এই কষ্ট সার্থক হলো বলে আমি মনে করবো। এখানে চোর তার সৎ সাহস দিয়ে নির্দোশ দারোয়ানকে বাচিয়ে দিয়ে গেল, সত্য সব সময়ই সত্য, সত্যকে সম্মান করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভুল শুধু ভুল নয়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৬

এক
লেখাটা একটি কৌতুক দিয়ে শুরু করি। ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে শফিপুর আনসার একাডেমিতে বিদ্রোহ হয়। ৪ ডিসেম্বর পুলিশ একাডেমিতে অভিযান চালায়। এতে চারজন আনসার সদস্য নিহত হয়েছিল। এটি ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। VF 3 Mini: মাত্র 60 মিনিটে 27 হাজার বুকিং!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪



আমার ব্যাক্তিগত গাড়ি নেই কিন্তু কর্মসূত্রে বেঞ্জ , ক্যাডিলাক ইত্যাদি ব্যাবহার করার সুযোগ পেয়েছি । তাতেই আমার সুখ । আজ এই গাড়িটির ছবি দেখেই ভাল লাগলো তাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ময়লাপোতার কমলালেবুর কেচ্ছা!! (রম্য)

লিখেছেন শেরজা তপন, ২১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৩


বাংলাদেশের বিশেষ এক বিভাগীয় শহরে ময়লাপোতা, গোবরচাকা, লবনচোরা, মাথাভাঙ্গা, সোনাডাঙ্গার মত চমৎকার সব নামের এলাকায় দারুণ সব সম্ভ্রান্ত পরিবারের বাস।
আমার এক বন্ধুর আদিনিবাস এমনই এক সম্ভ্রান্ত এলাকায় যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট: বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন

লিখেছেন করুণাধারা, ২১ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


বন্ধ হয়ে গেল সচলায়তন! view this link

সামহোয়্যারইনব্লগ থেকে কয়েকজন ব্লগার আলাদা হয়ে শুরু করেছিলেন সচলায়তন বা সংক্ষেপে সচল ব্লগ। এটি বন্ধ হবার মূল কারণ উল্লেখ করা হয়েছে দুটি:

১)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×