চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেশ খানিকটা বেড়েছে, যার কারণ হিসাবে বিরোধী দলের হরতালকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো।
Published : 10 Nov 2013, 10:28 AM
পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসওয়ারি) অক্টোবর মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে ৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল।
পরিসংসখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক গোলাম মোস্তফা কামাল রোববার সংবাদ সম্মেলন করে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ এ তথ্য প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, মূলত হরতালের প্রভাবেই সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে খাদ্যমূল্য বেড়েছে। তবে খাদ্য বহির্ভূত খাতে পণ্য ও সেবার মূল্য কিছুটা কমে আসায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে এসেছে।
সেপ্টেম্বরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি যেখানে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ছিল, অক্টোবরে তা ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা বলেন, “হরতালে পরিবহন চলে না। সে কারণে খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনে সমস্যা হয়। ভাড়াও দ্বিগুণ বেড়ে যায়। সাভার থেকে যে পণ্য ঢাকায় আনতে দুই হাজার টাকা খরচ হতো, হরতালে তা চার হাজার টাকা হয়ে যায়।”
এছাড়া নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে অনেকে ব্যবসায়ী হরতালের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে সাহস পান না বলেও উল্লেখ করেন মহাপরিচালক।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আগামীতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি আরো বাড়তে পারে বলেও তিনি আভাস দেন।
গত দুই সপ্তাহে তিন দিন করে মোট ছয় দিন হরতালের পর রোববার থেকে শুরু হওয়া টানা চারদিনের হরতালের মধ্যেই পরিসংসখ্যান ব্যুরোর এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
ব্যুরোর মহাপরিচালক বলেন, “যদি দেশে রাজনৈতিক পরিস্থতির উন্নতি না হয়, হরতাল চলতেই থাকে। তাহলে দেশে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যহত হবে। স্বাভাবিকভাবেই চাল, ডালসহ অন্যান্য খাদ্য পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।”
তিনি জানান, খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে। সেপ্টেম্বরের ৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ০২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে চাল, শাকসবজি, মসলা, দুধ ও তামাক জাতীয় দ্রব্যের মূল বৃদ্ধি হয়েছে।
২০১২ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত বছরের একই সময়ে এই হার ৬ দশমিক ৫১ শতাংশ ছিল।
চলতি ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অক্টোবরে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
অক্টোবরে গ্রামে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। আর গ্রামে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ থেকে কমে ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ হয়েছে।
অক্টোবরে শহর এলাকায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে হয়েছিল ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।
শহরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সেপ্টেম্বরের ৯ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে অক্টোবরে ৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ হয়েছে। আর খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ৬ শমিক ৪৪ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ হয়েছে।
গত অগাস্ট মাস থেকে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করছে পরিসংখ্যান ব্যুরো। এর আগে প্রায় এক বছর ১৯৯৫-৯৬ এবং ২০০৫-০৬ দুই ভিত্তিবছরের হিসাবেই মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করা হতো।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ব্যুরো অফিসে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।