somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেকনোলোজি হয়ে উঠেছে একবিংশ শতাব্দীর ফ্রাঙ্কেস্টাইন

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় বছর পঞ্চাশেক আগে পরম শ্রদ্ধেয় লেখক বিনয় ঘোষ বলেছিলেন একবিংশ শতাব্দীর মানুষ মাত্র গোটাতিনেক কাজ করবে । এক – খাওয়া , দুই – রমন , তিন – সংবাদপত্র পঠন । তিনি “ বিপ্লব মহানগর মধ্যবিত্ত ও মার্ক্সবাদ “ এবং “ বিজ্ঞাপন ও মন “ শিরোনামে দুটি অনবদ্য লেখা তার “ মেট্রোপলিটন মন মধ্যবিত্ত বিদ্রোহ “ বইতে লিখে গিয়েছিলেন । ২০১৩ সালে এসে তার উপরিউক্ত দুটি লেখার সূত্র ধরে তারই উক্তিটিকে সম্প্রসারিত করলে বলা যায় সেই তিনটি কাজের সাথে আরো একটি কাজ সমাজের যেই শ্রেণীটির ‘ জনগণ ‘ থেকে ‘ নাগরিক ‘ এ উত্তরণ ঘটেছে তারা করছে , করতে বাধ্য হচ্ছে । এই শ্রেণীটি এক সময় টেকনোলজি গেলা শুরু করেছিলো । বর্তমানে টেকনোলোজিই তাদের গিলছে , বেহুশ করছে । ছয় মাস আগে যেই খবর শুনে তারা আনন্দিত হয়েছিলো পরবর্তীতে সেই খবরই কোনভাবে ব্যাকফায়ার করে তাদের মর্মপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় , দাঁড়াচ্ছে । সবই টেকনোলোজিকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার ফলাফল । কিন্তু হাতের মুঠোতে থাকা এই টেকনোলজি বালির মতো । যতোই ধরতে যাওয়া হবে আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে ততো পিছলে গিয়ে মাটিতে গড়িয়ে পড়বে ।

ভোগপণ্যের প্রবল প্রাচুর্যতার এই যুগে অর্থনীতি , ‘ নাগরিক সমাজের ‘ জীবনযাপনের ধরণ দেখলে কার পক্ষে ঠাহর করা সম্ভব “ উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্ব “ এখনো কতটা ক্রিয়াশীল এবং প্রাসঙ্গিক ? ধরতে পারার কথা নয় । আপাতদৃষ্টিতে এফ্লুয়েন্ট এই শ্রেণীটিও এই তত্ত্বের ভিকটিমদের বাইরে নয় । তার সাথে প্রবল মুনাফাকেন্দ্রিক যুগের অনিবার্য পরিণতি ‘ এলিয়েনেশনের ‘ পরিণাম যা হয়েছে তা হলো এমনঃ আজকাল আলবেয়ার ক্যামুর ‘ আউটসাইডার ‘ উপন্যাসের নায়ক ‘ মারসোলকে ‘ খুঁজে নেওয়ার জন্য সুদূর আলবেনিয়াতে যেতে হবেনা । খোদ ঢাকা শহরেই অজস্র মারসোল ঘুরে বেড়ায় যারা নিস্পৃহ , উদাসীনকন্ঠে বলবে “ আমার মা গতপরশু মারা গেছেন । গতকালও হতে পারে । “ কিংবা তারা হতে পারে রবীন্দ্রনাথের ফটিক । সুস্থ – স্বাভাবিক অবস্থাতেই টেকনোলোজির ভিকটিম হয়ে তারা করুণ সুরে নিরন্তর বলে যেতে পারে “ এক বাও মেলেনা , দো বাও মেলেনা , মেলেনাআআআআ । “ খুবই প্রত্যাশিত । মানুষকে যন্ত্র বানিয়ে নিয়ে কার্যসমাধা করা যায় কিন্তু দিনের শেষে মানুষ যন্ত্র নয় । বুর্জোয়া সংবিধানের বিচারে যেই নাগরিক সত্তাকেই উপজীব্য করে মানুষ বিচার্য প্রকৃতপক্ষে সেই পরিচয়ও মানুষকে যথার্থভাবে সংজ্ঞায়িত করতে ব্যর্থ । মানুষ এমন হলে মানুষের দ্বারা শিল্প-সাহিত্যের চর্চা সম্ভব ছিলোনা , দর্শন চর্চা করা সম্ভব ছিলোনা । দিনকে দিন মানুষ সিনিকাল হচ্ছে , আপাদমস্তক ব্রুটাল হচ্ছে , নিষ্ঠুর হচ্ছে এর সবই মানুষ যে যন্ত্র নয় তার প্রমাণ । তথাকথিত সমাজবিজ্ঞানীরা , সমাজবিশ্লেষকরা ‘ সমাজের অবক্ষয় ‘ , ‘ নৈতিক অধঃপতন ‘ নামক কিছু অস্পষ্ট , বিমূর্ত ধরণের কথাবার্তা বলে বিষয়গুলোকে বাইপাস করার চেষ্টা করুক তাতে আখেরে কাজ হচ্ছেনা , কাজ হবেওনা । সমাজকে বিচ্ছিন্ন , ক্ষুদ্রভাবে দেখানোর এবং ব্যাখ্যা করার কারিগর মনোবিজ্ঞানীদের কৃত্রিম চাহিদা তৈরী করেও এসব সমস্যার সমাধান হবেনা । কারণ দিনের শেষে সেই ‘ এলিয়েনেশন ‘ এমনই এক জগদ্দল পাথরের মতো দৃশ্যমান – অদৃশ্যমান হয়ে আমাদের সবার কাঁধে চেপে আছে যা আমাদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরানো সিস্টেমের প্যারালাল হয়ে উঠেছে ।

বলা হচ্ছে টেকনোলোজি আমাদের হাতের মুঠোতে । কোথায় ? তাহলে আমাদের হাতের মুঠোতে থাকবার পরেও আমরা কেন জানতে পারিনা “ রাইট টু ইনফরমেশন “ আইনটি থেকে আমরা মানে রাজনৈতিক ক্ষমতাহীন জনগণ কিভাবে বঞ্চিত ? আমাদের কি কারণে মনে হয় এনজিও কোম্পানীর পণ্যের সহজে সঞ্চালনের জন্য নয় বরং জনগণের চলার পথকে সুগম করতে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে ? দুই দশক যাবত কাঁচা পড়ে থাকা রাস্তা পাকা করা হচ্ছে ? সরকার কোন রাষ্ট্রের সাথে যে কোন চুক্তি করলে তার সম্পর্কে প্রায়শই আমরা যথাযথভাবে জানতে পারিনা কেন ? কি যুক্তিতে আমরা এই ভেবে শান্তিতে বসে থাকতে পারি গরীবের বন্ধু ডঃ ঈউনূসের ক্ষুদ্র ঋণ ঝেটিয়ে দারিদ্র্যতা হটাচ্ছে ? যেমনভাবে ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী “ গরিবী হটাও “ বলতে প্রকৃতপক্ষে বুঝিয়েছিলেন “ গরীব হটাও “ তার সাথে এই ক্ষুদ্র ঋণের মটোর কোন পার্থক্য নেই এটা আমরা টেকনোলোজির সাহায্যেও কেন বুঝতে ব্যর্থ ? কি কারণে আমাদের মনে হয় র্যারব দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের নির্মূল করছে ? সন্ত্রাস দমন করছে ? তাহলে হরতালে পিকেটারদের জ্বালানো-পোড়ানোতে দেদারসে মানুষ মরছে কেন ? প্রশ্নগুলা উদয় হয়না কেন আমাদের মধ্যে ? আমরা ভিকটিম হইনা বলে ? আমরা ভিকটিম হবোনা এমন কোন নিশ্চয়তা আমরা কোন এক দৈবক্রমে পেয়েছি বলে ? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেয়ে গেলে কোনভাবেই কি মনে হবে টেকনোলোজি আমাদের হাতের মুঠোয় ? উত্তর হবে “ না । “ যদি প্রশ্ন করা হয় টেকনোলোজিই কি খোদ আমাদের গিলছে ? সৎ স্বীকারোক্তি হবে “ হ্যা । “

১৯৯০ দশকে বিশ্বায়ন নামক সেই তথাকথিত ফেনোমেনা আমাদের অর্থাৎ সাধারণ জনগণকে এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলো । তারও প্রায় আড়াই দশক পর এসে আমরা সেই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে হাঁসফাঁস করছি । একবিংশ শতাব্দীতে এসে আমরা দেখতে পারছি টেকনোলোজির চেয়ে বড় কোন কমোডিটি আর নেই । একইসাথে দেখতে পারছি সেই ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জকে পরাজিত করতে না পারলে আমাদের সম্ভাব্য পরিণতি গণহারে অসহায়ের মতো অস্ফুট কন্ঠে ফটিকের মতো বিড়বিড় করে যাওয়া “ এক বাও মেলেনা , দো বাও মেলেনা , মেলেনাআআআআ । “
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×