ভোরের শিশির আর হালকা কুয়াশা মনে করিয়ে দিচ্ছে শীত জেঁকে বসতে বেশি দেরি নেই। এখন দিনে গরম, রাতে শীত। আবহাওয়ার এ মিশ্র অবস্থায় ছড়িয়ে পড়ছে সর্দি-কাশি, টনসিল, চর্মরোগসহ নানান ব্যাধি।
Published : 13 Nov 2013, 07:18 AM
ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে নিজেকে মানিয়ে নিতে দরকার বাড়তি প্রস্তুতি। এ নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সিলেটের সরকারি তিব্বিয়া কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. মো. মহিব বুল্যাহ বলেন, “ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে শিশু ও প্রবীণদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেশি। তাই তাদের প্রতি আরও সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার।”
এই মৌসুমে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবহাওয়া থাকে গরম। ফ্যান চালিয়ে ঘর ঠাণ্ডা রাখতে হয়। সন্ধ্যার পর অল্প ঠাণ্ডা পড়ে। রাতে আর ভোরে বেড়ে যায়। তাই অনেকেই পাতলা কাঁথা বা চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমান।
মহিবের কথায়, “অনেক সময় কাঁথা গায়ে ঘুমানোর সময় গরম লাগে। এই কারণে রাতে পাখাও ছেড়ে রাখেন অনেকে। ফলে ভোরে আরও ঠাণ্ডা লাগে। তারপরও আলসেমি করে বিছানা থেকে উঠে ফ্যান বন্ধ করা হয় না। ফলাফল সর্দি, কাশিসহ আরও কিছু শারীরিক সমস্যা। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে রাতে ঘুমানো আগে ফ্যানের স্পিড কমিয়ে রাখুন।”
শিশুদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। একটু অসতর্কতার ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে নিউমোনিয়া পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
“শীতের সময় শিশুদের প্রস্রাবের বেগ বেশি থাকে। রাতে ঘুমের মধ্যে বিছানায় প্রস্রাব করে বেশিক্ষণ থাকলে তা থেকে সর্দি-কাশি ও চর্মরোগ হতে পারে। শিশুদের ঠাণ্ডা লাগলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।” বললেন মহিব।
ঠাণ্ডা আর গরমের এই মিশ্র আবহাওয়া সতর্ক থাকতে আরও কিছু দিক লক্ষ রাখতে বললেন তিনি।
শীতে উত্তর দিক থেকে ঠাণ্ডা বাতাস বইতে থাকে। এ সময় বিশেষ করে শিশুদের থাকার ঘরে উত্তরের জানালা বেশি সময় খোলা রাখা যাবে না। বড়দের মতো শিশুরা হঠাৎ আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না।
এ সময়ের সতর্কতা
* রাতের ঘুমানো আগে ফ্যানের স্পিড কমিয়ে রাখুন।
* বাস, ট্রেন বা লঞ্চে- দূর পথের যাত্রায় ঠাণ্ডা বাতাস থেকে যাতে সর্দি, কাশি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। দরকার হলে মাফলার ব্যবহার করুন।
* শিশুদের গায়ে যেন সরাসরি কুয়াশা না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* যারা মোটরসাইকেল চালান, ঘর থেকে বের হওয়ার আগে শীতের পোশাক, উইন্ডব্রেকার বা ভেস্ট সঙ্গে রাখুন। মাথায় হেলমেট তো থাকছেই।
* শীতে অপরিচ্ছন্ন থাকলে চর্মরোগ হতে পারে। নিয়মিত গোসল ও পরিচ্ছন্ন জামা কাপড় ব্যবহার করুন।
* যাদের ঠাণ্ডা জনিত সমস্যা বেশি, তারা সরাসরি ঠাণ্ডা বাতাসে না থাকলেই ভালো করবেন।
* ঘরে কাপড়ের স্যান্ডেল ব্যবহার করতে পারেন।
* সকালে শিশুদের শরীর অলিভ অয়েল অথবা সরিষার তেল দিয়ে মালিশ করুন। প্রবীণরাও শরীরে তেল ব্যবহার করতে পারেন।
* যাদের টনসিল, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি আছে তারা ঠাণ্ডা পানি, আইসক্রিম, বরফ ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।
* শিশুদের ফ্রিজ থেকে ঠাণ্ডা কোনো খাবার বা আইসক্রিম খাওয়াবেন না।
শরীর খারাপ করলে যা করবেন
ভাইরাস আক্রান্ত হয়েই এ সময় অধিকাংশ রোগব্যাধি হয়। ঠাণ্ডা লেগে জ্বর, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা হতে পারে। জ্বর সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। সর্দি পুরোপুরি ভালো হতে কারও কারও ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগতে পারে। শিশুদের কোনো সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই আবহাওয়াতে যে কারও গায়ে ঘামাছির মতো দানা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের চর্মরোগ সাধারণত অপরিচ্ছন্নতার কারণে হয়। শরীরে এই সমস্যা দেখা দিলে নিমপাতা সেদ্ধ করা পানিতে গোসল করতে পারেন। এছাড়া হাম হলে শুধু নিমপাতার ডাল ভালো করে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে গায়ে বারবার বুলিয়ে নিলেও উপশম হয়।
বাড়িতে নিমগাছ থাকলে মশার উপদ্রব কমবে। রোগব্যাধিও কম ছড়াবে।
শীতে আবহাওয়া শুষ্ক হওয়ায় ত্বক ফেটে যেতে পারে। এর থেকে রেহাই পেতে অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল ব্যবহার করতে পারেন।
টনসিলের সমস্যা থাকলে ঠাণ্ডা পানি ও খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। গোসলের সময় গায়ে গরম পানি দিলেও মাথায় দিন ঠান্ডা পানি। কারণ মস্তিষ্ক সবসময় উষ্ণ থাকে। মাথায় গরম পানি দিলে অসুস্থ শরীরে মেজাজ আরও খিটখিটে হতে পারে। শীতল পানি মেজাজ ঠাণ্ডা রাখে।
শীতকালীন রোগব্যাধিতে নিজে নিজে কোনো ওষুধ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মহিব বুল্যাহ। তিনি বলেন, “যাদের ট্যাবলেট বা সিরাপজাতীয় অষুধ খেলে সমস্যা হয় তারা সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট ও মাথাব্যাথায় প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে ইউনানি ওষুধ ব্যবহার করতে পারেন।”
এছাড়া টনসিলের ব্যাথা উপশমের জন্য বিভিন্ন রকম ইউনানি তেল বা ‘ম্যাসাজিং অয়েল’ আছে।
শরীরের যেসব জায়গার ত্বক ঢাকা যায় না যেমন- মুখমণ্ডল, হাতের কব্জিতে এই তেল লাগালে শীতের প্রকোপ কম অনুভূত হয়।
মাথা ব্যথা ও সর্দি কাশিতে এগুলো মালিশ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।