সাভারে শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

অব্যাহত শ্রমিক অসন্তোষে আশুলিয়ার সব কারখানায় বুধবার ছুটি ঘোষণার পর সাভার ও গাজীপুরে ফের শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষ হয়েছে।

গাজীপুর প্রতিনিধিসাভার ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2013, 05:13 AM
Updated : 13 Nov 2013, 08:28 AM

সাভারের হেমায়েতপুর এলাকায় বুধবার সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষে পুলিশ, শ্রমিক ও পথচারীসহ শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওই এলাকার প্রায় ২৫টি কারখানায় বুধবার ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে বলে শিল্প পুলিশ-১ সাভার অঞ্চলের উপ-পরিদর্শক (এসঅঅই) ওমর ফারুক জানান।

আর গাজীপুর সদর উপজেলার কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি এলায় সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত ৩৫ জন। এসব এলাকার ৪০টির মতো পোশাক কারখানায় এক দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

সাভার

মজুরি বোর্ড ঘোষিত ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির সিদ্ধান্ত মালিকপক্ষ মেনে না নেয়ায় গত কয়েকদিন ধরেই সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুরে শ্রমিক অসন্তোষ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। মঙ্গলবারও আশুলিয়ায় সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হওয়ার পর দেড়শতাধিক কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

এরপর বিকালে বৈঠক করে ‘নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে’ বুধবার আশুলিয়ার সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত জানায় গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

এই প্রেক্ষাপটে আশুলিয়ার সব কারখানা  সকাল থেকে বন্ধ থাকলেও সাভারের কারখানাগুলোতে কাজ শুরু হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হেমায়েতপুর এলাকার ব্যাবিলন গ্র্রুপের অবনী অ্যাপারেলস ও সুরভি অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা ন্যূনতম ৫ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি চলতি মাস থেকেই কার্যকর এবং সাভারের কারখানাগুলোতেও আশুলিয়ার মতো ছুটি ঘোষণার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

কারখানা কর্তৃপক্ষ এ সময় শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে উত্তেজিত শ্রমিকরা কারখানার জানালা দরজার কাচ, আসবাবপত্র ও নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষে ব্যাপক ভাংচুর চালায়।

পরে শ্রমিকরা হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর সড়কে এসে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে এবং সড়কের আশেপাশের বিভিন্ন কারখানায় ঢিল ছোড়ে।  কিছু শ্রমিক সড়কে যানবাহন ভাংচুরেরও চেষ্টা চালায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এ সময় পুলিশ বাধা দিতে গেলে কয়েক হাজার শ্রমিকের সঙ্গে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া।

পুলিশের লাঠি, রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাসের জবাবে বৃষ্টির মতো ঢিল ছুড়তে থাকে শ্রমিকরা।

প্রায় আধাঘণ্টা ধরে সংঘর্ষে পদ্মার মোড় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

শিল্প পুলিশের এসঅঅই ওমর ফারুক জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কমপক্ষে অর্ধশত রাউন্ড রাবার বুলেট ও কাঁদুনে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়েছে।

পুলিশ, পথচারীসহ শতাধিক লোক এ সময় আহত হন।

এই পরিস্থিতিতে হেমায়েতপুর এলাকার অবনী অ্যাপারেলস, সুরভি অ্যাপারেলস, আমান নিটিং, এইচ আর ফ্রেবিক্স, একেএইচ নিটিংসহ ২৫টি পোশাক কারখানায় একদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে ওমর ফারুক জানান।

এদিকে সাভারের উলাইল এলাকার প্রাইড গ্রুপের এইচ আর টেক্সটাইল ও আনলিমা ডাইং ইয়ার্ন কারখানা শ্রমিকরা একই দাবিতে কারখানা থেকে বেরিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে বিক্ষোভ দেখালে পুলিশ লাঠিপেটা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

পরে এ দুটি কারখানাতেও একদিনের ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।

গাজীপুর

গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম জানান, কাশিমপুর এলাকার ডিবিএল, মিতালী, আলিম, ডেল্টা ও জিএমএস এবং কোনাবাড়ি এলাকার অধিকাংশ পোশাক কারখানার শ্রমিকরা আগের কয়েক দিনের মতো বুধবারও সকাল থেকে বিক্ষোভ শুরু করে।

এক পর্যায়ে তারা কাশিমপুর-কোনাবাড়ি সড়ক ও ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবরোধ করলে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এ সময় শ্রমিকও পথচারীসহ ঘটনায় অন্তত ৩৫জন আহত হন।

এই পরিস্থিতিতে কাশিমপুর ও কোনাবাড়ি এলাকার অধিকাংশ কারখানায় বুধবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয় বলে পরিদর্শক নজরুল জানান।

জয়দেবপুর থানার ওসি এসএম কামরুজ্জামান জানান, গাজীপুর সদরের নলজানী ও তিন সড়ক এলাকার স্পেরো এপারেলস, কলম্বিয়া, ইন্ট্রামেক্স, মোহাম্মদীয়াসহ ৮-১০টি কারখানার শ্রমিকরা সকালে কারখানায় এসে কর্মবিরতি শুরু করে।

এক পর্যায়ে তারা পাশের ঢাকা-গাজীপুর সড়কে নেমে এলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেঁধে যায়।

পরে লাঠিপেটা করে ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয় বলে ওসি জানান।

এসব কারখানাতেও বুধবারের জন্য ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।