পোশাক শ্রমিকদের জন্য পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু।
Published : 14 Nov 2013, 01:28 PM
বৃহস্পতিবার শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকাই হবে।
“আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে এই নতুন মজুরি কার্যকর হবে। শ্রমিকরা জানুয়ারিতে এই বেতন পাবেন।”
এর সঙ্গে ‘ওভারটাইম’ হিসাবে অতিরিক্ত পারিশ্রমিক পাবেন শ্রমিকরা। আগামী ২৫ নভেম্বরের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ হবে।
শ্রম সচিব মিকাইল শিপার, মজুরি বোর্ডে শ্রমিক পক্ষের স্থায়ী প্রতিনিধি ফজলুর রহমান, শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনিসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলে মন্ত্রী জানান।
আগের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৫৩০০ টাকা মেনে নেয় তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা।
শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে শ্রম সচিব বলেন, মোট বেতন ৫ হাজার ৩০০ টাকা রাখা হলেও মূল বেতন (বেসিক) মজুরি বোর্ডের প্রস্তাব অনুযায়ী ৩ হাজার ২০০ টাকা থাকছে না। প্রধানমন্ত্রী পোশাক শিল্প মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে তা ৩ হাজার টাকা নির্ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন।
গত ৪ নভেম্বর তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণের এই প্রস্তাব চূড়ান্ত করে সরকার গঠিত মজুরি বোর্ড।
গার্মেন্ট মালিকরা এই মজুরি মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে সাভার, আশুলিয়া, গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়।
শ্রমমন্ত্রী জানান, নতুন মজুরি কাঠামোয় শ্রমিকদের ‘ইনক্রিমেন্টও’ থাকছে। ন্যূনতম মজুরির মূল বেতন ৩ হাজার টাকা ধরে প্রতি বছর তার ৫ শতাংশ হারে ‘ইনক্রিমেন্ট’ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ হবে।
শ্রমিক নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমি আপনাদের জোড় হাত করে বলছি, আপনারা কাজে যোগ দেন। এ শিল্প রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। কলকারখানা ভাংলে আপনারাই চাকরি হারাবেন।
“আমরা বিশ্ববাজার হারাচ্ছি। ৪০ লাখ শ্রমিক বেকার হলে তার দায়িত্ব কে নেবে?”
শুক্রবার থেকে সব কারখানায় আবার কাজ শুরু হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
“কোনো ধরনের শ্রমিক অসন্তোষ আমরা বরদাশত করব না। এ খাত নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আপনারা ষড়যন্ত্রের ক্রীড়ানক হবেন না।”
শ্রম সচিব মিকাইল শিপার বলেন, “একর্ড, এল্যায়েন্স, আইএলও যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাতে অনেকেই কারখানা চালু রাখতে পারবে না। আমরা চাই না কোনো কারখানা বন্ধ হোক, শ্রমিক বেকার হোক। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা জরুরি।”
তিনি বলেন, এখন থেকে কোনো শ্রমিক অন্যায় করলে শ্রম আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোনো মালিকের গাফিলতিতে খারাপ কিছু ঘটলেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সভায় শ্রমিক নেতারা মূল বেতন কমানোর বিষয়ে আপত্তি তোলেন। একইসঙ্গে গত ১ মে থেকে নতুন মজুরি কাঠামো বাস্তবায়নের দাবি জানান।
এ দুটি বিষয় নিয়ে শ্রমিকরা ‘ক্ষুদ্ধ’ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন কয়েকজন।
এ বিষয়ে শ্রমমন্ত্রী বলেন, “মালিকরা কোনোভাবেই ২ হাজার ৬০০ টাকার বেশি মূল বেতন দেয়ার পক্ষে ছিলেন না। এই ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে আমাদের অনেক বেগ পেতে হয়েছে। তবে আপনাদের দাবি আমরা পুনর্বিবেচনার চেষ্টা করব।”
সর্বশেষ ২০১০ সালে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়।
এর তিন বছরের মাথায় অভ্যন্তরীণ বাজার পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক চাপে মজুরি কাঠামো পুনর্নির্ধারণের উদ্যোগ নেয় সরকার।
এর অংশ হিসাবে চলতি বছরের জুনে সাবেক দায়রা জজ এ কে রায়কে চেয়ারম্যান করে ছয় সদস্যের মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়।
গত ৪ নভেম্বর বোর্ডের নবম সভায় মালিকপক্ষের বিরোধিতার মধ্যেই ভোটাভুটিতে ন্যূনতম মজুরি ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
ওইদিন মজুরি বোর্ডের প্রস্তাবে ৩ হাজার ২০০ টাকা মূল বেতনের সঙ্গে ১ হাজার ২৮০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ৩২০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, যাতায়াত ভাতা ২০০ টাকা এবং খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৩০০ টাকা ধরা হয়।
তবে শ্রম মন্ত্রণালয় যে ন্যূনতম কাঠামো চূড়ান্ত করছে, তাতে ৩ হাজার টাকা মূল বেতন ধরে ১ হাজার ২০০ টাকা বাড়ি ভাড়া, ২৫০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ২০০ টাকা যাতায়াত ভাতা এবং খাদ্য ভর্তুকি বাবদ ৬৫০ টাকা ধরা হয়েছে।