somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পালিয়ে যাচ্ছেন, মিস্টার?

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-বলেন স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
-আপনি কি জানেন এই মুহূর্তে আপনি অনেক বড়ো একটা নিয়ম ভেঙ্গেছেন?
-স্যরি স্যার, আপনি কি বলছেন ঠিক বুঝতে পারছি না ।
-আপনাদের নিয়ম বলে, এখানে ফোন দিলে শুরুতে আপনারা নাম বলেন।
কিন্তু আপনি সেটা করেন নি ।
-স্যরি স্যার । গ্রাহকের এতো ফোন আসে মাঝে মাঝে মাথা ঠিক ভাবে কাজ করে না ।
-আপনি কিন্তু এখনো আপনার নাম বলেন নি ।
-নুসরাত জাহান বলছি। এবার বলেন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
-মাথার মাঝে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, জিজ্ঞাস করবো?
-জ্বি অবশ্যই স্যার!
-আপনাদের এখানে কি শুধু সমস্যা নিয়েই কল করা যায়,
এমনিতে ফোন দেওয়ার কি কোনো নিয়ম নেই ?
- স্যরি স্যার, আমাদের এখানে গ্রাহকের সমস্যা Solve করার জন্যই বসানো হয়ছে ।
-জ্বি বুঝলাম ।
-আপনার কোনো সমস্যা কিংবা সেবা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞাস করতে পারেন ।
-আসলে ঐ মুহূর্তে কথা বলার মতো কাউকে খুজে পাচ্ছিলাম না । তাই আপনাদের এখানে ফোন দিয়ে বসলাম ।
-স্যরি স্যার । এটা এমনিতে গল্প করার জায়গা নয় ।
-আপনি কেমন আছেন সেটাও কি জিজ্ঞাস করা যাবে না?
-জ্বি ভালো, আপনিও ভালো থাকুন স্যার । এয়ারটেলের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্যক ধন্যবাদ ।

ঠিং ঠিং শব্দে লাইনটা কেটে গেল ।
আমি স্হির দৃষ্টিতে ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছি । এই মেয়ের কন্ঠ স্বর টা অদ্ভূত মায়ায় জড়ানো ।
কাস্টমার কেয়ার গুলোতে যে কোকিল কন্ঠি মেয়েদের বসানো হয় এটা আরো একবার প্রমাণিত ।

মস্তিষ্ক স্বাভাবিক কাজ করছে না । মস্তিষ্ক বলছে কোকিল কন্ঠির সাথে আরো কথা বলা দরকার ।

জানি এখন আবার ফোন দিলে নুসরাত জাহানকে পাওয়া যাবে না ।
তারপরও নেশার ঘোরে আবার ফোন দিলাম,

-আমি রাসেল মাহমুদ । বলেন স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

ফোনের লাল বাটন চেপে লাইনটা কেটে দিলাম । কারণ আমার এখন নুসরাত জাহানকে দরকার । কোনো রাসেল মাহমুদকে না ।

আবারো ফোন দিলাম ।
এবার যিনি ধরলেন উনিও নুসরাত জাহান নন,
ফারজানা তিথি ।


বইয়ে রবার্ট ব্রুসের গল্প পড়েছিলাম । উনি সাত বারের চেষ্টায় রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন ।কিন্তু আমার আট বারের চেষ্টাও ব্যর্থ ।

আশা ছেড়ে দিয়ে নয় বারের মতো ফোন দিলাম ।

-আমি নুসরাত জাহান বলছি । বলেন স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

বুকের মাঝে তিনবার ফুঁ দিলাম ।
যাই হোক নুসরাত জাহানকে পাওয়া গেছে ।

-জ্বি স্যার বলেন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
-কিছুক্ষণ আগে একটা ছেলে আপনাকে ফোন দিয়েছিল কোনো প্রয়োজন ছাড়াই, আপনার মনে আছে?
-আপনি কি বলছেন স্যার বুঝতে পারছি না ।
-আপনার বুঝতে হবে না । আপনি শুধু জেনে রাখেন আপনার কন্ঠস্বরের আমি প্রেমে পড়ে গেছি ।
-আপনার হয়তো মানসিক সমস্যা আছে । ভালো ডাক্তার দেখে স্যার ট্রিটমেন্ট করান ।
-আমার ধারনা কি জানেন, পৃথিবীতে যে সমস্ত মানুষ সবচেয়ে সুন্দর কন্ঠ নিয়ে জন্মেছে তার মাঝে হয়তো আপনিও একজন ।
-আপনি কিন্তু এবার খুব বাড়াবাড়ি করছেন । জানেন আপনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়া হতে পারে?
-যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন । তবে আমি এতো সুন্দর কন্ঠস্বর এর আগে শুনি নি ।

ও পাশ থেকে কোনো কথা আসছে না ।
ফোন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি লাইন টা কেটে দেওয়া হয়েছে ।

আমি আয়নার সামনে গিয়ে দাড়লাম ।
অবাক চোখে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম,
হঠাত্‍ এমন ছোটো লোকের মতো আচরন করছি কেনো???

২.
রাত বারোটা । রিং আসার শব্দে জেগে উঠলাম ।
অচেনা নাম্বার । ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করলাম ।

-আমি নুসরাত জাহান। অবাক হলেন পারসোনাল নাম্বার থেকে ফোন দিলাম কেনো?
-হুম অবাক হয়েছি । আর এতো বেশি অবাক এই জীবনে একবারও হয়নি ।
-আমি চাইলে কিন্তু আপনার নাম্বার টা নষ্ট করে দিতে পারতাম ।
- তা করলেন না কেনো?
-কিছু কিছু ব্যাপার আছে তা ব্যাখা না দেওয়াই ভালো ।
-জ্বি ব্যাখা লাগবে না । আমার ধারণা মতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কন্ঠস্বরের মেয়েটি আমাকে ফোন দিয়েছে এটাই আমার সবচেয়ে বড়ো ব্যাখা ।
-আপনি কখনো ভেবেছিলেন আমি আপনাকে ফোন দিবো?
- ভুল করেও ভাবিনি । কারণ আপনাদের ফোন দেওয়ার ব্যাপার টা নিরানব্বই ভাগ মানুষের সাথেই ঘটে না ।
-আপনার কি ধারণা আপনি আমার কন্ঠস্বর সুন্দর বলেছেন, তাই আপনাকে ফোন দিয়েছি ?
- মেয়েদের হাসি, কন্ঠস্বর, চোখ সুন্দর বললে সব মেয়েরাই খুশি হয় ।
তবে আপনি যে খুশি হয়ে ফোন দেন নি এটা নিশ্চিত ।
-কিভাবে নিশ্চিত?
-থাক, কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা ব্যাখা না দেওয়াই ভালো ।
- আমার সাথে সামনা সামনি দেখা করার মতো সাহস আছে আপনার?
- পাবলিকের হাত মার খাওয়াবেন নাকি চৌদ্দ শিখের ভাত খাওয়াবেন?
-সেটা হলে তো অনেক আগেই করতে পারতাম ।
-আপনি কি জানেন আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি ।
ব্যাপার টাকে "প্রথম সংলাপেই প্রেম" বলতে পারেন ।
হাহাহা:-P


৩.
মনে প্রচুর সাহস সষ্ণয় করে নুসরাত জাহানের দেওয়া ঠিকানা মতো একটা চার তালা ফ্লাটের সামনে এসে দাঁড়লাম ।

দুই তালার করিডোর থেকে একটা দশ বারো বছরের ছেলে হাতের ইশারায় ডাকছে ।

আমি রুমের ভেতর সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছি ।
আমার পাশাপাশি উইল চেয়ারে একটা মেয়ে বসে আছে ।

-চা খাবেন?
-আপনিই কি নুসরাত জাহান?
-কন্ঠস্বর শুনে কি মনে হচ্ছে না ?
-আপনার এই অবস্হা কেমন করে?
-তার কারণ জানানোর জন্য আপনাকে এখানে আনা হয়নি ।
-তবে কেনো আনা হয়েছে?
-সুন্দর কন্ঠস্বরের মেয়েটি যে চেয়ারবন্দি সেই সত্য টার মুখোমুখি দাড় করানোর জন্য ।
আপনি যখন হেল্প লাইনে আবল তাবল বকছিলেন,
তখনি ভাবলাম আপনাদের মতো মানুষের কিছু নির্মম সত্যের মুখোমুখি করানো খুবই দরকার ।
আপনি এখন যেতে পারেন!!

আমি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে বসে রইলাম ।
কয়েকটা মিনিট আমাদের কে অদ্ভূত নীরবতা গ্রাস করল ।

নিষ্টুর সত্যের মুখোমুখি বেশিক্ষণ বসে থাকার ক্ষমতা হয়তো আমাকে দেওয়া হয়নি ।
আমি শব্দহীন পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি ।

পিছন থেকে অসম্ভব সুন্দর কন্ঠ নিয়ে জন্ম নেওয়া মেয়েটি বলে উঠল,
-পালিয়ে যাচ্ছেন, মিস্টার???

"নিঝুম দ্বীপ #থেকে অবুঝ অরণ্য"
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×