somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলাম ও মানবতার প্রশ্নে ফরহাদ মজহারের অবস্থান ঘোলাটে

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি দীর্ঘদিন ধরেই জনাব ফরহাদ মজহার সম্পর্কে সচেতন। তার স্বতন্ত্র চিন্তা, লেখার আলাদা স্টাইল খারাপ না। ডিগ্রি গুরুত্বপূর্ণ নয়। স্রোতের বিপরীতে চলার সাহস প্রশংসার্হ। তবে বস্তুবাদিতার সঙ্গে ভাববাদিতার সমন্বয় তিনি ঘটাতে পারেননি। তা সত্ত্বেও ব্যক্তিগত জীবনে তার ভাববাদের চর্চা সম্ভবত ভাববাদের প্রতি মানবিক আত্মার সহজাত আকর্ষণ, অথবা ভণ্ডামী। আরেকটি ব্যাপার, তিনি একজন ভিন্নধারার সমাজতন্ত্রী, মার্ক্স-লেনিনের অন্ধ অনুসারী। ধর্মের প্রতি তার গুরুদের ‘উদারতা’ প্রমাণে তিনি সিদ্ধহস্ত। তবে ইসলাম, আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি এ পর্যন্ত তিনি যে অভিযোগ তুলেছেন ও কটাক্ষ করেছেন- কখনো সূক্ষ্ম, আবার কখনো স্থুল, আলেমদের পক্ষ থেকে তাকে জবাবদিহিতা ও প্রশ্নের মুখোমুখি করা উচিত। ইদানিং তার একটা কবিতা পড়েছি... আমার প্রতিবাদের ভাষা নেই। আর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে তার লিভ টুগেদার, হস্তমৈথুন মতবাদ...

ইদানিং ফরহাদ মজহারের রাজনৈতিক বক্তব্যে অনেকেই বিভ্রান্ত। কেউ কেউ আস্তিকতার আবরণে নাস্তিকতা লালন করেন যা বিশেষ দূরবীন ছাড়া দেখা সম্ভব হয় না, নাপাক ও শিরক-কুফরে ডুবে থেকেও তারা ধর্মের ‘ব্যাখ্যা’ করতে চান। জনাব মজহার অবশ্য বলেছেন, ‘ভিন্নমত পেলে অবশ্য আমি ভিন্নভাবে ভাবব। কারও জানা থাকলে আমাকে জানাবেন। কৃতজ্ঞ থাকব।’ তবে এখানে অনেক প্রশ্ন আছে। কথার কথা অনেকেই এমনটা বলে থাকেন, বাস্তবতার সঙ্গে যার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক থাকে না। ভিন্নমত অনুসন্ধানের বাস্তবতা কি? জ্ঞান কাউকে অনুসন্ধান করে না, বরং জ্ঞানকেই অনুসন্ধান করে নিতে হয়। তিনি মার্ক্স-এঙ্গেলস-লেনিনকে ধর্মের পক্ষের লোক ‘হিশাবে’ হাজির করেন। বাংলাদেশে তার প্রচুর অনুসারী আছে।

আমি এক অনুসারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন কথা বলেছিলাম। উপলব্ধি করতে চেষ্টা করেছি তাদের আসল সমস্যাটা কোথায়। ফরহাদ মজহারের ‘মোকাবিলা’ বইটি পড়েছি। তার ভাষায়, ‘ধর্মের’ সঙ্গে মোকাবিলা। অন্যকথায় ‘ধর্মতত্ত্বের’ সঙ্গে মোকাবিলা। আমার একটি কাজ হবে তাদের সঙ্গে ‘মোকাবিলা’। এ ধরনের বই আমাদের শ্রেণীর কেউ সাধারণত পড়েন না। পড়ার প্রয়োজনও নেই, যদি ধর্মীয় আলেমদের পক্ষ থেকে এসবের যথাযথ জবাব বা এ শ্রেণীর পাল্টা শক্তিশালী লিখনি থাকে। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখনই, যখন উলামাগণ এগুলো থেকে উদাসীন থাকেন। এই সুযোগে মার্ক্সবাদ, ভাববাদ, কোয়ান্টাম মেথড জাতীয় থিওরিগুলো যুবসমাজকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করে। এসব থিওরির দ্বারা সংশয়ের নিরসন না ঘটে বরং নতুনভাবে সংশয় সৃষ্টি হয় যুবসমাজের মনে। যার পরিণতি অতি ভয়াবহ এবং শীঘ্রই সমাজে এর কুপ্রভাব পড়ে। আমাদের সমাজেও অনেক আগে থেকেই পড়তে শুরু করেছে। চিন্তাশীলগণ যদি এদিকে নজর না দেন তাহলে পরবর্তীতে তারা সমাজে যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে, রাষ্ট্র ক্ষমতা পেলে বিরোধী মত-পথের লোকদের উপর স্টিম রোলার চালাবে তা প্রতিহত করতে পারবেন না।

এত সূক্ষ্ম নাস্তিকতা! এর চেয়ে সরাসরি নাস্তিকতা অনেক ভালো। অনেকদিন আগে আমি তাকে একটি ইমেইল করেছিলাম যার একটা অংশ ছিল এ রকম, “শ্রদ্ধেয় জনাব ফরহাদ মজহার, আপনার অমুক বইটি অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। ভালো লাগল আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতা দেখে। তবে বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি লাইনের সঙ্গেই আমার দ্বিমত রয়েছে। কিন্তু যেহেতু লেখার জবাব কেবল লেখা দিয়েই পুরোপুরি দেয়া যায় না (অর্থাৎ কাজ-কর্মে দিতে হয়), তাই আপাতত লিখতে উদ্গ্রীব নই। ধর্ম নিয়ে আমার আগেও পড়াশুনা আছে, এখনো পড়ছি। সঙ্গে যোগ করেছি মার্ক্সবাদ ও সমাজতন্ত্র। বছরখানেক পর ‘মোকাবিলার মোকাবিলা’ লেখার ইচ্ছে আছে। ... আপনার সঙ্গে বসতে চাই।”

কোনো উত্তর পাইনি।

আমি খুব ভালো করেই জানি, 'মোকাবিলায়' তিনি যা লিখেছেন, ধর্ম, আল্লাহ, নবী, মুজেযার উপর ‘বুদ্ধি’ দ্বারা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, এর জবাব না পাওয়া পর্যন্ত সাধারণত তিনি সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ফিরে আসতে পারেন না। আর বর্তমানে তার ওসব প্রশ্নগুলোর জবাব কোথাও তেমন একটা দেখাও যায় না। সুতরাং তার মত পাল্টানোর প্রশ্নই আসে না, যদি না ‘অলৌকিক’ কিছু ঘটে। তিনি ইদানিং পত্রিকায় যেসব রাজনৈতিক বক্তব্য ঝাড়ছেন, অনেকেই জানেন না তার মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গি কী। জানলে হয়তো কিছুটা হলেও বুঝতে পারতেন তার সেই লেখা ও এই লেখা একই সূত্রে গাঁথা। আমি তার ধর্মের সঙ্গে সেই ‘মোকাবিলা’ আর হালে ‘সহাবস্থান’ “এক পর্যায়ে ধরে ফেলতে পারি”। যাহোক, ব্যস্ততা কাটিয়ে ‘মোকাবিলার মোকাবিলা’ লিখা একটু সময়সাপেক্ষ হলেও সামনাসামনি বসার চ্যালেঞ্জ এনিটাইম।
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×