somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হরতালের নয় প্রতিবাদের ভাষা ও পদ্ধতি দূষণের প্রতিবাদ জানাই!

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ ভোর ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নির্মাণ শ্রমিকেরা সর্বাধিক ১০ ঘন্টা কর্ম দিবসের দাবিতে ১৮২৭ সালে আমেরিকার ফিলাডলফিয়ায় ধর্মঘট পালন করেন। এটিকেই প্রথম হরতাল বলে ধারনা করা হয় । বঙ্গভঙ্গ রোধে ১৯০৫ সালের ৭ আগষ্ট বয়কট কর্মসূচি পালন করা হয় সেটিই উপমহাদেশের প্রথম হরতাল বলে বিবেচিত। ১৯১৯ এর ৬ এপ্রিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী অহিংস হরতালের ডাক দেন। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্হানে প্রথম হরতাল পালিত হয় ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে । ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের এই সময় ৬ দফা,১১ দফা,শিক্ষা আন্দোলন,৬৯’ এর গণঅভ্যুন্থান,৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ইত্যাদি কর্মকান্ডে সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এক হয়ে হরতাল পালন করেছিল। হরতাল অধিকার আদায়ের স্বতঃফুর্ত আন্দোলনের এক পদ্ধতি, যা পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার মত এই ভূখন্ডের মানুষেরাও প্রয়োগ করেছে তাদের নানা প্রয়োজনে। চলমান সময়েও বিশ্বের সব দেশে হরতাল,ধর্মঘট অধিকার আদায়ের পথ ।ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখে ১১ টি শ্রমিক সংগঠনের ডাকে নিত্য পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে হয়ে গেলো তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ৪৮ ঘন্টার ভারত বনধ!

বর্তমান বাংলাদেশে গণ-মানুষের সমস্ত অধিকার কুক্ষিগত করে রেখেছে দু-তিনটি সম্প্রদায় আর এই ক্ষমতালোভী সম্প্রদায়ের ভেতর ক্ষমতার দখলের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে "হরতাল"! তথাকথিক গণতন্ত্রের নাম ভাঙ্গিয়ে হরতাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করার পর, ক্ষমতাসীনরা পালাক্রমে হরতালের বিরুদ্ধে জনমত তৈরির হাস্যকর চেষ্টা চালায়! ক্ষমতাসীনরা তাদের শাসনামল বেহেস্তসম দাবি করে হরতালকে চরম ঘৃণ্য ও অনাকাঙ্খিত হিসেবে চিহ্নিত করে, প্রচার করে! কোন প্রকার প্রতিবাদ,প্রতিরোধ, দাবি ইত্যাদি উত্থাপন যেনও বেহেস্তের শান্তি ভঙ্গ করার মত অপরাধ!
সাম্প্রতিক কালের হরতালের চরিত্র দেখে বুঝা যায় এটি আর মানুষের অধিকার আদায়ের পন্থা নয়, এটি মানুষ খুন করার পদ্ধতি।বাংলাদেশে হরতালের সমকালীন নাম সন্ত্রাস! যেটির আতঙ্ক ক্ষমতাসীনদের নয় বরং গণ-মানুষের জীবনকে করে তুলেছে দুর্বিসহ। হরতালের নামে যে প্রক্রিয়ায় মানুষ হত্যা করা হচ্ছে তা পৈচাশিকতা ও বর্বরতার নৃসংশতম উদাহারন এবং মানুষের অধিকার আদায়ের এত কাল ধরে প্রচলিত অহিংস ধারনা "হরতালের" বিলুপ্তি! এখন হরতাল মানে ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতালোভীদের হত্যা উৎসব!
বাংলাদেশের মানুষেরা এখনো তাদের সকল অধিকার অর্জন করতে পারেনি, মৌলিক অধিকার থেকে মানুষ বঞ্চিত। মানুষে মানুষে সমতা আসেনি। লক্ষ লক্ষ শ্রমিক অধিকারহীন হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। কোটি নারী দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে জীবন পার করছে। এ দেশে ক্ষমতালোভীদের এক বলয় গড়ে উঠেছে যে বলয় ভাঙ্গতে সময়ের প্রয়োজন হবে, হবে আবিরাম আন্দোলন সংগ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু ক্ষমতালোভীরা মানুষের অধিকার আদায়ের সব পথ বন্ধ করে দিতে চায়, নষ্ঠ করে দিতে চায় গণতান্ত্রিক সব পথ!
বর্তমানে বিএনপি হরতাল করছে ক্ষমতার জন্য আর যুদ্ধাপরাধী দল জামাত হরতাল করছে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর জন্য। জামাত কখনোই গণতান্ত্রিক দল না, গণতন্ত্রে তাদের বিশ্বাস নাই জনগণের কোন প্রকার ক্ষমতার প্রতিই তাদের বিশ্বাস নাই। জামাতের এটি জীবন মরণ লড়াই ।অগ্নি-পূজারীদের তারা ঘৃণা করলেও হাজার বছর ধরে অগ্নিই তাদের প্রধান অস্ত্র । তারা ৭১ এ গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিতে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে আর সমকালে শুরু করেছে প্রকাশ্যে মানুষ পুড়ানোর মহড়া! তারা পৈচাশিকতার চুড়ান্ত চরিত্র প্রকাশ করছে। ৯০ তে গণতান্ত্রিক সুরত পাওয়া বিএনপি জামাতের চরিত্রে বিলীন হয়ে অর্জন করছে মানুষ পুড়ানোর খেতাব এবং যুগপৎ জামাতের অগণতান্ত্রিক আচরণে সামিল হয়ে "হরতাল" কে করছে চূড়ান্ত কুলষিত! সরকারও "হরতাল" কে শ্বাসরুদ্ধ করে মেরে ফেলার সব আয়োজন শেষ করেছে, মানুষ পথে নামলেই তাদের স্বর্গাবসানের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে, গুলি করে দিচ্ছে সরাসরি!
হরতালের অর্থনৈতিক ও ভাবগত ক্ষতি অনেক এ বিষয়ে কোন বিতর্ক নাই। রাজনীতিকেরা কেবল ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার সময়েই হরতালের ক্ষতি দেখতে পায়, আর ব্যবসায়ী সমাজ রাগতস্বরেই হরতালের সমালোচনা করে অবিরাম ! যখন লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের অধিকার হরণের মধ্যদিয়ে মানব সমাজ কে দুর্বল করে দেওয়া হয়। দুর্বল জীবনমান ব্যক্তির জীবনে ও রাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, সৃষ্টি হয় মানব দাস! এ ক্ষতি অপূরণীয়! জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের অমানবিকতাই হরতালের মত পরিবেশ সৃষ্টি করে, রাষ্ট্রের ব্যর্থতাই বিভিন্ন আন্দোলনের উৎস! বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর নানা দেশে বিভিন্ন আন্দোলন প্রতিবাদের পথ ধরে মানুষের স্বাধীনতা সহ বিভিন্ন সত্য চাওয়া প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এইসব চাওয়ার মূল্য অপরিসীম!
হরতালের ভুক্তভোগী এদেশের সবাই কিন্তু দেশের শাসককুলের চরিত্র আমাদের জানিয়ে দিয়েছে আন্দোলন ছাড়া মানুষের কোন অধিকারই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। সেকারনে "হরতাল" নয় হরতালের নৃশংসতার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করি। চলমান হরতাল সকল বর্বরতাকে হার মানিয়েছে,হরতালে পৈচাশিকতা বন্ধ হোক, মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মারা বন্ধ হোক, মানুষের প্রতি অত্যাচার বন্ধ হোক। হরতালের গণতান্ত্রিক অহিংস চরিত্র ফিরে আসুক!
হরতালের নয় মানুষের প্রতিবাদের ভাষা ও পদ্ধতি দূষণের প্রতিবাদ জানাই! এমন এক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হোক যেখানে মানুষকে তার অধিকারের জন্য পথে নামতে হবে না, "হরতাল" করতে হবে না আর।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×