বিশ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায় ঘোষণা করছে আদালত।
Published : 17 Nov 2013, 11:10 AM
তারেকের অনুপস্থিতিতেই ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন রোববার বেলা ১২টার ঠিক আগে এ মামলার রায় পড়া শুরু করেন।
মামলা দায়ের থেকে শুরু করে পুরো বিচার প্রক্রিয়াতেই অনুপস্থিত ছিলেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে রয়েছেন।
তার তার ব্যবসায়িক অংশীদর মামুন কাঠগড়ায় উপস্থিত আছেন।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামুনকে কারাগার থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে বিচারকক্ষে আইনজীবীদর আসনে বসানো হয়।
অফ হোয়াইট সুতির শার্টে মামুনকে এ সময় চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখা যায়।
আসামিদের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মো. জাহেদুল ইসলাম ও খায়রুল ইসলাম লিটনও আদালতে উপস্থিত রয়েছেন।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, আবদুল্লাহ আবু, লতিফুল ইসলাম বেণু ও হুমায়ুন খান পাঠান আদালতে রয়েছেন।
বিচার কক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নিরাপত্তা দিতে তাদের পেছনে অবস্থান নিয়ে আছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য। সাধারণত এজলাসে এমন ব্যবস্থা দেখা যায় না।
রায়কে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে আদালত পাড়া ও আশেপাশের এলাকাতেও।
তারেক ও তার বন্ধু মামুনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৬ জুলাই এই মামলার বিচার শুরু হয়। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলাটি দায়ের হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর। গত বছরের জুলাই মাসে অভিযোগপত্র আদালতে দেয়া হয়।
চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর বাদি ও আসামি পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষের পর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়, যা শেষ হয় বৃহস্পতিবার।
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, টঙ্গীতে প্রস্তাবিত ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ নির্মাণ কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন মামুন।
সিঙ্গাপুরে লেনদেনের পর সেখানকার সিটি ব্যাংকে মামুনের হিসাবে জমা রাখা এই অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা তারেক খরচ করেন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল মামলার শুনানিতে বলেন, “তারেকের সঙ্গে বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে মামুন অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে বাংলাদেশের ব্যাংককে ফাঁকি দিয়ে অর্থ পাচার করে দেন।”
২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পন্থায় ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করা হয় বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
ওই সময় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, মা প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তখন হাওয়া ভবন ‘খুলে লুটপাট’ চালিয়েছিল তারেক।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, বনানীর নির্মাণ কনস্ট্রাকশন কোম্পানির মালিক খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে মামুন ওই অর্থ নিয়েছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তারেকের বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা হলেও এই প্রথম কোনো মামলার নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে।
জরুরি অবস্থা জারির পর ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিন নিয়ে পরের বছরের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান।
স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তখন থেকে সেখানেই রয়েছেন তারেক। সম্প্রতি সেখানে দলীয় কয়েকটি অনুষ্ঠানেও তাকে অংশ নিতে দেখা গেছে।