somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প: চাচা।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেরাণীগঞ্জে বসবাসকারী শতকরা প্রায় আশি ভাগ লোকেরই নৌকায় করে বুড়িগঙ্গা নদী পারাপারের অভিজ্ঞতা আছে। আপনাদের মধ্যে যাদের বৈঠা চালিত ছোট্ট নৌকায় চড়ার অভিজ্ঞতা আছে তারা অবশ্যই জানেন যে জীবন বাজী রেখে এই কাজটি করতে হয় । ছোট্ট এই নৌকাগুলো সামান্য ঢেউয়ের তালে এমন উত্তাল নিত্য আরম্ভ করে যে মনে হয় এখনই নৌকা থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে যাব। তাছাড়া সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের দৈতাকার লঞ্চ থেকে সৃষ্ট ঢেউয়ের ধাক্কায় কিংবা সরাসরি ধাক্কায় প্রতিদিনই একটা দুটো নৌকা নদীতে ডুবে যায়। প্রাণহানিও ঘটে মাঝে মধ্যে। শীতকালে পানি কমে আ্সে , কিন্ত শুরু হয় দুর্গন্ধ।

পত্রিকায় অনেকেই হয়তো বুড়িগঙ্গা নদীর দূরবস্থা সম্পর্কে পড়েছেন। শীতকালে সেই দূরবস্থা চরমে পৌছায় । কালো থিকথিকে অর্ধতরল এক প্রকার পদার্থে পরিণত হয় এ নদীর পানি । সেই বিষাক্ত পানি একবার শরীরে লাগলে নিশ্চিত চুলকানি শুরু হয়ে যাবে । কেরাণীগঞ্জ বাসিরা অবশ্য অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন, নদীর বিষয়ে তাদের মাথা ব্যাথা সামান্যই ।

জগন্নাথ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুবাদে আমার প্রায় প্রতিদিনই বুড়িগঙ্গা পারাপারের প্রয়জন হতো কারণ আমার পরিবার ছিল কেরাণীগঞ্জের স্থায়ি বাসিন্দা ।

সদরঘাট থেকে একটু সামনে এগুলেই বাংলাবাজার ওভারব্রিজ, এই ওভারব্রিজ ঘেষেই ফুটপাথের সাথে কিছুদুর পর্যন্ত লোহার রেলিং দেয়া, এই রেলিং এর খাজে খাজে দৈনিক সংবাদপত্র, বিভিন্ন মাসিক ট্যাবলেড ম্যাগাজিন সাজিয়ে এক শ্রুশুমন্ডিত বৃদ্ধ ব্যাক্তিকে সেগুলো বিক্রি করতে দেখতাম প্রতিদিন । এত বয়স্ক একজন ব্যাক্তিকে এভাবে কষ্ট করতে দেখে আমার বেশ খরাপ লাগতো কারণ সারাদিন তাকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এই কাজ করতে হতো, এমনকি খাওয়াদাওয়াও করতে হতো সেখানে বসেই।

সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে দেশের দুর দুরান্তের যাত্রীরাই ছিল তার প্রধান ক্রেতা ।

ভার্সিটিতে পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা থাকায় তার কাছ থেকে কোনদিন কোন কিছু কেনা হয়নি।

এভাবে দুটি বছর পার হয়ে গেল । বন্ধের দিন ছাড়া তাকে দেখতাম প্রতিদিন একই সময়ে একই কাজে ।

একদিন বাসায় ফেরার পথে তার ম্যাগাজিনের পসরা থেকে একটা নিয়ে ৫০ টাকার নোট বাড়িয়ে দিলাম ।
মৃদু হেসে বাড়তি টাকাগুলো আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল " বাবাজি নেন"।

এর পর থেকে আমাকে আসতে কিংবা যেতে দেখলেই প্রশ্ন করতেন " বাবাজি ভালো আছেন" ?

আমি তার ক্রেতা নই তার পরেও আমার প্রতি তার আন্তরিকতা ছিল যথেষ্ট।
সেই আন্তরিকতার জন্যে কিনা যানিনা একসময় তার নিয়মিত ক্রেতা হয়ে গেলাম, একটা নির্দিষ্ট দৈনিক পত্রিকা তার কাছ থেকে নিয়মিত কিনতাম, ইচ্ছা করেই বাদ দিলাম ক্যাম্পাসে পত্রিকা পড়া ।

পত্রিকা কিনতে গিয়ে তার সাথে কত গল্প করেছি , তাকে যোহরের নামাজ পড়তে পাঠিয়ে নিজে বিক্রি করেছি তার পেপার ম্যাগাজিন । প্রথম থেকেই তাকে "চাচা" বলে ডাকতাম, উনি আমাকে ডাকতেন "বাবাজি" বলে । চাচা`র সাথে একদিন কথা না হলে খুব খারাপ লাগতো । ভার্সিটি বন্ধ থাকলেও নদী পার হয়ে চলে যেতাম তার সাথে গল্প করতে ।

প্রথম থেকেই তাকে আমি চাচার আসনেই বসিয়ে ছিলাম।
দাদার সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে আপন চাচাদের সাথে আমাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছিল যখন আমি খুব ছোট তখন থেকেই । চাচাদেরকে তাই কখনও চাচা বলে ডাকা হয়নি কাছাকাছি আসা তো দুরের বিষয়।
এই বিরোধের কারণেই বাবা এক সময় কুষ্টিয়া থেকে চলে আসেন কেরাণীগঞ্জে । মনের মাঝে চাচার জন্য যে শূন্য স্থান ছিল পত্রিকা বিক্রেতা চাচা সেটা পুরণ করলেন ভালোভাবেই । আমার জন্য নির্দিষ্ট পত্রিকাটা সবসময় তিনি আলাদা করে রাখতেন ।

এভাবেই এক সময় রমজান মাস এসে গেল । রমজানের মাঝামাঝি সময়ে একদিন চাচাকে প্রশ্ন করলাম " পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করবেননা চাচা "? এই কথা শুনে চাচার মুখটা মলিন হয়ে উঠলো স্পষ্ট দেখলাম তার মুখে বিষাদের ছায়া ।
"বাবাজি, আমার তো কেউ নাই, কার জন্যে কিনুম কও"?
"কেউ নেই আপনার স্ত্রী,ছেলে,মেয়ে,নাতি,নাতনী কেউ না" ? ব্যাকুল হয়ে প্রশ্ন করি ।
উত্তরে চাচা যা বললেন সেটার সারমর্ম অনেকটা এরকমঃ

চাচার বাড়ী উত্তরবঙ্গের ভারত সিমান্তবর্তী জেলার এক গ্রামে ৩ ছেলে ২ মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার, বিঘা তিনেক আবাদযোগ্য জমি ছিল একমাত্র আয়ের উৎস । ফসল যা পেতেন তা দিয়ে ভালোভাবেই চলে যেত । কিন্ত সমস্যা আরম্ভ হয় যখন মেয়েদের বিয়ের সময় হাতছাড়া হয়ে যায় বেশকিছু জমি ।

অবশিষ্ট সম্পত্তি ৩ ছেলের মধ্যে সমান ভাগ করে দেন, ভেবেছিলেন দু`জন যত দিন বাচবেন ছেলেরা তাদের দায়িত্ব নিবে, অনেক কষ্ট করেছেন জীবনের বাদবাকী দিনগুলো সৃষ্টিকর্তার ইবাদতে ব্যায় করতে চেয়েছিলেন। (কিন্ত বিধাতা বোধহয় ভিন্ন কিছু চেয়েছিলেন,) চাচার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে কোন ছেলেই চিকিৎসার ভার নেইনি তাদের স্ত্রীরাও শাশুড়ীর সেবায় এগিয়ে আসেনি, অনেকটা বিনা চিকিৎসায় মারা যান তিনি।

এত কিছুর পরেও সংসারের মায়ায় চাচা ছেলেদের সাথেই থাকতেন, এক এক করে ছেলেদের সংসার বড় হতে থাকে, চাচার দিকে কেউ সামান্যও নজর দেয়না, ছেলের বৌয়েরা তার সব কাজেই চরম বিরক্ত হয় । চাচার ভিতরে অভিমান দানা বাধতে থাকে । অবস্থা চরমে পৌছলে একদিন কাউকে কোন কিছু না বলে অনেক কষ্টে জমানো তিন হাজার টাকা নিয়ে উঠে পড়েন ঢাকাগামী একটি ট্রেনে ।

তিন দিন কমলাপুর রেলস্টেশনে কাটাবার পর বুঝতে পারেন অবশিষ্ট টাকায় কিছু একটা না করলে না খেয়ে মরতে হবে । শরীরের যে অবস্থা তাতে পরিশ্রমের কাজ অসম্ভব ।অনেক চিন্তা ভাবনা করে অবশেষে আরম্ভ করলেন পত্রিকা বিক্রি। পরিশ্রম কম একলা মানুষ আয় হিসেবে যা আসে তা দিয়ে দিব্যি চলে যায় । প্রথমে ট্রেনে ট্রেনে ঘুরে বিক্রি করে একসময় চলে আসেন সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে কিছু দিন ঘুরে ঘুরে বিক্রি করলেও এখন আর পারেননা তাই ওভার ব্রিজের নিচের এই স্থায়ী ব্যাবস্থা।

এখানেও নানান সমস্যা । পুলিশ কে তো চাঁদা দিতেই হয় দিতে হয় ক্ষমতাসিন দলের ক্যাডারদেরও, তারপরেও ব্যাস্ত এই মোড়ে বিক্রি বেশ ভালো হয় ।
থাকেন ধূপখোলা । ঈদ এলে ছেলে,মেয়ে,নাতি,নাতনিদের কথা খুব মনে পড়ে কিন্ত ফিরে যাবেন এমন চিন্তা কোন দিন করবেন না। বড্ড অভিমানি চাচা ।

নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আমি পড়াশোনা করি রিতিমত সংগ্রাম করে, ৩টা টিউশনিতে চলে যায় মূল্যবান কিছু সময় তার পরেও টাকার সমস্যায় পড়তে হয়, অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা সংগ্রহ করে চাচার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে ফেলি । সাতাশ রোজার দিন প্যাকেটা চাচার দিকে বাড়িয়ে দিই ।
" দ্যাখেন তো চাচা লাগবে কিনা "
' কি এইড্যা "
"একটা পাঞ্জাবি আপনার জন্য "
" আমার জন্য কেন কিনতে গেলা বাবাজি নিজের জন্য কিছু কিনতা "?
চাচা কিছুতেই নিতে চাননা। অভিমানে চোখে পানি আসে আমার।
চাচা সেটা দেখে মৃদু হাসেন।
" আইচ্ছা নিতে পারি একটা শর্তে "
" কি শর্ত "?
" ঈদের দিন তোমারে আসতে হইবো আমার বাসায় "
অভিমানী মুখে হঠাৎ হাসি চলে আসে, পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়েও এই বৃদ্ধের গায়ে পাঞ্জাবিটি দেখতে আমি বদ্ধ পরিকর, রাজি হয়ে যাই বিনা বাক্য ব্যায়ে।
ঈদের দিন কিছু মিষ্টি নিয়ে চাচার দেয়া ঠিকানায় গিয়ে উপস্থিত হলাম, আমাকে দেখে ভিষন খুশি হলেন । খাবারের জন্য বসতেই হল চাচার পিড়াপিড়িতে পাশের বাসার মহিলাকে দিয়ে নানা রকম রান্না করিয়েছেন । এত বেশি আয়োজনের জন্য ইচ্ছামত বকলাম । আমার মেজাজ খারাপ উনি দেখি খালি হাসেন ।

ঢাকার খালি রাস্তায় কিছু সময় দু`জনে রিকসায় ঘুরে বিদায় নিলাম। পুরোটা সময় চাচা আমার দেয়া পাঞ্জাবিটা পরেছিলেন।

দিনগুলো এভাবেই কেটে যাচ্ছিল অনার্স শেষ করে মাষ্টার্সে ভর্তি হলাম ।
চাচার সাথে আমার সম্পর্কটা আগের মতই ছিল । এরই মাঝে একদিন দেখি চাচা আজ পত্রিকা বেচতে আসেন নি । ভাবলাম কোন কারণে আজ আসেনি কালকে আসবে। পরদিন তিনি আসলেন না, তার পরদিনও না । খোঁজ নেয়াটা প্রয়জন মনে করলাম নিশ্চিত ছিলাম উনি অসুস্থ ।

বাসায় গিয়ে দেখি যা ভেবেছি তাই, বিছানায় শুয়ে জ্বরে কাতরাচ্ছেন ৩দিন যাবৎ। গলির মোড়ের ফার্মেসি থেকে ঐষধ এনে খেয়েছেন লাভ হয়নি কোন ভাবেই জ্বর কমছেনা । ভাবলাম এমন পরিবেশে থাকলে সেবা শুশ্রুষা আর সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা পড়বেন । হসপিটালে ভর্তির কথা বললাম । চাচা কিছুতেই যাবেন না, হসপিটাল কে ভয় পান ।
অনেক বুঝিয়ে মিটফোর্ড হসপিটালে তাকে ভর্তি করলাম , সঠিক চিকিৎসায় কয়েকদিনের মধ্যেই সুস্থ্য হয়ে উঠলেন এই ক`দিন চাচার সব দায়িত্ব খাবার দাবার ঐষধপথ্য আনা সব আমিই পালন করলাম । চিকিৎসার খরচ বাবদ টাকা দিতে চাইছিলেন, অনেক কষ্টে সেটা থেকে বিরত করলাম তাকে ।


একটা কথা আমাকে প্রায়শই বলতেন " বাবাজি অনেক ঋণী হয়ে গেলাম তোমার কাছে, আজ যে দায়িত্ব আমার সন্তানের পালন করার কথা সেটা তুমি পালন করছো অচেনা অজানা একটা মানুষের জন্য যা করলা সবাই তা করেনা । আল্লাহ তোমার আনেক ভালো করবো " ।

"আপনি আমার চাচা আর চাচার জন্য ভাতিজা হিসেবে কিছু করা দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে"
" তোমার মত এমন ভাতিজা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার "

চাচা আবারো ফিরে আসলেন আগের জীবনে । আমিও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকি আগের মতই, একদিন কি মনে করে চাচার জন্য একটা মাটির ব্যাংক কিনে ফেলি।
চাচা ব্যাংক দেখে হেসে ফেললেন " বাবাজি আমি বুড়ো মানুষ টাকা জমায়ে কি করবো, আমার কি আর ভবিষ্যৎ আছে "?

চাচা শুনেন " এবার হয়তো আমি আপনার কাছে ছিলাম তাই এত সহযে আপনার চিকিৎসা হলো । সব সময় তো আর এভাবে থাকতে পারবনা। জীবিকার প্রয়জনে একসময় অনেক দুরে চলে যেতে হতে পারে ব্যাংকে কিছু টাকা জমাবেন যাতে করে ভবিষ্যতে অসুস্থ্য হলে চিকিৎসার টাকাটা সহজে পেতে পারেন " ।

পড়াশোনা শেষ করে চাকরিও পেয়ে গেলাম পোস্টিং হলো সাভারে একটা কোম্পানির একাউন্টস সেকশনে ।
এত দিনের পরিচিত ক্যাম্পাস, মা, বাবা, বন্ধু বান্ধব সবাইকে ছেড়ে আসতে ভিষণ কষ্ট হয়েছে, চাচাকে ছেড়ে আসাটাও কম কষ্ট ছিলোনা আমার জন্য।

আজো মনে পড়ে চাচার সেই ছল ছল চোখের চাহনি । একটা কাগজে মোবাইল নাম্বার দিয়ে এসেছিলাম যেন প্রয়জন মনে করলে ফোন দিতে পারেন।

নতুন কর্মস্থলে ব্যাস্ত হয়ে পড়ি । হঠাৎ হঠাৎ চাচার ফোন পাই । কথোপকথনের বেশিরভাগই উপদেশ " বাবাজি শরীরের যত্ন নিবা, খাওয়া দাওয়া ঠিকমত করবা, বেশি রাত জাগবানা ইত্যাদি ইত্যাদি "।

আমিও চাচাকে তার শরীরের যত্ন নিতে বলতাম ।

প্রতি শনিবারে প্লান করি বৃহস্পতিবারে কেরাণীগঞ্জে যাব অথচ যাওয়া হয়ে ওঠেনা, কারণ টা ক্লান্তি যারা একাউন্টস সেকশনে চাকরি তারা জানেন কি পরিমান পরিশ্রম করতে হয় ।

এই ব্যাস্ততার মাঝে হঠাৎ খেয়াল হল অনেকদিন চাচার ফোন পাইনা ।

একদিন এক অপরিচিত মহিলার ফোন পেলাম, চাচা হসপিটালে, অবস্থা খুবই খারাপ । আমাকে একবার দেখতে চাচ্ছেন।

খুব দ্রুত ছুটি ম্যানেজ করে ছুটলাম মিটফোর্ড হসপিটালে । হায় খোদা চাচাকে দেখে চেনাই যাচ্ছেনা, শুকিয়ে হাড্ডিসার অবস্থা, আমাকে দেখে তার শুকনো ঠোটের কোনে একটু হাসির রেখা ফুটলো । ইশারায় বসতে বললেন । বসলাম।
কথা বলতে ভিষণ কষ্ট হচ্ছে তার পরে বলবেন। চুপ করতে বলে লাভ হলোনা।

" বাবাজি আমার নিজের বলতে কিছুই নাই , তুমি একটু কষ্ট করে আমার চলতি মাসের বাড়ি ভাড়াটা দিও, যে মাটির ব্যাংকটা তুমি আমারে দিছিলা ঐডার মধ্যে আমি কিছু টাকা জমাইছি, তুমি সেটা নিবা "

" আচছা নিব এবার চুপ করেন "

চাচা একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে থামলেন । আমার কেন জানি মনে হলো উনি তার দায়িত্ব শেষ করলেন ।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানলাম বার্ধক্য জনিত নানা সমস্যায় উনার অবস্থা ভিষণ খরাপ, যে কোন সময় মারা যেতে পারেন।

চাচার ছেলে মেয়েদের খবর দেয়া দরকার, কিন্ত কিভাবে দেব ঠিকানা কিংবা ফোন নম্বর কিছুই জানিনা । চাচর কাছে গেলাম দেখি ঘুমিয়ে পড়েছেন সকালে এসে জেনে নেব ভেবে বাসায় চলে এলাম ।

খুব সকালে হসপিটাল থেকে ফোন পেলাম । রাতে ঘুমের মধ্যেই মারা গেছেন চাচা । ডাক্তাররা টের পেয়েছেন অনেক পরে । দ্রুত হসপিটালে গেলাম, নিথর হয়ে শুয়ে আছেন চাচা। চোখ দুটো বন্ধ । খুলবেনা আর কোন দিন । হাসি মুখে জানতে চাইবেন না " বাবাজির শরীর ভালো " ?

বুক ফেটে কান্না আসতে চাইছিল এই সল্পদিনের পরিচিত মানুষটার জন্য, আপন না হয়ে যিনি ছিলেন আমার অনেক বেশি আপন । ডুকরে কেদে উঠি ডাক্তার নার্সরা শান্তনা দেন ।

কেরাণীগঞ্জের এক কবরস্থানে যেখানে প্রতি বছর পুরনো কবরগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে আবার নতুন করে কবর দেয়া হয় সে রকম এক কবরস্থানে চাচাকে সমাহিত করার ব্যাবস্থা করি ।

চাচার বাসা ভাড়া পরিশোধ করে মাটির ব্যাংকটা নিয়ে ফিরে যায় কর্মস্থলে , চাচার স্মৃতি হিসেবে অনেকদিন সেটা আমার কাছে ছিল, এক এতিমখানায় চাচার নামে দান করেছি সেটা । শত শত এতিম বাচ্চার দোয়ায় যেন আল্লাহ চাচার বিদেহী আত্বার শান্তি দেন এই কামনায় ।

মাঝে মাধ্যেই কেরাণীগঞ্জের বাসায় যাই। বাংলাবাজার ওভারব্রিজটা পার হলেই রাস্তার পাশের রেলিংটা চোখে পড়ে । ফাঁকা পড়ে আছে । এক সময় ঠিক এখানে দাড়িয়ে চাচার সাথে কত গল্প করেছি । আজ চাচা নেই ।

ঈদ আসে, সামনে আসবে চাচার সঙ্গে যে ঈদটা কাটিয়েছি এমন ঈদ আমার জীবনে কখনও আসেনি, ভবিষ্যতে আসবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে ।

( পিতা মাতার ভরণ পোষন আইনের প্রয়জনিয়তা নিয়ে আমার ছোট্ট প্রয়াস , অতীব প্রয়জনীয়আইনটি পাসের জন্য সরকারকে ধন্যবাদ )।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পুরনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:১৫

ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

চরফ্যাশন

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫৯



নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।

প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×