মহাজোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ সরকারে যোগ দিতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ।
Published : 18 Nov 2013, 11:31 AM
দীর্ঘদিনের গুঞ্জনের অবসান ঘটিয়ে সোমবার মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন জাতীয় পার্টির পাঁচ নেতা।
বঙ্গভবনে ওই শপথ অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে বনানীতে নিজের দলীয় কার্যালয়ে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন ‘সর্বদলীয়’ সরকারে বিএনপিকেও যোগ দেয়ার আহ্বান জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান।
বিএনপি আলোচনা ও নির্বাচনে আসার পর যদি সরকারের আন্তরিকতা অভাব দেখা যায় কিংবা ভোট কারচুপির চেষ্টা হয়, তাহলে জাতীয় পার্টিও নির্বাচন বয়কট করবে বলে প্রধান বিরোধী দলকে ‘আশ্বস্ত’ করেন এরশাদ।
তবে এরশাদের এই আহ্বানের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেছেন, “তিনি একজন দ্বিমুখী নেতা। একেক সময় একেক কথা বলেন।”
বিএনপি নির্দলীয় সরকারের দাবি জানিয়ে আসছে এবং তা না হলে নির্বাচন বয়কটের হুমকিও রয়েছে তাদের। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে চায়।
দুই দলের মুখোমুখি অবস্থানে সংলাপের নানা উদ্যোগ চললেও কোনোটিই আলোর মুখ দেখেনি। এরশাদ নিজেও দুই প্রধান নেত্রীকে সংলাপের বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন।
সঙ্কট এড়াতে আলোচনায় আসতে বিএনপির প্রতি আহ্বান জানিয়ে এরশাদ বলেন, “দেশে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গাড়ি পুড়ছে, মানুষ পুড়ছে, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ রাস্তায় বের হতে পারছে না, বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে আছে।
“আমি বিএনপির প্রতি আকুল আহ্বান জানাই, আপনারা আলোচনায় আসুন। আপনাদের কী দাবি, তা বলুন। বাইরে বসে থাকলে কোনো সমস্যার সমাধান হবে না।”
বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ আরো বলেন, “প্রধানমন্ত্রী এক পা এগিয়েছেন। তিনি সবাইকে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। এবার আমরা এগিয়ে যাই। আমাদের সবার অংশগ্রহণ ও সহযোগীতা ব্যতীত একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়।”
এর আগে একাধিক বার এরশাদ বলেছিলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে জাতীয় পার্টিও যাবে না। সরকার এককভাবে নির্বাচন করতে যাচ্ছে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
তবে সোমবার সেই অবস্থান থেকে সরে এসে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, “জাতীয় পার্টি নির্বাচনমুখী দল। আমরা নির্বাচনে বিশ্বাসী। নির্বাচন না করলে দল থাকে না, কর্মী থাকে না।
“জাতীয় পাটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চায়। আমরা মনে করি, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতার পরিবর্তন সম্ভব।”
সর্বদলীয় সরকারে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন,“ এটা সর্বদলীয় সরকার। সব দলের অংশগ্রহণে এই সরকার গঠিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আহ্বান জানিয়েছেন। আমরা তাতে সাড়া দিয়েছি, আশা করি বিএনপিও সাড়া দেবে।”
নির্বাচন বর্জনের হুমকি দেয়া বিএনপিকে ‘আশ্বস্ত’ করে এরশাদ বলেন, প্রয়োজন দেখা দিলে তার দলও নির্বাচন বয়কট করতে পারে।
“বিএনপিকে আলোচনায় আসতে হবে। যদি বিএনপি আলোচনায় আসে এবং সরকার যদি আন্তরিক না হয়, তাহলে জাতীয় পার্টি নির্বাচন বর্জন করবে। যদি নির্বাচনে কোনো কারচুপির প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে জাতীয় পাটিও নির্বাচন বর্জন করবে।”
তবে বিএনপির দাবি এবং তাদের অবস্থানের প্রতি জাতীয় পার্টির কোনো সমর্থন নেই বলে জানান তিনি।
“তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি আমার কিংবা জাতীয় পার্টির কোনো সমর্থন নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি ক্ষতিকর হিসেবে ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকার মানি না।”
নির্বাচন না হলে দেশে সেনা অভ্যুত্থান কিংবা অগণতান্ত্রিক শক্তির আগমন ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যুত এই সামরিক শাসক।
‘মহাজোটে নেই’
গত নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে যোগ দেয়া এরশাদ গত দুই বছর ধরে জোট ‘ছাড়ব-ছাড়ব’ বলে আসছিলেন।
এরপর গত শনিবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, তারা আর মহাজোটে নেই। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দেবেন।
সংবাদ সম্মেলনে এরশাদ বলেন, “আমি এর আগে বলেছিলাম, দু-এক দিনের মধ্যে মহাজোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানাব। এখন বলছি, আজ এই মুহূর্ত থেকে আমি এবং আমার দল আর মহাজোটে নেই।”
“আমরা এখন আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি,” বলেন জাপা চেয়ারম্যান।
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জিএম কাদের, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশিদ, জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।