somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এরশাদ এবং একজন পতিতার গল্প!(১৮+)

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :












এক যৌনকর্মী ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললেন তার শরীরে আরেকটি ছিদ্র করে দিতে। অবাক হয়ে ডাক্তার এর কারণ জিজ্ঞেস করতেই যৌনকর্মীটি চটপট জবাব দিলেন, ‘ইদানীং আমার ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে। এক শাখায় খদ্দের সামলাতে পারছি না। তাই এখন আরেকটি শাখা খুলতে এসেছি!’

বাংলার রাজনীতিজগতের পতিত পুরুষ হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ব্যবসাও ইদানীং বেশ রমরমা যাচ্ছে। তীব্র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দুই দশকেরও বেশি সময় আগে বর্তমানে নব্বই-ছুঁইছুঁই এই বিশ্ববেহায়াটির এক দশকের সামরিকতন্ত্রের পতন ঘটলেও রাজনীতির নিলামঘরে তার দর এখনও অভাবনীয় রকমের উঁচু। কথিত সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর রাজনীতি থেকে তার নামটি চিরতরে মুছে যাবার কথা থাকলেও খালেদা-হাসিনার নষ্ট রাজনীতি তাকে এখনও রাজনীতির নষ্ট নর্দমার নষ্ট জলে জিইয়ে রেখেছে। বিশ্ববেহায়াটি এখন অবাধে অবলীলায় যাতায়াত করে চলছেন হাসিনার অন্দর থেকে খালেদার অন্দরে, খালেদার বন্দর থেকে হাসিনার বন্দরে। ২০০৫ সালে বিদিশার সাথে এরশাদের বিচ্ছেদের শফিক রেহমান বিবিসি বাংলাকে বলেছিলেন, ‘এরশাদ আজ ধপাশ করে পড়ে গেলেন। রাজনীতির ময়দানে তিনি আর দাঁড়াতে পারবেন না।’ কিন্তু আস্তিক খালেদার নাস্তিক ভাষণলেখক শফিক রেহমানের ভবিষ্যদ্বাণী খাটেনি। বিদিশার সাথে বিচ্ছেদের পর এরশাদ বরং লোকমান হেকিমের আবে হায়াত লাভ করেছেন এবং এই বয়সেও রাজনীতির মাঠে-ঘাটে-খাটে ঠায় দাঁড়িয়েই আছেন।

একজন যৌনকর্মীর সাথে একজন স্বৈরাচারীর পার্থক্য হচ্ছে — টাকা পেলে যৌনকর্মীটি শুয়ে পড়েন এবং রাষ্ট্রপতি পদের লোভ দেখালে স্বৈরাচারীটি দাঁড়িয়ে যান। ২০০৭ সালের ২২শে জানুয়ারি নির্বাচনের কথা যখন পাকাপোক্ত, তখন এরশাদ হুট করে আওয়ামি লিগ-নেতৃত্বাধীন মহাজোটে চলে এলেন এবং বিএনপির আজ্ঞাবহ ইয়াজউদ্দিনের সরকার এরশাদের দুর্নীতিমামলাগুলো চালু করে দিল; অমনি লিগ নির্বাচনে না যাবার জন্য বেঁকে বসল এবং দেশে সেই ঐতিহাসিক ওয়ান-ইলেভেনের সৃষ্টি হলো। অনেকে ভুলেই গেছেন যে, সেই প্রলয়ঙ্করী ওয়ান-ইলেভেন সৃষ্টির নেপথ্যের বৃহত্তম নিয়ামক ছিলেন এই এরশাদ! পতনের দুই দশক পরেও বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতিতে নষ্ট এরশাদ এখনও এক ফেনোমেনন!

এরশাদকে মহাজোটে আনার শর্ত হিশেবে লিগের সাথে এরশাদের যে তাকে রাষ্ট্রপতি বানাবার একটা অলিখিত চুক্তি ছিল, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু মসনদে অধিষ্ঠিত হয়ে মহাজোট এরশাদকে রাষ্ট্রপতি বানায়নি, এমনকি জাতীয় পার্টিকে দেয়নি পর্যাপ্ত সংখ্যক মন্ত্রিত্বও। ফলে এরশাদ শুরু থেকেই জোটে থেকেও জোটবিরোধী ও লিগবিরোধী বক্তব্য দিয়ে এসেছেন এবং লিগের প্রতি তার ক্ষোভটা অমূলকও নয়, জাতীয় পার্টির ঘাড়ে পা রেখে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে লিগ জাতীয় পার্টিকে মোটেই মূল্যায়ন করেনি। ত্রিশটির কাছাকাছি আসনপ্রাপ্ত একটি দলকে মাত্র একটি মন্ত্রিত্ব দেয়া কেবল অযৌক্তিকই নয়, স্মরণকালের সেরা একটি কৌতুকও বটে।

যা হোক, দুই নৌকায় পা দিলে পাতলুন ছিঁড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে বিধায় এরশাদ এখন পা দিয়ে রেখেছেন তিন নৌকায়। তিনি এখন মহাজোটেও আছেন, আঠারোদলীয় জোটেও আছি-আছি করছেন, আবার এককভাবে নির্বাচন করবেন বলেও রসময় কৌতুক পরিবেশন করে চলছেন! এরশাদের মন এখন ব্রিটেনের বৃষ্টি কিংবা পাকিস্তান ক্রিকেটদলের চাইতেও আনপ্রেডিক্ট্যাবল। কিছু ব্যক্তি আছেন, যারা সদা-সর্বদা কোনো-না-কোনোভাবে আলোচনার ও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে চান; এরা বিয়ের আসরে গেলে বরকে সরিয়ে বরের আসনে বসতে চান, খতনার আসরে গেলে হাজামের দিকে শিশ্ন বাড়িয়ে দিতে চান, জানাজা নামাজে গেলে মুর্দাকে সরিয়ে নিজেই কফিনের ভেতরে ঢুকে শুয়ে পড়তে চান। মনোযোগলিপ্সু এরশাদ তেমনই একজন ব্যক্তি।

এরশাদ নাকি আজ গিয়েছিলেন হাটহাজারির বিকৃত বৃদ্ধ আহমদ শফির কাছে, দোয়া নিতে। ক্ষমতায় গেলে হেফাজতের তেরো দফা বাস্তবায়ন করবেন বলেও নাকি এরশাদ শফিকে কথা দিয়ে এসেছেন। হেফাজতের তেরো দফার অন্যতম দফা হচ্ছে ‘নরনারীর অবাধ মেলামেশা বন্ধ করা’। এরশাদের অবাধ মেলামেশার ইতিবৃত্ত কারো অজানা নয়, তার রক্ষিতার সংখ্যা অগণনীয়। বিদিশার গর্ভে এরিক নামক ছেলেটির জন্ম হবার পর এরশাদ যখন সেই ছেলের পিতৃত্ব দাবি করলেন, তখন তার অন্যতম রক্ষিতা জিনাত মোশাররফ (বিএনপির সাবেক জ্বালানিপ্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফের স্ত্রী) বলেছিলেন, ‘এরশাদের বাবা হওয়ার ক্ষমতা থাকলে দেশটা কচিকাঁচায় ভরে যেত!’ যে শফি নরনারীর ‘অবাধ মেলামেশা’ নিয়ে এত উদ্বিগ্ন, সেই শফি কীভাবে অবাধ মেলামেশার প্রবাদপুরুষ এরশাদকে ‘দোয়া’ করলেন; তা বোঝার জন্য তেঁতুলের জুস পান বৈ উপায় নেই!

কবি হেলাল হাফিজ যৌবনে মস্ত জুয়াড়ি ছিলেন, জীবনের একটা বড় অংশ তিনি কাটিয়ে দিয়েছেন জুয়া খেলে। এখনও তিনি প্রেস ক্লাবের জুয়ার আসরে যান, নিজে এখন আর অংশ না নিলেও অন্যদের জুয়াখেলা তিনি বিরস বদনে দেখেন। ক্লান্ত-বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত-কপর্দকশূন্য-গতায়ু হেলাল হাফিজের এখন আর সাধ্য নেই জুয়ায় অংশ নেয়ার। একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘হেলাল ভাই, এই বয়সে অন্যদের জুয়াখেলা দেখে আপনি কী মজাটা পান?’ তিনি বলেছিলেন, ‘সঙ্গমের আগে ফোর-প্লে করে যে মজাটা পাওয়া যায়, দূর থেকে অন্যদের জুয়াখেলা দেখে এখন আমি সেই মজাটা পাই!’

হেলাল হাফিজের বয়স এখন ৬৫, এরশাদের বয়স প্রায় ৮৪; অর্থাত্‍ হেলাল হাফিজের চেয়ে এরশাদের বয়স প্রায় কুড়ি বছর বেশি। হেলাল হাফিজেরা বুড়িয়ে গেছেন, জীবন থেকে হারিয়ে গেছেন; এরশাদেরা এখনও তাগড়া জোয়ান, ভায়াগ্রাপ্রসূত নায়াগ্রাজল এরশাদের যত্রতত্র থেকে আজও চুইয়ে-চুইয়ে পড়ে। ফের রাষ্ট্রপতি হবার সাধ এরশাদের এখনও মেটেনি। এখনও প্রতিদিন দু-একটা করে বেফাঁস বচন বলে সংবাদশিরোনামে না আসতে পারলে তার ভালো লাগে না।

এরশাদকে বলতে ইচ্ছে করে, ‘চাচা, এই বয়সে এসব বেফাঁস বচন বলে কী মজাটা পান?’ কী জবাব দিতেন তিনি? নিশ্চয়ই তিনি বলতেন, ‘অন্যের জুয়াখেলা দেখে হেলাল হাফিজ যে মজাটা পায়, উপপত্নীদের সাথে সঙ্গমপূর্ব ফোর-প্লেতে যে মজাটা পেতাম; রাজনীতিতে আমার হাঁটুর বয়সীদের জয়জয়কার দেখে রাগে-দুঃখে দূরে বসে এসব বেফাঁস কথাবার্তা বলে এখন আমি সেই মজাটা পাই!’

পরিশেষে বলি :
নুর হোসেনের লাশ ছুঁয়ে আজ
চাইব সাজা কার?
আপা পোষেন স্বৈরাচারী,
ম্যাডাম রাজাকার!

আখতারুজ্জামান আজাদ
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×