আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা বলেছে, উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হলে বাংলাদেশকে অবশ্যই পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়ন করতে হবে।
Published : 19 Nov 2013, 09:07 AM
সোমবার আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশকে শিক্ষা খাতেও উন্নতি করতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ অভিবাসন ও মেধা পাচার ঠেকাতে তরুণদের জন্য করতে হবে কাজের ব্যবস্থা।
“শ্রম বাজার ও সামাজিক নীতিমালার একটি সমন্বিত ব্যবস্থা চালু করতে না পারলে অর্থনৈতিক ও জীবন মানের অগ্রগতির ধারা অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব হবে না।”
অবশ্য মুক্তবাজার অর্থনীতির পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ‘কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ নিয়েছে বলেও আইএলও মনে করছে।
এমন এক সময় আইএলও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল যখন তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা প্লাজা ধসে ১২ শ’র বেশি শ্রমিকের মৃত্যুর পর কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। আর ন্যূনতম মজুরি নিয়ে অসন্তোষে পোশাক কারখানা অধ্যুষিত আশুলিয়া ও গাজীপুরে প্রতিদিনই সংঘর্ষ, ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত দুই দশকে বাংলাদেশ ‘তুলনামূলকভাবে উচ্চ হারে’ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে, যার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে তৈরি পোশাক খাত।
২০১১ সালে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ পোশাক রপ্তানি হয়েছে তার ৪ দশমিক ৮ শতাংশের যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ, যেখানে ১৯৯০ সালে এই হার ছিল শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ।
“কিন্তু এই খাত অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকায় কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটেনি। এই বাজে কর্মপরিবেশ কেবল টেকসই উন্নয়নের পথেই বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না, ইতিহাসের ভয়াবহতম কয়েকটি বিপর্যয়েরও জন্ম দিয়েছে।”
জেনেভায় প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে আইএলও কর্মকর্তারা জানান, তারা ২০১১ সালে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের ওপর এই প্রতিবেদন তৈরির কাজে হাত দেন। তাজরীন ও রানা প্লাজার ঘটনা এই প্রতিবেদনের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও বিপর্যয় দুটি বাংলাদেশের পোশাক খাতের পরিস্থিতিই তুলে ধরে।
প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের এই শিল্পে ৩৬ লাখের বেশি শ্রমিক জড়িত, যাদের অধিকাংশই নারী। বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও আগের মজুরি কাঠামোই সব কারখানায় ঠিকমতো অনুসরণ করা হয় না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত বছরের নভেম্বরে তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে ১১৭ জন এবং গত ২৪ এপ্রিল সাভারে রানা প্লাজা ধসে ১ হাজার ১৩০ জন নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যমে বাংলাদেশের পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকদের স্বল্প মজুরির বিষয়টি নতুন করে সামনে চলে আসে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশি পোশাক বর্জনেরও হুমকি দেয়া হয়।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকরা প্রতিযোগী অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম মজুরি পান। গত অগাস্টের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি যেখানে মাসে ৩৯ ডলার (তিন হাজার টাকা), সেখানে কম্বোডিয়ায় এই হার ৮০ ডলার, ভারতে ৭১ ডলার, পাকিস্তানে ৭৯, শ্রীলঙ্কায় ৭৩ ডলার ও ভিয়ৈতনামে ৭৮ ডলার।
এর মধ্যে কিছু দেশ নিয়মিত ভিত্তিতে পোশাক খাতের মজুরি পুনর্নিধারণ করলেও ১৯৮৫ সাল থেকে বাংলাদেশে মাত্র তিনবার মজুরি কাঠামোয় পরিবর্তন এনেছে।
সরকার গঠিত একটি মজুরি বোর্ড গত মাসে ন্যূনতম মজুরি বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব দিলেও এখনো এ বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত ঘোষণা আসেনি।
আইএলওর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ছয় মাসে সরকার শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেও পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ এখনো একটি চ্যালেঞ্জ হিসাবেই রয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি পোশাক খাতের কর্মপরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে পারলেই বাংলাদেশ রপ্তানি বাজার ও প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি তরুণদের অভিবাসন কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করে আইএলও।
পাশাপাশি শ্রমিকদের মজুরি নীতিমালা শক্তিশালী করে তা যথাযথভাবে অনুসরণ এবং নূন্যতম মজুরি ও বোর্ডের সুপারিশ ঠিকমতো বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না- তা পর্যাবেক্ষণও জরুরি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।