"আচ্ছা বিয়ের পরে তোরও নাম বদলে যাবে। তাই না জেরিন?"
"হ্যা যাবে। সব মেয়েরই যায়।"
"আচ্ছা আমাকে তোর মনে থাকবে?"
"কেন থাকবে না। আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু তো তুইই নাকি?"
"ভালো বন্ধু? হ্যা তা তো বটেই।"
"দীর্ঘশ্বাস ছাড়লি মনে হচ্ছে?"
"আচ্ছা, আমি যদি তোর বন্ধু না হয়ে বেশী কিছু হতে চাইতাম তাহলে?"
"আমার বিয়ের দিনে এইসব বাজে বকিস না তো শফিক। অন্য কিছু আবার কি হতে চাইবি?"
"যদি আমি তোর প্রেমিক হয়ে চাইতাম?"
এবার আর হাসি থামাতে পারলো না জেরিন। শফিক আর জেরিনের বন্ধুত্বে অনেকবারই প্রেমের গুজব ছড়িয়েছে ভার্সিটিতে। শফিকই রেগেমেগে সেসব থামিয়েছে। শফিকের কথা শুনেই মনে পড়ে গেল জেরিনের। হাসতে হাসতেই সে জিজ্ঞাসা করলো,
"তাহলে তখন অতো খেপেছিলি কেন শফিক?"
"আমি লজ্জা পেয়ে গিয়েছিলাম।"
"এখন লজ্জা করছে না?"
শফিক বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে জেরিনের দিকে অপলক চোখে। হঠাৎই হো হো করে হেসে ওঠে শফিক।
"আমি মজা করছিলাম রে ইডিয়ট"
হাসিটা হঠাৎ থেমে যায় জেরিনের। বিষন্নতা খেলা করে যায় তার মুখে।
"আমিও মজা করছিলাম রে। আমিও।"
জেরিন মাথাটা নিচু করে ফেলে। হঠাৎ কেন যেন গলাটা ধরে আসছে ওর। হতভাগাটা আজও বুঝলো না। আজও না। এতোটা বছর শুধু মজাই করে গেল! একবারও বুঝলো না জেরিনের ভালোবাসা? না বুঝলে না বুঝুক। যাকগে। স্বামী সংসার নিয়ে সেও সুখী হয়ে দেখিয়ে দেবে মজা করা কাকে বলে!
হঠাৎ এগিয়ে এসে জেরিনের মাথার হাত রাখে শফিক।
"ভালো থাকিস জেরিন। আর মনে রাখিস, আমিও তোকে অনেক ভালোবাসি।"
শুনেই যেন পাথর হয়ে যায় জেরিন। অনুভূতি কাজ করছে না যেন। কি শুনলো সে এটা? এতো বছর এই একটি কথার অপেক্ষায়ই তো ছিল সে! এই সামান্য কথার এতো তীব্রতা! শয়তানটা জানত জেরিন তাকে ভালোবাসে? তাহলে এতদিন বলে নি কেন?
ওদিকে ব্যান্ড পার্টির শব্দ ভেসে আসছে। বর এসেছে মনে হয়। শফিক চলে যাচ্ছে চোখ মুছতে মুছতে। জানালা দিয়ে হবু বরকে জেরিন তার বাড়ির গেট দিয়ে ঢুকতে দেখছে।
এক মুহূর্তের জন্যে মনে হয় কিছু ভাবল জেরিন। দেরি করার সময় নেই। দৌড় দিল সে। শফিককে ধরতে হবে। ও জানে শয়তানটা থাকতে পারবে না ওকে ছাড়া। এতো বছর ভালোবাসার কষ্টে জ্বালানোর শোধ এখনো তোলা বাকি।
আচ্ছা এই কষ্টটা এতো সুখের কেন? এত সুখ কেন এই কষ্টে!