somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কূটনৈতিক চাপে বিএনপি!

২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৯:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপ নতুন নয়। তারা সময় সুযোগ বুঝে প্রায়ই আমাদের রাজনৈতিক বিষয়ে পরামর্শের ছলে নানা কথা বলে থাকেন। আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও কম যায় না। তারাও সুযোগ পেলে বিদেশি কূটনীতিকদের কাছে তাদের স্বার্থ নিয়ে ধর্ণা দেন। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসে, এ প্রবণতা ততই বাড়ে। বর্তমানে বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিশেষ করে বিরোধী দলের হরতালের নামে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সহিংসতা, চলন্ত গাড়িতে বোমা মেরে মানুষ হত্যাসহ নানা কর্মকা-ে বেশ নাখোশ মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
কিছু দিন আগেও বিএনপির প্রতি ঢাকাস্থ একাধিক বিদেশি মিশনের দুর্বলতা ছিল। বিএনপিও মনে করেছিল, বিদেশি কূটনীতিকরাই তাদের ত্রাতা হিসেবে এগিয়ে আসবে। কিন্তু জোট সঙ্গীদের নিয়ে অগোছাল কর্মসূচি দলটির প্রতি কূটনীতিকদের সে মনোভাব বদলে দিয়েছে। ক্রমেই দলটির প্রতি আস্থা হারাচ্ছেন তারা।
বিদেশি দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট নিরসনে রাজনীতিকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা চান কূটনীতিকরা। মতবিরোধ থাকলেও কোনোভাবেই তা সংঘাতে রূপ নেবে নাÑএমনটাই প্রত্যাশা তাদের। সংঘাত এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনাও করে বিদেশি মিশনগুলো। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। হরতালের মতো সহিংস কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। এ কর্মসূচির কারণে কূটনৈতিক মহলে এক রকম কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তারা।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপি চেয়ারপারসনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা শমসের মবিন চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, চীন, জাপান, জার্মানিসহ বিদেশি মিশনগুলো ধারাবাহিকভাবে উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছে। হরতালের নামে অরাজকতা ও নিরীহ মানুষের প্রাণহানিতে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করেছে তারা।
এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বলেন, ‘আমরা প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে গঠনমূলক সংলাপের পরিবর্তে সংঘাতময় কর্মকা- দেখছি। আমি এতে হতাশ।’ তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। এ প্রত্যাশা পূরণের পথ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে কেবলমাত্র একটি কার্যকর সংলাপের মধ্য দিয়ে।
দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জুন। সম্প্রতি এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে বাংলাদেশের জনগণের মতো আমিও উদ্বিগ্ন। আশা করি, প্রধান দুই রাজনৈতিক দল পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর বাস্তবধর্মী উদ্যোগ নেবে। একই সঙ্গে তারা আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য দূর করে জনগণের আস্থা
অর্জন করবে।’
হরতাল গণতান্ত্রিক অধিকার বলে মনে করেন পশ্চিমা দূতাবাসগুলোর একাধিক কূটনীতিক। তবে হরতালের নামে নৈরাজ্য কোনোভাবেই সমর্থন করেন না তারা। তাদের মতে, জনগণের অধিকার রক্ষার কথা বলে রাজনীতিবিদরা দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছেন। প্রধান বিরোধী দলকে সংঘাত পরিহার করে আলোচনায় বসতে একাধিকবার আহ্বান জানানো হলেও সহিংস
হরতালের মতো কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে তারা। এ ধরনের কর্মসূচিতে রীতিমতো হতাশ কূটনীতিকরা। এ কর্মসূচির কারণেই বিএনপির পক্ষ নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারছেন না তারা। সব মিলিয়ে দলটির প্রতি কূটনীতিকদের এক ধরনের অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
ঢাকায় কানাডার হাইকমিশনার হিদার ক্রুডেন বলেন, ‘কানাডা বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলা, গাড়িতে বোমা মেরে মানুষ হত্যা করা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। সহিংসতা বন্ধ ও চলমান সংকট শান্তিপূর্ণভাবে নিরসনে আমরা সব রাজনৈতিক দলের প্রতি অব্যাহতভাবে আহ্বান জানিয়ে আসছি।’
সূত্রমতে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে স্থিতিশীল পরিবেশ দেখতে চাইছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় অংশীদারও হতে চান তারা। বাংলাদেশে বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ রক্ষাও একটি বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে আন্তর্জাতিক মহলে অনাস্থা কুড়াচ্ছে প্রধান বিরোধী দল। ফলে বিদেশি মিশনগুলো দলটির বিষয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গন ও চলমান ঘটনাপ্রবাহের দিকে নিবিড় দৃষ্টি রাখছেন তারা। একটি বিষয় কূটনীতিকরা স্পষ্ট করে দিচ্ছেন। আর তা হলো সমস্যার সমাধান বাংলাদেশকেই করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ সমাধান চাপিয়ে দেবে না। ফলে বিদেশি কূটনীতিকদের পরবর্তী করণীয় কী হবে তা নির্ভর করছে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোনো দিকে মোড় নেয় তার ওপর।
সব মিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, শান্তিপূর্ণ হরতালের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টিকারী কর্মকা- ও নিরীহ মানুষ মারার যে সহিংস কর্মসূচি ইদানীং চলছে তাতে বিরোধী দল বিএনপি’র প্রতি কূটনীতিকদের আস্থা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। সে কারণে বিএনপি এখন গভীর কূটনৈতিক চাপে আক্রান্ত বলে স্বীকারও করেছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের উদারপন্থি এক নেতা।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×