নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বর্তমান পর্যায়কে ‘প্রথম ধাপ’ উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, বিএনপি না আসা পর্যন্ত এ সরকার ‘সর্বদলীয়’ হবে না, হবে বহুদলীয়।
Published : 20 Nov 2013, 12:14 PM
বিরোধীদলীয় নেতা ‘নাশকতার মধ্য দিয়ে’ প্রধানমন্ত্রীর সব আমন্ত্রণের জবাব দিলেও সংকট উত্তরণে আলোচনার পথ এখনো খোলা রয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী দলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “কখন কোথায় সংলাপে বসতে চান, তা বলেন। আমরা বসব, সমাধানের পথ বের করার চেষ্ট করব।”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রাথমিক অবস্থা। বিএনপি এলেই এটা সর্বদলীয় সরকার হবে। তারা না আসা পর্যন্ত এটা হবে বহুদলীয় সরকার।”
বিরোধী দলীয় জোট নেতা খালেদা জিয়া বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে সংকট উত্তরণে তার হস্তক্ষেপ চাওয়ার পরদিন ইনুর এই সংবাদ সম্মেলন।
খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে যে ‘স্মারকলিপি’ দিয়েছেন তার বিভিন্ন অংশ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে সরকারের পক্ষে জবাব দেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা ওই স্মারকলিপিতে সংবিধান সংশোধন, নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রশাসনে দলীয়করণের অভিযোগ এবং হরতালে হতাহতের ঘটনার করেছেন, তাতে তিনি বিভিন্ন বিষয়ে ‘অসত্য’ বক্তব্য দিয়েছেন।
নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় শেষ পর্যন্ত কারা কারা থাকছেন- তা দুয়েক দিনের মধ্যে জানা যাবে বলে জানান ইনু।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের জমা দেয়া পদত্যাগপত্র গত সোমবার রাষ্ট্রপতির কাছে দিয়েছেন। কাদের পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন তা গেজেট প্রকাশের পরই জানা যাবে।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাতের বিষয়টি উল্লেখ করে ইনু বলেন, “মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতাকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ কারণে যে তিনি সংবিধান না মানলেও মহামান্য রাষ্ট্রপতির পদটিকে সম্মান দেখিয়েছেন।”
খালেদা জিয়া ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা সীমিত’ বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করলেও নির্দলীয় সরকার গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতির ভূমিকা রাখার ‘আব্দার’ করেছেন বলে মন্তব্য করেন জাসদ সভাপতি ইনু।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ‘অবৈধ’- বিরোধী দলীয় নেতার এ বক্তব্য নাকচ করে তিনি বলেন, আদালতের রায়ে পর তার আলোকেই পঞ্চদশ সংশোধনী হয়েছে। বিরোধী দলের কাছে প্রতিনিধি চাওয়া হলেও সংবিধান সংশোধন কমিটিতে তারা আসেনি।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনের অধীনে যেসব নির্বাচন হয়েছে তার ফলাফল নিয়ে বিরোধী দলও কখনো আপত্তি তোলেনি।
সরকার গত পাঁচ বছরে প্রশাসনে দলীয়করণ করেছে- খালেদার এমন অভিযোগও ইনু অস্বীকার করেন।
“এই সময়ে প্রশাসনে দলীয়করণের কথা বলে তিনি (বিরোধী দলীয় নেতা)ইংগিত দিচ্ছেন যে, উনি যদি কখনো ক্ষমতায় আসেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।”
সংলাপ প্রসঙ্গে ইনু বলেন, “প্রধানমন্ত্রী কোনোদিন শর্ত দিয়ে সংলাপের আহ্বান জানাননি।… কিন্তু প্রতিটি আলোচনার প্রস্তাবে বিরোধী দল নেতা হরতাল, নাশতকা চালিয়েছেন।”
খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া স্মারকলিপিতে বলেছেন, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দমনের নামে ‘পুলিশ গুলি চালিয়ে’ মাত্র এক মাস সময়ের মধ্যে বিরোধী দলের আড়াইশর বেশি নেতা-কর্মীকে ‘হত্যা’ করেছে।
এর জবাবে ইনু বলেন, “আমি বিনয়ের সঙ্গে বলছি, বিরোধী দলীয় নেতা যদি আড়াইশ লোকের নামের তালিকা দিতেন, তাহলে বুঝতে পারতাম কাদের হত্যা করা হয়েছে।”
বরং বিরোধী দলই ‘আন্দোলনের নামে নাশকতা অন্তর্ঘাত’ করছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন তথ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “সময় এসেছে এ থেকে বেরিয়ে এসে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করার।”
বিরোধী দলের হরতাল কর্মসূচি প্রসঙ্গে সরকারের এই শরিক নেতা বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা দেশবাসীর দুঃখ কষ্ট, আকুল আবেদন উপেক্ষা করে একটার পর একটা হরতাল দিয়েছেন, উনার বেহরম দিলে রহম হয়নি। কিন্তু মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সফরের সময উনি হরতাল দেননি। এজন্য উনাকে ধন্যবাদ জানাই।
প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীসহ অন্যান্য পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে আর হরতাল না দিতে বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।