এক নেতার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের ভাংচুরের কারলে পাঁচ ঘণ্টা বন্ধ ছিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক।
Published : 20 Nov 2013, 04:04 PM
বুধবার দুপুরের পর থেকে মহাসড়কে গাড়ি ভাংচুরের পাশাপাশি স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানসহ আওয়ামী লীগ সমর্থক বেশ কয়েকজনের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগও হয় বলে পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে।
ভাংচুরের সময় পুলিশের সঙ্গে জামায়াতকর্মীদের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন একজন। খালেদ বিন মাসুদ (২২) নামে ওই জামায়াতকর্মীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
দুপুরে মহাসড়কের পন্থিছিলা এলাকায় বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি আমিনুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায়।
আমিনুল হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন দাবি করে বেলা ৩টার দিকে জামায়াতের কর্মীরা মহাসড়কে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে।
শুরুতে বাঁশবাড়িয়া এলাকায় দুটি ট্রাক ও একটি কভার্ড ভ্যানে আগুন দেয়া হয়। পরে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে তাদের সঙ্গে জামায়াতকর্মীদের সংঘর্ষ বেঁধে যায়।
এর মধ্যে বিকালে আওয়ামী লীগ সমর্থিত বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদাকাত উল্লাহসহ সরকার সমর্থক কয়েকজনের বাড়িতে আগুন দেয়া হয়।
র্যাব কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, বিকাল সোয়া ৩টার দিকে সাদাকাতসহ চারজনের বাড়িতে আগুন দেয় জামায়াতকর্মীরা।
সাদাকাতের ছোট ভাই ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা নাছির উদ্দিন ও সাবেক চেয়ারম্যান রহমত উল্ল্যাহর বাড়িতেও হামলা হয়।
রহমতের এক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাড়ির পুরুষরা এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আমি নিজেও নিরাপদ দূরত্বে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।”
এদিকে দীর্ঘ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গাড়ি চলাচল আবার শুরু হয়।
মহাসড়ক পুলিশের বারআউলিয়া ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রাত সোয়া ৮টার দিকে মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে।
“তবে আবারো যাতে কোনো নাশকতা না হয়; সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় যানবাহনগুলোকে সীতাকুণ্ড অংশ পার করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
সীতাকুণ্ড থানার ওসি বদিউজ্জামান জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর পর রাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে।
এই সংঘাতে কতজন আহত হয়েছেন, সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক পংকজ বড়ুয়া জানান, খালেদ বিন মাসুদ নামে এক জামায়াতকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তবে কোথায় কিভাবে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, তা জানাতে পারেনি পুলিশ।
তাণ্ডবের ক্ষতিপূরণ দাবি ব্যবসায়ীদের
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত মালিক ও শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছে চট্টগ্রাম চেম্বার।
কিছুদিন ধরে সীতাকুণ্ডে একই ধরনের ঘটনা ঘটার প্রেক্ষাপটে বুধবার বিকালে চেম্বার মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।
সভায় ব্যবসায়ী নেতারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের শাস্তির বিধান রেখে আইন প্রণয়ণের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সভায় চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নাশকতার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানি-রপ্তানি, কাঁচামাল ও ভোগ্যপণ্য পরিবহন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে।
“গত দুই সপ্তাহে এ মহাসড়কে সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রায় ৩৭ কিলোমিটার এলাকায় ৬৯টি গাড়িতে আগুন দেয়া হয়। কয়েকশ’ গাড়ি ভাংচুরের পাশাপাশি পণ্য সামগ্রী লুটপাটের ঘটনা ঘটে।”
সভায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নওশের আলী বলেন, সীতাকুণ্ড-মিরসরাইসহ চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন এলাকার জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমেই চলমান অরাজকতা ও লুটপাট বন্ধ করা সম্ভব।
মতবিনিময় সভায় চেম্বার সহ-সভাপতি সৈয়দ জামাল আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. সানাউল হক, চেম্বার পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ অংশ নেন।
বন্দর ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হাবিবুল হক, আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন আহমেদ, আন্তঃজেলা ট্রাক মালিক সমিতির দীন মোহাম্মদও সভায় ছিলেন।