somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্ষুধার্ত শিশু ও সোহরাওয়ার্দি উদ্যান

২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টি.এস.সি এর বিপরীত পাশে সোহরাওয়ার্দি উদ্যান। গেট দিয়ে ঢুকলে অনেকগুলো খাবারের দোকান। নানা রকমের খাবার।ফুচকা, পিঠা, চা, সিগারেট, ভাজা পোড়া খাবার, ডাব,ডিম আরও নানা কিছু। আমি ঢুকে অতি ভেজাল মুক্ত ডাব কিনলাম একটা।ডাবের পানি খেয়ে শাঁস খাচ্ছি আর ডাব বিক্রেতার সাথে সুখ দুঃখের আলাপ করছি। ডাব বিক্রি করা চাচার আজ মন খুব খারাপ। আজ নাকি মাত্র ১৫-১৬ টার মত ডাব বিক্রি হইছে।শীতকাল চলে আসছে। কে আর ডাব খাবে? এতো কম বেচাকেনা হইলে ঘর ভাড়া দিবে কি দিয়ে, আর খাবে কি?কিছুদিন পর আর বিক্রিই হবে না।কিছুটা হতাশ ভাবে কথাটা বললেন তিনি।আমি ডাবের সাদা শাঁস খেতে খেতে বললাম, চাচা, পিঠা আর সিদ্ধ ডিম বিক্রি শুরু করেন। শীতকালে ভাল লাভ হবে।
চাচা বলল, তাই করবেন।
আমি ডাবের শাঁস খাচ্ছি। সাদা শাঁস। হঠাৎ এক বাচ্চা মেয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়াল।রাতের বেলার ঠাণ্ডায়ও একটা পাতলা জামা পরা।খালি পা। আমার দিকে হাত পেতে পেট দেখাল।মানে বুঝাল কিছু খায় নি। মুখে খুব অসহায় ভাব। অল্প একটু ডাবের শাঁস বাকি ছিল। পিচ্চিকে দিয়ে তা দিয়ে, মানিব্যাগ বের করলাম। একটা পাঁচ টাকার নোট ছোট মেয়েটাকে দিলাম। মেয়েটা অনেক খুশি। মানুষের খুশি খুশি মুখ দেখতে অনেক ভাল লাগে।আমিও ওর দিকে তাকিয়ে আছি। মেয়েটা ৫ টাকা নিয়ে দৌড় দিল। দৌড়ে গিয়ে পাশের দোকান থেকে বেগুনী কিনছে, আমার দেয়া ৫ টাকা দিয়ে। আমি তাকিয়ে আছি দেখে কিছুটা ইতস্তত করছিল।নিবে কি নিবে না। আমিই এগিয়ে গেলাম দোকানের দিকে। আমাকে দেখে একবার ভাবল হয়ত চলে যাবে, পরে আবার ফিরে আসল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি খাবা?
- বেগুনী
- আচ্ছা ঠিক আছে এইদিকে আসো।


আমি ছোট মেয়েটাকে নিয়ে পিছনের চেয়ারে বসলাম।মেয়েটা চুপচাপ বসে আছে। আমি বললাম, টাকাটা রেখে দাও। কি কি খাবে খাও।
- আপনে নেন।


আমি ১ টা বেগুনী, একটা ২টা পিয়াজু, ছোলা,১টা ডিম চপ, মাশরুম,১০ টাকার চিকেন ফ্রাই নিলাম। মেয়েটা খাচ্ছে। আমি তাকিয়ে দেখছি। অনেক তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে। আমি মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি থাক কোথায় ?
- এনেই।
- আব্বু আম্মু কই থাকে?
- জানিনা।
- জানিনা মানে কি? গ্রামে থাকে?
- জানিনা।
- ঢাকায় একা থাক?
- হ।
- কবে থেকে?
- অনেক আগে থেকে।
- কাজ কর কোন?
- না?
- খাও কি?
- এমনেই খাই।


আমি আর কিছু বললাম না।মেয়েটা খেয়ে যাচ্ছে। আমি এতো তৃপ্তি নিয়ে কখনও কাউকে খেতে দেখি নি। ছোট ছোট হাত গুলো দিয়ে তুলে খাচ্ছে।আমি তাকিয়ে আছি। আসলেই ক্ষুধার্ত মানুষকে তৃপ্তি সহকারে খেতে দেখার মত সুন্দর দৃশ্য পৃথিবীতে আর নেই। আমার খুব ভাল লাগছে। বুকের ভিতর অনেক ভাললাগার অনুভূতি হচ্ছে। সাথে চোখটাও ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, অনেক বেশি ভাল লাগায়। অন্ধকার আর চোখে চশমা থাকায় মেয়েটা তা দেখল না। ওর মনোযোগ খাবারের দিকে।রাস্তা দিয়ে অনেক সুখী মানুষ হেঁটে যাচ্ছে। জোড়ায় জোড়ায় সুখী মানুষ। শীতের কাপড় পরে,একজন অন্যজনের হাত হাত বেঁধে। এখানেও এক জোড়া সুখী মানুষ। একজন মন ভরে খেতে পেরে সুখী, আর একজন একটা মানুষকে সুখী দেখতে পেরে সুখী।মেয়েটা খাওয়ার পর চলে গেল। আমি অনেকটা সময় ঘাসের উপর একা বসে ছিলাম। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে, হয়ত অনেক বেশি ভাললাগায়। অনেকদিন পর এতো বেশি কাঁদলাম। তাও ভাললাগায়।মানুষের জীবন আসলেই কত রঙের, কত রকম, কত দুঃখের, কখনও ছোট কিছু পাওয়ায় কত সুখের।
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×