নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 22 Nov 2013, 04:35 PM
সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রতিবাদে শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দলীয় জোটের বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ হুমকি দেন।
ফখরুল বলেন, “নির্দলীয় সরকার না দিয়ে যদি তফসিল ঘোষণা করা হয়, তাহলে ওই মুহূর্ত থেকে দেশ অচল করে দেয়া হবে। আমাদের রাজপথে নেমে আসতে হবে।”
নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রোববার সারা দেশে উপজেলা, থানা ও পৌরসভায় বিক্ষোভ সমাবেশ করারও ঘোষণা দেন ফখরুল।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “আমাদের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে গেছে।… এই সরকার আবার ফিরে এলে স্বাধীনতা ধ্বংস হয়ে যাবে, গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।”
এই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে রাজপথে ‘ঝাঁপিয়ে পড়ার’ আহ্বান জানান ফখরুল।
‘সর্বদলীয়’ সরকারকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিরোধী দলীয় নেতা সংকট সমাধানে রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছিলেন। তিনি (রাষ্ট্রপতি) এখন পর্যন্ত পদক্ষেপ নিতে পারেননি। এর আগে সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন- নির্বাচনকালীন সরকার পরিচালনায় রাষ্ট্রপতির অনুমতি পেয়েছেন। এর মাধ্যমে সংকট সমাধানে সব পথ সরকার বন্ধ করে দিয়েছে।”
সরকার জনগণের আশা-আকাঙ্খাকে আমলে না নিয়ে একদলীয় নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন সরকারের লেজুড়বৃত্তি করছে। কমিশন একের পর এক এমন সব আইন-কানুন করছে যাতে তারা (ক্ষমতাসীন) জয়ী হতে পারে।”
তিনি বলেন, “শুনছি, সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন নাকি আগামী সাপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করবে। আমরা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে চাই, নির্দলীয় সরকার না করে যদি তফসিল ঘোষণা হয়, আমরা তা মানব না।”
রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের ওপর ‘নিয়ন্ত্রণ’ এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে পুলিশি অবস্থানের সমালোচনা করে বিএনপির মুখপাত্র ফখরুল বলেন, “এই সরকার গণতন্ত্রকে কবর দিয়েছে। একে আর ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। তারা আবার ক্ষমতায় আসলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব থাকবে না। তাই রাজপথের আন্দোলনে ঢাকাবাসীকে জেগে উঠতে হবে। মানুষকে রাস্তায় নেমে আসতে হবে।”
যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “এই সরকার যে বিচার করছে, আজ সেই বিচার নিয়েও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রশ্ন তুলেছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, সরকার ‘রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে’ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ন্ত্রণ করতে চায় বলেই ‘একতরফা’ নির্বাচন করতে যাচ্ছে।
“ঢাকা থেকে প্রধানমন্ত্রী রিমোট কন্ট্রোলের বোতাম টিপ দেবেন, আর জেলার ডিসি-এসপিদের মাধ্যমে তিনশ’ আসনের ফলাফল বেরিয়ে আসবে। এহেন নির্বাচন বিএনপি কোনোভাবে হতে দেবে না।”
দলের মহানগর কমিটির আহবায়ক ও কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাদেক হোসেন খোকা বলেন, “শেখ হাসিনা সংবিধান লংঘন করে অবৈধ মন্ত্রিসভা করেছে। এই অবৈধ মন্ত্রীর অধীনে একদলীয় নির্বাচনের স্বপ্ন কখনো পূরণ হতে দেয়া হবে না।”
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান বলেন, “সরকার যত ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত করুক না কেনো, ইনশাল্লাহ ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই শেখ হাসিনার হিন্দুস্থানী রাজাকার সরকারের আত্মসমর্পণ হবে। কেউ তাদের পতন ঠেকাতে পারবে না।”
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হলে নির্বাচন কমিশন অবরোধ করার হুমকি দেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মুর্তজা।
“তাদের পানি-গ্যাস লাইন বন্ধ করে দেয়া হবে। খাবার সরবরাহ করতে দেয়া হবে না,” বলেন তিনি।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেন, ১৮ দলীয় জোটে ভাঙন ধরাতে সরকার অনেক ‘প্রলোভন ও লোভ’ দেখাচ্ছে।
“এতে কোনো কাজ হবে না। আমাদের ঐক্য অটুট আছে, থাকবে।”
একতরফা নির্বাচন হলে সারা দেশ ‘সীতাকুণ্ড’ হয়ে যাবে বলে হুমকি দেন জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদের সদস্য সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
বিরোধী দলের কর্মসূচি ঘিরে গত কিছুদিন ধরে সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়ে আসছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
বিকাল ৩টায় দলের বিএনপির মহানগর আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। প্রথমেই বক্তব্য দেন জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবিরের নেতা আতিকুর রহমান আতিক।
অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মহানগর সদস্য সচিব আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক জায়রুল হাসান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি মনির হোসেন, যুব দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ছাত্র দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব আহসান সমাবেশে বক্তব্য দেন।
জোট নেতাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদের সদস্য মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ, রেদোয়ান উল্লাহ শাহেদী, কবির আহমেদ, খেলাফত মজলিশের মহাসচিব অধ্যাপক আহমেদ আবদুল কাদের, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম বক্তব্য দেন।