somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারসংক্ষেপঃ

ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা ধর্মনিরপেক্ষ মতবাদ এর ইংরেজী শব্দ “Secularism” আধুনিক ইংরেজী অক্সফোর্ড ডিকশনারীতে এর অর্থ দেয়া আছে Secularism is the belief that religion should not be involved in the organization of society,education etc.এবং Secularize is the process of removing the influence or power that religion has over the society,education or any other organisation.ধর্মীয় প্রবণতাকে মানুষের ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ রেখে সমাজ জীবনের সকল দিক ও বিভাগকে আল্লাহ ও আল্লাহর রসূলের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার নামই ধর্মনিরপেক্ষতা ।অর্থাৎ সামাজিক,রাজনৈতিক,অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ধর্মকে পরিত্যাগ করাই মূলত এর লক্ষ ।শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে ধর্মের বিধান মেনে চলার বিরুদ্ধে এর কোন বিশেষ আপত্তি নেই বলে এ মহান উদারতার স্বীকৃতিস্বরূপ এর নাম ধর্মনিরপেক্ষতা রাখা হয়েছে ।এই মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষ কখনো কখনো মহান সৃষ্টিকর্তা বলতে একজন যে এই মহাবিশ্বে আছেন এবং তার ইচ্ছায় এ মহাবিশ্বের সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে এই কথাটি সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেন আবার কখনো কখনো স্বীকার করলেও তার জন্য সৃষ্টিকর্তার ইবাদাত এবং দুনিয়ার জীবনে উন্নতি,শান্তি ও প্রগতির জন্য আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের কোন প্রয়োজন নেই এটা বিশ্বাস করেন।দেখলে অবাক হই তখন যখন দেখি বেশিরভাগ উচ্চশিক্ষিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীরা এই কথাটি পুরোপুরি অস্বীকার করেন যে মানুষ এবং পৃথিবীর সমগ্র সৃষ্টিকে মহান রব্বুল আলামীন নিজ ইচ্ছায় এবং ক্ষমতাবলে সৃষ্টি করেছেন এবং এখন পর্যন্ত নিয়ণ্ত্রণ ও পরিচালনা করছেন।এগুলোই হচ্ছে আল্লাহ সম্পর্কে বিশুদ্ধ ধর্মনিরপেক্ষতার ধারনা ।
আধুনিক ধর্মনিরপেক্ষতার ইতিহাস
যদিও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ কোন আধুনিক সৃ্ষ্টি নয়,তবও একটি আদর্শ হিসেবে বর্তমানকালে এর প্রচার চলছে ।একটি মতাদর্শ হিসেবে আধুনিক ও প্রগতিশীল বলেই এক শ্রেণীর মানুষের নিকট এর জয়ধ্বনি শোনা যায় ।ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের এ আধুনিক সংস্করণ প্রায় আড়াই শত বছর পূর্বে ইউরোপে প্রথম প্রতিষ্ঠা লাভ করে ।পনর শতাব্দীতে এর জন্ম হয় এবং আড়াই শত বছর সংগ্রামের পর আঠার শতাব্দীর প্রথমার্ধে তা বিজয়ী মতাদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ।যে ইউরোপ এর জন্মস্থান,সেখানকার তৎকালীন অবস্থার সঠিক ধারনা ব্যতীত ধর্মনিরপেক্ষতার ইতিহাস বুঝা অসম্ভব ।পনর শতাব্দীতে ইউরোপে শবেমাত্র জ্ঞান বিজ্ঞান শুরু হয়েছে ।সেকালে জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল ক্ষেত্রেই মুসলমানদের হাতে নেতৃত্ব ছিল ।আজকাল যেমন উচ্চ জ্ঞান লাভ করার জন্য আমরা ইউরোপ ও আমেরিকার নিকট র্না দেই,চৌদ্দ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপবাসীদেরকেও তেমনি আলহামরা,কর্ডোভা ও গ্রানাডায় জ্ঞান অর্জনের জন্য ভীড় জমাতে হতো ।জ্ঞান বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গ্রীক সভ্যতা খৃষ্টপূর্ব যুগে নেতৃত্ব দিয়েছিল ।সপ্তম শতাব্দী থেকে জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখায় মুসলিমদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হল ।আধুনিক বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখায় মুসলিমদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হল ।আমরা সকলেই জানি যে আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল শাখা-প্রশাখায় মুসলিম সভ্যতার সৃষ্টি যেমন হাসান ইবনে হাইসাম প্রথম মাধ্যাকর্ষণ শক্তি,আন নাফীস রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়াআল খারিযমী বীজগণিত,ইবনে সিনা চিকিৎসা শাস্ত্রে অসাধারন পাণ্ডিত্য অর্জন করেন ।এই কজন বাদেও আরও অনেক মুসলিম বিজ্ঞানী,কবি দার্শনিকের অভ্যূদয় ঘটে যাদের নেতৃত্ব ও আদর্শ সারা বিশ্বের নেতৃত্ব দিয়েছে ।কিন্তু খৃষ্টপূর্ব বার শতাব্দীর পর থেকে মুসলমানগণ জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা বাদ দিয়ে বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেয় ।কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত পূর্বপুরুষের সাধনালদ্ধ জ্ঞান সম্পদের উপর নির্ভর করে তাদের জীবন গতানুগতিক ধারায় চলতে থাকে । অপরদিকে ইউরোপ যেটুকু জ্ঞান মুসলমানদের নিকট থেকে লাভ করেছিল তার ভিত্তিতে নতুন জ্ঞান সাধনায় তারা ক্রমেই অগ্রসর হতে লাগল ।সে সময় ইউরোপে খৃষ্টান পাদ্রীদের শাসন ছিল । পাদ্রীরা ধর্মের নামে মানব জীবনের সর্বক্ষেত্রে একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে রাজত্ব করছিল । অথচ তাদের নিকট আল্লাহর বিশুদ্ধ বাণীর অস্তিত্ব নেই বলে ষ্ঠ শতাব্দীতেই কুরআনে ঘোষণা করা হয়েছে ।পাদ্রীরা আল্লাহর নামে নিরংকুশ আনুগত্য দাবী করত এবং শাসন ক্ষমতা তাদের হাতে থাকায় তারা গায়ের জোরেই আনুগত্য করাত ।জীবনের প্রত্যেক দিকে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে তারা সকল বিষয়েই নিজেদের মতামত জোর করে চাপিয়ে দিত ।ইউরোপে যখন নতুন জ্ঞান সাধনার উন্মেষ হল তখন পাদ্রীদের মনগড়া গবেষণাহীন মতামত গবেষকদের নিকট ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হল এবং তাদের উপর সর্বপ্রকার জুলুম নির্যাতন শুরু করা হয়,কোপারনিকাসের মতবাদ প্রচারের জন্য জিওর্দান ব্রুনোকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয় গ্যালিলিওকে হত্যা করা হয় ।বিদ্রহীরা প্রবল আত্ববিশ্বাসের সাথে সম্পূর্ণ বেপরোয়াভাবে পাদ্রীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য সংগ্রাম ঘোষণা করল ।ষোল ও সতর শতাব্দী ধরে দীর্ঘ দু’শ বছর ঐতিহাসিক রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম চলতে থাকে যা ‘গীর্জা বনাম রাষ্ট্রের লড়াই’ নামে পরিচিত ।দীর্ঘ দু’শ বছরের অবিরাম সংগ্রামের দ্বারা একথা প্রমানিত হল যে ,ধর্মবিশ্বাসকে গায়ের জোরে ধ্বংশ করা যায়না ।যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করেনা তাদের মনে যেমন জোর করে বিশ্বাস সৃষ্টি করা যায়না , তেমনি বিশ্বাসীদেরকেও শক্তি প্রয়োগ দ্বারা আবিশ্বাসীতে পরিণত করা যায়না ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×