somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাঙ

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যাঙটা বেশ কিছুদিন ধরেই দরজার নিচ গলে ঘরে ঢুকছে। আমি তাকিয়ে থাকি। প্রথম যেদিন ঢুকেছিল সেদিন এদিক ওদিক ঘুরে ফিরে আমার বুকশেলফের নিচে আশ্রয় নিয়েছিল। পরদিন থেকে সোজা জায়গা মতো চলে যায়। বাসায় ফিরে শুয়ে শুয়ে বই পড়ি আর নতুন আনুষঙ্গ হিসেবে ব্যাঙটা যুক্ত হয়েছে সেটাকেও দেখি। এগুলোকে মনে হয় কুনো ব্যাঙই বলে। খসখসে চামড়া, গাছের গুড়ির মতো। একদিন দেখি মেঝেতে পড়ে থাকা ভাত খাচ্ছে, কত আগ্রহ করেই না খাচ্ছে। খাবার সময় গলা নড়ছে, মনে হচ্ছে চিবুচ্ছে। কিযে ভালো লাগছিল দেখতে। পরদিন থেকে রেণুর চোখ এড়িয়ে আমি কিছু ভাত শেলফের নিচে রেখে দেই। ব্যাঙটাও স্থায়ী নিবাস করে নিয়েছে। প্রতিদিন আসতে লাগলো। আমাদের পরিবার আবার তিন জনের হয়ে গেল। তবে রেণুর অজান্তেই। ও আবার জন্তু জানোয়ার একদম দেখতে পারেনা। দেয়ালের টিকটিকি দেখলেই ঘিনঘিন করে। ভুল করে যদি মশা মেরে ফেলে তবে হাত ধুয়েও এমন ভাবে থাকে যেন এখনো রক্ত লেগে আছে। ওকে আমার সন্ধ্যারাতের অতিথির কথা না বলাই ভালো।
রেণু তার ঘরের কাজে ডুবে থাকে আর আমি মাঝে মাঝে ব্যাঙটার সাথে কথা বলি। আমার মনে হয় ও আমার কথা বোঝে।
কিরে, আজকে খানা কেমন হয়েছে? আজ কিন্তু ডাল মেখে দিয়েছি।
ব্যাঙটা তাকিয়ে থাকে যেন শুনছে মনোযোগ দিয়ে। গলাও নড়ছে। কিছু বলছে নাকি?
কাল সন্ধায় গিয়েছিলাম এক বন্ধুর বাড়ি। এসে দেখি ব্যাঙটা ঘুরছে এদিক ওদিক। আহারে! আজ ভাত দেবার কেউ ছিলনা! আমি রান্নাঘর থেকে কিছু ভাত এনে দিলাম। কি তৃপ্তি নিয়েই না খেল।
কলেজ রোডে একটা দোতলা বাড়ির নিচতলায় আমি আর রেণু সংসার পেতেছি বছর চারেক হল। আমাদের প্রথম মেয়েটা মারা গেছে অল্প কিছুদিন হল। মায়াকাড়া চেহারা ছিল, রেণুর মতো। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে থাকতো। কাতুকুতু দিলে খলবলিয়ে হাসতো। নিউমোনিয়া হয়েছিল। দোতলার হোসেন সাহেবের কোলেই থাকতো সারাদিন। প্রেম করে বিয়ে করেছি শুনে লোকটা প্রথম দিকে আমাদের খুব একটা ভালো চোখে দেখতেন না। বাড়িওয়ালার কাছে নাকি একবার আমাদের বের করে দেয়ার কথাও বলেছিলেন। এখন অবশ্য মেয়েটার কারনে রেণুর কাছে তিনি পিতৃতুল্য হয়ে উঠেছেন অল্প দিনেই। তবুও ভদ্রলোককে কেন জানি আর আপন ভাবতে পারিনি।
রেণু হোসেন সাহেবকে দাওয়াত করে খাওয়াতো, গত ঈদে একটা পাঞ্জাবীও দিয়েছিলো। উনার ছোট মেয়ে মেঘলা ওকে ভাবি বলে ডাকে। আমি বুঝি, একা একটা মেয়ে, বাবা-মাকে ছেড়ে থাকে তাই এখানে এদের মাঝেই মিশে যেতে চাইছে। আমার এসব ভালো লাগেনা। বলা যায় আমি লুকিয়েই থাকি। দোতলায় কখনো যাইনা, ছাদেও না। হোসেন সাহেবের সাথেও ছ মাসে ন মাসে একবার দেখা হয়। সেদিন বাজারে দেখা হয়ে গেল, বললেন রেণু মেয়েটা খুব লক্ষ্মী। আমার স্ত্রীও এরকম ছিলেন, সবাইকে আপন করে ফেলতেন। তা বাবা পালিয়ে বিয়ে করলে কেন? বাবা-মার সন্তানের উপর হক আছে জানতো। বাসায় ফেরার সারাটা পথ তিনি অনর্গল কথাই বলে গেলেন আমি হু হাঁ বলে উত্তর দেই। ইচ্ছে করে যে দিয়েছি তাও না। কিছু জিগ্যেস করার বা আলাপ করার মতো খুঁজে পাইনি।
রেণুর চোখ এড়ানো গেলনা। ব্যাঙটাকে দেখে এই আপদটা ঘরে ঢুকলো কি করে বলে কি হৈচৈ যে করল। ওকে হৈচৈ করতে নিষেধ করলাম, কে শোনে কার কথা। মেয়েটা মারা যাবার পর থেকে রেণু সব কিছু নিয়েই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে। রেণুকে বুঝিয়ে শান্ত করলাম। আদৌ কিছু বুঝেছে কিনা কে জানে।
গতকাল মেঘলা কলেজে গিয়ে আর ফেরেনি। হোসেন সাহেব কোথাও খুঁজতে বাকি রাখেননি। রাত ৮ টার দিকে খবর পাওয়া গেল। মেয়ে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলেছে। এতোটুকুন একটা মেয়ে অথচ তিনি ভাবতেও পারেননি এই মেয়ে এই কাজ করতে পারে। হঠাৎ তার অতিরিক্ত ঘাম হতে লাগলো। দরজার চৌকাঠ ধরতে গিয়েও পারেননি, পড়ে গেলেন। রেণুর সামনেই মারা গেলেন। ওর চিৎকারেই আশেপাশের মানুষ ঘটনা জানলো। রেণুকে আমি এতোটা উন্মাদের মতো আচরণ করতে আগে দেখিনি, বাবা-মাকে ছেড়ে আসার পরেও না।
হোসেন সাহেবের জানাজা পড়া হলনা। আমার কেন জানি হয়ে ওঠেনা। ব্যাঙটার সাথে কথা বলছিলাম—
-কিরে তোর খবর কী? হোসেন সাহেব মারা গেছেন জানিস? আজকেতো মনে হয় রাতে কিছু রান্না হবেনা এ বাড়িতে। তুই খাবি কি?
পরদিন থেকে দেখি আমার দেখাদেখি রেণুও ঝোল দিয়ে মেখে ভাত রাখছে মেঝের এক কোণায় ।


মূল লেখক : সাদামাটা ।
সূত্র : ইন্টারনেট ।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অতিরিক্ত বা অতি কম দুটোই সন্দেহের কারণ

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৩০

অনেক দিন গল্প করা হয়না। চলুন আজকে হালকা মেজাজের গল্প করি। সিরিয়াসলি নেয়ার কিছু নেই৷ জোসেফ স্টালিনের গল্প দিয়ে শুরু করা যাক। তিনি দীর্ঘ ২৯ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধান নেতা ছিলেন। বলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সীমানা পিলার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৮



বৃটিশ কর্তৃক এদেশে ম্যাগনেটিক পিলার স্থাপনের রহস্য।
ম্যাগনেটিক পিলার নিয়ে অনেক গুজব ও জনশ্রুতি আছে, এই প্রাচীন ‘ম্যাগনেটিক পিলার' স্থাপন নিয়ে। কেউ কেউ এটিকে প্রাচীন মূল্যবান ‘ম্যাগনেটিক’ পিলার... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাথায় চাপা ভূত ভূত ভূতং এর দিনগুলি

লিখেছেন শায়মা, ৩১ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৫


এই যে চারিদিকে এত শত কাজ কর্ম, ঝামেলা ঝক্কি, ক্লান্তি শ্রান্তি সব টপকে আমার মাথায় আজও চাপে নানান রকম ভূত। এক ভূত না নামতেই আরেক ভূত। ভূতেদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (দ্বিতীয় অংশ)

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:০৫


আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায় (প্রথমাংশ)
আমাদের সদ্য খনন করা পুকুরটা বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেল। যা মাছ সেখানে ছিল, আটকানোর সুযোগ রইল না। আমি আর দুইবোন শিউলি ও হ্যাপি জালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজের পাসওয়ার্ড অন্যকে দিবেন না ;)

লিখেছেন অপু তানভীর, ৩১ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৭



কথায় আছে যে পাসওয়ার্ড এবং জাঙ্গিয়া অন্যকে দিতে নেই । মানুষ হিসাবে, বন্ধু হিসাবে প্রেমিক/প্রেমিকা হিসাবে অথবা আজ্ঞাবহ হওয়ার সুবাদে আমরা অন্যকে ব্যবহার করতে দিই বা দিতে বাধ্য হই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×