নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে মঙ্গলবার সকাল থেকে ৪৮ ঘণ্টা দেশজুড়ে অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
Published : 25 Nov 2013, 08:09 PM
সেই সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য ঘোষিত তফসিল স্থগিত রাখার দাবিও জানিয়েছে তারা।
৫ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে সোমবার সন্ধ্যায় দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ চলবে বলে জানানো হয়েছে।
‘একরতফা’ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে দেশ অচল করে দেয়ার হুমকি ছিল বিরোধী দলের।
তফসিল ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ১৮ দলের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসে বিএনপির মুখপাত্র ফখরুল বলেন, “একটি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটের অধিকার হরণের জন্য মেরুদণ্ডহীন ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন যে তফসিল ঘোষণা করেছে, তা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।”
দেশবাসীর প্রত্যাশা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর্যুপরি আহ্বান উপেক্ষা করে ‘প্রহসনের’ নির্বাচনের দিকে নির্বাচন কমিশন এগোচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
“নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে রাজনৈতিক সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই তফসিল স্থগিত রাখার দাবি জানাচ্ছি,” বলেন তিনি।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে বিএনপির জন্য তিনবার তফসিল পরিবর্তন করেছিল তৎকালীন নির্বাচন কমিশন। বর্তমান ইসি ৫ জানুয়ারি ভোটের তারিখ ঠিক করেছে। ২৪ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ‘প্রহসনের’ নির্বাচনে ১৮ দল অংশ নেবে না জানিয়ে তা বর্জনের জন্য দেশবাসীর প্রতিও আহ্বান জানান ফখরুল।
“দেশবাসীর প্রত্যাশার আলোকে সব দলের অংশগ্রহণের আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ,সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চাই। আমরা অর্থবহ নির্বাচনে অংশ নিতে চাই।”
বিরোধী দলবিহীন এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে ‘চরমকাণ্ডজ্ঞানহীন’ অভিহিত করে ফখরুল বলেন, “দেশবাসী প্রত্যাশার বিপরীতে নির্বাচনের নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই তফসিল ঘোষণা চরম কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় বহন করে।”
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রাত ৯টায় সংবাদ সম্মেলনের আগে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল। মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, শমসের মবিন চৌধুরী, মাহমুদুল হাসান, ওসমান ফারুক, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ বৈঠকে ছিলেন।
কর্মসূচি ঘোষণার পর রাতে জোট শরিক এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেন।
৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিতে সবাইকে ‘কষ্ট’ করে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান ফখরুল।
তিনি বলেন, “একতরফা নির্বাচনের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। এই আন্দোলনের কর্মসূচি ধাপে ধাপে ঘোষণা করা হবে।”
সাম্প্রতিক সময়ে হরতাল দিলেও অবরোধের কোনো কর্মসূচি দেয়নি বিএনপি। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর সর্বশেষ অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিল তারা।
প্রত্যাখ্যান বিকল্প ধারারও
ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারাও।
সোমবার রাতে এক বিবৃতিতে বি চৌধুরী বলেন, “এই অবিমৃষ্যকারিতার জন্য আমি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি আশা করি, জনগণ একযোগে সারাদেশে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করবে।”
এর ফলে সংঘাতের পথ তৈরি হল বলে মনে করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
বিকল্পধারা সভাপতি বলেন, “এই নির্বাচন কমিশন জেনে-শুনেই দেশকে এক গভীর সঙ্কটের মধ্যে ঠেলে দিল। এর জন্য ইতিহাস তাদের কোনোদিনই ক্ষমা করবে না।
“এই সঙ্কটের কারণে দেশে যত প্রাণহানি, অগ্নিসংযোগ এবং সম্পদহানি হবে, তার জন্য বিবেকের কাছে তাদের চিরকাল দায়ী থাকতে হবে।”