বিভিন্ন বাম সংগঠনের বিরোধিতার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তিতে (টিকফা) সই করেছে বাংলাদেশ।
Published : 25 Nov 2013, 08:54 PM
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার বিভাগের মহাপরিচালক শামীম আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত সোয়া ৯টার দিকে ওয়াশিংটনে এই চুক্তিতে সই করে দুই পক্ষ।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার স্বপন কুমার সাহার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কার্যালয়ে এই চুক্তিতে সই করেন বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ ও ডেপুটি ইউএসটিআর ওয়েন্ডি কাটলার।
চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের, ইউএসটিআর রাষ্ট্রদূত মাইকেল ফ্রোম্যান ও যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেসাই বিসওয়ালসহ দুদেশের শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তারা।
ফ্রোম্যান তার উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, টিকফার ফলে জিএসপি কর্মপরিকল্পনার মতো বাণিজ্য ও শ্রম বিষয়ে দুদেশের মধ্যে নিয়মিত আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে এবং বাংলাদেশে শ্রম পরিবেশ ও শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার সুযোগ তৈরি হলো।
গত ১৭ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্টের’ খসড়ায় এই অনুমাদন দেয়া হয়।
বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, এই চুক্তি হওয়ার পর ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ ‘সঙ্কুচিত হবে’।
তিনি জানান, চুক্তির খসড়ায় ১৬টি অনুচ্ছেদ ও সাতটি আর্টিকেল থাকছে, যাতে এই দ্বি-পক্ষীয় ফোরামের কাঠামো, কার্যপদ্ধতি ও আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে।
“চুক্তি হওয়ার পর এই ফোরামে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কে নিয়মিত আলোচনা হবে। বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআর (ইউনাইটেড স্টেট ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ) বছরে অন্তত একবার বৈঠকে বসবে।”
এই ফোরামে বেসরকারি খাত ও সুশীল সমাজের সঙ্গে পরামর্শ করারও সুযোগ থাকবে বলে সচিব জানান।
তিনি বলেন, খসড়ার প্রস্তাবনায় চারটি বিষয় এসেছে- সংরক্ষণশীল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নীতি পরিহার করার প্রয়োজনীয়তা, মেধাসত্ত্ব অধিকার সংরক্ষণের গুরুত্ব, দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশনের গুরুত্ব এবং শ্রম অধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশের আন্তজার্তিক অঙ্গীকার।
“যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের সম্মতির পরই এ খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।… দুই দেশের নিজস্ব আইন ও পদ্ধতি অনুসরণ করেই এ চুক্তি বাস্তবায়ন করা হবে।”
এ চুক্তি হলে জিএসপিতে কোনো সুবিধা পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিএসপির সাথে এর কোনো সম্পর্ক্য নেই, তবে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা জোরদার হলে জিএসপিতে প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ চুক্তি হলে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি কয়েকগুণ বাড়বে।
তবে বিভিন্ন বাম দল এই চুক্তির বিরোধিতায় বলে আসছে, মেধাসত্ব আইনের কঠোর বাস্তবায়ন হলে তা যুক্তরাষ্ট্রের বড় কোম্পানিগুলোর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হবে। এই চুক্তি এসব কোম্পানিকে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ করে দেবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, প্রায় ৪২টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের এ ধরনের চুক্তি রয়েছে। আর ৪২টি দেশ ও ৮টি আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে এ ধরনের চুক্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ২০০২ সালে এ চুক্তির খসড়া প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু হলেও আলোচনা শুরু হয় আরো আগে। তবে দুর্নীতি, মেধাস্বত্ব ও শ্রমিক অধিকার নিয়ে মতপার্থক্যের কারণে এর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়।
শুরুতে এ চুক্তির নাম ‘ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট’ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন মহলের সমালোচনায় এর সঙ্গে কোঅপারেশন শব্দটি যুক্ত করা হয় এবং ‘ফ্রেমওয়ার্ক’ শব্দটি বদলে দেয়া হয় ফোরাম শব্দটি দিয়ে।
বিএনপির প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা সই হওয়াকে ‘ইতিবাচক’ হিসেবে দেখছে বিএনপি।
রাতে দলের সহ-সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য-অর্থনৈতিক-কারিগরি-সামরিক ও রাজনৈতকি সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দুই দেশের এই সম্পর্কের উন্নয়নে যেকোনো পদক্ষেপকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি।”
তিনি বলেন, “আমরা মনে করি পারস্পারিক লাভের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যকার বহুমুখী সর্ম্পককে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সকল পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই সম্পর্ক আরো নিবিড় করতে চায়।’’