somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথা সত্য, আমরা পুরুষরা হলাম সরল-সুবোধ, ফুলের মত পবিত্র, নারজতির ছলা-কলার আমরা কী বুঝি, আমরা হলাম তাদের অসহায় শিকার ;);););)

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিধাতাকে পেলে জিজ্ঞেস করতাম একবার, শয়তানের প্রলোভনে গন্দম খাওয়ার অপরাধে স্বর্গচ্যুতির দায়ভার কেন মানুষের বইতে হবে, এ ভুল তিনি কিভাবে করলেন? তবে কি বিধাতা ভুলে ভরা, শয়তানের দায়ভার নিরন্তর মানুষেরই উপর চাপাবেন?

( পোষ্টটি শালীনতা-অশালীনতা বিষয়ক নয়, সমাজে অপসংস্কৃতির কারণ, জন্মবৃত্তান্ত ও লালন-পালন বিষয়কও নয়, চাইলে অন্য কোন পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা যাবে। মূলতঃ কিছু জিজ্ঞাসার উত্তর জানতে চাওয়াই এ পোষ্টের উদ্দেশ্য)

পত্রিকার পাতার মন্তব্যের স্থানে, ব্লগে,আড্ডা-আলোচনায় একটা ব্যাপার সব সময়ই লক্ষ্য করি, ধর্ষন/যৌন নির্যাতনের ঘটনায় আমরা নিজেদের দোষ মোচনে সব অবস্থাতেই সকল সময়েই মেয়েদের উপর বিশেষ করে তাদের পোশাকের উপর, তাদের পর্দা না করার উপর দোষ চাপাতে সুকৌশলে চেষ্টা চালাতে থাকি - এখানেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। যারা এসকল খোড়া যুক্তি দিচ্ছেন তাদের কাছে বিনীত ভাবে জিজ্ঞাসা করি সারা পৃথিবীতে অতীতকাল থেকে আজ পর্যন্ত শতকরা কতজন নারী সরাসরি অশালীন পোষাকের জন্য ধর্ষন/যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন? আমাদের নিজেদের ঘরে প্রকাশ্যে এবং প্রধানত অপ্রকাশ্যে নিজের কাছের আত্মীয়-স্বজন দ্বারা, বন্ধু দ্বারা, গৃহশিক্ষক দ্বারা নাবালক-সাবালক নির্বিশেষে যারা ধর্ষন/যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের কতজন অশ্লীল পোষাক পরেন? বাসায় কাজের মেয়ের উপর সুযোগ পেলেই যে আমরা পুরুষবিক্রমে ঝাপিয়ে পরি তা কতটা তাদের পোশাকের জন্য আর কতটা নিজের "পাপ-মনের" জন্য? শতকরা কতটি ধর্ষন/যৌন নির্যাতনের ঘটনা রিপোর্ট হয়, মিডিয়াতে কয়টি ঘটনাই বা চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে?
আমরা পুরুষরা যৌনতার উপরও আমাদের একছত্র অধিকার ঘোষণা করতে চাই, যেন নারীর কোন যৌনতা বোধ নেই। অশোভন/হিজাববিহীন পোশাকের জন্য নারীর উপর পুরুষের আক্রমনকে যদি ন্যায্যতা দিতে চান, তাহলে পুরুষের অশোভন/হিজাববিহীন পোষাকের জন্য নারী কেন পুরুষকে ধর্ষন করে না, তাহলে বোধহয় বলতেই হবে নারীর কোন যৌন চেতনা নেই, আর পুরুষ দেখে নারীরা যেহেতু যৌন-উত্তেজিত হয়ে দল বেধে ধর্ষনে ঝাপিয়ে পরেনা, তাই সকল নারী হিজড়া। আমরা যারা সবসময়ই নিজেদের যৌন উত্তেজনার জন্য উন্মুক্ত নারী দেহের দোহাই পেরে আক্রমনের বৈধতা দেয়ার চেষ্টা চালাই তারা কি একথাটা ভেবে দেখেছি যে, কেন আমরা নিজেদের আপন মা, বোন, মেয়ে, খালা-ফুপুদের পর্দাবিহীন দেখলে, কখনও দেহের কোন অংশ উন্মুক্ত দেখলেও যৌনভাবে উত্তেজিত হইনা বরং বিব্রত বোধ করি --আমাদের যৌন অবদমন ঘটে। নারী হিসেবে তাদের প্রত্যেকের স্তন, যোনী, দেহ বল্লরী থাকা সত্বেও তারা আমার মগজে যৌন প্রতিক্রিয়া না জাগিয়ে বরং আমাদের মস্তিস্কে অবদমন ঘটায়। তো এটা কেন ঘটে, আর কিভাবে ও কোন প্রক্রিয়ায়ই বা ঘটে? নারীর মস্তিস্কে যৌন চেতনাই বা কিভাবে কাজ করে আর কিভাবেই বা তা নিয়ন্ত্রিত হয় বা নারীরা (এবং সমাজের বিস্তর সংখ্যক পুরুষ) কিভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হোন, নানাভাবে যারা ধর্ষন/নির্যাতনের পক্ষেই লিখছেন আশা করি তারা এর একটা যুক্তিসংগত ঊত্তর দিবেন।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ২ লক্ষ নারীসহ সারা পৃথিবীতে এযাবৎ যত যুদ্ধ হয়েছে আর তাতে যে পরিমাণ নারী ধর্ষিত-নির্যাতিত হয়েছেন সেই সংখ্যাটা কী ভয়াবহ পরিমাণ হতে পারে তা কি আমরা অনুমান করতে পারি? তাহলে যুদ্ধে কেন নারীরা ধর্ষিত হয়, তখনও কি তারা অশোভন পোশাক পরে বুক দেখিয়ে পাছা দুলিয়ে বেড়ায়? ১৩/১৪ বছরের চেয়ে কম বয়সী আমাদের ছোট বোন, ভাগ্নী, ভাতিজী, নাতনী যখন ঘরের ভিতরে আপনার আমার মত কঠিন পুরুষ (!) (হিজড়া নয়) দ্বারা ধর্ষিত/যৌন নির্যাতিত হয়, তখন আমাদের মত বীর-পুঙ্গবকে কোন দেহ বল্লরী দেখিয়ে প্রলোভিত করে (দেশে যৌন-নির্যাতনের শিকার এদের সংখ্যাটাই বেশী যার শতকরা ৯৫ ভাগই প্রকাশ্যে আসেনা, আর এখানে যারা সাহসী পুরুষ আছেন তাদের যদি বুকের পাটা থাকে দেখবেন নাকি একবার জিজ্ঞ্যেস করে, আপনাদের বোন-ভাগ্নী-কাজিনদের কাছে তাদের অবমাননার কথা)? তার কতটা পোশাকের জন্য আর কতটা আমাদের পশুত্বের জন্য? নিজেদের নৈতিক চেতনার দৈন্যতাকে, রিপু নিয়ন্ত্রনের ব্যর্থতাকে অন্যের উপর চালান করার কী সুনিপুণ প্রয়াস।
সমাজে তো প্রলোভনের কোন অভাব নেই, দেহের প্রলোভন, টাকার প্রলোভন, ঘুষের প্রলোভন, ব্যাংক লুটের প্রলোভনের, বন লুটের প্রলোভন, খাম্বার প্রলোভন, বন্দর বিক্রির প্রলোভন, কয়লা-গ্যাস-বিদ্যুৎ চুরির প্রলোভন,পদ্মাসেতুর প্রলোভন, কালো বিড়ালের আহবান, মডেলিং আর ঝকমকে তারকা জগতের আহবান, আহবান আর প্রলোভনের কি আর শেষ আছে কত আর বলবো। এখন সভ্য সমাজের দস্তুর কী হওয়া উচিত বলে মনে করেন আপনারা, যিনি প্রলোভিত হয়ে চুরি-ডাকাতি-লোপাট করছেন তাকে জামাই আদরে রাখা, নাকি সমাজের অন্তরালে, পর্দার অন্তরালে, হিজাবের অন্তরালে, জেলখানার ভিতরে রাখা সমিচীন - কি মনে হয়? কাকে পর্দা/হিজাব পরানো উচিত আক্রমনের শিকারকে না আক্রমনকারীকে? বন্য পশুরা আক্রমন করে বলেই আমরা তাদের সমাজের বাইরে বনেই রাখি অথবা চিড়িয়াখানায় অন্তরীণ করি। তো মেয়েদের প্রতি এসে সমাজের নিয়মটা পালটে যাবার কারণটা কি, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা সমাজের অধিপতি বলেই তো, তাই নয় কি?
("মাথায় কত প্রশ্ন আসে"র মত আমার বেয়াদব মনেও চকিতে একটা প্রশ্ন এল, কল-কারখানা ক্ষেত-খামার থেকে নিয়ে কর্পোরেট অফিসের বস, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে মন্ত্রী-আমলাসহ দুনিয়ার সকল পুরুষ যদি বোর্কা/হিজাব পরে, কোন অসুবিধা? কোন আদেশ-নিষেধ-সমস্যা আছে কী?)

ভাল বা মন্দ কোন মন্তব্য না করেই অন্য একটি বিষয়ে দু'টো লাইন লিখছি, কোন কোন অনগ্রসর(?) গোত্র সমাজে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে স্বল্প কাপড় পরিধান করলেও নারীরা বুক দেখিয়ে দুলিয়ে দুলিয়ে বেড়ালেও সেসব সমাজে কোন ধর্ষনের অস্তিত্ব নাই। পাশ্চ্যাতেরও কোন কোন দেশে Naturalist বা Nudist গোষ্ঠীর লোকেরা সমুদ্র পাড়ে বা অন্য কোনখানে পরিবারের বাবা-মা-ছেলে-মেয়ে-দাদা-নানা-ভাই-বোনসহ আরও দশটা ফ্যামিলী সহযোগে ঘুরে বেড়ান, তখন তাদের মগজে যৌন চেতনা কিভাবে ক্রিয়া করে? পুরুষ-পুঙ্গবেরা কি সর্বক্ষণ দন্ড উত্থিয়মান করে ঘুরে বেড়ান আর যখন-তখন যে কোন মেয়ের উপর ঝাপিয়ে পরেন, তাই কি? তাহলে এসব নারী-পুরুষের মাঝে যৌন চেতনার রূপটাই বা কিরকম, তার ব্যাখ্যাই বা কী?

মানব সমাজসহ প্রাণীদের মাঝে বংশবিস্তারের জন্য জনন অঙ্গসহকারে প্রজনন কর্ম থাকলেও জনন ক্রিয়া আর "sex" বা "যৌনতা" একই অর্থ বহন করে না। প্রজননের প্রয়োজন বা কর্মটি মানব সমাজের শুরু থেকে থাকলেও sex বা যৌনতাবোধ শব্দগুচ্ছ দ্বারা আমরা এখন যা বুঝি সেই বোধ সমাজের শুরুতে ছিলনা। সমাজ অগ্রগতির ধারায় সামাজিক কাঠামোর বিশেষ সময়ে অন্য আরও বোধের মত sex-বোধেরও জন্ম মানব সমাজ দিয়েছে, আর সমাজ ব্যবস্থার বিভিন্ন ধাপে ধাপে যৌনতা বোধও একে বেকে নানারূপ গ্রহণ করেছে বিকৃতও হয়েছে। ফলে শুধুমাত্র পর্দাবিহীন নারীদেহের দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবেনা, বরং কোন্‌ আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠছি, কোন্‌ রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক মতাদর্শ ধারন করছি, উন্নত কোন্‌ নীতি-নৈতিকতার চর্চা করছি আখেরে সেটাই নির্ধারন করবে আমরা কী কান্ড ঘটাব বা প্ত্র-পত্রিকা, আড্ডা-আলচনায়, ব্লগে-ফেসবুকে কতটুকু নিজস্ব ব্যর্থতার সাফাই গাইবো আর অন্যের ঘাড়ে কতটুকু দোষ চাপাব।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×