somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুবকোনা,বেনতিউ- সাউথ সুদান

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



রুবকোনা এয়ার স্ট্রিপ
এল ৪১০ বিমানে করে মালাকাল থেকে বেনতিউ রওয়ানা হলাম। পঞ্চাশ মিনিট ফ্লাইট টাইম। আরামদায়ক ছোট বিমান।বার হাজার ফিট উপর দিয়ে উড়ে চলছে। ইউনিটি প্রদেশের রাজধানী বেনতিউ, এখানে কাউন্টির সংখ্যা নয়টি। বেনতিউ শহরের পাশে রুপকোনা এলাকাতে বিমান বন্দর।লাল মারামের রানওয়ে। বিমান বন্দর থেকে রুপকোনা শহরের কিছু অংশ দেখা যায়।আজ তেমন কোন যোগাযোগ করে আসিনি। নতুন জায়গা, নিরবান্ধব পরিবেশে কিভাবে থাকতে পারি তাই দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল। নেমেই দেখি একজন আমাকে দেখে এগিয়ে এল। বাংলাদেশের শফিকের সাথে এভাবেই দেখা। প্রথম দেখাতেই মনে হল কত দিনের চেনা। এই দূর প্রবাসে খুব ভাল লাগলো কাউকে পেয়ে।



রুবকোনা থেকে বেনতিউ যাওয়ার পথে
বিকেল হয়ে গেছে আজ আর কোথাও যাব না। বিকেলে আশেপাশে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ডিনার সেরে ফেললাম। রাতে ঘুম ভালই হল এই নতুন পরিবেশে। এই প্রদেশটা সুদানের বেশ কাছে, তাই আক্রমনের ভয়ে থাকে এরা। সাউথ সুদানের এস পি এল এর চতুর্থ ডিভিশন সদর দপ্তর এখানে। মোটামুটি এরা বেশ একটিভ আছে মনে হল। এই এলাকার মানুষ বেশ ভাল জানতে পারলাম। মুসলমান অনেক আছে এখানে। মসজিদ দেখা যায় বেশকিছু। নামাজের আজান ও হয়। মানুষের মাঝে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান আছে যা সবারই কাম্য। পরদিন বেলা এগারটার দিকে বেনতিউ শহরের পথে রওয়ানা হলাম।


রুবকোনা থেকে বেনতিউ যাওয়ার পথে
রাস্তার পাশে জন বসতি তেমন নেই, মাঝে মাঝে কিছু শন ও বাঁশের বানানো টুকুল দেখা যায়। রাস্তা কিছু পীচ ঢালা কিছু লাল মারামের। গাড়ি ঘোড়া বেশ কম, খচ্চরে টানা গাড়ি বেশ দেখা যায়। এগুলো মূলত মাল পরিবহনে ব্যবহার হয়। তুলনামুলক ভাবে এদেরকে একটু গরিব মনে হল। এই প্রদেশের মাটির নীচে তেলকুপ আছে। সঠিক নেতৃত্বই কেবল একটা জাতিকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আসা করা যায় এরাও একদিন অনেক উন্নত হবে যদি সে রকম দূরদর্শী নেতা পায়।

বেনতিউ শহরে চার রাস্তার মোড়ে
পনের মিনিটের মধ্যে শহরে চলে এলাম। শহর বলতে চার রাস্তার মোড়, কিছু দোকানপাট একটা বড় মসজিদ। বেশ ফাঁকা এলাকা। মানুষ তেমন নেই। আসার পথে একটা ব্রিজ পার হয়ে এসেছিলাম। নীচে নদী প্রায় মরে গেছে। চিকন একটা ধারা রয়েছে শুধু।বর্ষাতে এটা পানিতে ভরে উঠে। সুদান বিমান বাহিনী এটাতে আক্রমন চালিয়েছিল, ধ্বংস করতে পারে নি, টার্গেট মিস করেছিল।যাক ব্রিজটা এখন ও টিকে আছে। শহরে কিছুক্ষণ গাড়িতে ঘুরলাম। সূর্যের তাপ বেশ, আকাশ মেঘ মুক্ত বেশীক্ষণ এভাবে ঘোরা যায়না।


বেনতিউ শহরে
কিছু কেনাকাটা ছিল, সেগুলো রুপকোনা বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে তাই ফি্রে চললাম।খুব সাদামাটা বাজার,মাংসের দোকান আছে দুইটা, কসাইরা ইথিওপিয়ার, এই বাজারে সাউথ সুদানিদের পাশাপাশি অনেক বিদেশীরাও ব্যবসা করছে। এরা হয়ত স্বাধীনতার আগেও এখানেই ছিল। দেশের সীমা ভাগ হয়ে নতুন দেশ হয়, মানুষের ভাগ কেমনে হবে। এরা হয়ত বহু বছর ধরে এখানেই বাণিজ্য করে আসছিল।


রুবকোনা বাজার
রুবকোনা বাজারে বেশ বড় দোকান আছে কয়েকটা। এরা বেশিরভাগই ইথিওপিয়ার মানুষ। লোকাল লোকজনের ও এখন দোকান আছে এখানে। এক দোকানে গিয়ে বেশ কিছু জিনিষ কেনা হল। সব জিনিষ আজ এখানে নেই, দোকানী রাস্তার ও পারের একটা দোকান দেখিয়ে দিল।সেই দোকানের মালিক আবার আমাদের কথা বুঝে না। দূর থেকে আগের দোকানদার এটা বুঝতে পেরে নিজের দোকান থেকে এসে আমাদেরকে জিনিসগুলো মেপে দিল। এই আন্তরিকতা মনে রাখার মত। এদের একটা ভাল দিক হল এরা ওজনে কখন ও কম দেয় না পারলে একটু বাড়িয়ে দেয়। আর আমরা মানুষকে ওজনে কম দিয়ে লাভ করার কৌশল বের করি। তখন একটা কথাই মনে হয়, এদের অভাব আছে তবে সুখের অভাব নেই। দারিদ্র তাদের এক ধরনের প্রশান্তি দিয়েছে বলেই তারা এত সমস্যা নিয়ে এখনও টিকে আছে।
এখানে একটা দোকানে বিদেশীদের জন্য দরকারি প্রায় সব জিনিষ রাখে। দোকানের নাম মাহমুদ স্টোর। বেশ হাসিখুসি দোকানী, কিছু একটা খেতেই হবে বলে এগিয়ে এল, আমরা পড়ে খাব বলে বেরিয়ে এলাম। বাহিরে ছোট বাচ্চা ছেলে কয়েকজন ছোট পলিথিনের প্যাকেটে করে বাদাম ভাজা বিক্রি করছে। কয়েক প্যাকেট কিনে নিলাম ওদের কাছ থেকে। বেশ খুশি তারা।
ফেরার পথে দেখি অনেক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা একটু এগিয়ে যেতেই এক মারমুখি এস পি এল এ সৈনিক তেড়ে এল। থেমে গেলাম, এরা কখন কি করে বলা যায় না। তাদের কমান্ডার আসবে তাই এই কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মানুষজন গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা থেকে একটু দূরে গাছ তলার ছায়াতে বসে তামাসা দেখছে। এরা এই জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অনেকখন পর তিনি এলেন আর রাস্তার ট্রাফিক ছেড়ে দেয়া হল। আমরা আবার চলা শুরু করলাম।
বিকেল গড়িয়ে রাত তারপর আবার সকাল, রাতে একটু ঠাণ্ডা পড়ে এখানে। অনেক পাখি দেখা যায় এই অঞ্চলে।গাছে পাখির কূজন, আকাশ জুড়ে পাখির ঝাঁকবেধে উড়ে চলা অনেক দিন পর দেখলাম। সব পাখি ঘরে ফিরে অস্তমিত সূর্যের লাল আভার সাথে সাথে। আকাশ ছেয়ে যায় পাখির ডানায়। তৃণভূমির মাঝে সূর্যাস্ত দেখেতে চমৎকার লাগছিল।ডোবার আগে লাল সূর্য যেন স্থির হয়ে আছে আকাশে। একটু পরেই আবার চাঁদ দেখা গেল। মোটামুটি প্রকৃতির কাছে থেকে বিকেল পার করলাম।


সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৫৭
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শৈল্পিক চুরি

লিখেছেন শেরজা তপন, ০১ লা জুন, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭


হুদিন ধরে ভেবেও বিষয়টা নিয়ে লিখব লিখব করে লিখা হচ্ছে না ভয়ে কিংবা সঙ্কোচে!
কিসের ভয়? নারীবাদী ব্লগারদের ভয়।
আর কিসের সঙ্কোচ? পাছে আমার এই রচনাটা গৃহিনী রমনীদের খাটো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কোথায় বেনজির ????????

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫




গত ৪ মে সপরিবারে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ। সঙ্গে আছেন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। গত ২৬ মে তার পরিবারের সকল স্থাবর সম্পদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

‘নির্ঝর ও একটি হলুদ গোলাপ’ এর রিভিউ বা পাঠ প্রতিক্রিয়া

লিখেছেন নীল আকাশ, ০১ লা জুন, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭



বেশ কিছুদিন ধরে একটানা থ্রিলার, হরর এবং নন ফিকশন জনরার বেশ কিছু বই পড়ার পরে হুট করেই এই বইটা পড়তে বসলাম। আব্দুস সাত্তার সজীব ভাইয়ের 'BOOKAHOLICS TIMES' থেকে এই বইটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিতর্ক করার চেয়ে আড্ডা দেয়া উত্তম

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:২৬

আসলে ব্লগে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বিতর্কের চেয়ে স্রেফ আড্ডা দেয়া উত্তম। আড্ডার কারণে ব্লগারদের সাথে ব্লগারদের সৌহার্দ তৈরি হয়। সম্পর্ক সহজ না হলে আপনি আপনার মতবাদ কাউকে গেলাতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে প্রাণ ফিরে এসেছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪



ভেবেছিলাম রাজিবের অনুপস্হিতিতে সামু রক্তহীনতায় ভুগবে; যাক, ব্লগে অনেকের লেখা আসছে, ভালো ও ইন্টারেষ্টিং বিষয়ের উপর লেখা আসছে; পড়ে আনন্দ পাচ্ছি!

সবার আগে ব্লগার নীল আকাশকে ধন্যবাদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×