somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই এর নেশা-১

৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছোটবেলা থেকে গল্পের বইয়ের ভীষণ পোকা ছিলাম। আম্মুর দুইটা বুকশেলফ ছিলো। প্রচুর প্রচুর বই ছিলো আম্মুর সংগ্রহে। বলতে গেলে সব বইয়েই টানা হাতের লেখায় আব্বুর নাম নিচে দিয়ে, উপরে কিছু প্রিয় সম্ভাষণে আম্মু’র নাম লেখা থাকতো। দুইটা বইয়ের শেলফে একটাতে ছিলো তালা, আরেকটা ছিলো খোলা। তালা দেওয়া বইয়ের আলমিরা তে হাত দিতে পেরেছিলাম অনেক বড় হয়ে। যেটায় তালা ছিলোনা, সেখানে জায়গা করে নিয়েছিলো আমাদের জন্য কেনা ছোটদের গাদা গাদা বই। বন্দে আলী মিয়া আমার ফেভারিট ছিলো যখন নতুন নতুন বাংলা পড়তে শিখলাম। ইসলামিক কিছু স্টোরী আমাকে ভীষণ আকৃষ্ট করতো, সেই গল্প গুলোর শেষে আবার মর‌্যাল থাকতো। ঠিক যেভাবে আমার ভালো লাগতো ঈশপের গল্প গুলো। ঈশপের গল্পগুলোর মধ্যে দাগ কেটেছে সেই গল্পটা যেখানে জমির সীমানা বাড়ানোর জন্যে এক লোক মাঠের ধার ঘেঁষে দৌড়ে যাচ্ছে, অন্যধারে তার জীবন নেওয়ার জন্যে অপেক্ষা করছে ডেভিল নিজেই। যদি সূর্যাস্তের আগে সে বাউন্ডারী ঘুরে ফিরে আসতে না পারে, তবে তার জমি ও জীবন দুইই চলে যাবে শয়তানের দখলে!! ইস, কী যে টেন্সড থাকতাম ঐ গল্প পড়ার সময়ে!

আর ছিল অনেক রাশিয়ান বই। তার মধ্যে একটা হচ্ছে “বুদ্ধিমতি মাশা”; যেটা আমার এতই পছন্দ ছিলো যে পড়তে পড়তে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। মাশার চেহারা এখনও মুখস্থ, যদি ভালো আঁকিয়ে হতাম তাহলে শিওর এখন ওকে এঁকে ফেলতে পারতাম। মাশার দিদা শুধু কোনও না কোনও প্রব্লেমে পড়তো, আর অভিনব উপায়ে মাশা সেটা সল্ভ করে দিতো। সেই ছোট ছোট গল্পগুলার আবার ছবি আঁকা থাকতো। একবার মাশা ভেজা কাপড় শুকাতে গিয়ে দেখলো পর্যাপ্ত ক্লিপ নেই, তখন মাশার বন্ধু অনেকগুলা পাখি এসে কাপড়গুলোর উপর বসে ছিলো, যতক্ষণ না সেগুলা শুকিয়ে যায়।

“সাতরঙা ফুল” নামের একটা বই ছিলো, আমি সত্যিই বিশ্বাস করেছিলাম বুঝি সেই ফুলের পাপড়ি ছিড়ে আমি যদি সেই ছড়াটা বলতে পারতাম তাহলে আমাকে আমার পছন্দের জায়গায় নিয়ে যাবে! ছড়াটা ছিলো এরকম
“পাপড়ি আমার যা উড়ে যা
পূব পশ্চিম যা ঘুরে যা
যা উত্তর যা দক্ষিণ
সাঙ্গ করে প্রদক্ষিণ...” এরপরের অংশটুকু ভুলে গিয়েছি!!

“যাদুর পেন্সিল” নামের যেই বইটা আমার খুব মজা লাগতো পড়তে, সেখানে ছিলো কিভাবে যাদুর পেন্সিলে ছবি এঁকে শর্টকাট মারতে গিয়ে এক ছেলে পরে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা হলো সেই গল্প।

রুশদেশের উপকথা আর মালাকাইটের ঝাঁপি, এই দুই বইয়ে অনেক গল্প ছিলো। আমার জীবনের প্রথম এডভেঞ্চারের বই ছিলো মালাকাইটের ঝাঁপি। পাহাড়ের ভেতরে দূর্গম এলাকায় অনেক দামী রত্ন চাপা পড়ে থাকতো। সেই রত্নের লোভে যারাই গিয়েছে হয় অভিশপ্ত হয়েছে নাহয় মারা পড়েছে। কোনও কোনও বীর সেখান থেকে বেঁচে ফিরেছে কিন্তু তার স্মৃতি থেকে রত্নঠাকরুণের সাথে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতা একেবারেই গায়েব!! কেউ কেউ বলে ঠাকরুণ চোখ-ধাঁধানো রূপসী, কেউ কেউ বলে সে ভয়ংকর, মোটের উপর এই বইটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলতাম এতটাই রোমাঞ্চকর ছিলো। সেই তুলনায় রুশদেশের উপকথা ছিলো ফেয়ারী টেইলসের মতই। হালকা লেখায় বৈচিত্র্য আর হিউমারও ছিলো বেশ!! পছন্দের কিছু গল্প আমি বারবার পড়তাম, একটার গল্প বেশ মনে আছে “ঝলমলে বাজ ফিনিস্ত”!! এই গল্পের আবার পার্ট ওয়ান পার্ট টু টাইপের ব্যাপার ছিলো। বেশ ডেস্পারেট রোমান্টিক টাইপ ঘটনা ছিলো (সেই বয়সে যা মনে হয়েছিল আর কি...)।

রাশিয়ান বই সেসময়ে অনেক পাওয়া যেত মনে হয়, বড়দের অনেক বইও ছিলো রাশিয়ান, যেসব মোস্টলি বিপ্লবী বই ছিলো, আমার আব্বু’র নাম লেখা। সেসব বই পড়েছি ঠিকই, তবে তেমন টানেনি আমাকে। একটা বইয়ের নাম ভুলে গিয়েছি, সেখানে এক মেয়ের গল্প ছিলো। সেই মেয়ে প্রথম যখন কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর হিসেবে এক কন্সট্রাকশন প্রজেক্টে কাজ শুরু করলো, তাকে সবাই অবজ্ঞা করতো। কিভাবে পরে সে পপুলার হয়ে গেলো আর অন্যদের রেস্পক্ট পেলো, তার কাহিনী বেশ মনে দাগ কেটেছিলো।

সুকুমার রায়ের সমগ্র শিশুসাহিত্য, তার মধ্যে বিশেষ করে পাগলা দাশু তো অনেক বড় হয়েও পড়েছি। লাল কাভারে বাঁধাই করা একটা মোটা বই ছিলো, সেখানে মনে হয় পঞ্চাশটার উপরে গল্প ছিলো। নাম ছিলো “দেশ-বিদেশের রূপকথা”। ঐ বইটাও পড়তে পড়িতে ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, হে হে হে! ঠাকুরমার ঝুলি কিংবা আরব্য-রজনীর গল্প বাসায় ছিলো, পড়েছিও কিন্তু অতটা ফেভারিট ছিলো না কেন যেন।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:৩০
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×